golpo-ghar.blogspot.com |
অফিস থেকে বের হওয়ার সময় মুখোশধারী কয়েকজন লোক বাংলা সিনেমার সেই বিখ্যাত সাদা মাইক্রো নিয়া আইসা আমারে কলার ধইরা টাইনা গাড়ির ভেতর ঢুকিয়ে নিয়ে গেল।
পরে বুঝতে পারলাম আমি যে কিডন্যাপ হয়েছি!
আমাকে চোখমুখ বেঁধে এক অন্ধকার ঘরে নিয়ে গেল। চোখ খুলতেই দেখি হাতকাটা এক লোক এক হাতে রামপুরী চাকু নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভয়ে কয়েকটা ঢেকুর নিয়ে ফেলছি ইতিমধ্যে।
এদিকে রুপন্তীর আম্মু আর জরিনা খালা জ্বী বাংলাতে গতকালে মিস করা সন্ধার সিরিয়ালটা দেখতাছে।
বাসায় ফোন বেজে উঠলো,
রুপন্তীর আম্মু ফোন ধরলো!
একটা ভারী কণ্ঠে, হ্যালো আমি হাতকাটা জব্বার বলতাছি, রুপন্তীর পাপ্পা আমার জিম্মায়!
আচ্ছা, দশ মিনিট পর ফোন দ্যান। এখন সিরিয়াল চলতাছে!
জব্বার টাসকি খাইয়া পড়লো!
সে আমাকে বললো, কিরে এটা কি তোর বউ? কি মাল বিয়া করছিস?
ভাই কইয়েন না, বহুত কষ্টে আছি।
দশ মিনিট পর আবার কল, হ্যালো আমি হাত কাটা জব্বার !
ফোন লাউড স্পিকারে ছিল, পাশ থেকে জরিনা খালা বলে উঠলো, কিরে জব্বারইজ্জা ডিসের লাইন ঠিক করসনা কিল্লাই! এই মাসের ট্যাহা দিমুনা।
ওই, চুপ! আমি কিডন্যাপার জব্বার ! রুপন্তীর পাপ্পা কিডন্যাপ হয়ছে।
রুপন্তীর আম্মু বললো, ওমা তাই! আমার কতদিনের শখ আমি একদিন কিডন্যাপ হবো। জব্বার ভাই আমারেও লইয়া যান কিডন্যাপ কইরা।
চুপ চুপ একদম চুপ... আমি কি সিনেমা করতাছিনি?
আচ্ছা প্রমাণ কি আছে, যে রুপন্তীর পাপ্পা আপনার কাছে?
আইচ্ছা কথা কোয়াই দিতাছি,
লাউডস্পিকারে দিয়ে
হ্যালো ....হ্যালো ....রুপন্তীর আম্মু, আমি রুপন্তীর পাপ্পা বলছি!
ও আচ্ছা, কি অবস্থা আপনার! দুপুরের শুটকিটা খাইছিলেন?
না, খাইতে পারিনাই কাজের খুব চাপ ছিল, খাওয়া দাওয়া হয়নি।
ভালোই করছেন, আজকে বিট লবণ দিতে গিয়ে ভুল করে ইঁদুর মারার পাওডার দিয়া ফেলছে জরিনা খালা।
কি, বলো,!!! আমার টিফিনটা তো একটু আগে জব্বারের লোকেরা সাবাড় করে দিছে।
একথা শুনে জব্বারের লোকেরা বমি করা শুরু করলো।
জব্বার রেগে গিয়ে বললো,
অই, চুপ চুপ .... তোদের কি আমারে কিডন্যাপারের মতো লাগে না?
রুপন্তীর আম্মু, এরা সত্যি সত্যি আমারে কিডন্যাপ করছে। বেশ সাংঘাতিক লোক এরা। হাতকাটা জব্বারের গ্যাং!
আমার থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে জব্বার বললো,
শোন, তোর স্বামীরে জিন্দা ফিরি পাইতে চাইলে তাড়াতাড়ি দশ লাখ ট্যাহা লইয়া ঝাউতলায় চলি আই! আর যদি কোন চালাকি করে পুলিশ কল করিস তাইলে তোর স্বামীরে কাইট্টা চিল কাউয়ারে খাওয়াই দিমু।
হঠাৎ জরিনা খালা বললো,
ভাই, দশ লাখ ট্যাহা আমরা কই পামু। একটু কম করেন না?
আইচ্ছা, ৫ হাজার ট্যাহা কম দিস!
জরিনা খালা বইলা উঠলো হুদাই ৫ হাজার দিমু, চইলবো!!! আর তোমাগরে কিডন্যাপিং শিখায়ছে কেডা। জামাইরে কিডন্যাপ কইরা বউয়ের কাছে ট্যাহা চাও। উচিত ছিল বউরে কিডন্যাপ কইরা জামাইর কাছে ট্যাহা চাওনের। হুর! কিডনাপ করা শিখস নাই আবার ট্যাহা চাস লজ্জা নাই!
জব্বার কাঁদো কাঁদো ভাব নিয়ে আমারে বললো
ওই, ব্যাটা তোর বাসায় এগুলা কি? কিডন্যাপরের নূন্যতম ইজ্জতও করতাছেনা।
রুপন্তীর আম্মু বললো, জব্বার ভাই! রুপন্তীর পাপ্পা যে ভালো আছে সেটার গ্যারান্টি কি?
কথা বলাইয়া দিছিনা! আর কি
একটা ভিডিও কল দেন আমি দেখমু! ঠিক আছে কিনা?
ইমুতে কল দিয়া কথা বলছি, পেছনে জব্বারের লোকেরা জোকারের মতো ভিডিও দেখতাছে।
রুপন্তীর আম্মু বললো,
কিডন্যাপ করা অবস্থায় আপনাকে যা কিউট লাগতাছে, ...আল্লাহ্!!! আমারে একটা ফ্লাইং কিস দেননা?
সবার, সামনে?
আরে কি হয়ছে! তো!
জব্বার আবার রেগে গিয়ে বললো,
ওই, লায়লা মজনু! তোমাগো ইটিস পিটিস করনের টাইম নাইক্কা। এখন ট্যাহা নিয়া আহো।
জব্বার ভাই, এখন পারুম না। একটুপর বকুল কথা শুরু হবে। আপনি কালকে ফোন দিয়েন। আর শুনেন, রাতে ঘুমানোর আগে রুপন্তীর পাপ্পারে গ্যাসের ঔষধ খাওয়াতে ভুলবেননা যেনো ! তা না রাতে রুপন্তীর পাপ্পার পেট খারাপ হলে সারারাত দুর্গন্ধযুক্ত গ্যাস ছাইড়া আপনাদের ঘুম হারাম কইরা দিবো। আচ্ছা এখন রাখি, টা টা ....
ট্যুট ট্যুট ট্যুট .....
ফোন কেটে দিছে রুপন্তীর আম্মু!
জব্বার ভাই বড় আপসুস নিয়া বললো,
কিরে ব্যাটা, আইজকা আমার জীবনের ফাস্ট কিডন্যাপ ছিল। আর তুরে কিডন্যাপ কইরা আমার বড় শিক্ষা হয় গেছেরে। তুই ঘরে এরকম এলিয়েন গুলারে নিয়া কেমনে থাকিস!!! ভাবতাছি তোরে রামপুরী দিয়ে খালাস কইরা দিমু। কিন্তু দেহি তুই দেহি আগে থেকে কষ্টে আছিস।
ওই কে কোথায় আছিস হেতেরে ছারি দে!
যা তুই তোর রুপন্তীর আম্মুর কাছে ফিরি যা!
ভাই, আমারে ছাইড়েন না, ধরি রাখেন! আমি কিডন্যাপ হতে চাই!!!
# কিডন্যাপ
(রুপন্তীর পাপ্পা-রম্য গল্প)
0 Comments
Thanks for your valuable comment. We will be back soon.
Thank you 😊😊😊