উলঙ্গ মন! Naked mind!

Ads Inside Post

উলঙ্গ মন! Naked mind!


Golpo-ghar.bblogspot.com
Golpo-ghar.blogspot.com


আচ্ছা বাবা, তোমরা যেইটা দিয়ে পিশাব করো, ঐটা মুখে নিলে কী হয়?
.
নিজের ৬ বছর বয়সের বাচ্চা মেয়েটার মুখে এই প্রশ্নটা শুনে নাঈম পুরো থতমত খেয়ে গেল। রিতু এতক্ষন ধরে চিপস খাচ্ছিল আর টিভিতে কার্টুন দেখছিল। হঠাৎই টিভি থেকে চোখ সরিয়ে নাঈমের দিকে তাকিয়ে প্রশ্নটা করে সে। প্রশ্নটা করেই সে আবার কার্টুন দেখায় মনোযোগী হয়ে পড়ে। নাঈম আম খাচ্ছিল। নাঈমের হাত থেকে আমের প্লেট টা ধমাস করে মেঝেতে পড়ে যায়। তার স্ত্রী শান্তা রান্না ঘর থেকে ছুটে এসে জানতে চায়, কী হয়েছে? নাঈম আমতা আমতা করে বলে, কিছু না। হাত থেকে ছুটে পড়ে গেছে। শান্তা মেঝে পরিস্কার করে চলে যায়। নাঈমের চোখে-মুখে তখনও ভয়, বিস্ময় আর কৌতূহল। এইটা কী ধরনের প্রশ্ন? রিতুর মাথায় এই প্রশ্ন এল কীভাবে? রিতুর যেন প্রশ্নের উত্তর শোনার ভ্রূক্ষেপ নেই। সে স্বাভাবিক ভাবেই টিভি দেখছে।
.
.
মেয়েটার সাথে এই প্রসঙ্গে আর কিছু বলার সাহস হয় না নাঈমের। দুপুরে লাঞ্চ ব্রেকে বাসায় এসেছিল সে। দ্রুতই আবার চলে যেতে হলো তাকে অফিসে। কিন্তু অফিসের কাজে কিছুতেই মনোযোগ দিতে পারে না সে। কয়েকজন কলিগ তার অন্যমনস্ক ভাব ধরতে পেরে তাকে জিজ্ঞেস করে, কোনো সমস্যা হয়েছে নাকি? সে মৃদু হেসে কাঁধ ঘুরিয়ে জানায়, তার কোনো সমস্যা নেই। অন্যদিনের মতো অফিস ছুটি হওয়ার সাথে সাথে বাড়িতে যায় না নাঈম। কিছুক্ষণ অন্যমনস্ক হয়ে বাড়িতে যাওয়ার উল্টো পথ ধরে একা একা হাঁটতে থাকে। তার মেয়ের বলা সেই এক লাইন প্রশ্নের তাৎপর্য সে কিছুতেই বের করতে পারছে না। মেয়েটার বয়স সবে পাঁচ পেরিয়ে ছয়ে পড়েছে। এই বছরের শুরুতেই তাকে এলাকার একটা স্কুলের শিশু শ্রেণীতে ভর্তি করা হয়েছে। এতটুকু একটা বাচ্চা মেয়ের মাথায় এই ধরনের একটা উদ্ভট প্রশ্ন কী করে আসতে পারে তা কিছুতেই মাথায় আসে না নাঈমের। এই ধরনের কিছু সামনাসামনি না দেখলে এমন একটা প্রশ্ন মেয়েটার মাথায় আসার কথা না। কিন্তু নাঈম ভাবে, রিতু যখন একটু একটু সব কিছু বুঝতে শুরু করেছে তখন থেকে রিতুর সামনে কখনই সহবাস করে নি তারা। আর তাদের সহবাসে অতিরিক্ত এই নোংরামি গুলো কখনই ছিল না, যেমনটা রিতুর মনে প্রশ্ন জেগেছে।
.
নাঈম বুঝেছিল, বিষয়টা মোটেও হালকে নয়। তাই বিষয়টাকে সে হালকা ভাবে উড়িয়ে দেয় নি। অনেকক্ষণ ধরে এই বিষয়টা নিয়ে একা একাই চিন্তা করে যায় সে। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেয় এই বিষয়ে খোলাখুলি তার মেয়ের সঙ্গেই কথা বলবেন তিনি। একটা ছয় বছরের বাচ্চা শিশুকে আমরা যতটা অবুঝ ভাবি তারা মোটেও ততটা অবুঝ হয় না। এই বয়সে অনেকেরই মানসিক বিকাশ অনেক ভালো হয়। আমরা যতটা ভাবি তারা তার চেয়ে অনেক বেশিই বুঝতে পারে। হয়তো তা তাদের মনের ভেতরেই আবদ্ধ করে রাখে। তাই আমরা ভাবি তারা অবুঝ।
.
.
নাঈম যতক্ষণে বাড়িতে ফিরে আসে ততক্ষণে রিতু ঘুমিয়ে গেছে। রাতে একই বিছানায় নাঈম , রিতু আর শান্তা ঘুমায়। রিতু মাঝখানে আর নাঈম এবং শান্তা তার দুইপাশে। ঘরে ডিম লাইট জ্বলছে। সেই আলোতেই নাঈমের চোখ হঠাৎ করে শান্তার মুখের ওপর আটকে যায়। কোনো এক অজানা কারণে তার বুকটা ধ্বক করে উঠে। একটা অজানা ভয় নাঈমের মনে বাসা বাঁধে। সে শান্তাকে নিজের চাইতেও বেশি বিশ্বাস করে। শান্তা কী কোনোভাবে তাকে ধোকা দিচ্ছে? তার অন্ধ বিশ্বাসের সুযোগ নিচ্ছে? রিতু মেয়েটা তো এর বাইরে আর কারও সাথে মিশে না! তার মনে এই উদ্ভট প্রশ্ন জাগার কারণ কী প্রত্যক্ষ ভাবে শান্তাই? হয়তো শান্তা কে এমন কিছু করতে দেখেছে রিতু, তাই তার মাথায় এই প্রশ্নটা এসেছে। শান্তা কী পরক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত! কিন্তু সে এমনটা কেন করবে? নাঈমের মাথায় একের পর এক এমন উদ্ভট সব প্রশ্ন এসে তার মাথার ভেতর ভয়ংকর রকম জটলা বাঁধতে থাকে। অসংখ্য অজানা , অচেনা ভয়, সন্দেহ তার মনে চেপে বসে।
.
সকাল হতেই নাঈম বাড়ি থেকে রাস্তায় বেড়োয় একটু হাঁটাহাঁটি করতে। তার বাড়ির গেট বরাবর রাস্তার ওপাশেই একটা মুদির দোকান। মুদি পণ্যের পাশাপাশি চাও বিক্রি হয় এখানে। দোকানে বসে চা খেতে খেতে কথা প্রসঙ্গে নাঈম দোকানদারের কাছে জানতে চায় , সে এই বাড়িতে অচেনা কাউকে ঢুকতে দেখে কি না দিনের বেলায়। দোকানদার কিছুক্ষণ ভেবে বলে, সেদিকে তেমন খেয়াল করে না সে। তবে কয়েকদিন একটা কমবয়সী ছেলেকে বাড়ি থেকে বের হতে দেখেছে সে। কথাটা শুনে আবার নাঈমের বুকটা ধ্বক করে উঠে!
সে রাস্তায় বেশিক্ষণ না থেকে আবার বাড়িতে ফিরে যায়।
.
ফোন বন্ধ করে রেখেছে নাঈম। আজ সে অফিসে যাবে না। শান্তা অবাক হয়ে অফিস কামাই দেওয়ার কারণ জানতে চাইল তার কাছে। নাঈম বলল, এমনি টানা অফিস করতে ভালো লাগছে না। তাই অফিসে বলে একদিন ছুটি নিয়েছে। সকালে নাস্তা করার পর অন্যদিন শান্তা রিতুকে স্কুলে দিয়ে যায়। আজ যেহেতু নাঈম বাসায় তাই নাঈম গেল।
.
রিতু স্কুলের পোশাক পরে তৈরি হয়ে বাবার হাত ধরে বাড়ির বাহিরে বেরিয়ে এল। শান্তা গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে বাড়ির ভেতরে যেতেই নাঈম রিতুকে নিয়ে স্কুলের পথের উল্টো পথে হাঁটা শুরু করল। রিতু কৌতূহলী হয়ে জানতে চাইল, বাবা, আমরা কোথায় যাচ্ছি? নাঈম মিষ্টি করে হেসে বলে, আমরা আজ সারাদিন অনেক ঘুরবো, আর মজা করবো। আজ তোমার স্কুল কামাই। রিতু আনন্দে চেঁচিয়ে উঠল। সত্যি সত্যিই নাঈম রিতুকে নিয়ে প্রায় ঘন্টা খানেক অনেক জায়গায় ঘুরলো। ওকে আইসক্রিম, চকোলেট কিনে দিল। তারপর কাছেরই একটা পার্কে ঢুকল তারা। পার্কের একটা বেঞ্চিতে দুজনেই গিয়ে বসে।
.
প্রচন্ড উৎকণ্ঠা আর উত্তেজনায় নাঈমের শরীর কাঁপছে। রিতু এক মনে আইসক্রিম খাচ্ছে, আর মুগ্ধ হয়ে চারপাশের মানুষ জন দেখছে। নাঈম কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে রিতুকে প্রশ্ন করল, আচ্ছা রিতু মা, একটা কথা বলতো আমি যখন অফিসে থাকি , তখন কী এই বাড়িতে তোমার আম্মুর সাথে দেখা করতে কেউ আসে? রিতু হা করে কিছুক্ষণ ভেবে বলে, কে আসবে বাবা? নাঈম একটু হাসার অভিনয় করে বলে, কেউ না, কেউ না, মা! রিতু এবার বলে, ও হ্যা, মাঝেমধ্যে নয়ন ভাইয়া আসে। কথাটা শুনে নাঈমের বুকের ওপর থেকে যেন একটা বড় পাথর সরে গেল। তাহলে মুদির দোকানটায় নয়নের কথা বলেছিল! নয়ন হলো নাঈমের বড় বোনের একমাত্র ছেলে। এইবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে উঠেছে। রিতুর সাথে তার ভারি ভাব। তারা থাকে এই এলাকার পাশের এলাকাতেই। কাজের চাপে ওই বাড়িতে অনেক দিনই যাওয়া হয়নি নাঈমের। নয়ন তার মামার বাড়িতে মাঝেমধ্যে আসে এটাতে নাঈমের অবাক হওয়ার কিছু নেই! এবার নাঈম রিতুর দিকে তাকিয়ে নিচু স্বরে বলে, আচ্ছা মা, তুমি সেদিন ঐরকম একটা প্রশ্ন আমায় কেন করেছিলে? রিতু কৌতূহলী হয়ে বলে, কোনদিন? কী প্রশ্ন বাবা? নাঈম কাঁপা কণ্ঠে বলে, ঐযে বলেছিলে, আমরা যেটা দিয়ে প্রসাব করি সেইটা মুখে নিয়ে কী করে? প্রশ্নটা শুনেই রিতু হাসতে শুরু করে। নাঈম বুঝতে পারে কথাটা রিতুর কাছে মজার ঠেকেছে, তাই তার হাসি। নাঈম আবার বলে, তুমি কী তোমার মা বা অন্য কাউকে অমন করতে কখনো দেখেছ? রিতু না সূচক মাথা নাড়ে। নাঈম বলে, তাহলে ওমন একটা প্রশ্ন তোমার মাথায় এল কী করে? তোমাকে কী কখনো কেউ ওমন করতে বলেছে? কথাটা শুনতেই রিতু চুপ করে যায়। আর কোনো উত্তর না দিয়ে চুপচাপ বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। নাঈমের গলার স্বর কিছুটা কঠিন হয়ে আসে। সে বলে, বলো মা, ভয় পেও না। তোমায় ওমন কেউ বলেছে? রিতু হ্যা সূচক মাথা নাড়ে। নাঈম তার নাম জানতে চায়। রিতু বলে , সে এইসব কথা কাউকে বলতে না করেছে। রিতু যদি বলে, তাহলে সে আর তাদের বাড়িতে আসবে না। তার সঙ্গে খেলবে না। নাঈমের মাথা রাগে, ক্ষোভে প্রচন্ড গরমে হয়ে গেছিল এর মধ্যেই। এবার কন্ঠে রাজ্যের বিস্ময় ফুটিয়ে বলল, তোমার নয়ন ভাইয়া তোমাকে এই রকম করতে বলেছিলেন? রিতু বলল, হু। কিন্তু আমি করিনি। বলেছি ঘেন্না করে।
.
এই বিষয়ে একটা বাচ্চা মেয়ের সাথে আর কোনো কথা বলার প্রয়োজন মনে করে না নাঈম। সে ভাবে, একটা ছেলের মস্তিস্ক কতটা বিকৃত হলে সে একটা ৬ বছরের মেয়েকে এই কাজ করতে বলে! ৬ বছরের একটা মেয়ের মধ্যে যৌনতার আছেটা কী? তার ওপর এইটা নাকি তার আপন ভাগ্নে! প্রচন্ড রাগে নাঈমের শরীরে আগুন জ্বলছে। ছেলেটা তার যতই আপন হোক না কেন , সে যা করেছে তা ভয়ংকর অপরাধ। এর জন্য একে একটা উচিত শিক্ষা দিতেই হবে!
.
.
.
পরের দিনও নাঈম অফিসে যায় না। সে দীর্ঘ একটা প্ল্যান করেছে নয়নকে এই বিষয়ে শিক্ষা দেওয়ার জন্য। নয়ন যেই কলেজে পড়ে ঠিক সেই কলেজের কাছাকাছি একটা জমিদার বাড়ি আছে। জায়গাটা সব সময়েই নির্জন থাকে। নাঈম নয়নের কলেজের সামনে গিয়ে কলেজ ছুটির অপেক্ষা করে। দুপুর ১টায় কলেজ ছুটি হলে নয়ন কলেজ থেকে বেরিয়ে গেটের কাছে মামাকে দেখে বেশ অবাক হয়। নাঈমও নয়নকে দেখে অবাক হওয়ার ভান করে। নয়নকে দেখেই নাঈম বলে, আরে তুই কলেজে এসেছিস নাকি? ভালোই হলো। আমাকে একটু দ্রুত বাড়িতে যেতে হবে। তুই আমার একটা কাজ করে দে। ওই পুরোনো জমিদার বাড়ির সামনে আমার এক কলিগ দাঁড়িয়ে আছে। ওর বাইকটা নষ্ট হয়ে গেছে মনে হয়। তুই এই ফাইলটা ওকে দিয়ে আয়। এই বলেই একটা ফাইল নয়নকে দিয়ে নাঈম চলে গেল।
.
.
নয়ন দ্রুতই ফাইলটা নিয়ে জমিদার বাড়ির সামনে এসে হাজির হলো। পুরোই নির্জন জায়গা। কাউকেই দেখা যাচ্ছে না আশেপাশে। নাঈম কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে সেখানে। কাউকে না পেয়ে মোবাইল বের করে যেই মামাকে কল দিতে যাবে, দেখে, দুজন লোক তার দিকে এগিয়ে আসছে। লোক দুটোকে দেখেই নয়নের মন কেমন যেন করতে লাগল। এই ধরনের লোকদের নয়ন ভালো করেই চেনে। এদের দেখলে নয়নের কেন যেন বেশ ঘেন্না লাগে। এরা পুরুষ হলেও টাইট প্যান্ট, টাইট টি শার্ট, কালার করা লম্বা চুল, লিপস্টিক দেওয়া ঠোঁট এ এদের চেহারা, চলনে একটা মেয়েলি ভাব চলে এসেছে। এরা পুরুষ হলেও সমকামী। যাদের বলে গে। এর জন্যই মূলত এদের প্রতি ঘেন্না নয়নের। এরা যে সমকামী এদের চেহারা দেখেই স্পষ্ট বুঝতে পারে নয়ন। তারা তার দিকে আসছে দেখেও ঘৃণায় অন্যদিকে মুখ করে রাখে নয়ন। সমকামী দুজনের মধ্যে একজন নয়নের কাছে এসেই তার গাল টিপে বলল, কেমন আছো গো? নয়ন বিরক্তি ভরা দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকালো। একজন বলল, এতো দেখি পুরোই মাখন। নয়ন বিরক্ত ভরা কণ্ঠে বলল, কী চাও তোমরা? নয়নকে অবাক করে দিয়ে তাদের একজন বলে উঠল , তোমার নাম নয়ন ত? নয়ন অবাক হয়ে তাদের দিকে তাকালো। হঠাৎই তাদের একজন পকেট থেকে একটা রুমাল বের করে নয়নের মুখে চেপে ধরল। পরমুহূর্তেই একটা প্রাইভেট কার এসে তাদের পাশে ধারালো। নয়নের চোখ লেগে আসতে শুরু করলো। তার আর কিছুই মনে নেই!
.
নয়ন যখন চোখ খুলল, তখন তার চোখ চড়কগাছ! তার দুটো হাত শক্ত করে অচেনা একটা ঘরের খাটের দুই পাশের দুটি খুঁটির সঙ্গে বাঁধা! সে সম্পুর্ন নগ্ন। তার সামনে চার-পাঁচ জন পুরুষ দাঁড়িয়ে রয়েছে। নয়নকে চোখ খুলতে দেখেই তারা একসাথে আনন্দে হেসে উঠলো। তাদের কারও শরীরেও কাপড় নেই। এরাও যে সমকামী তা বুঝতে সময় লাগে না নয়নের। তাদের একজন বলে উঠল, শালারে মেডিসিন টা খাওয়া। নাইলে পায়ুপথ পরিষ্কার হইব না। তাড়াতাড়ি কর। আমার তড় সইতাছে না! নয়নের অনিচ্ছায়ও জোর করে তাকে সেই মেডিসিন খাওয়ানো হলো। তাকে টয়লেটে বসিয়ে জোর করেই পায়ুপথ পরিস্কার করানো হলো। এতগুলো পুরুষের সঙ্গে সে কিছুতেই পেরে উঠছে না! সে করুনা মিশ্রিত , ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাদের দিকে চেয়ে রইল। তারপর করুন সুরে বলল, আমাকে ছেড়ে দেন! আমি আপনাদের কী ক্ষতি করছি? আমার সাথে প্লিজ এমনটা করবেন না। কথাগুলো শুনে তারা যেন বেশ মজাই পেল। হাসতে লাগলো একে একে। তারদুটো হাত বাঁধা। একজন একজন করে তার ওপর মায়া-দয়া হীন ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ল তারা। নয়নের আর্তনাদ, চিৎকার কেউ শুনলো না! তাদের কাজ শেষে নয়নকে জামা কাপড় পরিয়ে, হাত মুখ বেঁধে সেই জমিদার বাড়ির সামনে ফেলে রেখে গেল তারা। নয়ন তখন ছটফট করছিল যন্ত্রনায়। তখনই কোথা থেকে দৌড়ে এল নাঈম। নাঈম এসেই তার বাঁধন খুলে দিয়ে উৎকণ্ঠিত হয়ে বলতে লাগলেন, তুই কোথায় ছিলি এতক্ষণ, তোর এই অবস্থা হলো কী করে? আমরা সবাই দুঃশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। আপাতো কেঁদে কেটে শেষ। তোর কী হয়েছে। নয়ন অনেক কষ্টে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটে। কোনো কথা বলে না। তাকে একটা রিকশায় করে নাঈম নয়নের বাড়িতে নিয়ে যায়। তার বাড়ির সবাই তাকে ঝেঁকে ধরে সে এতক্ষণ কইছিল, কী করছিল, তার এই অবস্থা হলো কী করে, সে খুঁড়িয়ে হাঁটছে কেন? লজ্জায় নয়ন কোনো উত্তরই দিতে পারে না। শুধু চুপচাপ বসে থাকে। নাঈম আফসোসের সুরে বলে, তোকে একা ভোর দুপুরে ওই নির্জন জায়গায় পাঠানোই উচিত হয়নি। বোধহয় ছিনতাইকারী ধরেছিল। ও এখন অনেক ভয় পেয়ে আছে। পরে ভয় কাটলে ওর কাছ থেকে সব জানা যাবে।
এইটুকু বলেই নাঈম তার বাড়ি ফিরে আসে। সে আবার স্বাভাবিক জীবন যাপন শুরু করে।
এই ধরনের একটা সঙ্গী রিতুর না হলেও চলবে।
.
.
.
এক সপ্তাহ কেঁটে যায়। নয়ন শারীরিক ভাবে সুস্থ হলেও মানসিক ভাবে অনেক ভেঙে পড়েছে। নাঈমের কাছে এই খবরটা এসেছে। নয়ন স্বাভাবিক ভাবে কলেজে যাতায়াত করলেও সেইদিনের পর থেকে মানসিক ভাবে বেশ অসুস্থ হয়ে পরেছে। সব সময় অন্যমনস্ক থাকে। কারও সঙ্গে তেমন কথা বলে না। নাঈম আরেকদিন অফিস কামাই করে নয়নের কলেজের সামনে দুপুর নাগাত দাঁড়িয়ে থাকে। নাঈমকে ঠিক সেই ভাবেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নয়ন আৎকে উঠে। নাঈমই ধীরে ধীরে নয়নের কাছে যায়। নয়নের কাঁধে হাত রেখে বলে, চল আমার সাথে। তোর মন ঠিক করে দিচ্ছি। নয়ন কিছুই বলে না। তার নাঈম মামার সাথে সাথে হাঁটতে শুরু করে। তারা সেই পুরনো জমিদার বাড়িটার দিকেই হাঁটছে। নয়ন ভয়ে বলে উঠল, মামা, আমি ঐদিকে যাব না। নাঈম অভয় দিয়ে বলে, ভয় নেই। যেখান থেকে তোর ভয়ের শুরু হয়েছে সেখানেই তা শেষ হবে।
.
তারা দুজনেই হাঁটতে হাঁটতে জমিদার বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়। নয়ন ভয়ার্ত দৃষ্টিতে চারদিকে চোখ ভুলায়। সেই দিনের পর থেকে এই পর্যন্ত কতবার যে সে স্বপ্নে এই জায়গা আর সেই মানুষ গুলোকে দেখেছে তার হিসাব নেই। তারা জমিদার বাড়ির সামনের একটা গাছের নিচে শিকড়ের ওপর দুজনেই বসলো। নাঈম , নয়নের দিকে মুখ করে স্পষ্ট স্বরে বলল, সেইদিন ধর্ষণ হতে তোর কেমন লাগল রে নয়ন ? কথাটা শুনে নয়ন পুরো আৎকে উঠল। ভয়মিশ্রিত দৃষ্টিতে নাঈমের দিকে তাকাল। নাঈম আবার বলল, তোর সাথে সেইদিন কী কী হয়েছিল তা আমি জানি। জানবো না কেন? সব কিছুর প্লানই তো ছিল আমার। আমি ইচ্ছে করেই সেই সমকামী লোকদের দিয়ে তোকে ধর্ষণ করিয়েছি। নয়ন কথাটা শুনে পুরো বাকরুদ্ধ, হতভম্ব হয়ে যায়। নাঈম বলতে থাকে, তোর বয়স যতই কম হোক , আমার বিশ্বাস আমি যা করিয়েছি তাতে অন্যায় কিছু করিনি। যা কিছু করেছি তোর ভবিষ্যতের ভালোর জন্যই করেছি। তোর উলঙ্গ মনে বস্ত্র পড়ানোর জন্যই করিয়েছি। তুই কী জানিস তুই কী ভয়ংকর পাপী? যেদিন রিতুর মুখে তোর সম্পর্কে ওই দিনের কর্মকাণ্ডের কথা শুনি আমার যা রাগ হয়েছিল তা বলার মতো না! আমার ইচ্ছা করছিল তোকে খুন করে ফেলতে। দেখ , তুই আমার আপন ভাগ্নে। আমার ছেলের মতো। আমার ৬ বছরের বাচ্চা মেয়েটা তোকে ভাইয়া বলে ডাকে, ভালোবাসে এবং সম্মানও করে। তোদের সম্পর্ক ভাই-বোনের। এখন তুইই বল, একজন বাবা যদি তার মেয়েকে তার ছেলের কোলেই নিরাপদে না রাখতে পারে, সে ভাই হয়ে বাচ্চা একটা মেয়ে, যার এখনও দুনিয়া সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞানই হয়নি তাকে দিয়ে নিজের যৌন লালসা মেটাতে চায়, তখন এই দুঃখ আমি কোথায় রাখবো? তুই বল? বোন তার ভাইয়ের কাছে নিরাপদ থাকবে না? বাচ্চা মেয়ে তার কাকা-মামার কাছে নিরাপদ থাকবে না? বলতো বাবা তাহলে কাদেরকে বিশ্বাস করবে? কি ভরসায় নিজের মেয়েকে বড় করবে? আজ তোর মতো কিছু বিকৃত মন, মস্তিষ্কের মানুষের জন্যই এত ছোট ছোট বাচ্চারা ধর্ষণ হচ্ছে, বাবা-মায়েরা নিজেদের পরিবারের মানুষদেরই বিশ্বাস করতে পারছে না! হীনমন্যতায় ভূগতে হচ্ছে নিরপরাধ পুরুষদের। হ্যা তুই রিতুকে ধর্ষণ করিসনি ! কিন্তু করতি না তার গ্যারান্টি কী? এখন বাচ্চা অবুঝ মেয়ে দেখে মলেস্ট করিস, পরে নিজের পুরুষাঙ্গ মুখে নিতে বলিস, হয়তো এমন করতে করতে একদিন তোর কাছে ধর্ষণও একটি অতি স্বাভাবিক বিষয় হয়ে উঠবে আর তুই ধর্ষক হয়ে যাবি। রিতুকে একা পেয়ে কোনোদিন ধর্ষণ করতি না তার গ্যারান্টি কী? তোদের একটা মেয়ের শরীর হলেই যেন হয়! হোক সে ৬ মাসের শিশু, ৬ বছরের বাচ্চা, মানসিক রোগী বা ৭০ বছরের বুড়ি। তোদের কাছে কী শুধু শরীরটাই আসল, আর কিছু না? প্রতিটা মানুষের যে একটা মন আছে এটা তোরা কেন মনে রাখিস না? যৌনতা মন থেকে আসে শরীর থেকে না! আর সেক্সের তোরা সুন্দর একটা নাম দিয়ে দিয়েছিস, শারীরিক চাহিদা! হয়তো এইগুলো তোদের মাথায় ঢুকে পর্ণ দেখে বা চটি গল্প পড়ে! যদিও তোরা জানিস ওইসবই মনগড়া। আসলেই কী এটা শুধু শরীরের চাহিদা? মনের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই? একজন ধর্ষককে ধর্ষণ করার পর পুলিশ ধরে যখন জিজ্ঞাস করল, তুই এই জঘন্য অন্যায় কাজ কেন করছিস? সে বিকৃত হাসি দিয়ে বলে, এইটা কোনো অন্যায় না! মিষ্টি নিজে নিজে খাইলে যেমন মিষ্টি লাগে জোর কইরা খাওয়াইলেও মিষ্টি লাগে। মজা সবাই পায়। এইটা অপরাধ না! এখন তুই বল, মিষ্টি আর এইটা কী এক ? মুখে তোরা কিছু না বললেও, অন্তরে ওই ধর্ষকের মতো তরাও এটা বিশ্বাস করিস। না করলে একটা মেয়ের শরীর ছোয়ার আগে মনের খবরটা নিতি। সেক্স যদি কেবল শরীরে শরীরের সম্পর্কই হয় তাহলে ধর্ষণের পর একটা মেয়ে এই এক ঘন্টার কথা ভুলে নতুন করে জীবন শুরু করতে পারে না কেন?কেন একবার ধর্ষিত হওয়ার পর একটা মেয়ে মনে করে তার জীবন এখানেই শেষ? কেন ধর্ষিত হওয়ার পর এত মেয়ে প্রতি বছর আত্মহত্যা করে? মলেস্ট হওয়ার পর কেন সারাদিন ঘরের দরজা বন্ধ করে কাঁদে? এই জিনিসগুলো কী একটা বারও তোদের মাথায় আসে না যখন তোরা বিকৃত যৌন ক্ষুধা মেটাতে একটা মেয়ের শরীর স্পর্শ করিস? তোরা এক মুহূর্তের জন্য যদি ভাবতি এগুলো তাহলেই বুঝতে পারতি সেক্স হচ্ছে গিয়ে মনের তৃপ্তি, এটা শুধু শরীর কেন্দ্রিক না। তাই জোর করে কারও অনুমতি ছাড়া তার গায়ে হাত দেওয়া , তার শরীর ভোগ করা সবই অন্যায়। হোক সে বুঝ বা অবুঝ। আর তুই একটা বাচ্চা মেয়ের শরীরের মধ্যে যৌনতা খুজিস? তার মনের খবর কী কখনো তুই রেখেছিস? একটাবার যদি তার মনের ভেতরে তোর সম্পর্কে , পৃথিবীর সব পুরুষ সম্পর্কে যে পবিত্র বিশ্বাস, ধারণা আছে তা জানতে পারতি তাহলে কখনই এই শরীরে যৌনতা খুঁজে পেতি না! কোনো মেয়ের শরীরের ভেতরেই যৌনতা খোঁজার অধিকার তোর নাই যদি তার মনের অবস্হা তুই না জানিস! এই যে তোরে এতগুলো কথা বললাম। এই কথাগুলো যদি রিতুর কাছ থেকে তোর বিকৃত রুচির কথা জানার পর পরই তোকে বলতাম। তখন তুই এসব কথার আগা-মাথা কিছুই বুঝতি না। মাথা নিচু করে আমার কথা হয়তো শুনতি। তারপর কথাগুলো মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে হয়তো আমাদের বাসায় আসাও বন্ধ করে দিতি। রিতু মলেস্ট হওয়া থেকে বাঁচত। কিন্তু তুই মানুষ হইতি না। হয়তো আরেকটা মেয়ের জীবন এইভাবে নষ্ট করতি। ভবিষ্যতে তোর মন প্রাণ এক সময় বিশ্বাস করতে শুরু করতো, যৌনতা হলো গিয়ে শরীরের ক্ষুধা। একটা শরীরের ক্ষুধা পেলে আরেকটা শরীর ছুঁবে। যেটা যার শরীরই হোক না কেন। বাচ্চা- বৃদ্ধা যেকোনো এক জনের শরীর হলেই হলো। এটাই পৃথিবীর নিয়ম। আরেকটা শরীরের মানসিক অবস্থা জানার প্রয়োজন নেই! আর এইসবের বিশ্বাস যাদের মনের ভেতর থেকে তারাই তোর মতো মলেস্ট করে মেয়েদের, ধর্ষণ করে মেয়েদের। আর মনে করে এটা কোনো অপরাধ না। তোর মনেও এই মানসিক রোগটা ছিল। তাই সমকামী দের হাতে তোকে ছেড়ে দিয়েছিলাম। তারাও কিন্তু তোকে ধর্ষণ করে শারীরিক চাহিদাই মিটিয়েছে। এখন যৌনতা যদি কেবল শরীরের সাথে শরীরের সম্পর্কই হতো তাহলে তাদের সাথে সঙ্গমে তুইও আনন্দ পেতি। কিন্তু তুই তা পাসনি! উল্টো পেয়েছিস মানসিক যন্ত্রণা। তুই এখন নিজেই ভালো করে বুঝতে পারছিস ধর্ষণ বা অন্যের অনিচ্ছায় তার গায়ে হাত দিলে সে মোটেও তা উপভোগ করে না। উল্টো তার মনে এর ব্যাপক প্রভাব পড়ে। যা তার জীবনটা ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট। এই জিনিসটা যে শরীরের চাইতে মনে বেশি প্রভাব ফেলে , আর প্রভাবটা কত বেশি আশা করি এইটা এই মুহূর্তে তোর চাইতে ভালো আর কেউ জানে না। এইটাই ছিল তোর পাপ, যৌনতা সম্পর্কে বিকৃত ধারণার শিক্ষা। আমার মতে যে সমস্ত পুরুষেরা মনে করে যৌনতা কেবল শরীর কেন্দ্রিক তাদের সকলকেই এভাবে সমকামীদের ধারা ধর্ষণ করানো উচিত। তাহলে নারীদের মতো পুরুষেরাও ধর্ষণের কথা শুনলেই শিউরে উঠবে। আমার মনে হয় কিছুদিন পরে পুরুষ ধর্ষণও প্রকোট আকার ধারণ করবে এই সমাজে। এছাড়া তো তোদের মতো পুরুষদের ধর্ষণ বা মলেস্টেশন যে নারীদের শরীরের চেয়ে মনে কী প্রভাব ফেলে তা বোঝানো সম্ভব না!
.
.
কথা গুলো শোনার পর নয়ন নাঈমের পা ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে আর ক্ষমা চায়। নাঈম তাকে অনেক আগেই ক্ষমা করে দিয়েছিল। সে জানে নয়ন আর কখনো কারও সাথে এই ধরনের কোনো আচরণ করবে না। বা করার চিন্তাও করবে না। কিন্তু বাবা হয়ে সে মাত্র একজন নয়নকে শোধরাতে পেরেছে, একজন নয়ন থেকে বাঁচাতে পেরেছেন তার মেয়েকে। এই রকম হাজারো নয়ন আছে শহরের অলিতে-গলিতে। তাদের শোধরাবে কে? তাদের থেকে নিজের মেয়েকে কীভাবে, কতদিন বাঁচিয়ে রাখতে পারবেন তিনি! জানেন না নাঈম। প্রতিটা পুরুষই তাদের উলঙ্গ মন নিয়ে চলাফেরা করে, যৌনতা তাদের কাছে স্বাভাবিক বিষয়, শারীরিক চাহিদা। নাঈমের মতো মানুষেরা সেই উলঙ্গ মন ধারী মানুষদের দিকে বস্ত্র এগিয়ে দিতে পারবে ঠিকই, কিন্তু সেটা উলঙ্গমনা প্রতিটি মানুষকে পড়তে হবে নিজ দায়িত্বে।



Post a Comment

0 Comments