রহস্য Mystery

Ads Inside Post

রহস্য Mystery

পর্ব দুই



নিজের গলায় নিজেই বারবার ছুড়ি চালিয়ে আত্মহত্যা, ভাবতেই গা শিউরে উঠছে। সাইকোলজিক্যাল ভাবে ব্যখ্যা করলে এক ব্যক্তি কিছুতেই গলার ভিতরে একবারের বেশি ছুড়ি চালনা করবে না। একটু আগে সপ্তম তলার জানালার ওপাশে ভাসমান অবস্থায় দাঁড়িয়ে ছিলেন জাকির আংকেল। আংগুল ঘুড়িয়ে কাঁচের উপরে লিখেছিলেন সেই দুর্বোধ্য সংখ্যাগুচ্ছ। পাম্পেই নগরীর সেই পরিত্যক্ত বাড়ি, লিন্ডা, সাঞ্জে এরা সবাই কি একই সূত্রে গাঁথা!! ভাবতে ভাবতে বাকি রাতটুকু না ঘুমিয়েই কাটিয়ে দিল বর্ণ। পরদিন সকালে বর্ণের গেস্ট রুমে কিছু অপরিচিত লোকজন আসে। লোক গুলো এসে বর্ণকে-জামা কাপড় সহ ব্যাবহার্য যা যা জিনিসপত্র আছে তা সব কিছু গুছিয়ে নিতে বলে।লিন্ডা লোক পাঠিয়েছে বর্ণকে তাদের নিজ বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য। রেডি হতে বেশ কিছুক্ষন লেগে যায় বর্ণর। গত রাতে কাঁচের উপরে লেখা সংখ্যাধাঁধাগুলো এখনো স্পষ্ট। মোবাইল ফোন বের করে লেখাটির কিছু ছবি তুলে নেয় সে। পরবর্তী তে কাজে লেগে যেতে পারে। লিন্ডার বাসায় পৌঁছাতে বেশি সময় লাগে নি। পুলিশ সকালেই জাকির সাহেবের রুমটা তালাবদ্ধ করে লাশ নিয়ে গিয়েছে পোস্ট মর্টেম এর জন্য। লিন্ডার অবস্থা ও শোচনীয়। এত বড় ধাক্কা সামলাতে পারে নি। চিৎকার করে কাঁদছে এখনো। বর্ণকে দেখার পর যেন তার কষ্ট আরো কিছুটা বেড়ে গেল। লিন্ডা কিছু একটা বলতে চাচ্ছিল বর্ণকে। কিন্তু কান্নায় বার বার জড়িয়ে আসছিল তার কন্ঠ।লিন্ডার কথা গুলো গোঙ্গানির আওয়াজে রূপান্তর হয়ে যাচ্ছিল। লিন্ডাকে সান্তনা দেয়ার মত ভাষা বর্ণের নেই।সে ব্যাগ থেকে এটিভেন নামের একটা ট্যাবলেট বের করে গ্লাসের পানিতে গুলিয়ে দেয়।এটি একটি হাই পাওয়ারফুল ঘুমের ঔষধ। লিন্ডাকে সুস্থ ও সাবলীল রাখতে হলে এখন ওর কান্না থামাতে হবে। সুতরাং ৮/৯ ঘন্টার জন্য ঘুম পাড়িয়ে দেয়ার আয়ডিয়াটা যথাযথ বলেই মনে হচ্ছিলো বর্ণের কাছে।ঔষধটার স্বাদ নরমাল। পানিতে গোলালেও তাই স্বাদের কোন পরিবর্তন আসে না। বর্ণ পানির গ্লাস হাতে লিন্ডার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। লিন্ডা তখন বালিশ চাপা দিয়ে কান্না করছিল।চোখ গুলো ফুলে লাল হয়ে আছে। সর্দি আর চোখের পানি মিলে পুরো চেহারাটার বিশ্রি একটা অবস্থা হয়ে ছিল। একটা টাওয়েল নিয়ে বর্ণ লিন্ডার চোখ মুখ মুছে দেয়। লিন্ডার বয়স যখন মাত্র ১২ তখন তার মা হঠাৎ করেই এ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। এরপর মা এবং বাবার আদর দুটোই পেতো জাকির সাহেবের কাছ থেকে। আজ সেই শেষ অবলম্বন টুকুও হারিয়ে ফেলল লিন্ডা।ওর জায়গায় যে কেউ হলেই প্রচন্ড ভেংগে পড়ত। পানির গ্লাসটা লিন্ডার মুখের সামনে ধরে বর্ণ। চোখ মেলে একবার বর্ণের দিকে তাকিয়ে মাথা এপাশ ওপাশ ঝাকায়, পানি খেতে অস্বীকৃতি জানায় সে। কাল রাতের এবং আজকের ঘটনায় বর্ণের মানষিক অবস্থাও খুব একটা স্টাবল ছিল না। সে একটু জোর করেই লিন্ডাকে অন্তত পানি টুকু খাওয়ার জন্য অনুরোধ করে। সাথে এটাও বলে, আমি আছি তোম সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। যদিও বর্ণ নিজেই খেয়াল করছিল, পানির গ্লাস ধরা অবস্থায় তার হাত কাঁপছে। লিন্ডার মুখের সামনে ধরতেই একটু চুমুক দিয়ে অল্প কিছু পানি খেয়ে নেয় সে। পরে নিজেই বর্ণের হাত থেকে গ্লাস নিয়ে ঢক ঢক করর পুরো পানিটা খেয়ে ফেলে। কাল রাতের ঘটনার পর থেকে ভয়,দু:খে গলা শুকিয়ে আসলেও হয়ত একটু দানাপানি ও ছোয় নি মেয়েটা। কিছুক্ষনের ভিতরে ঘুমিয়ে পরবে মেয়েটা ভেবে গ্লাস হাতে উঠে চলে আসে বর্ণ। বাইরে প্রচন্ড ভীড়। সাংবাদিক এবং সিকিউরিটি গার্ড দের। তারা ভীড় ঠেলে বাসার ভিতরে ঢুকে লিন্ডার সাক্ষাতকার নেয়ার জন্য আগ্রহী। যে চ্যানেল সবার আগে লিন্ডার সাক্ষাতকার নিতে পারবে সে চ্যানেল ই যেন সব থেকে বেশি হিট হবে, এমন একটা ধারণা বিরাজ করছে জার্নালিস্ট দের মধ্যে। শত হলেও রহস্যজনক মৃত্যু। পুলিশ লাশটা উদ্ধার করার সময় ছুড়িটা তার গলার ভিতরেই বিদ্ধ অবস্থায় পায়। ডান পাশ থেকে কাত হয়ে ঢুকে স্বরনালী ভেদ করে বের হয়ে রয়েছিল অপর প্রান্ত থেকে। ইতিমধ্যেই জাকির সাহেবের মত ডেডিকেটেড একজন জার্নালিস্ট এর এরকম মর্মান্তিক মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন ইটালী এর উর্ধ্বতন কর্মকর্তা রা। বাসার সামনের দিকের ভিড়ে একটু উঁকি দেয় বর্ণ। সাথে সাথে তাকে উদ্দেশ্য করে সাংবাদিক দের চিৎকার চেঁচামিচি শুরু হয়ে যায়। একদল আবর্জনা যেন এসে বর্ণের কানে ঢুকে গেল এমন একটা অবস্থা। বাইরে কিছু পুলিশ ছিল যাতে অনাকাঙ্ক্ষিত কেউ বাড়ির ভিতরে ঢুকে পরতে না পারে। তাদের একজনকে গিয়ে বর্ণ বলে আসে, লিন্ডা খুবই অসুস্থ। সে এখন কোন সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে পারবে না। তারা যেন চলে যায়। সিকিউরিটি পুলিশ তাদেরকে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলে। একে একে সব ভীড় কমে যায়। বাইরের জটলা আস্তে আস্তে পরিষ্কার হয়ে যায়। বাসায় দুজন হেল্পিং হ্যান্ড আছে। দুজনেই মমধ্যবয়সী মহিলা। তারা রান্না সেরে ঘরদোর গুছিয়ে চলে যায়। লিন্ডা তার রুমে ঘুমাচ্ছে। বর্ণ ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে টিভি অন করে।টিভি অন করার পর ই নড়েচড়ে বসতে হয় তাকে। পুলিশ যখন লাশটাকে বের করে নিয়ে যাচ্ছিল তখন জার্নালিস্ট রা লাশটির কিছু ভিডিও ধারণ করতে সক্ষম হন। প্রায় সব নিউজ পোর্টালেই এই একটা নিউজ ই দেখাচ্ছে। টিভি বন্ধ করে দেয় বর্ণ। সোফার উপর হেলান দিয়ে শুয়ে থাকে। রাতে ঠিকভাবে না ঘুমাতে পারায় আস্তে আস্তে ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যায় সে।ঘুম ভাংগে বাসার বাইরে ঝগড়ার শব্দে। ব্যাপার কি! উঠে বসে বর্ণ। আস্তে আস্তে গিয়ে দরজা খুলে। বাসার বাইরে তখনও পুলিশের দুজন কর্মী দাঁড়িয়ে ছিল। তাদের ই একজন একটা মাঝবয়সী লোকের কলার শক্ত করে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আরেকজনের হাতে ইলেক্ট্রিক টেজার। পালানোর কোন রাস্তা নেই। সেই লোকটাই বারংবার চিৎকার করে তাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছে। সামান্য মারামারি ও বোধ হয় হয়েছিল। ।লোকটার নাক ফেটে রক্ত পরছে। পাশেই পরে আছে একটা পুরোনো আমলের ক্যামেরা। ওদের কথাবার্তা শুনে বর্ণ আসল ঘটনা বুঝতে পারে। জাকির সাহেবের রুমের সাথে লাগোয়া একটা সরু গাছ রয়েছে। সিকিউরিটির চোখ ফাঁকি দিয়ে সেই গাছে উঠে ছেলেটা রুমের ভিতরের ছবি তুলতে চেয়েছিল।কিন্তু পুরোনো মডেলের ক্যামেরাটাই তাকে বিপদে ফেলল। একটু মাত্রাতিরিক্ত শব্দ হওয়ায় সিকিউরিটি পুলিশের দায়িত্বে থাকা দুজিনের চোখ চলে যায় গাছের ডালে। এরপর সেখান থেকে নামিয়ে উত্তম মাধ্যম দিয়ে ধরে রাখা হয়েছে। একটু পর পুলিশের গাড়ি এসে তাকে নিয়ে যাবে। বর্ণ চট করে লেদারের কালো জ্যাকেট টা গায়ে চাপিয়ে পুলিশদুজনের কাছে চলে গেল। গিয়ে নরম গলায় বলল, এক্সকিউজ মি, স্যার, হি ইজ লিন্ডা'স রিলেটিভ। হট ওয়াজ হিজ ফল্ট? বর্ণর মুখে এরকম স্যার ডাক শুনে তাদের মন কিছুটা শান্ত হয়ে গিয়েছিল। তারা দুজন বর্ণকে বুঝাতে চেষ্টা করছিল, সে গাছে উঠে উঁকি দিয়েছে , গাছ থেকে নামতে বলার পর দৌড়ে পালাতে চেয়েছে, বর্ণ তাদের দিকে তাকিয়ে ইশারায় কানে উপরে মাথার কাছে আংগুল নিয়ে একটু ঘুরালো ও মুখে ভেংচি কাটল। পুলিশ দুজনকে সে বুঝাতে চাইলো লোকটার মাথায় সমস্যা আছে। লোকটার দিকে তাকিয়ে বর্ণ সজোরে ধমক দিয়ে ইংলিশে বলল, এক্সকিউজ মি, লিন্ডা ইজ কলিং ইউ, গো ইনসাইড হোম। ধমকের সাথে সাথে যে পুলিশটি লোকটির কলার ধরে ছিল, সে জামার কলার থেকে হাত সরিয়ে নিল। ছাড়া পেয়ে লোকটি ভাংগা ক্যামেরার টুকরোগুল জড়ো করে একটা কনফিউশন নিয়ে বাসার ভিতরের দিকে পা বাড়ালো। ভদ্রতার খাতিরে, " আই এম রিয়েল্যি সরি ফর দ্যাট ইন্সিডেন্স " বলে পুলিশ দুজনের কাছ থেকে বিদায় নিল বর্ণ। বাসায় ঢুকে দরজা লাগিয়ে সোফার উপরে বসাল লোকটিকে। এরপর ভিতরে গিয়ে এক গ্লাস পানি এনে দিল তাকে। লোকটি খুব দ্রুত সে পানি খেয়ে শেষ করে ওয়াশরুম কোথায় জানতে চাইল। বর্ণ দেখিয়ে দিল। ফ্রেশ হয়ে এসে লোকটি ভাংগা ভাংগা ইংরেজীতে তাকে যা বলল, তার অর্থ এটাই, " আমি বুঝেছি আপনি আমাকে বাঁচাতে চেয়েছেন। বিশ্বাস করুন আমি এজন্য কৃতজ্ঞ। কিন্তু আমাকে বাঁচিয়ে আপনার লাভ কি?" বর্ণ পায়ের উপর পা উঠিয়ে বসে তাকে কনফিডেন্টলি জিজ্ঞেস করে, ডু ইউ নো? হু আই এম? লোকটি কাচুমাচু হয়ে গুটিয়ে যায়। উত্তরে বলে, নো স্যার, সরি স্যার। বর্ণ: এপোলোজি এক্সেপ্টেড। বর্ণ এবং মাঝ বয়সী লোকটার সাথে এরপর যে কথাবার্তা হয়, সেটার অনুবাদ ; বর্ণ : আপনার নাম কি? লোকটি: ক্রিশ্চান তাইসন। বর্ণ: পেশা? তাইসন: নির্দিষ্ট কোথাও আমি কাজ করি না। সাংবাদিকদের কাছে ফটোগ্রাফি বিক্রি করাটাই আমার কাজ।এজন্য আমি বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে ছবি তোলার চেষ্টা করি। পরে ছবিগুল জার্নাল দের কাছে নিয়ে যাই। যারা দাম বেশি বলে তাদের কাছেই দেই। শুনে অনেকটা নিরাশ হয়ে যায় বর্ণ। তার মানে উনি প্রফেশনাল সাংবাদিক না, আর ওনার কাছে কোন আইডি কার্ড ও নেই। বর্ণ: আপনি তো প্রফেশনাল জার্নালিস্ট না। আসলে আমি বর্ণ, প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর।





 বলা যায় ছোট খাট একটা মিশন নিয়ে এসেছি। এজন্য আমার অনেক তথ্য লাগবে। জাকির আংকেলের সাহায্যে একজন জার্নাল এজেন্টের আইডি কার্ড করিয়ে নিলে তথ্যগুল সংগ্রহ করা যেত। কিন্তু তিনি তো... ভেবেছিলাম আপনার সাথে ডিল করব। আপনি আমার হয়ে তথ্য এনে দিবেন কিন্তু আপনিও তো প্রফেশনাল না। তাইসন: স্যার, আপনি জানেন না, আমি প্রফেশনাল না হলেও লাইন ঘাট সব চিনি। বলতে দ্বিধা নেই আমি চাটুকারিতা করেই দু পয়সা কামাই। কোথায় কিভাবে কি করলে আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যাবে তা আমি সব জানি। আপনি আপনার মিশন এ আমাকে সাথে রাখতে পারবেন। এই পবিত্র ক্রস ছুয়ে কথা দিচ্ছি সব কিছু আমাদের মাঝে গোপন রাখব। গোয়েন্দারা কাউকেই বিশ্বাস করেনা। বর্ণ ও তাইসন কে বিশ্বাস করতে পারছে না। কিন্তু বর্ণ তো আর কাচা খেলোয়াড় নয়। সে ঠিকই জানে কিভাবে একজনকে ১০০% ব্যাবহার করতে হয়। একবার তো বর্ণকে খুন করার জন্য এসেছিল একজন,তাকেও ব্যাবহার করে নিজের কাজ করিয়ে নিয়ে, পরে বিশাল একটা সারপ্রাইজ দিয়েছিল লোকটি কে। যাই হোক, তাইসন কে দিয়ে কাজ করিয়ে নিতে অসুবিধে হবে না। যাক, কাজ শুরু করার একটা উপায় তো পাওয়া গেল। তাইসন কে খেতে দেয় বর্ণ। খাওয়ার সময় মানুষ সবচেয়ে বেশি সত্য কথা বলে, পাম্পেই নগরীর সেই বাসাটা সম্পর্কে গল্পের ছলেই বর্ণ জানতে চায় তাইসনের কাছে। তাইসন গড় গড় করে অনেক তথ্য বলে দেয়। সেখান থেকে উদ্ধার করা চারটে সাঞ্জের লাশের ভিতরে একটার সাথে অপরটির একটুও তফাৎ ছিল না। বাসার ভিতর থেকে গাড়িটিকে নিয়ে এসে গবেষনার এ রাখা হয়েছে। এছাড়া আর তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। বাসাটার চারপাশে কিছুদিন পুলিশের পাহাড়া ছিল কিন্তু ঘরটি পুরোপুরি ফাঁকা থাকায় এখন আর তেমন কোন পাহাড়াদার নেই।তবে অদ্ভুত কিছু ঘটে কিনা সেটা জানার জন্য ক্যামেরার আওতাধীন রাখা হয়েছে পুরো ঘরটি কে। মজার ব্যপার হল,পিজার প্যাকেটগুল সব খালি ছিল। সেই খালি প্যাকেটটি ও গবেষণাগার এ আছে। -এখান থেকে পাম্পেই এর সেই ঘরে যেতে কতক্ষন লাগবে তাইসন ? - ২ ঘন্টার মত। - তুমি যাবে? আমরা তাহলে ঘরটা ঘুরে দেখে আসতাম একটু। - কবে যেতে চাচ্ছেন?? ঘড়ির দিকে তাকায় বর্ণ। বিকেল ৬ টা। সন্ধ্যা হয়ে এল বলে। আজ রাতে একটা ট্রিপ দেয়ার সময় আছে যথেষ্ট। তবে লিন্ডাকে একা বাসায় রেখে যাওয়া ঠিক হবে না। এখনো ঘুমে আচ্ছন্ন সে। লিন্ডার রুমে গিয়ে একবার ঢু মেরে আসে বর্ণ। বেঘোরে ঘুমাতে ঘুমাতে বিছানার একদম পাশে চলে এসেছে লিন্ডা। একটু হলেই নিচে পরে যাবে এমন একটা অবস্থা। বর্ণ গিয়ে লিন্ডাকে বিছানার মাঝে রাখার জন্য এক হাত দু পায়ের হাঁটুর মাঝে নিচে রেখে অন্য হাত লিন্ডার কাঁধের নিচে দিয়ে নিয়ে ওকে জাগিয়ে বিছানার মাঝ বরাবর নিতে চেষ্টা করে। আর ঠিক সেই মুহূর্তেই আরেকবারের জন্য ধাক্কাটা খায় বর্ণ। লিন্ডাকে এক চুল পরিমান ও নড়াতে পারছে না সে। একজন সিমসাম মেয়ের দেহ এত্ত পরিমান ভারী হতে পারে তা ধারণার বাইরে ছিল তার। লিন্ডার মুখমন্ডল এখনো লাল হয়ে আছে। চোখের চারপাশ ফুলে আছে। নিঃশ্বাস নিচ্ছে স্বাভাবিক ভাবেই। কিন্তু দেহ এতটা ভারী কেন!! নাকি বর্ণের শক্তি কমে গেল!! নিয়মিত জিম করা একটা ছেলে একজন মেয়েকে তুলতে পারছে না, বর্ণের নিজের ভিতরে একিটু অপমানবোধ ও কাজ করতে লাগল । নিজের শক্তি পরীক্ষা করার জন্য ড্রয়িং রুমে চলে যায় সে। খেয়ে দেয়ে সোফার উপরে ঘুম দিয়েছে তাইসন। বর্ণ একটু ইতস্ততবোধ করে আস্তে আস্তে তাইসনের হাটুর নিচ দিয়ে হাত দিয়ে অপর হাত ঘাড়ের নিচে দিয়ে উপরে তোলার চেস্টা করতেই খুব সহজেই তাইসন একদম বর্ণের আড়কোলে চলে আসে। হঠাৎ ঘুম ভেংগে যায় তাইসনের। নিজেকে বর্ণের কোলে আবিষ্কার করে সে হাসবে,কাঁদবে, নাকি লাফ দিয়ে নিচে পরবে তা বুঝতে পারে না।তার মুখে এমন একটা ভাব ফুটে উঠলো, যেন সে ফেঁসে গিয়েছে কোথাও। বর্ণ তাইসন কে নিরাপদ ভাবে সোফায় নামিয়ে রাখে। সিচুয়েশন টা বুঝতে পেরে তাইসনকে বলে, ভয় নেই।নিজের শক্তি টা একটু পরীক্ষা করলাম , অভিযানে যেতে হবে তো!! বর্ণ ওকে এটাও বুঝিয়ে বলে, লিন্ডা যাতে তাইসনকে বর্ণের ফ্রেন্ড হিসেবেই জানে।কি হচ্ছে, তাইসন কিছু বুঝতে না পেরে ভ্যাবাচেকা খেয়ে বসে থাকে কিছুক্ষন। বর্ণ লিন্ডার রুমে যায়। ৮ ঘন্টার বেশি সময় ধরে লিন্ডা ঘুমাচ্ছে। এবার তাকে জাগানোর চেস্টা করা উচিৎ। জাগানোর আগে সর্ব শক্তি দিয়ে বর্ণ লিন্ডাকে উঠাতে চেস্টা করে শেষবারের মত। কিন্তু ফলাফল সেই একই। বিন্দু পরিমান নাড়াতেও সক্ষম হয় নি সে। তবে বর্ণ অনুমান করতে পারে, ভার টা আসলে লিন্ডার বাম পাশে খুবই বেশি। . চোখে মুখে পানির ছিটা দিতেই আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকায় লিন্ডা। চোখ মেলে বর্ণকে দেখে চুপচাপ কিছুক্ষন শুয়ে থাকে সে। বর্ণ কথা বলার চেস্টা করে লিন্ডার সাথে। লিন্ডা খুব আস্তে আস্তে উঠে বসে। শরীর ভীষন ক্লান্ত তার। চোখ থেকে গড়িয়ে আবার পানি নেমে আসে। বর্ণ লিন্ডাকে বুঝাতে চেষ্টা করে, যেটা হয়েছে সেটা খুব অস্বাভাবিক, এটার রহস্যভেদ করতে হলে লিন্ডার সাহায্যের দরকার পরবে সবচেয়ে বেশি। বর্ণ সিচুয়েশন একটু হালকা করতে লিন্ডাকে নিজের গল্প শোনায়, নিজের মা বাবা দুজনেই খুব করুণ ভাবে মারা গিয়েছে,এমন একটা গল্প বানিয়ে বলে ফেলে সে। বর্ণ বুঝতে পারে লিন্ডা আগের থেকে কিঞ্চিৎ পরিমান বেটার ফিল করছে। কিন্তু ওর সাথে আলোচনা করার মত সিচুয়েশন আসে নি এখনো। অনেক কষ্টে ওর সাথে কথা বলে বাসায় কাজ করা একজন বুয়ার নাম্বার সংগ্রহ করে তাকে ফোন দেয় বর্ণ। আজ রাতে লিন্ডার সাথে থাকার জন্য অফার করে। প্রথমে রাজি না হলেও কিছু টাকা পয়সার লোভ দেখানোর পরে ঠিকই রাজি হয়ে যায়। এক ঘন্টার ভিতরেই কাজের বুয়া তার ১৬ বছরের মেয়ে সহ লিন্ডার বাসায়, লিন্ডার সাথে রাতে থাকার জন্য চলে আসে।বর্ণ খুশি হয় খুব। আজ রাতে তাহলে পাম্পেই নগরীর পরিত্যক্ত ঘর টা ঘুরে দেখা যাবে। কিন্তু ক্যামেরা গুল থাকলে তো সমস্যা। সিসি ক্যামেরার লাইন গুল কেটে দেয়া পসিবল হবে কিনা সেটাও একটা চিন্তা। তাইসন তার ক্যামেরাটা যতটা পারে জোড়া তালি দেয়ার চেস্টা করছে। বর্ণ গাছের উপর থেকে তোলা জাকির সাহেবের রুমের ছবিটা দেখতে ইচ্ছা প্রকাশ করলো তাইসনের কাছে। তাইসন ক্যামেরার গ্যালারী থেকে ছবি টা বের করে বর্ণের হাতে দিল। ছবিটা হাতে নিয়ে বর্ণ বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকল। প্রতিটা জিনিস খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে শুরু করলো। দেয়ালের অনেক জায়গায় ছোপ ছোপ রক্ত লেগে আছে। জামা কাপড়, বই খাতা গুল সব ছড়ানো ছিটানো।বিছানার উপরে ক্যাপ খোলা একটা কলম পরে আছে। তবে কি তিনি সুইসাইড করার আগে কিছু লিখছিলেন!! থাই গ্লাসের একটু ফাঁকা জায়গা থেকে ক্যামেরা ধরে বেশ বিস্তারিত একটা ছবি তুলেছে তাইসন। অভিজ্ঞ আছে ভাল ই বলা যায়। বর্ণ বেশ কিছুক্ষন ছবির দিকে মনোযোগ দিয়ে ডুবে ছিল, হঠাৎ তাইসন এর ধাক্কায় হুঁশ ফেরে তার। ডায়নিং রুম থেকে জাকির সাহেবের বাসার দরজাটা দেখা যায় স্পষ্ট। আংগুল দিয়ে তাইসন বর্ণকে সেদিকে দেখিয়ে দেয়। বর্ণ দরজার দিকে তাকায়। ঠিক তিন সেকেন্ড পর পর একটা শব্দ ভেসে আসছে, টুক..... টুক..... টুক... মনে হচ্ছে কেউ বড় নখ ওয়ালা একটা আংগুল দিয়ে দরজার উপরে টোকা মেরে চলেছে। ওপাশের ঘরে কাজের বুয়া লিন্ডাকে কিছু খাওয়ানোর চেষ্টা করছে। এদিকে তাইসন চলে গেলে পাম্পেই নগরীর ঘরটা ঘুরে দেখার মত অভিজ্ঞ লোক পাওয়া যাবে না। বর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়, তাইসন কে নিয়ে সে পাম্পেই ঘুরে আসবে আজ রাতটা কোন ক্রমে ওরা তিনজন মিলে কাটিয়ে দিক। কোন ইঁদুর বা টিকটিকিও এরকম আওয়াজের উৎস হতে পারে। কাজের বুয়াকে সব কিছু বুঝিয়ে দিয়ে বর্ণ তাইসন কে নিয়ে বাইরে নেমে পরে। এখানকার রাস্তাঘাট সব অপরিচিত ম গুগল ম্যাপ টা অন করে নেয় ফোনে। সাথে প্রতিরক্ষার জন্য রিভালবার নেই। যেটা আছে সেটা শুধুমাত্র দৈহিক বল।গাড়ি বা বাইক দিয়ে পাম্পেই তে যাবেনা বলে ঠিক করে তাইসন। শহর থেকে ঐদিকটায় গাড়ি বা বাইক নিয়ে যেতে দেখলে ওদেরকে ফলো করতে পারে প্রশাসনের লোকজন। " বুদ্ধিটা তাইসন এর। যাওয়ার উপায় হিসেবে বাইসাইকেল ব্যাবহারের আয়ডিয়াটা মন্দ লাগে না বর্ণের ও। তাইসনের শহরের অলিগলি থেকে শুরু করে ছোট খাট দোকান পর্যন্ত সব কিছুই পরিচিত। সে খুব কম সময়ের মধ্যেই দুটো বাইসাইকেল ভাড়া করে ফেলে। তারপর ছোট খাট গলি অতিক্রম করে চলে আসে শহরের শেষ প্রান্তে। এরপর ই ছাই এর নিচে ঢাকা পরা পাম্পেই নগরীর এড়িয়া শুরু। বর্ণ এবং তাইসন দুজনের কারো ই বিন্দু মাত্রও ধারণা ছিল না আজ রাতে তাদের সাথে কি হতে যাচ্ছে। তারা যে নিখাদ মৃত্যু কূপের দিকে পা বাড়িয়েছে এ কথাটা জানতো শুধুমাত্র লিন্ডা।...
চলবে...



Post a Comment

1 Comments

Thanks for your valuable comment. We will be back soon.
Thank you 😊😊😊