নীল বেদনা

Ads Inside Post

নীল বেদনা

golpo-ghar.blogspot.com
golpo-ghar.blogspot.com

 

- লাথি মারি তোর ভালোবাসা, হাজারটা মেয়ের সঙ্গে কথা বলে আবার ভালোবাসা দেখাচ্ছিস? 


- তুমি এভাবে রাগ করো কেন? কোন মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে দেখছো বলো। 


রাগে আমার শরীর জ্বলে যাচ্ছে, তবুও নিজেকে শক্ত করে বললাম, 


- কয়টা দেখাতে হবে? তুই কি আমাকে বোকা মনে করিস হা? আমি কিছু বুঝি না? 


- হ্যাঁ বোঝো, তুমি পৃথিবীর সবকিছুই বুঝতে পারো শুধু আমার ভালোবাসা বুঝতে পারলে না। 


- যদি ভালোবাসতি তাহলে তো ঠিকই বুঝতে পারতাম তাই না? তোর মনের মধ্যে তো হাজারো মেয়ের আনাগোনা, তাহলে কীভাবে আমাকে তুই ভালোবাসবি? 


- তোমার প্রচুর রাগ, তুমি আমাকে যা ইচ্ছে বলো কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তোমার কাছে আগেও বলেছি, আমাকে ভুল বুঝে কোনদিন বকাবকি করবা না। কষ্ট হয়। 


- রাখ তোর কষ্ট, তোকে বলছি না চোখের সামনে থেকে চলে যা। আর কোনদিন ভুলেও আমার নাম্বারে কল করবি না, কলেজের সামনে কিংবা রাস্তায় দাঁড়াবি না। 


- হাহাহা, একটু পরে যখন কল দিয়ে বলবে মামুন তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। তখন যদি আমি না আসি তাহলে কি করবা ভাবছো? 


- আমার যদি লজ্জা থাকে তাহলে আর কোনদিন তোর মতো কুত্তাকে কল দেবো না। 


- ওহ্ আচ্ছা, থাকতে পারবে?


- কেন পারবো না? তোর মতো ছেলের সঙ্গে থেকে জীবন নষ্ট করবো নাকি? 


- ধুর নষ্ট হবে কেন? 


- এতো সাজগোছ করে কোথায় যাওয়া হচ্ছে? নিশ্চয়ই নতুন কোন গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া হচ্ছে! 


- সার্কিট হাউস মাঠে যাচ্ছি, মন্ত্রী এসেছে তাই সমাবেশের আয়োজন করেছে। আমাদের মেসের সবাইকে যেতে হবে, বুঝতেই পারছো শহরের স্থানীয় বড়ভাইদের জন্য যেতে হচ্ছে। 


- তো এখানে দাঁড়িয়ে কেন? যা না সেখানে, দোয়া করি আর যেন ফিরে না আসো। তোমার মুখটা দেখতে সত্যিই আর ইচ্ছে করছে না, একদম যেন মরার খবর চলে আসে।


- বাহহ বাহহ, তুই থেকে তুমি হয়ে গেছে তারমানে রাগ কমতে শুরু করেছে। 


- উঁহ অসহ্য যন্ত্রণা মামুন। 


- তুমি সবসময় এমন করো কেন? এভাবে যখন রাগারাগি করো আমার খুব খারাপ লাগে, আচ্ছা সত্যি সত্যি যদি একদিন ঠিকই হারিয়ে যাই। 


- তো কি হয়েছে? কে তুমি? 


- ঠিকই বলছো, মাঝে মাঝে নিজেই নিজেকে চিনতে পারি না আর তুমি কীভাবে চিনবে? 


- আর কোনদিন আমাকে কল বা মেসেজ দেবে না তুমি, নাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে। 


- আমি জানি আমাকে কল দিতে হবে না কারণ আমি তোমার চোখের আড়াল হতেই একটু পরে তুমি আমাকে কল দেবে। আমার প্রতি তোমার বিশ্বাসের অভাব থাকলেও তোমার প্রতি কিন্তু এই বিশ্বাস আমার আছে। 


- দেখা যাবে। 


- হুম সত্যিই দেখা যাবে, তুমি রুমের মধ্যে গিয়ে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে রাস্তার দিকে তাকাবে। আমি ততক্ষণ এখানে দাঁড়িয়ে থাকবো, তারপর সেই বেলকনিতে দাঁড়িয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে কল দিয়ে বলবে " এভাবে রোদে দাঁড়িয়ে আছো কেন? যাও তাড়াতাড়ি বাসায় যাও। " 


- বোকা ছিলাম মামুন, আমি সত্যি সত্যি অনেক বোকা ছিলাম তাই এতদিন এভাবে তোমার সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছি। কিন্তু আজকের পর থেকে আর কখনো এমন হবে না, কোনদিন না। 


- ঠিক আছে। আর শোনো, আসার সময় তোমার পছন্দের বিরিয়ানি নিয়ে আসবো। রাতের জন্য রান্না করার দরকার নেই, এখন পরীক্ষা দিয়ে এলে তাই রুমে গিয়ে গোসল করে নামাজ পড়ে দুপুরের খাবার খেয়ে লম্বা ঘুম দেবে। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নীল শাড়ি পরবে, সুন্দর করে সাজগোজ করে বসে থাকবে। আমি এসেই তোমাকে কল দেবো, তারপর মডেল স্কুলের মাঠে গিয়ে সবুজ ঘাসের উপর বসে বসে দুজনেই একসাথে বিরিয়ানি খাবো হিহিহিহি। 


- তোর বিরিয়ানি তুই খা যাহহ। 


মেসে ফিরে রুমের মধ্যে ঢুকে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। কৌতূহল নিয়ে বেলকনিতে গিয়ে দেখি মামুন এখনো দাঁড়িয়ে আছে। আমি কিছু না বলে বেলকনির দরজা বন্ধ করে ভিতরে এসে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। গোসল করে পরীক্ষা দিতে গেছি তাই এখন আর করবো না, ঘুম থেকে উঠে গোসল করার পরিকল্পনা করে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। 


|

|


মাগরিবের আজান দিচ্ছে তাই আমার রুমমেট আইভি আমাকে ডেকে তুললো। ঘুম এখনো কাটেনি, কোনরকমে মোবাইল বের করে হাতে নিয়ে সময় দেখলাম। মামুন এর নাম্বার থেকে কয়েকবার কল এসেছে, সঙ্গে কয়েকটা মেসেজ। মনে হয় কল রিসিভ করিনি বলে মেসেজ করে দিয়েছে, ঘুমের মধ্যে আমার সকল রাগ কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। 


মেসেজ গুলো পড়তে লাগলাম। 


* এখনো রেগে আছো তুমি? আমার তো খুব ভয় লাগছে, এতক্ষণ ধরে তোমার রাগ তো থাকে না। 


* আমি কিন্তু তোমাকে সত্যিই ভালোবাসি, সেটা তুমি ভালো করে জানো। শুধু রাগের সময় এটা ভুলে যাও, যার কারণে আমাকে অনেক বকা শুনতে হয়। 


* একটু তাড়াতাড়ি রিপ্লাই করো, আমার সত্যিই খুব খারাপ লাগছে। 


* আমিও কিন্তু অভিমান করতে পারি, কোনদিন করিনি, কিন্তু যেদিন করবো সেদিন দেখবে সেই অভিমান ভাঙবে না। যারা খুব কম কথা বলে তারা যখন হুট করে মাত্র একটা কথা বলে সেটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়। 


* আজকে অনেকক্ষণ তোমাকে নিয়ে মাঠে বসে থাকবো, তৈরি থেকো। 


মোবাইলে দেখলাম একদমই চার্জ নেই, ঘুমানোর আগে খেয়াল করলে এতক্ষণে ফুল চার্জ হতো। তাড়াতাড়ি মোবাইল চার্জে দিয়ে গোসল করতে ঢুকে গেলাম। গোসল করে মাগরিবের নামাজ পড়লাম, আসরের নামাজ ঘুমের মধ্যে চলে গেছে সেটাও কাযা আদায় করলাম। 


তারপর নীল শাড়ি পরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখলাম। আগামী চারদিনে কোনো পরীক্ষা নেই তাই আজকে সন্ধ্যাটা ওর জন্য রেখে দিলে মন্দ কি? 


মামুনের নাম্বার বন্ধ, বেলকনিতে বসে আছি বারবার কল দিচ্ছি। তার বলা সেই নীল শাড়ি পরে অনেকক্ষণ ধরে বসে আছি কিন্তু কোথায় তার বিরিয়ানি আর কোথায় সে নিজে? 


রাগটা বাড়তে লাগলো আবারও, নিশ্চয়ই বন্ধুদের সঙ্গে কোথাও আড্ডা দিচ্ছে। বিরিয়ানি আনতে ভুলে গেছে বা বিরিয়ানির কথা আমাকে শুধু খুশি করার জন্য বলেছে। এরপর রাত দশটার দিকে কর দিয়ে বলবে " একদম ভুলে গেছি। " তখন আবার আমার রাগ বাড়বে, আবার ঝগড়া হবে। 


সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত বেলকনিতে বসে বসে অপেক্ষা করছি, রাগের চেয়ে চিন্তা বেশি লাগলো। বিকেলে খারাপ ব্যবহার করার জন্য নিজেকে খুব খারাপ বলে মনে হচ্ছে। তার সহজসরল চেহারা আর আমার রাগি বিভৎস বকাবকি চোখের সামনে ভেসে যাচ্ছে। চোখ দিয়ে অজান্তেই পানি বের হয়ে গেল, বেলকনি থেকে রুমে এসে শাড়ি খুলতে লাগলাম। 


আমার রুমের পাশের রুমে আমার বান্ধবী তমা থাকে, তমা মামুনকে চেনে। তমার এক ফ্রেন্ড মামুন এর মেসে থাকে। তমা আমার রুমে এসে তড়িঘড়ি করে বললো, 


- মামুন ভাইয়ের খবর শুনেছিস? 


- আমি অবাক হয়ে বললাম, না তো। 


- বিকেলে নাকি তারা মন্ত্রী এসেছে সেখানে সমাবেশে যোগ দিতে গেছে। সমাবেশ শেষ পর্যায় তখন নাকি গন্ডগোল হয়েছে, অনেক মারামারি হয়ে গেছে। অনেক মানুষ আহত আর চারজন মারা গেছে সেখানে। সেই চারজনের মধ্যে,, 


বুকটা কেঁপে ওঠে, আমি বললাম, 


- মামুন ঠিক আছে তো? 


- সেই চারজনের মধ্যে মামুন ভাই ছিল। মামুন ভাইয়ের ভিড়ের মধ্যেই কার যেন একটা শক্ত লোহার বারি লেগেছে মাথায়। তারপর মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে, অনেক মানুষ ছোটাছুটি করছে তাদের পদদলিত হয়ে হাসপাতালে নেবার আগেই মারা গেছে। 


|

|


বেলকনিতে বসে রাস্তার দিকে তাকিয়ে রইলাম, ল্যাম্পপোস্টের বাতির নিচে সবসময় এসে দাঁড়িয়ে 

থাকতো মামুন। অভিমান করে সত্যি সত্যি সে হারিয়ে গেছে অনেকটা পথ পেরিয়ে। যদি বুঝতে পারতাম বিকেল বেলা এটাই আমাদের শেষ দেখা হবে তাহলে কোনদিনই ঝগড়া করতাম না। তাকে হয়তো জড়িয়ে ধরে বলতাম " তোমাকে কোথাও যেতে দেবো না, তুমি সারাজীবন আমার সঙ্গে থাকবে। " 


★★


কারো সঙ্গে কথা হবার পরে বিদায় নেবার সঙ্গে সঙ্গে সকল রাগ অভিমান অভিযোগ মিটিয়ে নেন। আজকে যার সঙ্গে কথা হচ্ছে, যাকে তুমি কারণে অকারণে কষ্ট দিচ্ছ। আগামীকাল তার কাছে ক্ষমা চাইবার কিংবা Sorry বলার সুযোগ নাও পেতে পারো। প্রকৃতি মাঝে মাঝে অনেক প্রিয় জিনিস কেড়ে নিয়ে যায়, নিষ্ঠুর প্রকৃতি কারো দরকার বুঝতে চায় না। 


আজ যাকে অবহেলা করছো, ক্যালেন্ডারের এই দিনে আগামী বছর হয়তো তার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী হতে পারে। তখন তার কথা যদি মনে ওঠে তাহলে তোমার মনের মধ্যে দুমড়েমুচড়ে একাকার হবে। 

কিছু কিছু প্রিয় মানুষ ভুল করে কিংবা প্রকৃতির ডাকে পৃথিবীর থেকে হারিয়ে যায়। তারা খুব বড় ধরনের পাষাণ, কারণ ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ তারা দেয় না। 


একবার ভাবুন তো। 

আপনার খুব প্রিয় বন্ধু, ভালোবাসার মানুষ, ভাই বোন এদের মধ্যে কারো সঙ্গে হঠাৎ খুব ঝগড়া হয়ে গেল। আপনি তাকে ভুল বুঝে অনেক কথা তাকে বললেন, সকাল সন্ধ্যা বা রাতে হঠাৎ তার খবর এলো সে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে। আপনি তখন কি করবেন? কি হবে আপনার অনুভূতি? 


" প্রতিটি প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। "


তাই কে কখন আপনার আমার আমাদের কাছ থেকে হারিয়ে যাবে সেটা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। কি দরকার ক্ষনিকের এই জীবনে কাউকে খুব কষ্ট দেবার? জীবন তো একটাই। 


-----


এতটুকু আমার লেখা। 


#নিচে কিছু সংগ্রহীত কথা এড করে দিলাম। 


ঠিক ১৪ বছর আগে যে মেয়েটির সাথে প্রেম ছিল সে আজ ২ সন্তানের জননী। তার মেয়েটিও এখন স্কুলে যায়, হয়তো ক'দিন পর সেও তার মায়ের মতো কারও সাথে প্রেম করবে নিজের পছন্দে, বিয়ে করবে ফ্যামিলির পছন্দে। দু'টা প্রজন্ম বিয়ের দ্বার প্রান্তে অথচ ছেলেটি আজও ব্যাচেলর।


ঢাকা ইউনিভার্সিটির এক স্যারকে দেখেছিলাম খবরের ইন্টারভিউতে; সত্তুরোর্ধ তবু আজও তিনি সিংগেল। বিয়ে করেননি, আর যতদিন বেঁচে থাকবেন বিয়ে করবেন না! পেছনের গল্পটা ছিল কোনো এক মায়াবতীরর।


গত ১৪ ফেব্রুয়ারিতে এক ভাইকে দেখেছিলাম, মিরপুর বুদ্ধিজীবি কবরস্থানে ফুল দিয়ে দাড়িয়ে আছে পাথরের মতো চোখে গড়াচ্ছে অশ্রু। তার ভালোবাসার মানুষটি এখানে শায়িত তাই তিনি এখনো অবিবাহিত।


এক আপুকে দেখেছিলাম, চিঠি লিখে আবার তা ছিঁড়ে জানালা দিয়ে ফেলে দিচ্ছে প্রতিদিন। একদিন ছেঁড়া চিঠি জোড়া লাগিয়ে পড়ে আমার অন্তর ছিঁড়ে যাচ্ছিল। যেদিন তার প্রিয় মানুষটির সাথে প্রথম দেখায় কথা বলার কথা সেদিন দেখা হয়েছিল ঠিক, কথা হয়নি। একসিডেন্টে সে ওপারে চলে যায় আর আপুটি আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখে যায়...!




Post a Comment

0 Comments