|
golpo-ghar.blogspot.com
|
ডাক্তার সাহেব আমার সামনে ঝুঁকে এসে বললেন, কী অসুবিধা?
আমি বললাম, অসুবিধা বিরাট। মনে হয় মাথা আউলাইয়া গেছে। শরীর গরম। সারাক্ষণ হিটের উপর আছে। চুলকানিও আছে। সারাক্ষণ চিল্লাচিল্লি করে।
কোন ঔষধ খাইয়েছেন?
নাপা টেবলেট দিয়েছি।
নাপা খাইয়ে ভালো করেছেন। চুলকানি আছে বুঝলেন কেমনে? লেজের মথায় ঘা নাই তো? অনেক সময় লেজের আঘায় ঘা হলে এরা শরীরে লেজের আগা ঘষে।এমন সমস্যা নাই তো?
লে হালুয়া! এখানে লেজ আসলো কোথা থেকে? পরক্ষণে মাথা তুলে ডাক্তারের পিছনের দেয়ালে তাকিয়ে দেখি, তাতে লেখা_
ডাঃ রহমত উল্লাহ
পশু চিকিৎসক।
এই কাম ছেড়েছে! মেডিসিন ডাক্তার খুঁজতে গিয়ে ভুল করে পশু চিকিৎসকের কাছে চলে এসেছি!!
কয়েকদিন যাবৎ বউয়ের হালকা জ্বর, মাথা ব্যাথা। সাথে এলার্জি সমস্যা আছে। শরীর চুলকায়। ডাক্তারের কাছে যেতে বলছি, যাবে না। আমাকে বলছে, তুমি ডাক্তারের কাছে গিয়ে ঔষধ নিয়ে আস। এই লকডাউনের সময় করোনার রোগী হয়ে মারা যেতে চাই না।আমি মারা যাবো আর তুমি বিয়ে করে আরেকটা বউ নিয়ে আসবে,তা হবে না!
আর বাইরে বের হয়ে করোনা রোগী হয়ে যদি আমি মারা যাই?
তুমি মরলে সমস্যা নাই, আমি মারা গেলে পোলাপানের কী হবে? এদেরকে লালন পালন করবে কে? পুরো সংসারের দায়িত্ব আমার উপর ছেড়ে দিয়ে তুমি তো খালাস। একা একা সংসার সামলানো কত কঠিন তা কি বোঝ?
এইটা অবশ্য ঠিক বলছো। সামর্থ্য আছে এবং ধর্মে চারটা বিয়ে করার অনুমতি থাকার পরও যারা শুধুমাত্র একটা বিয়ে করে সংসারের সব দায়িত্ব একা বউয়ের উপর ছেড়ে দেয়,তাদের ফাঁসি হওয়া উচিত!!
বউ কটমট করে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো!
আমি ভয়ে ভয়ে সেখান থেকে সরে পড়লাম।
এমনিতেই গতকাল একটা ভুল করে ফেলেছি। গতকাল বিকেলে আমাদের বাড়িওয়ালা এসে বললেন, ভাই সাহেব,আপনার ভাবিকে দেখেছেন? অনেকক্ষণ যাবৎ খুঁজে পাচ্ছি না।
আমি বললাম, দেখেছি।
কখন দেখেছেন?
গোসলের সময়।
বাড়িওয়ালা অসভ্য ইতর ইত্যাদি গালি দিতে দিতে চলে গেলেন। বউ আগুনের মতো মুখে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিল।
সারারাত বুঝিয়ে অবশেষে বউকে বিশ্বাস করাতে পেরেছি যে আমি গোসল করার সময় বাড়িওয়ালার বউ একবার এসেছিল!!
বউয়ের আদেশ কে কবে অমান্য করতে পেরেছে! এদের সাথে কখনই পেরে উঠা যায় না। স্বামী আর আসামীর মধ্যে কোন পার্থক্য নাই।একজন খুনীকে ফাঁসাতে সাক্ষী লাগে একজন। কিন্তু কোন মেয়েকে বউ বানাতে সাক্ষী লাগে তিনজন!
অর্থাৎ বউ একজন খুনী থেকেও তিনগুণ ভয়ংকর!!
এদেরকে ঘাঁটিয়ে কোন লাভ নাই, এই বিবেচনা করতে করতে একটা হাসপাতালে ঢুকলাম বউয়ের জন্য ঔষধ নিতে। কিন্তু ভুলক্রমে পশু হাসপাতালে চলে এসেছি!!
বাসায় আসার পর চুপচাপ ধ্যানে বসে গেলাম। শান্তি বজায় রাখতে হবে। এমনিতেই বউ আমাকে রামছাগল মনে করে। এই তথ্য জানলে কি মনে করবে কে জানে!
বউ এক দুইবার উকি দিয়ে দেখে গেছে, কিছু বলেনি। কিন্তু এভাবে কতক্ষণ ধ্যানে বসে থাকা যায়? বাঙালি জাতির ধৈর্য কম। এরা চুষে খাওয়ার সিভিট কচকচ করে চিবিয়ে খায়। পরীক্ষার আগেই রেজাল্ট চেয়ে বসে! আমিও অধৈর্য হয়ে রনভঙ্গ দিলাম।
মোগল আমলের পর এখন চলছে গুগলের আমল।সবার হাতেই গোগল ঘুরছে।আমি গুগলে সার্চ দিয়ে বউ বশিকরনের এক,শ একটা উপায় খুঁজতে লাগলাম।
বউ কাছে এসে বললো, ঔষধ এনেছো? তোমাকে যে বললাম, ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে ঔষধ আনতে!
আমি নিরীহ গলায় বললাম, ঔষধ আনতে তো গিয়েছিলাম। কিন্তু বিশ্বাস কর,ব্যাটা কোন মানুষের ডাক্তার নয়।আস্ত একটা পশু ডাক্তার!
বল কী? কেন কী হয়েছে? তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে?
সে আর বলতে? যখন তোমার শরীরের চুলকানির কথা বললাম, ব্যাটা কী বলে, জান? আমাকে বলে আপনার বউ শরীর চুলকায় কী দিয়ে? লেজ দিয়ে? চিন্তা করে দেখ,কত বড় ফাজিল!
ডাক্তার তোমাকে এই কথা বললো?
তাহলে আর বলছি কী!আরে ব্যাটা! আমি কি তোর দুলাভাই! ব্যাটা ফাজিল!!
বউ কছু ফিসফিস করে বললো, বুঝেছি।
আমি বললাম, কী বুঝেছো?
ডাক্তার তোমার চেহারা দেখেই বুঝতে পেরেছে, তুমি একটা বিরাট গাধা!
আর তোমার চেহারা দেখলেই বুঝা যায় তুমি বিরাট জ্ঞানী!
অবশ্যই জ্ঞানী। জ্ঞানী না হলে এই সংসার সামলাচ্ছি কেমনে? তোমার মতো গাধাকে নাকে রশি দিয়ে ঘুরাই কীভাবে?
মহাজ্ঞানী প্লেটো কী বলেছেন জান?
না। কী বলেছেন?
পৃথিবীতে এমন একটা সময় আসবে, তখন নির্বোধরা জ্ঞানীদের শাসন করবে! সেইদিন বোধ হয় এসে গেছে!!
প্লেটো এই কথা বলেছেন?
হা।
ছাগল!
কে ছাগল? আমি না প্লেটো?
দু'জনেই!
নিজেরে মনে হয় বিরাট কিছু মনে কর।
অবশ্যই মনে করি।আমার মতো শিক্ষিত, সুন্দরী বউ তোমার কপালে জুটেছে এটা তোমার ভাগ্য। ভাগ্য গুনে আমার মতো বউ পেয়েছো!
আমি নীচু গলায় বললাম, নিজের বউ যতোই সুন্দরী শিক্ষিত হউক না কেন, পরের বউ সব সময় ভালো!
বউ আমাকে কেন ছাগল বলে সেই গল্প বলি। বিয়ের পর তার বড় বোনের জামাই আমাদের বাসায় বেড়াতে এসেছে। ভদ্রলোক এসেই আমার হাত জড়িয়ে ধরে বললেন, আমি নেভিতে আছি। আপনি?
আমি নিজেকে জাহির করার জন্য বললাম, ওসব নেভি চেভিতে আমি নাই। আমি ডাইরেক্ট বেনসন। এটা বলেই একটা সিগারেট এগিয়ে দিলাম।
বউ চিবিয়ে চিবিয়ে বললো, উনি নৌ বাহিনীতে আছেন সেটা বলেছেন। তোমার বিড়ি সিগারেটের কথা বলে নাই! উনি নৌবাহিনীর একজন বড় অফিসার!!
আমি সাথে সাথে সিগারেট লুকিয়ে ফেললাম!
রাতে খেতে বসেছি। তরকারি ভালো হয়নি। বউ ইউটিউব ঘেঁটে ডিম বেরেস্তার মতো নতুন আইটেম বের করেছে। আমি নাকমুখ খিঁচে খেয়ে যাচ্ছি। বউ খুশি খুশি গলায় ফেসবুক ঘাঁটতে ঘাঁটতে বললো, তরকারি ভালো হয়নি?
অবশ্যই ভালো হয়েছে। তবে মনে হচ্ছে তরকারিতে লবন দাও নি।লবনের স্বাদ পাওয়া যাচ্ছে না।
অবশ্যই তরকারিতে লবন ঠিক হয়েছে। তোমার মুখের স্বাদ নষ্ট হয়ে গেছে!
কী করে বুঝলে লবন ঠিক হয়েছে? তুমি তো এখনো তরকারি খাও নি!
আরে, এই তরকারির ছবি ফেসবুকে দিয়েছি।কতগুলো লাইক কমেন্ট পড়েছে, দেখেছো? লবন যদি কম হতো, তরকারি যদি স্বাদের না হতো,এতো লাইক কমেন্ট পেতাম?
এরপরে আর কথা চলে না!
কোথায় যেন পড়েছিলাম। এক বিজ্ঞানী বিয়ে করেছে।তার উদ্দেশ্য ছিল, বিয়ে কী তা জানা। কিছুদিন পর বিজ্ঞানী আবিস্কার করলো,বিয়ে কী তা সে জেনেছে তবে বউয়ের যন্ত্রণায় বিজ্ঞান কী তা সে ভুলে গেছে!!
0 Comments
Thanks for your valuable comment. We will be back soon.
Thank you 😊😊😊