|
golpo-ghar.blogspot.com |
বউ টেবিলে বসে লেখালেখি করছে। আমি কাছে গিয়ে বললাম, কী লিখছো বউ? গল্প উপন্যাস?
বউ মুখ ঝামটা দিয়ে বললো, কী মনে হয় তোমার? আমি তোমার মতো ফাউল টাইপ মানুষ? ঐ সব আজেবাজে জিনিস লিখে সময় নষ্ট করবো? বাজারের লিস্ট করছি, কতদিন বাজারে যাওনি মনে আছে? ঘরে রান্না করার মতো কিছু নাই।
টুকটাক লেখালেখি করি, বউ পছন্দ করে না, এটা আমি জানি।
এতো বড় লিস্ট দেখে মাথা ঘুরে পড়তে পড়তে কোন রকমে চেয়ার ধরে নিজেকে আটকিয়ে বললাম, লিস্টের সাইজ দেখে তো মনে হচ্ছে কমপক্ষে তিন ফুট হবে। আমার মৃত্যুবার্ষিকির বাজারেও তো এতো লম্বা ফর্দ লাগবে না!!
বউ রেগে গিয়ে বললো, কথা কম বলবা।সংসার তো তুমি চালাও না,আমি চালাই। আমি জানি কী লাগে। দৌড় দেও।একটা জিনিস কম আনলে তোমার খবর আছে!
লিস্ট হাতে নিয়ে দেখি,,,আদা, রসুন, পেঁয়াজ মাছ, গরুর মাংস, খাসির মাংস, মুরগীর মাংস কোনোটা বাদ রাখে নাই!শেষে লিখেছে শুটকি,ডিম।
মনে মনে বউয়ের প্রশংসা করলাম। যাক, বউ বড়লোকের মাছ মাংসের পাশাপাশি গরীবের খাবার শুটকি ডিম এগুলোর কথা মনে রেখেছে!
রাস্তা দিয়ে হাঁটছি আর ভাবছি, হায় আল্লাহ!জিনিসপত্রের দাম কতো বেড়েছে। একসময়ে লোকজন পকেটে করে টাকা নিয়ে বস্তায় বস্তায় বাজার কিনে আনতো! আর এখন? বস্তায় ভরে টাকা নিয়ে হাত ব্যাগে করে বাজার কিনে ফিরতে হয়! আমাদের পোলাপানের সময় কী হবে? ওরা ট্রাকে করে টাকা নিয়ে বাজারে যাবে, পলিথিন ব্যাগে করে বাজার কিনে ফিরবে!!
হাতের ব্যাগের দিকে তাকাচ্ছি আর ভাবছি, পকেটে যে টাকা আছে, হাতের ব্যাগ ভরবে তো?
কিছুক্ষণ হাটার পর একজন লোককে দেখলাম বিশাল দুইটা ব্যাগ ভর্তি বাজার করে নিয়ে যাচ্ছে। এই দুর্দিনে বিশাল বাজার করেছে মানে লোকটার মালপানি ভালোই আছে। কে এই লোক? চেনা চেনা লাগে। ক্যাসিনো ব্যবসায়ী না তো!এই সময় একমাত্র ক্যাসিনো ব্যবসায়ীদের ঘরেই বস্তাবন্দি টাকা থাকে।
কাছে আসতেই আমি বললাম, ভাই আপনাকে চেনা চেনা লাগে? কে আপনি? বাড়ি কই?
লোকটা আহত গলায় বললো, আমাকে চিনতে পারছেন না!ভেরি স্যাড। আমি শুভ,আরেফিন শুভ। ফিল্ম জগতের সুপার স্টার।আমি সিনেমা জগতের সুপার ডুপার হিরো। আমাকে চিনতে পারছেন না, এইটা একটা কথা!বিশাল মাইন্ড খাইলাম!!
আমি বললাম, ভুল হয়ে গেছে ভাই। আমি বিশাল ক্ষমার অযোগ্য ভুল করে ফেলেছি,আপনার মতো স্টারকে যে লোক চিনতে পারছে না, তার তো এদেশে থাকারই কোন রাইট নাই! আসলে আমি তো সিনেমা তেমন দেখি না,টিভিই ভরসা। মনে হচ্ছে জীবিত কোন নায়ককে এই প্রথম সরাসরি দেখলাম!!
আরেফিন শুভ হেঁসে ফেলে বললেন, ভাই আপনি জীবিত না বিবাহিত?
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম, ভাই,বিয়ে করার পর কেউ কি আর জীবিত থাকে? আগে তো জীবিত ছিলাম, এখন বিবাহিত! দেখছেন না, ব্যাগ হাতে বাজারে দৌড়াচ্ছি!!বউয়ের হুকুম বলে কথা!!!
শুভ ভারাক্রান্ত কন্ঠে আক্ষেপ করে বললো, ঠিক বলেছেন ভাই, বাইরে যতবড়ই হিরো হই না কেন, ঘরে বউয়ের কাছে একেবারে জিরো!দেখছেন না,আমিও বাজারের ব্যাগ হাতে দৌড়াচ্ছি!!
বাজারে গিয়ে চান্দি গরম হয়ে গেল। জিনিসপত্র বিশাল দাম।কোনটা রেখে কোনটা কিনি।খাসির মাংস নয়শো টাকা কেজি। এক কেজি সাইজের ইলিশের দাম পনেরো,শ টাকা।দাম শুনে কান দিয়ে গরম বাতাস বের হতে শুরু করলো!!
ধুর শালা! আজ গরীবের বাজার করে ঘরে ফিরবো, যা থাকে কপালে! শুটকি ডিম দিয়েই সপ্তাহ চালিয়ে নেবো।
পুঁটি শুটকি মাছের দাম শুনে মাথা ঘুরে পড়ে গেলাম! কোনরকমে উঠে আবার জিজ্ঞেস করলাম, ভাই দাম কতো বললেন?
দোকানী বললো, কানে কম শোনেন নাকি মিয়া! একহাজার টাকা কেজি।
আমি বললাম, ডিমের দাম কতো?
দোকানী বললো, একদাম বিয়াল্লিশ টাকা হালি।
আমি হাঁদারাম কিছুতেই ভেবে পেলাম না, একহাজার টাকা ধরের শুটকি, বিয়াল্লিশ টাকা হালি ডিম কী করে গরীবের খাবার হলো!!
পেঁয়াজের দাম শুনে আরেকবার মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো। এক,শ টাকা কেজি!!
আমি বললাম, ভাই সত্তর টাকায় দেওয়া যাবে না?
দোকানী বললো, আপনার পেঁয়াজ কেনার দরকার নাই, ঐ যে পেঁয়াজের খোসা দেখছেন, সেগুলি নিয়ে যান, একদম ফ্রী! তরকারিতে একমুঠ করে দিয়ে দিবেন, পেঁয়াজের ঘ্রাণ পাবেন!!
সেখান থেকে বেড়িয়ে আলুর দোকানে গেলাম। আলুর দাম চাইলো বিশ টাকা কেজি।আমি দোকানীকে বললাম, আসেন ভাই কোলাকুলি করি,একমাত্র আপনি আমার দুঃখটা বুজলেন!!
বাজার দেখে বউ রেগে ফায়ার! চোখ গরম করে বললো, শুধু আলু কেন?
আমি বললাম, সরকার বলছে, বেশি বেশি আলু খান,ভাতের উপর চাপ কমান।আমি ভেবে দেখলাম বউ,যে হারে চালের দাম বাড়ছে, আমাদের একটা কিছু করা উচিত। সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এক সপ্তাহ শুধু আলু খেয়ে থাকবো।ভাত সামান্য খাবো,সাথে থাকবে আলু ভাজি,আলুর ভর্তা,,,,,
আলু ভর্তা যে খাবে, পেঁয়াজ কই?
সে এক বিরাট ইতিহাস বউ!পিঁয়াজ কিনতে গেছি, হঠাৎ মনে হলো, আরে, গত সপ্তাহে বউটাকে দেখলাম পেঁয়াজ কাটছে আর কান্নাকাটি করছে। তোমার চোখের পানি দেখে মনে হলো তুমি একদমই পেঁয়াজ কাটতে পছন্দ কর না! মনে হলো, আহারে! বউটারে আমি কত কষ্ট দেই,পিঁয়াজ না খেলে কী হয়!!তোমার কথা চিন্তা করে পেঁয়াজ কেনা বাদ দিয়ে দিলাম!!!
পেঁয়াজ ছাড়া দুই বেলা আলুভাজি আর আলু ভর্তা দিয়ে ভাত খেয়ে তৃতীয় বেলাও তা খেতে হবে ভেবে পরের দিন সকালে বউকে বললাম, বউ, অনেকদিন হয় তোমার বাপের বাড়ি যাইনা। তুমি এতো রিকুয়েষ্ট করার পরও তোমার কথা রাখিনা। দশটা না পাঁচটা না, তুমি আমার একটা মাত্র বউ!তোমার কথা না শুনলে কি চলে!!
বউ সাথে সাথে রাজি হয়ে গেল।
যাক বাবা, বাঁচা গেলো! শালার আলুভাজি আর ভর্তা থেকে তো রেহাই পেলাম!!
শ্বশুরবাড়ি দুপুরে খেতে বসেছি। সেই আলুভাজি আর ভর্তা! দেখেই আমার মাথা খারাপ হয়ে গেল। মনে মনে বললাম, হঠাৎ না বলে কয়ে চলে এসেছি, হয়তো বাজার করার সময় পায়নি। রাতে ভালো খাবার পাবো ভেবে পেটপুরে খেলাম না।রাতে ভালো ভালো খাবার খেতে হবে না!!
রাতে ও আলুভাজি আর ভর্তা! আমি রেগে গিয়ে বললাম, এইসব কী হচ্ছে বউ? তোমার বাপ তো দেখি হেভি কিপ্টা!!দশটা না পাঁচটা না, আমি তোমাদের বাড়ির একমাত্র মেয়ের জামাই!! জামাইকে মানুষ এসব খেতে দেয়!!!
বউ বললো, তোমাদের সরকার যেন কী বলেছে?
আমি অবাক হয়ে বললাম, এখানে সরকারকে টানছো কেন?সেই ব্যাটা আবার কী বলেছে??
বেশি করে আলু খান, ভাতের উপর চাপ কমান!!
আমি হা করে বউয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম!!!
0 Comments
Thanks for your valuable comment. We will be back soon.
Thank you 😊😊😊