পর্ব---৩
কিছু দিন পর খবর এলো জুনায়েদ ব্রেন ক্যান্সারে মারা গেছে।
.
এই কথা যেই ফারজানা শুনেছে তখনি টাস করে সেন্স হারিয়ে ফেলেছে।
এতো বড় আঘাত ফারজানা মেনে নিতে পারেনি।
.
যখন সেন্স ফিরে তখন পাগল প্রাই শুধু জুনায়েদ আর জুনায়েদ বলে চেঁচিয়ে
উঠছে।
.
জুনায়েদের বাবা মাও এখন অন্য রকম হয়ে গেছে ছেলের মৃতুতে।
জুনায়েদের সাথে শুধু সাথী গিয়েছে সিঙ্গাপুরে।
.
সাথী বাসায় ফোন করে আর বলে জুনায়েদের নাকি বলেছে যদি মারা
যায় তাহলে যেনো আমাকে এখানেই কবর দেওয়া হয়।
আমার মুখ যেনো কেউ না দেখে।
.
জুনায়েদের বাবা মা অনেক কষ্ট পাই ছেলের এমন কথায়। এমন কি হয়েছে যে
মুখ যেনো না দেখে। জুনায়েদের মা ছেলের জন্য পাগল হয়ে গেছে।
.
আর ফারজানা যখনি শুনছে জুনায়েদ বলেছে যে আমার মুখ যেনো কেউ না
দেখে তারপর থেকেই অন্য রকম হয়ে গেছে।
.
ফারজানা ভাবে সব আমার জন্য হয়েছে আর সব সময় এটাই ভাবতে থাকে ।
.
আজ ৭ দিন হয়ে গেলো ফারজানা খাওয়াদাওয়া ভুলে গেছে। ফারজানার বাবা জানার পরে তিনিও অনেক কষ্ট পান। মেয়ের এমন অবস্থা দেখতে পারেন না
তিনি। মাঝেমধ্যে তিনি জর করে মেয়ে কিছু খাওয়ান।.
.জুনায়েদ মারা যাবার ১০ দিন পর সাথী দেশে আসে আর ফারজানা তা
শুনে পাগলের মতো জুনায়েদের বাসায় যায় এই বুঝি জুনায়েদ আসলো।
.
সাথী আসার আগেই ফারজানা গিয়ে হাজির।
.
সাথী যখন বাসায় ঢুকে তখন ফারজানা চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলে আমার
জুনায়েদ কই আমার জুনায়েদ কই?
ফারজানার এমন ব্যবহারে জুনায়েদের বাবা মা অবাক হয়ে যায় কারন
ফারজানা সাথীর বান্ধবী কিন্তু জুনায়েদের কথা সে কেনো বলছে?
.
যখন সাথী বললো জুনায়েদ কে সে ওখানের রেখে এসেছে। কোনো এক
জনকে নাকি মুখ দেখাতে চাই না।ফারজানার দাপাতে থাকে আর কান্না করতে থাকে আর বলে সব দোষ আমার সব আমার জন্য হয়েছে।
. সাথী ফারজানাকে সান্ত করার চেষ্টা করে কিন্তু সে সান্ত হয় একসময়
ফারজানা সেন্স হারিয়ে ফেলে।
.
ফারজানাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
.
যখন যখন সেন্স ফিরে তখন আবার পাগলামি শুরু করেছে আমার জুনায়েদ
কে এনে দাও। ফারজানার বাবাও কিছু বুঝে উঠতে পারছে না ফারজানা
কেনো তার ছাত্রের কথা বলছে। তিনি অনেক ভাবে বুঝায় কিন্তু
ফারজানা নাছড় বান্দা সে বুঝেনা। শুধু জুনায়েদ আর জুনায়েদ বলে চিৎকার
করে
.
কিছুক্ষন পরে ডাক্তার এসে বলে আপনারা মিষ্টি নিয়ে আসুন।
সবাই জানতে চাইলে তিনি বলেন আপনারা নানা দাদা দাদি হতে
চলেছে। এমন কোথায় সবাই বড় রকমের সক খায়। এটা কিভাবে হলো আর কিভাবে সম্ভব?
ফারজানা এখনো ত বিয়েই করেনি তাহলে কিভাবে কি হচ্ছে?
.
ফারজানার বাবা এক দম স্টপ হয়ে গেছে এই কথা শুনে তার মেয়ে কি
এতো খারাপ হয়ে গেছে যে বিয়ের আগেই মা হতে চলেছে।
.
.
.
জুনায়েদের বাবা মাও এক জাগায় বসে ভাবিতেছে এতো ভালো মেয়ে
এমন কাজ কিভাবে করে। আর এই দিকে ফারজানা শুধু
জুনায়েদের নাম জপে যাচ্ছে।ডাক্তার ঘুমের ইংজেকশন দিয়ে ঘুম
পাড়িয়ে দেয়।
.
যখন ফারজানার ঘুম ভাঙ্গে তখন সে দেখে তার বাবা কান্না করে চোখ মুখ
ফুলিয়ে ফেলেছে।
.
.
ফারজানা হাওমাও করে আবার কান্না শুরু করে দেই তখন ফারজানার
বাবা ফারজানাকে বলে।
.
ফা: বাবা: মা এই কথা আমি কিভাবে বিশ্বাস করি।
ফারজানা:...
বাবা: মা -বল এমন কিভাবে হলো?
ফারজানা:....
বাবা: প্লিজ বল না মা।
ফারজানা:....
বাবা: প্লিজ লিপ্তি বল।
ফারজানা:...
সাথী: ঐ লিপ্তি নামের জন্যই সব হয়েছে ( বাইরে থেকে এসে)
বাবা: মানে?
.
.
তারপর সব কাহিনী এক এক করে সাথী সবাইকে বলতে শুরু করে।
আর সবাই শুনে শুধু কান্না করে।
.
জুনায়েদের বাবা মাও বিশ্বাস করতে পারছে না তার ছেলের সন্তান
ফারজানার গর্ভে।
.
ফারজানার বাবা একদম স্তব্ধীভূত হয়ে যায়।
কি বলবে কিছু বুঝতে পারেনা।
.
এই দিকে জুনায়েদের মা ফারজানাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে।
আর বলে প্লিজ মা আমার ছেলের সৃতিটুকো কেড়ে নিসনা।
জুনায়েদের সন্তানটাকে পৃথিবীর মুখ দেখাস।
ফারজানাও কান্না শুরু করে দেই।
.
সবার মধ্যে একমাত্র সাথীই শান্ত ভাবে সব কিছু ম্যানেজ করছে।
.
ফারজানাকে ফারজানার বাবা বাসায় নিয়ে যায়। আর বাসায় গিয়ে তিনি বুঝান এই বেবি নষ্ট করে ফেলতে কিন্তু ফারজানা নারাজ।ফারজানার বাবা এক প্রকার জোর করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। আর এই খবর সাথী যেনে যায় যে এব্রশন
করার জন্য ফারজানাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
.
সাথী তাড়াতাড়ি হাসপাতালে যায় আর গিয়ে দেখে আর ৫ মিনিট পর বাচ্ছাটা নষ্ট করা হবে।সাথী কে দেখে ফারজানা আবার কান্না শুরু করে দেই।
.
সাথী বলে জুনায়েদের শেষ সৃতিটুকো মুছে ফেলার আগে এই লেটার টা একটু
পড়ে তারপর তোর যা মন তাই করিস।
ফারজানা জিজ্ঞাসা করে কি এটা?
সাথী বলে জুনায়েদের লেটার, তোকে নিয়ে কিছু লেখা পড়লে পড়
না পড়লে আমি ছিড়ে ফেললাম, বাই
ভালো থাকিস।
।
নাহ প্লিজ তুই এমন করিস না তুই প্লিজ লেটারটা দে আমি পড়বো।
তারপর ফারজানাকে লেটার দেই।
.
.
ফারজানা লেটার পড়তে শুরু করে.....
--------------------------
কেমন আছো ফারজানা? নিশ্চয় খুব ভালো আছো। তুমি আবার খারাপ
থাকবে কেনো ?তোমাকেত আর আমার মতো জানোয়ার বিরক্ত করেনা।
জানো ফারজানা সেই দিন আমি তোমায় কিছু করতে চাইনি।
নেশা অবস্থায় হয়তবা কিস করতে চাইছিলাম কিন্তু অন্য কিছু করতে
চাইনি। কিস করা শেষ হলে যখন আমি বিছানায় শুয়ে পড়লাম তুমিই তখন আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলে। তখন আমার কিছু করার শক্তি ছিলোনা।
তুমিই প্রথমে আমাকে কাছে টেনে নিয়েছিলে। তোমার কি মনে আছে
হয়তবা নাই। জানো একটা মেয়ে যখন একটা ছেলেকে ঐ ভাবে টানে কোনো
ছেলে আর থেমে থাকতে পারেনা। ছেলেদের একটু বেশি আবেদন থাকে এই সব বিষয়ে। তোমার টানে সেই দিন আমি তোমার ডাকে সাড়া না দিয়ে পারি নাই।
আমরা মেতে উঠে ছিলাম অন্য রকম পবিত্র ভালোবাসায়।
জানো ইসলাম আমরা স্বামী স্ত্রী ছিলাম।
.
যখন আমার বুকে তুমি চুপটি করে মুখ লুকিয়ে ছিলে আর আমাকে শক্ত করে
আকড়ে ধরে ছিলে। তখন তুমিই বলতে ছিলে আমাদের ছেলে হবে আর আমি
বলেছিলাম মেয়ে হবে। এই কথা নিয়ে অনেক্ষন আমাদের খুন সুটি চলতে
ছিলো। তুমিই প্রথমে বলেছিলে ছেলে হলে মূসা ইব্রাহিম নাম রাখবো আর মেয়ে
হলে মারিয়া। জানো তখন তোমার কথাগুলো অনেক মিষ্টি লাগছিলো। তাই তুমি অনর্গল কথা বলে যাচ্ছিলে আর আমি মিষ্টি কথা গুলো শুনে যাচ্ছিলাম।
জানো সেই রাতে আমার কোনো দোষ ছিলো না। তুমিই আমাকে নিজের করে
নিয়েছিলে।
.
যখন ঘুম ভেঙে আমাকে জানোয়ার আর কত কিছু বললে আমি অনেক অবাক হয়ে
গেছিলাম ভাবতে ছিলাম তুমি সেই ফারজানা সারা রাত ছিলে সাথে আমার ভালোবাসার সাগরে। তুমি যখন বললে তোমাকে যেনো মুখ না দেখাই, তখন খুব কষ্ট লেগেছিলো।
.
তুমি মানা করার পরেও তোমাকে লুকিয়ে দেখতে যেতাম কলেজে।
.
কেনো দেখতে যেতাম জানো? তোমাকে খুব যে ভালোবাসি। আর যেই দিন তুমি জানলে হাসপাতালে আমি তোমার প্রিয় ছাত্র ,সেই দিন অনেক কথা বলেছিলে
আমি অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম। প্রতিটা সেকেন্ড তোমায় মিস করতাম।
আমারো খুব খারাপ লেগেছিলো যেই দিন যানলাম আমার প্রিয় মানুষটা আমার ৫ বছরের বড় আর সেই মানুষ টাই আমার কলেজের ম্যাডাম। আমি তোমায় ভুলে যেতে চাইছিলাম কিন্তু ভুলতে পারিনাই কেনো জানো আমি ত কোনো সিনিয়র মেয়ে বা আমার ক্লাসের ম্যাডামকে ভালোবাসি নাই। আমি ত ভালোবেসে ছিলাম ফারজানা নামে একটা মেয়ে যে সে ছিলো আমার জীবন সাথী।
ভালোবাসা বয়স র্ধম মানে না। আমিও পারছিলাম না তোমায় ছাড়া থাকতে। কেনোই বা থাকবো খুব ভালোবাসতাম তোমায়।।
জানো আমি যখন এটা লেখতে ছিলাম তখন হাতে সেলাইন চলতেছে আপু
আমাকে ধরে রেখেছে অনেক কষ্টে। তুমি না বলতে আমার চুল নিয়ে খেলা
করবে কিন্তু দেখো আমার সেই চুল মাথায় একটাও নেই। জানো সাথী আপু খুব কষ্ট পাচ্ছে আমার এমন অবস্থা দেখে। খুব মিস করছি সেই দিন গুলো তুমি আমায়
সব সময় ভালোবাসি ভালোবাসি বলে পাগল করে দিতে।
জানো খুব ইচ্ছে করছে তোমার মুখে ভালোবাসার কথা টা শুনতে। নাহহ,তুমি ত এই জানোয়ারটাকে পছন্দ করো না। আর শোনো আমি না থাকলেও তোমার কিছু হবেনা। তাও কিছু কথা বলে যায় আপুর সাথে,ভালো সম্পর্ক রাখবে।
তুমি ভালো মত খাওয়াদাওয়া করবে। সব সময় হাসি মুখে থাকবে। আর শেষ
কথা হলো সুন্দর একটা রাজকুমার দেখে বিয়ে করে নিবে।
আর পারলে আমায় প্লিজ ক্ষমা করে দিও।
জানো তোমার এই জানোয়ারটা আর ভালো নাই খুব কষ্টে আছে।
ডাক্তার মনে হয় ওষুধ দিবে তাই আর কিছু লেখলাম না।
ভালো থেকো সুখে থেকো এটাই আমার শেষ কথা।
..... ইতি তোমার জানোয়ার
.
.
লেটার টা পড়ে ফারজানা অঝর নয়নে কান্না শুরু করে দেয়। আর বলতে থাকে
আমি জুনায়েদের সন্তান কে আলো দেখাতে চাই।
.
ফারজানার বাবা অনেক বোঝায় কিন্তু সে বুঝে না।
ফারজানা হাসপাতাল থেকে চলে আসে। সাথে সাথীও আসে।
.
বাসায় ফারজানার বাবা এসে অনেক চাপ দেই কিন্তু ফারজানা কিছুই কানে
নেই না। এভাবে এক মাস চলে গেলো,ফারজানা শুধু কলেজে যায় আর ক্লাস
নিয়েই চলে আসে আর বন্ধ রুমে বসে থাকে আর জুনাদের ছবি দিকে তাকিয়ে চোখের জল ফেলে।
.
জুনায়েদ কে খুব মিস করতে থাকে।
.
এর কিছু দিন পরে আবার ফারজানার বাবা চাপ দেই বাচ্ছা টা নষ্ট করে
ফেলতে। বলে অনেক ভালো ছেলের সাথে বিয়ে দিবে। ফারজানার একটাই কথা সে আর জিবনেও বিয়ে করবে না।। এক পর্যায়ে ফারজানার বাবা বলে আমি এই বাজে খারাপ মেয়েকে ঘরে রাখতে পারব না।
এই কথা শুনে ফারজানা অনেক কষ্ট পায়।
.
ফারজানা তার ব্যাগ পত্র গুছিয়ে রাত ১১টার সময় বাসা থেকে বের হয়ে পড়ে।
.
ফাকা রাস্তায় হাটছে আর জুনায়েদের কথা ভাবছে। ভাবতে ভাবতে জুনায়েদের বাসার সামনে চলে আসে ।
.
সাথী সাথী বলে ডাকতে থাকে। সাথী তখন গভির ঘুমে। জুনায়েদের মা শুনিতে পায় বাইরে থেকে যেনো তার মেয়েকে ডাকছে।
.
জুনায়েদের মা দোরজা খুলে দেখে ফারজানা দাড়িয়েছে আর কান্না করছে।
.
মা: ফারজানা তুমি এতো রাতে?
.....
.........(চলবে )...........
0 Comments
Thanks for your valuable comment. We will be back soon.
Thank you 😊😊😊