হুমায়ূন স্যারের সঙ্গে জোছনা দর্শন

Ads Inside Post

হুমায়ূন স্যারের সঙ্গে জোছনা দর্শন


Golpo-ghar.blogspot.com

-"স্যার আসসালামু আলাইকুম।কেমন আছেন স্যার ?"
-"ওলাইকুম আসসালাম। ভালো আছি। "
আমার দিকে না তাকিয়েই উত্তর দিলেন। একদৃষ্টিতে তিনি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন। জোছনা দেখছেন। গলা পর্যন্ত মাটির নিচে,শুধুমাত্র মাথাটা বের হয়ে আছে।
-" স্যার,আমি কি আপনার সাথে একটু কথা বলতে পারি ?"
-" না পারেন না।জোছনা উপভোগ করতে হয় চুপচাপ, শব্দহীন পরিবেশে। কথা বললে জোছনার রূপ ধরতে পারবেন না।"
-" স্যার আমিতো জোছনার রূপ ধরতে আসিনি। আপনারে ধরতে আসছি। "
-" আমাকে ধরতে আসছেন মানে ? বুঝলাম না । খুলে বলেন।"
-" আসলে স্যার আমার কয়টা প্রশ্ন ছিলো আপনার কাছে। আপনারে সকাল থেকে পুরা দুনিয়া ধইরা খুঁজতেছি।কোথায়ও খুঁজে পাইনি। "
-" আমি কি কখনও একজায়গায় থাকি যে খুঁজে পাবেন। আর তাছাড়া আমি দিনেরবেলা বের হই না ,ঘুমাই। শুধুমাত্র রাতে বের হই কারন রাতে আমি জোছনা দেখি।"
-" প্রতিদিন জোছনা কই পান স্যার ?"
-" পৃথিবীর যে প্রান্তে জোছনা থাকে সেই প্রান্তে চলে যাই। মাঝে মাঝে অন্য গ্রহ- নক্ষত্র এমনকি অন্য সৌরমণ্ডলেও চলে যাই জোছনার খোঁজে।ওকে অনেক কথা বলে ফেলেছি,আমি এখন জোছনায় ডুব দেব।অতএব বহিস্কার হোন।"
এতগুলো কথা বললেন অথচ তিনি একবারও আমার দিকে তাকালেন না। তিনি জোছনার রূপ দেখছেন। জোছনা যে একটা দেখার জিনিস , উপভোগ করতে হয় সেটা বাঙালিদের উনিই শিখিয়েছেন। কিন্তু ঘুম নষ্ট করে জোছনা দেখার প্রতি আগ্রহ আমার কোনো কালেও ছিল না , এখনও নেই। স্যারের কাছে আমার কয়েকটি প্রশ্ন আছে।প্রশ্নগুলির উত্তর পেলেই আমি চলে যাব। অনেক কষ্ট করে ওনারে যখন পেয়েছি, তখন আমার প্রশ্নের উত্তর না নিয়ে আমি যাব না। যতই উনি আমার দিকে না তাকিয়ে বহিস্কার হোন বলুন, কাজ হবে না।
-"স্যার আমি প্রশ্নগুলো শুরু করব ?" বলে ওনার মাথার আরও কাছে গিয়ে বসলাম। স্যার আমার কথার কোন উত্তর দিলেন না। আমি বললাম,
-“স্যার সবাই বলে মৌনতা নাকি সম্মতির লক্ষণ । তাহলে আমি ধরে নিলাম আপনি সম্মতি দিয়েছেন। "
-"আপনি কেন ঝামেলা করছেন ? কেন আমার শান্তি বিঘ্নিত করছেন ? আমি আপনাকে যেতে বলেছি। আপনি যদি বাংলা না বোঝেন তো বলুন।আপনি যে ভাষা বোঝেন আমি সেই ভাষাতেই বলব বহিস্কার হোন। আলহামদুলিল্লাহ আমি এখন সকল ভাষায় কথা বলতে পারি। এলিয়েনদের ভাষাও আমার জানা।"
-"স্যার আমি দুঃখিত । বেয়াদবি নেবেন না। আপনি যে ভাষাতেই বলেন না কেন,আমি যাব না। আমাকে একটু সময় দেন । আমার প্রশ্নগুলি করেই আমি চলে যাব। মাত্র পাঁচ মিনিট সময়। প্লিজ স্যার।"
-" আপনার নাম কি ?
-" আমার নাম ইমদাদ। তবে স্যার আপনি আমাকে বাবু নামেও ডাকতে পারেন। এটা আমার ডাক নাম। যদিও নামটা আমার পছন্দ না। এই নামের কারনে আমি কিছুতেই বড় হতে পারছি না। ফেসবুকে বন্ধুরা আমাকে খোকা বাবু,ছোট্ট বাবু, বাবু সোনা বিভিন্ন নামে জ্বালাতন করে। অবশ্য আমার বাবু নাম রাখার পিছনে একটা মজার ইতিহাস আছে। কাহিনীটা তা হলে স্যার আপনাকে বলি। আমি তখন.....।"
-" ইমদাদ সাহেব আপনি বড় বেশি কথা বলেন । বাচাল টাইপের মানুষ আমার খুবই অপছন্দ । আর এরা খুবই বিরক্তিকর। আমার তো মনে হয় না আপনি পাঁচ মিনিটে আপনার কথা শেষ করতে পারবেন। আপনাকে আমি ত্রিশ মিনিট সময় দিলাম। এর থেকে বেশি সময় আমি আপনাকে দিতে পারব না।"
-" কিন্তু স্যার আমার কাছে ঘড়ি নাই। আর আপনার হাত মাটির নিচে তাই দেখতে পারছি না। তবে সম্ভবত আপনার কাছেও ঘড়ি নাই। তাহলে কীভাবে বুঝবেন আমি কতক্ষণ সময় নষ্ট করলাম।"
-"আমার এখন ঘড়ি লাগে না । আমি আকাশের দিকে তাকিয়েই সময় বলে দিতে পারি।"
-"সোবাহানাল্লাহ, এ তো অনেক বড় কেরামতি। বলেন তো স্যার এখন কটা বাজে। না মানে আমি আপনার কথা বিশ্বাস করেছি। শুধু একটু কৌতূহল মেটানোর জন্য প্রশ্ন করলাম ।"
-“এখন রাত দুটো বেজে বার মিনিট সতেরো সেকেন্ড।কৌতূহল মিটেছে ? তাহলে এখন আপনার প্রশ্ন শুরু করুন। আপনার সময় গণনা শুরু হয়ে গেছে।"
-" ধন্যবাদ স্যার। আচ্ছা স্যার আপনি কি জানেন ,আপনি আমাদের অনেক বড় ক্ষতি করে ফেলেছেন ? আপনি বাংলা সাহিত্যের অনেক উপকার করেছেন, সেটা ঠিক আছে।কিন্তু আমরা যারা লেখালেখি করার চেষ্টা করছি,তাদের জন্য আপনি একটা আতঙ্ক । স্যার কি আমার কথায় রাগ করলেন ?"
-"না রাগ করিনি।এ মুহূর্তে রাগ করতে ইচ্ছে হচ্ছে না । তা এগুলো কি আপনার প্রশ্ন না অভিযোগ বুঝলাম না। আর আমি কীভাবে আপনাদের ক্ষতি করলাম ।"
-" শুধু ক্ষতি না স্যার,একেবারে লুলা বানাইয়া দিছেন। আমরা যাই লেখার চেষ্টা করি পাঠকেরা সমালোচনা করে। আপনি পাঠকের টেষ্ট কে এতো ওপরে নিয়ে গেছেন,যাই লিখি বলে,এগুলো কি যা তা লিখেছে । আর কোনোভাবে যদি কোনো লেখাকে ভালো বলেও ,বলবে পুরা হুমায়ূন স্যারের স্টাইল নকল করে লিখেছে।কন স্যার আমরা এখন কই যাই।”
-" বড়ই জটিল সমস্যা। তা আমাকে নকল না করলেই তো হয়। সবারই মৌলিক কিছু লেখার চেষ্টা করা উচিত। "
-"স্যার,অন্যের কথা জানিনা।আমার কথা বলি।সারা জীবন শুধু আপনার লেখাই পড়েছি।আপনার লেখা খাইছি। আপনার লেখাতে ঘুমাইছি, স্বপ্ন দেখেছি। আপনার লেখা এমন ভাবে মাথায় ঢুকে গেছে যে, এর থেকে বের হতে পারছি না।"
-" ও তাহলে আপনি একজন লেখক ?"
-" জি স্যার তা একটু বলতে পারেন।” লাজুক মুখে বললাম।
-" কি লেখেন ?"
স্যার না তাকিয়েই প্রশ্ন করলেন। অবশ্য উনি এখন পর্যন্ত আমার দিকে একবারও তাকাননি। উনার চোখ আকাশের দিকে। মনে হচ্ছে আকাশে কী যেন খুঁজছেন।
-" সবই লিখি স্যার। আপনাকে আমার লেখা একটা গল্পের কটা লাইন শোনাই , কি বলেন স্যার ?"
-" আমি যদি না বলি আপনি কি শুনবেন ? আমার মনে হয় না। তার চেয়ে বরং তাড়াতাড়ি শুনিয়ে কেটে পড়ুন।”
স্যারের অনুমতি পেয়ে কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ থেকে একটা খাতা বের করলাম এবং আমার লেখা সব থেকে ভালো একটা গল্প পড়া শুরু করলাম,
- "সকাল বেলা। রহিমার মা বড় মামার রুমে টোকা না দিয়ে ঢুকে পড়ল।বড় মামা তখন তার মোটা শরীর নিয়ে ঘরের মধ্যে জগিং করছিলেন। রহিমার মা ঢুকেই বলল , মামা শইলডা ভালা ? মামা কি ব্যায়াম করতাছেন ? তা মামা যতই লাফালাফি করেন আমার মনে হয় না কোনো কাম হইব। আমার তো মনে লয় আপনি দিন দিন আরও মোটা হইতেছেন। মামা রহিমার মাকে বলল, রহিমার মা তোমার এই কথাটা কিন্তু ঠিক না। তুমি এই মুহূর্তে আমার রুম থেকে বহিস্কার হও। রহিমার মা ....."
এই পর্যন্ত পড়তেই স্যার কথা বলে উঠলেন,
-“ইমদাদ সাহেব আপনি তো রীতিমতো একটা ডাকাত। আপনি তো হুবুহু আমার বইয়ের বিভিন্ন চরিত্র,ডায়ালগ মেরে দিয়েছেন।"
-" জি স্যার এটাই তো সমস্যা। যাই লিখি সেটা আপনার মতো হয়ে যায়। স্যার আপনি আমায় ডাকাত বললেন ? আফসোস, বড়ই আফসোস। স্যার আমি তো ভালো , হয়তো আপনার মতো লেখার চেষ্টা করছি। অনেকেতো আপনার পুরো বই,নাম পরিবর্তন করে নিজেদের বলে চালিয়ে দিচ্ছে । কলকাতায় ওরা একটা সিনেমা বানিয়েছে আপনার বই চুরি করে। অথচ বলছে এটা নাকি ওদের লেখা।"
-" আমি জানি। তবে এই নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যথা নেই। পাঠকেরাই বিচার করবে। তবে আপনাকে একটা উপদেশ দেই। আপনার লেখার কিছু অংশ শুনে এবং আপনার সাথে আলাপ করে আমার মনে হয়েছে এই লাইন আপনার না। আপনি লেখালেখি বাদ দিয়ে অন্য কিছু চেষ্টা করেন। কি মন খারাপ হয়ে গেল ? অবশ্য মন খারাপ হলেও ইহাই সত্য । সাহিত্যচর্চা আপনারে দিয়ে হবে না।"
-"জি স্যার সত্য বলেছেন। আমারও তাই ধারণা। সাহিত্যচর্চা আমারে দিয়ে হবে না। তবে মন কিঞ্চিৎ খারাপ হয়েছে।”
-" আসেন আমার সঙ্গে মন দিয়ে জোছনা দেখেন। মন ভালো হয়ে যাবে। অবশ্য জোছনা দেখার সময় জোছনার গান শুনতে পারলে আরও ভালো লাগত।কিন্তু আফসোস আমার কাছে গান শোনার কোন যন্ত্র নাই। থাকলে ভালো হতো ।”
-" স্যার আমি কিন্তু খুব ভালো গান গাইতে পারি। শুনবেন স্যার। ঋতু বলে আমি নাকি অনেক উঁচু লেবেলের শিল্পী। অমি সব সময় তাকে আমার গান শোনাই। অবশ্য সে আমাকে অনুরোধ করেছে , আমি যেন অন্য কাউকে গান না শোনাই।মেয়ে মানুষ তো, স্বামীর কোন কিছুর ভাগ কাউকে দিতে চায় না। তবে আপনারে গান শোনাইলে মনে হয় না সে রাগ করবে। কারণ সে আপনার অনেক বড় ভক্ত ।"
-" ঋতু কে ? আপনার স্ত্রী ?"
-" জি স্যার আমার স্ত্রী। মাশআল্লাহ সে খুবই রূপবতি ও গুণবতী কইন্না।অনেক বুদ্ধি তার। সে আমাকে প্রচণ্ড মহব্বত করে। খুবই নরম দিলের মানুষ। কখনো সে কারও সঙ্গে রাগ করে না।তবে মানুষ যখন আমাকে বোকা বলে সে প্রচণ্ড রেগে যায়। সে বলে আমি নাকি বোকা না ,আমি সহজ সরল। আচ্ছা স্যার আমাকে বোকা বললে রাগ করতে হবে কেন ? বোকা মানুষ কি খারাপ ?"
-" অবশ্যই না।আমি তো সহজ সরল বোকা মানুষদের বেশি পছন্দ করি। কারণ তারা কথা বলে মন খুলে। তারা ভালোবাসে মন খুলে। আর চালাক মানুষেরা যাই করে তার পিছনে একটা না একটা উদ্দেশ্য থাকে। অবশ্য সব উদ্দেশ্য খারাপ তা বলছি না।থাক এসব জটিল কথা।মানুষের কথায় কী যায় আসে।পরিবারের ভালোবাসা,পরিবারের মূল্যায়নই হচ্ছে আসল কথা।"
-" জি স্যার ঠিক বলেছেন। তবে স্যার আপনি ভাগ্যবান। আপনাকে দেশের মানুষ যেমন ভালোবাসে আপনার পরিবারের মানুষও তেমনি ভালোবাসে।সবাই আপনাকে খুব মিস করে । আপনি আপনার পরিবার কে মিস করেন না স্যার ?”
-"মিস করব কেন ? আমি তো সব সময় ওদের আশেপাশেই থাকি।আমার ধারণা ওরা এটা টের পায়।এক কাজ করেন, একটা গান ধরেন।আপনি কি জোছনার কোন গান জানেন ?”
-" অবশ্যই জানি স্যার। আমার স্ত্রী কে আমি মাঝে মাঝেই জোছনার গান শোনাই।"
-" শুরু করুন।"
স্যারের কাছ থেকে অনুমতি পেয়ে বিসমিল্লাহ বলে শুরু করলাম,
-“বেদের মেয়ে জোছনা আমায় কথা দিয়েছে
আসি আসি বলে জোছনা ফাঁকি দিয়েছে।
তুমি জো......."
-" ইমদাদ সাহেব, আপনি সম্ভবত ভুল বুঝেছেন।আমি আপনারে জোছনার গান গাইতে বলেছি। বেদের মেয়ের গান না।"
স্যারের কথায় মনে হলো স্যার প্রচণ্ড বিরক্ত হয়েছেন।
-" স্যার এটাতো জোছনারই গান।"
-" ইমদাদ সাহেব জোছনা মানে চাঁদনি রাত। চাঁদনি রাতের গান । জানা আছে ?"
-" চাঁদন রাতের গান ? জি স্যার অবশ্যই জানা আছে।"
আবারও বিসমিল্লাহ বলে শুরু করলাম।
" চাকভুম চাকভুম হু
চাঁদনি রাতে কিছু বলব তোমায় চোখের ভাষায়।
দিন যে কাটে না রাত........"
-"থামেন ।"
বলে স্যার বিস্মিত এবং বিরক্তি মাখা দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন। এতক্ষণ স্যারের সাথে আছি, অথচ এই প্রথম স্যার আমার দিকে তাকালেন। স্যার প্রচণ্ড রেগে গেছেন, বুঝতে পারছি। সম্ভবত আমাকে কি বলবেন উনি ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না। আমি ভয়ে স্যারের থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম। অনেকক্ষণ পর স্যার বলে উঠলেন,
-"ইমদাদ সাহেব , আপনার রুচি তো ভয়ংকর রকমের খারাপ। আর আপনার গানের গলা তার থেকেও খারাপ। আজকের পর আপনি আর গান গাইবেন না। আপনার গান শব্দ দূষণ ছাড়া আর কিছুই নয়। আপনার স্ত্রী আপনাকে প্রচণ্ড ভালোবাসে আপনি কষ্ট পাবেন ভেবেই সম্ভবত সে আপনাকে সত্যি কথাটা বলে না। আর আপনি বললেন না , আপনার স্ত্রী বলেছেন অন্য কাউকে গান না শোনাতে। কারণ আমার ধারণা , সে চায় না আপনাকে নিয়ে কেউ হাসাহাসি করুক। এই সাধারণ ব্যাপারটা আপনি ধরতে পারেননি। আজকের পর কাউকেই গান শোনাবেন না , এটা আপনার লাইন না।"
-" জি স্যার শোনাব না। আমারও তাই ধারণা,এটা আমার লাইন না। তবে স্যার আমি জানতাম আপনি সবাই কে উৎসাহ দেন। আপনি অনেককেই প্রতিষ্ঠিত করেছেন। কিন্তু আমাকে সব কিছুতেই নিরুৎসাহিত করছেন।আমার দ্বারা কি কিছুই হবে না।"
-" দেখুন ,আমি যার প্রতিভা আছে তাকে উৎসাহ দিই। আপনাকে কেন মিথ্যা উৎসাহ দেব।এতে আপনার ক্ষতি করা হবে। আপনার ভিতর কোন না কোন গুণ অবশ্যই আছে। সেটা খুঁজে বের করুন। তারপর সেটাই করুন। দেখবেন সাফল্য পাবেন। আপনি কাঁদছেন কেন ? সরি,আমি আপনাকে কষ্ট দিতে চাইনি। কিন্তু সত্যকে তো অস্বীকার করা যাবে না। প্লিজ কাঁদবেন না।"
-"না স্যার,আমি আপনের কথায় কাঁদছি না। আমার স্ত্রীর কথা ভেবে কাঁদছি। আমি তাঁকে আমার বেসুরো গলায় গান শুনিয়ে শুনিয়ে না জানি কত কষ্ট দিয়েছি। অথচ সে কখনো আমাকে বুঝতে দেয়নি। বরং আরও উৎসাহ দিয়ে গেছে। সে আমাকে এতো ভালোবাসে ? আমিতো রীতিমতো ভাগ্যবান।"
-" জি কথা সত্য। আপনি ভাগ্যবান। সুন্দরী স্ত্রী পাওয়া যায়। কিন্তু ভালো স্ত্রী পেতে ভাগ্য লাগে। আর শুনুন আপনি অনেক ভাল মানুষ। আপনাকে আমার ভালো লেগেছে । সময় পেলে আবার আসবেন। আপনার সব কথা শুনব। এখন কি আপনি আমার সাথে জোছনা দেখবেন,নাকি চলে যাবেন। কারণ আপনার ত্রিশ মিনিট অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে।"
-" আপনি অনুমতি দিলে কিছুক্ষণ জোছনা দেখব।"
-" এক কাজ করুন।ওই সামনে একটা কোদাল আছে। ওটা দিয়ে আমার সামনে একটু দুরে মাটি খনন করুন। এরপর মাথাটা বের করে নিজেকে মাটি চাপা দিন। তারপর কথা না বলে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকুন।"
আমি স্যারের কথামতো নিজেকে মাটি চাপা দিলাম। তারপর আকাশের দিকে তাকিয়ে জোছনা দেখতে থাকলাম। দুজনের কেউ কোন কথা বলছি না। জোছনার বৃষ্টিতে ভিজছি। জোছনার এই রূপ আগে কখনই দেখেনি। কতক্ষণ ধরে দেখছি বলতে পারব না। সময়টা জানা দরকার। দেখি স্যারকে জিজ্ঞেস করি। স্যারের দিকে তাকিয়ে শরীর টা হিম হয়ে গেল। স্যার নেই। ডানে বামে সামনে যতদুর চোখ যায় মনে হচ্ছে ধু-ধু মরুভূমি। কোথায়ও স্যার নেই। আমি একা। আমি এখন মাটির নিচ থেকে কীভাবে বের হব।আমার ভয় করছে। আমি ঘামছি। আমি চিৎকার করে ডাকছি,
-" স্যার আপনি কোথায়। স্যার আপনি কোথায় । স্যার । স্যার,আপনি কোথায় .....।"
-"এই তোমার কি হয়েছে ? এই সব পাগলের মতো কি বলছ ? তুমি কি স্বপ্ন দেখছ ?"
কে যেন আমাকে ধাক্কা দিচ্ছে এবং কথাগুলো বলছে। চোখ খুলে দেখি ঋতু।
-"কি হয়েছে তোমার ? স্বপ্ন দেখছিলে ? দেখ ঘেমে কি হয়েছ।স্যার স্যার করে চিৎকার করছিলে ।স্যার কে ? অফিসের বস ?”
একনাগাড়ে প্রশ্নগুলি করলো ঋতু।তার চেহারাতে উদ্বেগের ছাপ সুস্পষ্ট । শাড়ির আচঁল দিয়ে পরম যত্নে আমার ঘাম মুছে দিচ্ছে। ধাতস্থ হতে কিছুটা সময় লাগল।কোনো উত্তর না দিয়ে চোখ বন্ধ করলাম। পরম ভালো লাগায় মনটা ছেয়ে আছে। স্যারকে কখনো বাস্তবে দেখিনি। হোক না স্বপ্নে,তাতে কি।স্যারের সাথে কথা বলেছি,স্যারের সাথে জোছনা দেখেছি, এও তো কম পাওয়া নয়।
-" কি হলো বললে না স্বপ্নে কি দেখেছ।খারাপ কিছু ? স্যার টা কে ?"
ঋতু মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে প্রশ্নগুলো করল।আমি জানি উত্তর না দেওয়া পর্যন্ত সে প্রশ্ন করেই যাবে।
- " বাংলাদেশে স্যারতো একজনই। হুমায়ূন স্যার। আর এতক্ষণ আমি স্যারের সঙ্গেই ছিলাম।স্যার কে বেদের মেয়ে জোছনার গান শুনিয়েছি। অবশ্য স্যার আমার গান শুনে প্রচণ্ড বিরক্ত হয়েছেন। তারপর গলা পর্যন্ত মাটি চাপা দিয়ে স্যারের সাথে জোছনা দেখেছি। দেখ আমার সারা গায়ে মাটি লেগে আছে। এখন ভালো করে সাবান দিয়ে গোসল করতে হবে। "
এতটুকু বলে একটু থামলাম। দেখলাম ভয়ে ঋতুর চোখ বড় বড় হয়ে গেছে।
-"এই সব কি যাতা বলছ।”
কাঁপা কাঁপা গলায় ঋতু প্রশ্ন করল।
ওর কথার কোন উত্তর না দিয়ে আমি আবার বলা শুরু করলাম।
-"আলহামদুলিল্লাহ স্যার আমাকে খুবই পছন্দ করেছেন। বলেছেন আমি একজন ভালো মানুষ। আমাকে আবারও স্যারের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দিয়েছেন। এরপরে যেদিন আবার যাব,তোমাকে নিয়ে যাব।তবে তার আগে তুমি বেশ কিছু জোছনার গান শিখে রাখবে। স্যার কে শোনাতে হবে ।আমিই শিখতাম , কিন্তু স্যার আমাকে গান গাইতে নিষেধ করেছেন। বিশেষ করে কারও সামনে গান না গাইতে বলেছেন।আফসোস,এখন থেকে বাথরুমে গান গাইতে হবে। প্রতিভা তো আর নষ্ট করা যাবে না । যাই গোসল করে গায়ের মাটিগুলো পরিস্কার করে আসি।"
বলেই বিছানা থেকে উঠে বাথরুমের দিকে রওনা দিলাম। পেছন থেকে ঋতু বোকার মতো তাকিয়ে রইলো । আমি জানি সে এখন আতঙ্কে ঘামছে। বোধ হয় ফাজলামিটা বেশি হয়ে গেছে।একবার ইচ্ছে হলো পিছনে ঘাড় ঘুরিয়ে ঋতুর অবাক হওয়া বোকা বোকা চেহারাটা দেখি। কিন্তু দেখলাম না । নিজের স্ত্রীর বোকা বোকা চেহারা দেখে আনন্দিত হওয়াটা অসুস্হতার লক্ষণ।
বাথরুমে ঢুকে শাওয়ার ছেড়ে গান ধরলাম," আজ জোছনা রাতে সবাই গেছে বনে.......।”
আচ্ছা স্যারের সামনে এ গানটা মনে এল না কেন ? আফসোস।"

বি: দ্রষ্টব্য : শুধুমাত্র মজা করার জন্য লেখাটি লেখা।ভুল হলে ক্ষমা করবেন। হুমায়ূন স্যার শুধুমাত্র আপনার পরিবার না, আমরাও টের পাই আপনি আমাদের মাঝেই আছেন। আল্লাহ আপনাকে বেহেশত নসিব করুন।



Post a Comment

0 Comments