শিক্ষা

Ads Inside Post

শিক্ষা



golpo-ghar.blogspot.com


আমি হঠাৎ সরকারি চাকরিটা পেয়ে যাবার পর আমাদের পরিবারের সদস্যদের মাঝে এক অদ্ভুত পরিবর্তন সৃষ্টি হয়েছে। বাবা পাইলট সিগারেট খাওয়া বাদ দিয়ে বেনসন সিগারেট ধরেছেন। মা সারাক্ষণ হিন্দি সিরিয়ালের মহিলাদের মত সেজে গুজে থাকেন। আর ছোট বোন মানুষের সাথে কথা বলার সিস্টেম পাল্টে ফেলেছে। সে এখন মানুষের সাথে নাক উঁচু করে মুখ বাকিয়ে একটা বড়লোকি ভাব নিয়ে ঢং করে কথা বলে....
আমার চাকরির আগে আমার জন্য খুব সাধারন পরিবারের মেয়ে দেখা হতো।কিন্তু সরকারি চাকরি পাওয়ার পর সেদিন খেয়াল করলাম বাবা ঘটককে বলছে,
- উচ্চ বংশীয় মেয়ে হওয়া চাই। মেয়ের বাবা বড়লোক হতে হবে। তাছাড়া অনেক টাকা যৌতুক ও দিতে হবে। মেয়ে সুন্দর হতে হবে আবার শিক্ষিত হতে হবে...
ঘটক বাবার কথা শুনে আমতা আমতা করে করে বললো,
-- গরু লাল, বাছুর লাল আবার দুধুও লাল সব তো একসাথে পাওয়া যাবে না।
বাবা ঘটককে ধমক দিয়ে বললো,
- আমার ছেলে সরকারি চাকরি করে। এই সময় সরকারি চাকরি পাওয়া আর সোনার ডিম পাড়া হাঁস পাওয়া একই কথা....
আমি বাবার পায়ে ধরে বললাম,
-- বাবা, আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ। তাই আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েকেই বিয়ে করবো। তাছাড়া বিয়ে সব সময় করতে হয় নিজের পরিবার থেকে একটু দুর্বল পরিবারে। তাহলে সংসার সুখেত হয় আর শ্বশুরবাড়ির লোকজনও সম্মান করে। তাছাড়া আমি যৌতুক নিয়ে বিয়ে করবো না।
বাবা আমার কথা শুনে রেগে গিয়ে বললো,
- তকে জন্ম যেহেতু আমি দিয়েছি তকে বিয়েও আমি করাবো । আমার পছন্দের মেয়েকেই তোর বিয়ে করতে হবে।
পাশ থেকে মা চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
~ তোর বাপ তকে কত কষ্ট করে লেখা পড়া করিয়েছে। আজ তুই সরকারি চাকরি পাওয়ার পর সেই বাবার মুখের উপর কথা বলছিস?
আমি মার কান্না দেখে বললাম,
--তোমরা যাকে বলবে তাকেই বিয়ে করবো আপাতত কান্নাকাটি বন্ধ করো...
অবশেষে আমার বিয়ে ঠিক হলো পাশের এলাকার খুব প্রভাবশালী লোকের মেয়ের সাথে।ছেলে সরকারি চাকরি করে এই কথা শুনেই ওরা বিয়েতে রাজি হয়ে গেছে। মোটা অংকের টাকা যৌতুক দিবে তাছাড়া ফ্রিজ টেলিভিশন এসি যা যা লাগে সব দিবে...
বিয়ের দিন বাবাকে কিছুটা উত্তেজিত দেখলাম। আমি ডাক দিয়ে বাবাকে আমার পাশে বসিয়ে বললাম,
-- বাবা, কোন সমস্যা হয়ছে কি?
বাবা বাম পা নাড়াতে নাড়াতে বললো,
- ওরা আমাদের গরীব মনে করে। ভেবেছে আমরা কাবিন নামা ৩ লাখের উপর করতে পারবো না। ওরা এটা বুঝে না যে আমার ছেলে সরকারি চাকরি করে। তাই দিলাম কাবিন নামা ৩০ লাখ...
বাবার কথা শুনে আমার দম আটকে গেলো। আমার মুখদিয়ে কোন কথা বের হচ্ছিলো না। বাবা বড়লোক গিরি দেখাতে গিয়ে বোকার মত এইকাজটা কিভাবে করলো....
বাসর রাতে ঢুকে দেখি বউ ফোনে পাবজি গেম খেলছে। আমি বউয়ের পাশে বসতেই বউ বললো,
~বিয়ের দেনমহর কত জানেন?
আমি মাথাটা নিচু করে মিনমিন করে বললাম,
-- ৩০ লক্ষ টাকা..
~শোনেন মিস্টার পিয়াস, নিয়ম হলো বউয়ের দেনমহরের টাকা পরিশোধ করে বউকে স্পর্শ করা। কিছু কিছু ভালো মেয়ে আছে যারা দেনমহরের পুরো টাকা না দিলেও স্বামীকে স্পর্শ করার অনুমতি দেয় কিন্তু আমি শ্রাবণী এত ভালো মেয়ে না। তাই যেদিন পুরো দেনমহরের টাকা শোধ করতে পারবেন সেদিন আমায় স্পর্শ করবেন। তার আগে স্পর্শ করার চিন্তা মাথাতেও আনবেন না।
বউয়ের কথা শুনে মনে মনে ভাবতে লাগলাম, এই সরকারি চাকরি আমার জীবন নষ্ট করে দিলো। এই চাকরি না পেলে আমাদের পরিবারের সদস্যদের এত পরিবর্তন হতো না আর আমিও খুব সাধারণ পরিবারের একটা মেয়েকে বিয়ে করে খুব সুখে থাকতাম...
কয়েকদিন পর একদিন আফিস থেকে বাসায় এসে দেখি বাবা মা বোন মুখ গোমড়া করে বসে আছে। আমি বললাম, কি হয়েছে সবার?
ছোট বোন বললো,
-আমি টিভিতে মুভি দেখছিলাম। ভাবী এসে রিমোট নিয়ে অন্য চ্যানেল দেখতে লাগলো। আমি ভাবীকে বললাম, ভাবী তুমি অন্য চ্যানেল দিলে কেন? ভাবী বললো, আমার বাবা এই টিভি আমায় দিছে তাই আমি যা ইচ্ছে তাই দেখবো।
এইবার মাকে বললাম, তোমার কি হয়ছে?
মা বললো,
- বউমাকে বলেছিলাম একটু রান্না কাজে সাহায্য করতে। কিন্তু বউমা বললো, বাপের বাড়ি থেকে এত টাকা যৌতুক এনেছি কি কাজের মেয়ের মত রান্না বান্না করতে? পারলে নিজে রান্না করেন নয়তো কাজের মেয়ে রেখে করান...
বাবাকে বললাম তোমার কি সমস্যা?
বাবা মুখটা গোমড়া করে বললো,
- বউমাকে বলেছিলাম ২ টা এসির মাধ্যে একটা এসি আমার রুমে লাগাতে। কিন্তু বউমা আমার মুখের উপর বললো, আমার বাবা এসি দিয়েছে আমি যেখানে খুশি সেখানে এসি লাগাবো। আপনাকে তো দেয় নি যে আপনার রুমে লাগাবো...
আমি সবার কথা শুনে কিছুটা সময় নিরব থেকে বললাম,
-- তা তোমারা আমায় এইসব কথা শোনাচ্ছ কেন?
বাবা আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বললো,
- তোর বউ তকে বলবো না তো কাকে বলবো?
আমি বাবার কথা শুনে হাসতে হাসতে বললাম,
-- বিয়ে তো তোমরা তোমাদের পছন্দের মেয়ের সাথে আমায় করিয়েছো। আর তোমাদের ইচ্ছাতেই যৌতুক নিয়েছো। আমি তো আগেই বলেছিলাম আমার বিয়ের জন্য একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের সাধারণ মেয়ে দেখতে কিন্তু তোমাদের তো উচ্চ বংশীয় মেয়ে চাই। এখন বুঝো মজা।
পরের দিন সকালে যখন বাবা মাকে সালাম করি তখন বাবা বললো,
- কি রে, হঠাৎ সালাম করছিস কেন?
আমি বাবার দিকে তাকিয়ে বললাম,
-- তোমাদের বউমা তোমাদের সাথে থাকতে চাই না। সে তার বাবার দেওয়া ফ্ল্যাটে থাকবে। আর আমার তো কোন উপায় নেই তাই আমাকেও ওর সাথে থাকতে হবে। কারণ আমি যদি বলি আমি তোমাদের সাথে থাকবো তাহলে বউকে ডিভোর্স দিতে হবে। আর ডিভোর্স দিলে পুরো দেহমহরের টাকা পরিশোধ করতে হবে৷ আর যদি পরিশোধ করতে না পারি আমাকে জেলে থাকতে হবে। তাই চিন্তা করলাম জেলে যাওয়ার চেয়ে বউয়ের সাথে থাকা ভালো।
আমার কথা গুলো বাবা মা চুপ করে রইলো।
আমি তখন বাবার হাত ধরে বললাম,
-- বাবা, লোভ করা ভালো না। তোমাদের দোয়াতে আমি সরকারি একটা ভালো চাকরি পেয়েছিলাম কিন্তু তোমরা এই চাকরিটাকে কেন্দ্র করে অনেক বেশি লোভ করে ফেলেছিলে। ভুলে গিয়েছিলে আমাদের অস্তিত্বের কথা। আর বড়লোক গিরি দেখাতে গিয়ে কাবিননামা দিয়েছো ৩০ লাখ টাকা। যেটা পরিশোধ করার ক্ষমতা আমার এই মুহূর্তে নেই। বাবা, অন্যের থেকে ভিখারীর মত চেয়ে বড়লোক হওয়ার চেয়ে নিজের যা আছে তা নিয়ে গরীব থাকা অনেক ভালো...
আমি চলে যাচ্ছি, বাবা মা নিরব চোখে আমাদের চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে আছে।
এমন সময় শ্রাবণী ( আমার বউ) আমায় জোরে চিমটি দিয়ে বললো,
~ বাবা মা কে এতটা কষ্ট না দিলেও পারতে আর আমাকে দিয়ে এই অভিনয়টা না করালেও পারতে। শুধু শুধু উনাদের সাথে এমনটা করা উচিত হয় নি..
আমি তখন শ্রাবণীর হাতটা শক্ত করে ধরে বললাম,
-- বাবা মার শিক্ষা হওয়া দরকার। তা না হলে আরো ভুল করবে। লোভে পাপ আর পাপে মিত্যৃ,এই দুই দিনে আশা করি বাবা তার ভুল গুলো বুঝবে।আর তোমাদের যৌতুকে টাকা জিনিসপত্র ফেরত দিতে রাজিও হবে। আর দুইদিন পর তো আমরা এমনিতেই বাবা মার কাছে ফিরে যাবো..
শ্রাবণী তখন আমার হাতটা সরিয়ে মিষ্টি হেসে বললো,
~এই যে মিস্টার আমায় স্পর্শ করবেন না। দেনমহরের টাকা কিন্তু এখনো পরিশোধ হয় নি আর আমি এখনো দাবী ছাড়ি নি..




Post a Comment

1 Comments

Thanks for your valuable comment. We will be back soon.
Thank you 😊😊😊