রহস্য

Ads Inside Post

রহস্য

পর্ব এক


- " আমি যাকেই বয়ফ্রেন্ড বানাই না কেন, কিছুদিন পরে সে সুইসাইড করে মারা যাবেই।আমি নিজেকে এখন অভিশপ্ত একজন মেয়ে মনে করছি। এ ব্যাপারে তোমার কাছে কোন সল্যিউশন হবে?" - " আপনার নাম?" - "লিন্ডা।" বর্ণ : আপনার প্রেমে পরে এখন পর্যন্ত কতজন সুইসাইড করেছে? . লিন্ডা: টুয়েলভ। . বর্ণ: আপনার এতগুলো বয়ফ্রেন্ড থাকা এবং তাদের সুইসাইডের ঘটনা দুটোই অস্বাভাবিক লাগছে। তবে সুইসাইড এর ব্যাপারটা কাকতালীয়ভাবে হতেই পারে। এ পৃথিবীতে অনেক অস্বাভাবিক ঘটনা স্বাভাবিক ভাবেই ঘটে যায়। . লিন্ডা: "সেটা অসম্ভব বর্ণ। দেখো, তুমি আমাকে পাগল ভেব না। ব্যাপারটা খুব সিরিয়াস। কেউ ই চায় না এই হাজার মানুষের মাঝে নিজের কপালে একজন অভিশপ্ত মানুষের ট্যাগ লাগিয়ে ঘুরে বেড়াতে।আমার ই বা কি হবে? সারাজীবন কি একা একা ই থাকব? আংকেল বলেছিলো তুমি ভালো একজন গোয়েন্দা। তাই তোমার কাছে কোন সলিউশন পাই কিনা সে জন্য এসেছি।"বিশ্বাস করো আমাকে,আমার জীবন ও ঝুঁকিপূর্ণতার মধ্যে কাটছে। . বর্ণ : আপনি কিভাবে শিওর হলেন যে এটা কোন কাকতালীয় ঘটনা না? . লিন্ডা: তাদের সুইসাইড নোট। বর্ণ: আপনি দেখেছিলেন সব গুলো?? . লিন্ডা: হ্যাঁ দেখেছি।সব গুলো না হলেও বেশ কিছু দেখেছি।

এমনকি এ সুইসাইড নোট গুল ইটালীয়ান পুলিশ দের ও মাথা খেয়েছে। সব গুলো সুইসাইড নোটে একটা অদ্ভুত ধাঁধা লেখা ছিলো। ভাগ্য ভাল এসব সুইসাইডের ঘটনা নিউজপেপারে বা মিডিয়ায় আসে না। তাহলে উলটো সবার সাথে আমার সম্পৃক্তা থাকার কারণে আমাকেই সিরিয়াল কিলার ভেবে আটক করা হত। এখনো পর্যন্ত এই ১২ জনের মৃত্যু যে আমার দ্বারা লিংকড আপ সেটা গোপন আছে। এমনকি পুলিশের কাছে সুইসাইড নোট গুলর একে অপরটার সাথে মিলে যাওয়ার তথ্যটিও তারা পায় নি। . বর্ণ : তার মানে আপনি বলতে চাচ্ছেন একই শহরে আপনার দুজন প্রেমিক ছিল না। রাইট? . লিন্ডা: এক্সাক্টলি। ইটালীর সেম শহরে আমার একটার বেশি বয়ফ্রেন্ড ছিল না। তুমি চাইলে আমি তোমাকে কিছু সুইসাইড নোট এর ছবি দেখাতে পারি। আর হা, আমি বয়সে তোমার বড় হব না।আমাকে তুমি করে বললেই আমি বেটার ফিল করব। . বর্ণ: শিওর। . লিন্ডা গ্যালারি থেকে ফোন বের করে কিছু ছবি স্লাইড করে। বর্ণ সেখানে আত্মহত্যা করা প্রেমিক দের সুইসাইড নোটের ছবি দেখতে পায়। কিন্তু সেখানে শেষ লাইনটাই শুধু এলফাবেটিক। বাকি লাইন গুলতে বেশ কিছু নম্বর এলোমেলো ভাবে সজ্জিত রয়েছে। অদ্ভুত ভাবে ৬ টা সুইসাইড নোটের লেখাই এক।মাত্র ছয়টি ছবি ই লিন্ডা সংগ্রহ করতে পেরেছিল।বাকিগুলোতেও এরকম লেখা ছিল বলে তার ধারণা।ছয়টি সুইসাইড নোটেই লেখা ছিল, 1,2,4,7 1,5,5,4,4, 3,3,6,2 It's pleasant to die. ছবিগুলো দেখে কপালে মৃদ্যু ঘাম চলে আসে বর্ণের। ইটালী এসে এরকম একটা রহস্যের সন্ধান পাবে বুঝতে পারে নি সে। রহস্যের সমাধান দিতে পারবে কিনা সেটা সম্পর্কে বর্ণ নিশ্চিত নয়।


তবে বর্ণ আগ্রহী, ভেতরকার রহস্যটুকু জানার জন্য। নিজ থেকেই সে লিন্ডাকে উদ্দেশ্যে করে বলে, মাত্র কাল ই ইটালী পৌঁছালাম। তুমি চাইলে থাকলে আমাকে নিয়ে কফি খেতে যেতে পারো। বাকিটা গল্প করতে করতে জেনে নিব। লিন্ডা: তুমি ইটালী আসবে শুনেছিলাম আরো চার দিন আগেই। জহির আংকেলের কাছে তোমার অনেক গল্প শুনেছি। তুরাণ, তুমি আর জহির আংকেল মিলে নাকি অনেক বড় বড় কেস সলভড করেছ। মূলত আংকেল ফোনে আমার কাছে এমন ভাবে তোমার কথা উপস্থাপন করেছেন যে আমি তোমার ব্যাপারে নির্ভরতা পেয়েছি, সেদিন ই সিদ্ধান্ত নিয়েছি তোমার সাথে আমার এই গোপনীয় ব্যাপারটা শেয়ার করব। নিজের ভিতরে এত্ত বড় একটা সিক্রেট চেপে রাখতেও আমার কষ্ট হচ্ছিল। খুব ডিপ্রেশনে থাকতাম ব্যাপারটা নিয়ে। . বর্ণ: তুমি জানো না লিন্ডা, জহির আংকেল ভয়ানক চাপাবাজ, আমার ব্যাপারে নিশ্চয়ই বাড়িয়ে বলেছেন। . লিন্ডা: আচ্ছা তা বলুক। তাও তোমার সাথে কথাটা শেয়ার করে আমার ভালো লাগছে । দেখো কোন কূল কিনারা পাও কিনা। আমি এখন আসি। বিকেলে আবার আসব। কফি খেতে বের হয়ে গল্প করা যাবে আরো। রেডী থেকো। বর্ণ : বেশ! লিন্ডা বর্ণের ফেসবুক আইডি সংগ্রহ করে তখনকার মত প্রস্থান করে। লিন্ডা যাওয়ার পরেই সাথে সাথে নোটবুক বের করে বর্ণ, কিছু কিছু ব্যাপার নোট করে রাখা জরুরী। ধরা যাক লিন্ডার সব কথা সত্যি ,ওর কথাগুল বিশ্লেষণ করলে কিছু ব্যাপারে খটকা লেগে যায় , তা হল নম্বরের ব্যাপার টা, নম্বর গুলো যে একটা ধাঁধাঁ সেটা লিন্ডা কিভাবে বুঝলো!! র‍্যানডমলি কোন লেখাও তো হতে পারে। তার মানে লিন্ডা জানে বা আন্দাজ করেছে নম্বরগুলতে হয়তো লুকানো কোন তথ্য রয়েছে। আবার একই শহরে লিন্ডার দু জন বয়ফ্রেন্ড ছিল না। এটাকে কি কাকতালীয় বলা যায়? নাকি ওয়েল প্লানড! লিন্ডার দ্বারা যদি সুইসাইড গুলো প্রভাবিত হয়ে থাকে, তবে সে নিজেই এই রহস্যের সমাধান খুঁজবে কেনো! ছোট খাট গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট গুল নোট করে রাখে বর্ণ। এর মাঝেই রুমে প্রবেশ করেন মি. জাকির। খুবই গুরু গম্ভীর একজন মানুষ। জহির আংকেলের আপন ভাই হলেও তার কথাবার্তার ধরণ এবং বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য দুটোতেই আকাশ পাতাল পার্থক্য।যদিও মধ্যবিত্ত জহির আংকেলকেই বর্ণের বেশি পছন্দ। জহির আংকেল কে আংকেল ডাকার সুবাদে মি. জাকির হোসেন কে শুরু থেকেই আংকেল বলে ডেকে আসছে বর্ণ। লিন্ডা তার ই একমাত্র মেয়ে। এখানে থাকতে কোন প্রকার অসুবিধে হচ্ছে কিনা খোঁজ নেয়ার জন্য ই জাকির হোসেন উপস্থিত হয়েছেন, তিনি পেশায় সাংবাদিক। মূলত তার একটা আর্টিকেল পড়েই বর্ণ এখানে উপস্থিত হয়েছে।কিন্তু সেটা জাকির সাহেব নিজেও জানেন না। তার অফিসের গেস্ট রুমেই বর্ণের থাকার ব্যাবস্থা হয়েছে। অবশ্য গেস্ট রুম টা অফিসের মূল কক্ষ থেকে সম্পূর্ন আলাদা। অফিস বন্ধ থাকলেও দিন রাত ২৪ ঘন্টাই গেস্ট রুম থেকে বাইরে যাওয়া আসা করা যায়। জাকির হোসেন এসেই দেশের গল্প জুড়ে দিলেন।ছোট ভাই জহিরের খবর নিলেন।দীর্ঘ ২২ বছর এই ইটালীতেই পরে আছেন তিনি। দেশে যাওয়া হয়নি তার। সর্বশেষ দেশ থেকে বিয়ে করার পরে বৌ নিয়ে চলে এসেছিলেন । তার দেড় বছর পরেই লিন্ডার জন্ম। জহির আংকেলের কথা উঠিয়ে আফসোস করলেন জাকির সাহেব ।তিনি অনেক বার ইটালী নিয়ে আসতে চেয়েছিলেন ছোট ভাই জহির কে। কিন্তু তিনি দেশের মাটি ছাড়তে চান না। খোঁজ খবর নেয়ার পালা শেষ হলে জাকির হোসেন বর্ণকে সাময়িক বিদায় জানান। যাওয়ার আগে বলে যান, যে কোন প্রয়োজনে তাকে জানানোর জন্য এবং যতদিন খুশি ইটালীতে অবস্থান করার জন্য।অবশ্য জাকির হোসেন কথায় কথায় বার বার জানার চেস্টা করছিলেন হঠাৎ ইটালীতেই কেন আসলো বর্ণ, তার চোখে মুখে কেমন যেন একটা উৎকন্ঠা কাজ করছিল সব সময়। বর্ণের গোয়েন্দাগিরির কথা জাকির হোসেনের অজানা নয়। তার এই অজ্ঞাত উৎকন্ঠার কারণ নিয়ে ভাবার ফুসরৎ নেই বর্ণের। আপাতত একটা বিষয় নিয়েই মাথা ঘামানো যাক। ওহ হো!! ভুল হলো,আপাতত দুটো বিষয় নিয়ে মাথা ঘামানো যাক। . লিন্ডার ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করার পর নিজ থেকেই বর্ণকে নক করলো সে। জানালো আজ সকালে বাসায় গিয়ে ঘুম দিয়েছিল লিন্ডা,ঠিক তখনই ঘুমের মাঝে একটা অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে সে। বর্ণ স্বপ্নের গল্প গুজব শুনতে আগ্রহী নয়। তবুও লিন্ডা যখন বলল, স্বপ্নটা তোমকে ঘিরে দেখা হয়েছে বর্ণ। স্বাভাবিক ভাবেই তখন বর্ণ জানতে চাইলো, "কেমন ছিলো তোমার স্বপ্ন? লিন্ডা বলতে শুরু করলো... আমি দেখলাম " ল্যান্ডফোন এ রিং হচ্ছে। একটা মেয়ে ঘড়িতে দেখলো তখন রাত প্রায় ১১:১৫ বাজে। তার গায়ে তখনও পড়া ছিলো ব্লু ইউনিফর্ম, পিজা ডেলিভারি দেয়াটা ছিল তার জব। ১১ টায় শপ বন্ধ হয়ে গেলেও গুছিয়ে নিতে নিতে ১১:১৫ বেজে যায় । ঠিক তখন ই পিজা ডেলিভারী চেয়ে একটা কল আসে । বিরক্ত সহকারে মেয়েটা ফোন পিক করে। ৭ টা পিজা ডেলিভারি নেয়ার জন্য কেউ একজন ফোন করেছে। প্রথমে ডেলিভারি দিতে পারবে না বলে ফোন রেখে দিলেও ওপাশ থেকে প্রতি পিজার জন্য ২০% এক্সট্রা পে মেন্ট দিবে বলে অফার করায় রাজি হয় মেয়েটি। গাড়ি নিয়ে রওনা দেয় লোকেশন অনুযায়ী। কিন্তু জায়গাটা ছিল অনেক দূরে।শহর থেকে বের হয়েও ৪ কিলোমিটার ড্রাইভ করতে হয় মেয়েটির। অবশেষে ঝোপ ঝাড়ের মধ্য দিয়ে উপস্থিত হয় একটা পুরানো গোছের দ্বীতল ভবনের বাড়ির সামনে। শিশ বাজাতে বাজাতে পিজার প্যাকেট গুলো গাড়ির ব্যাক সিট থেকে নামায় মেয়েটি। দরজার সামনে গিয়ে দেখে স্ক্রাচ করা দরজার গায়ে।পুরোনো কাঠের দরজা। কোন কলিংবেল নেই। বাধ্য হয়ে দরজার উপর আংগুল দিয়ে নক করে মেয়েটি। ঠক ঠক ঠক... ওপাশে শুনশান নিরবতা। কোন সাড়া শব্দ নেই। কিছুক্ষন পরে সে গলা ছেড়ে ডাক দেয়, Hello, your pizza is here..... সে ডাক প্রতিধ্বনি হয়ে মেয়েটার কানে ফিরে আসে। অনেকটা উইয়ার্ড সিচুয়েশন এ পরে সে। সিদ্ধান্ত নেয় পিজা গুলো নিয়ে দোকানে ফিরে যাবে। পরিবেশ ভাল লাগছে না তার। ঠিক এমন সময়, দরজার ওপাশ থেকে ঠক ঠক ঠক করে তিনটি নক হয়। আকাশ থেকে পরে মেয়েটি। দরজার ভিতর থেকে কেন কেউ নক করতে যাবে?? দরজার সামনে গিয়ে আবার দাঁড়ায় সে। হঠাৎ তার চোখ চলে যায় দরজার পাশে থাকা জানালার দিকে। সেদিকে তাকানোর সাথে সাথেই সে প্রচন্ড ভয় পায়। মনে হচ্ছে শত শত মানুষের চোখ তার দিকে তাকিয়ে আছে। কোন মাথা দেখা যাচ্ছে না। শুধু সাদা সাদা অনেক গুল চোখ পলক ফেলছে তার দিকে তাকিয়ে। সাথে সাথে 911 এ ফোন করে মেয়েটি। পুলিশ লোকেশন ট্রাক করে সেখানে পৌঁছে যায়। কিন্তু ততক্ষনে বেশ দেড়ি হয়ে গিয়েছে। পিজার ডেলিভারি দিতে নেয়া গাড়িটি পাওয়া যায় সেই বাসার দ্বিতীয় তলায়। গাড়িটির ভিতরে পরে চারটি লাশ। কিন্তু অবাক করা বিষয় গাড়ির সামনের সিটের লাশ দুটি এবং পেছনের সিটের লাশ দুটির চেহারা এবং জামা কাপড় একই রকম ছিল। সব শেষে আমি দেখতে পাই এ রহস্যটা সমাধান করার জন্য তুমি ইটালীতে এসেছো। এর পরেই আমার ঘুম ভেংগে যায়। . . যেন আকাশ থেকে পরে বর্ণ। মি. জাকির সাহেব কয়েকদিন আগেই এই ঘটনা নিয়ে একটা আর্টিকেল লিখেন। তবে এত বিস্তারিত না। সাঞ্জে নামের একটা মেয়ে ডিউটি টাইম শেষ হওয়ার পর ও পিজা ডেলিভারি দিতে গিয়ে কোন এক সমস্যার সম্মুখীন হয় এবং পুলিশকে ইনফর্ম করে। পুলিশ সেখানে গিয়ে উপস্থিত হওয়ার পর, সাঞ্জে কে না পেয়ে পুরো বাড়িটায় তল্লাশি চালায়।বাড়িটির দোতলায় তারা ডেলিভারি দেয়ার জন্য নিয়ে আসা গাড়িটি খুঁজে পায় এবং প্রতিটি সিটে একটা করে মৃত সাঞ্জেকে দেখতে পায়। পুরো পৃথিবীব্যাপি রাতারাতি ভাইরাল হয়ে যায় খবরটি। কিন্তু অনেকেই এটাকে ফেক ভেবে উড়িয়ে দেয়। জহির আংকেলের কাছ থেকে বর্ণ প্রথম এ ঘটনাটা জানতে পারে। খুব অল্প সময়ে একটা গাড়িকে না ভেংগে চুরে পুরানো ঘরের সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠানো আবার সেখানে একই ব্যক্তির চারটে লাশ পাওয়া টা কল্পনার ও বাইরে। এটা নিয়ে সিক্রেট গবেষনা চালানোর জন্য ইটালীর সরকার নিজেই এই তথ্যকে ভুয়া বলে সম্প্রচার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ কনফিডেন্সিয়াল তথ্য শুধুমাত্র ইটালীর বড় বড় সাংবাদিক এবং প্রশাসনের লোকদের ভিতরে সীমাবদ্ধ ছিল। সাংবাদিক যারা এ ঘটনার সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত তাদের ভিতরে জাকির হোসেন অন্যতম। কিন্তু বর্ণ এ ব্যাপারটা নিয়ে ইনভেস্টিগেট করতে এসেছে এটা বাইরের কেউ জানতে পারলে বর্ণের আর ইটালীতে থাকা হবেনা। তাই সে নিজের ভিতরে বিষয়টি চেপে রেখে চুপি চুপি কাজ সারতে চেয়েছিল। কিন্তু লিন্ডা? সে স্বপ্নে এতটা বিস্তারিত ঘটনা এবং বর্ণের ইনভেস্টিগেশন এর ব্যাপারে সব দেখে ফেলল কিভাবে!! মাথা ব্লাংক হয়ে আসে বর্ণর। লিন্ডাকে সে সেদিন বিকেলে আসতে নিষেধ করে। কাজে ব্যস্ত থাকার নাম করে একটা ঘটনার সাথে অন্য ঘটনার মিল খোঁজার চেষ্টা করতে থাকে।এ যেন এক অদ্ভুত দুনিয়ায় বসবাস করছে বর্ণ। এত বড় রহস্য সমাধান করার কথা কল্পনাও করতে পারছে না সে। শুধু মাত্র রহস্যটা কি সেটা জানার জন্য ঘাটাঘাটি করার প্রচন্ড ইচ্ছে তার ভিতর কাজ করতে থাকে। রাতে সামান্য কিছু খেয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় বর্ণ। ইটালীর এই ছোট্ট শহর নেপলস থেকে একটু দূরে অবস্থিত প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত পাম্পেই নগরী হয়ত বর্ণের জন্য এক বুক রহস্য ধারণ করে আছে।চারজন সাঞ্জের লাশ পাওয়া গিয়েছল পাম্পেই নাগরীর এক পরিত্যক্ত বাড়িতে। এই পাম্পেই কে আগেই অভিশপ্তদের শহর বলে মানা হত। ৭৯ খ্রিস্টাব্দে ভিসুভিয়াস পর্বতের আগ্নেয়গিরির ২ দিনব্যাপী চলা ভয়াবহ অগ্নুৎপাতে পম্পেই নগরী সম্পূর্ণভাবে পুড়ে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলো। তখন এ নগরীটি ৬০ ফুট উঁচু ছাই এবং ঝামাপাথরের নিচে শহরটি চাপা পড়ে যায়। কারলো দি বোরবোনে-এর আর্থিক সহায়তায় শহরটি ১৭৪৮ খ্রিস্টাব্দে পুনরায় মাটির নিচ থেকে আলোতে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু এখনো সেখানে কোন প্রকার জনবসতি গড়ে উঠে নি। তবে ঐ পরিত্যক্ত ঘরে কাদের বসবাস ছিল? এসব ভাবতে ভাবতে রাত ক্রমশ গভীর হয়ে আসে। লাইট অফ করে বর্ণ ঘুমাতে চেষ্টা করে একটু।রাত প্রায় তিনটা। মনে মনে চিন্তা করে রহস্যের জালটাকে ছিড়তে হলে প্রথমে কোথা দিয়ে শুরু করা যায়!! এজন্য তাকে জাকির আংকেলের সাহায্য নিতে হবে। একটা অস্থায়ী জার্নালিস্ট এর আইডি কার্ড করে নিলে যে কোন জায়গায় যাওয়ার অনুমতি পেতে তেমন অসুবিধে হবে না।তুরাণ কে এই সময়ে খুব মিস করছে বর্ণ। জহির আংকেল এখানে থাকলে আরো ভাল হত। তিনজন আলাপ আলোচনা করতে করতে ঠিক একটা উপায় বের হয়ে আসত। হঠাৎ বর্ণ তার জানালার কাঁচে ধুম ধাম আওয়াজ শুনতে পায়। কেউ যেন কিল ঘুষি মারছে। ৭ তলা উঁচু এই বিল্ডিং এর জানালায় বাইরে থেকে এমন কিল ঘুষির আওয়াজ এ হতচকিত হয়ে লাফ দিয়ে উঠে বসে সে। দৌড়ে জানালার কাছে যায় সে। রুমের লাইট অফ। বাইরে তখন রোডলাইটের আলো। মৃদু আলোতে থাই গ্লাসের বাইরে দাঁড়ানো সেই জাকির আংকেলের ভয়ার্ত মুখ টা দেখতে পায় বর্ণ। কিন্তু সে বর্ণের জানালার সামনে বাতাসে ভেসে দাঁড়িয়ে আছে। বর্ণ তাড়াতাড়ি করে জানালা খুলে বাইরে তাকায়, এক ঝাপটা হাওয়া প্রবেশ করে রুমের ভিতরে। বাইরে আর কিছুই নেই। কিন্তু জানালার কাঁচে যেটা আছে সেটা বর্ণের হৃদপিন্ড কাঁপিয়ে দিতে যথেষ্ট। জানালার কাঁচে জমা ধুলোর উপরে আংঘল ঘুরিয়ে লেখা হয়েছে, 1,2,4,7 1,5,5,4,4, 3,3,6,2 It's pleasant to die. জানালার থাই গ্লাসে লেখাটার দিকে অপলক দৃষ্টিতে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে বর্ণ। কি হল এটা? মাথায় কিছু খেলছে না তার। এমন সময় বর্ণের ফোনে একটা কল আসে, জাকির আংকেলের ফোন থেকে... কম্পিত হাতে কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে লিন্ডার গগন বিদারী চিৎকার ভেসে আসে। ওর বাবা, জাকির হোসেন মিনিট দুয়েক আগেই নিজের গলায় নিজে বেশ কয়েকবার এলোপাথাড়িভাবে ছুড়ি চালিয়ে সুইসাইড করেছেন।.....
চলবে..


Post a Comment

0 Comments