কাঁঠালের বিচি

Ads Inside Post

কাঁঠালের বিচি


golpo-ghar.blogspot.com
golpo-ghar.blogspot.com

রুপন্তীর আম্মু কাঁঠাল খুব পছন্দ করে।
অফিস থেকে ফেরার সময় দেখি বেশ চিল্লায় চিল্লায় কাঁঠাল বিক্রি হচ্ছে। দামও সস্তা তাই লোকজনের ভীড় জমেছে। ভাবলাম রুপন্তীর আম্মুর জন্য একটা নিয়ে যায়।
তাই ভীড় সরিয়ে আমিও ঢুকে পড়লাম। অনেক্ষণ টিপাটিপি করে আস্ত একটা কাঁঠাল নিয়ে ঘরে ফিরলাম।

জরিনা খালা কাঁঠাল দেখে লাফ দিয়ে উঠলো। বললো, ভাইজান আন্নে আর স্বপ্ন পূরণ কইরচ্ছেন, কাইলক্যা আই স্বপ্নে দেখছি কাঁঠাল খাইতাছি।

হ খাইয়ু! তবে এখন না এটা আগামীকাল খেতে হবে। আজকে অনেকটা শক্ত পাবা। কালকে ভালো নরম হবে। খেতেও ভালো লাগবে।

জরিনা খালার মুখটা বিমর্ষ হয়ে গেল। বললো, আন্নে এন্নেও আর লগে এমন করেন!

আরে জরিনা খালা পুরো কাঁঠাল তুমিই খেয়ো। একটু নরম হোক।

আমি কাঁঠালটা যত্নে কিচেনে রেখে আসছি।

সন্ধ্যার দিকে পাশের বাড়ির আক্কাস বেশ তড়িঘড়ি করে বাসায় ঢুকলো। রুপন্তীর আম্মু আর জরিনা খালা তখন রান্নায় ব্যস্ত ছিল। রুপন্তীও রুমে।

আক্কাস এদিক ওদিক তাকিয়ে বেশ সাবধানে দরজার নিচ থেকে একটা কাঁঠাল নিয়ে ঘরে ঢুকলো।

আমি হাসিমুখে বললাম, আরে আক্কাস ভাই এসবের কি দরকার ছিল!
এই বলে কাঁঠালটা হাত পেতে নিতে যাবো আক্কাস বললো,

ভাই একটা সাহায্য করবেন?

কি?

এই কাঁঠাল টা আজকে রাতের জন্য আপনার বাসায় সামলে রাখবেন। শুধু আজকের রাতটা?

কেন? আমার বাসায় কি কাঁঠাল খুব তাড়াতাড়ি পাকে?

আরে না ভাই! প্রাইভেট ব্যাপার।

কি বলতে চাও ক্লিয়ার করে বলো।

আচ্ছা আপনার কাছে এমনিও লুকিয়ে লাভ নাই! শুনেন তাহলে ! এটা কাঁঠাল না!
কানের কাছে গিয়ে আক্কাস বললো!

আমি হাসিতে উড়িয়ে দিলাম!
আরে মিয়া গাঞ্জা খাইছো নাকি? এটা কাঁঠাল ই তো!

আরে ভাই বুঝেন না কেন?
এটার উপরে কাঁঠাল কিন্তু ভেতরে কাঁঠালের বিচির পরিভর্তে সবটি স্বর্ণের ছোট ছোট বিস্কুট! যা কাঁঠালের বিচির মতো দেখতে। গোপন সুত্রে শুনেছি আজকে আমার বাসায় রেইড পড়বে। তাই ভাই হিসেবে উপকার টুকু করেন।

না না! মাফ করো আমি এসবে নাই! তুমি অন্য কোথাও দেখো।

ভাই! আমি আপনার প্রতিবেশী। আমাকে এভাবে ফিরিয়ে দিবেন?

না মানে না!
আমি আক্কাসকে খুব কড়াভাবে বললাম এসব জামেলায় আমি নাই। পরে সব আমার উপর দোষ চাপবে।

আক্কাস ব্যর্থ হয়ে ফিরে যাচ্ছিল। এমন সময় রুপন্তীর আম্মু দেখলো,
আরে আক্কাস ভাই আপনি! বাহ কাঁঠাল! ভাবী পাঠিয়েছে নিশ্চয়? দেন দেন, আজকে দেখছি কাঁঠাল আসছে বাসায়।

জরিনা খালা দৌড়ে গিয়ে আক্কাসের হাত থেকে কাঁঠালটা কেড়ে নিয়ে বললো, হ আফা আইজক্যা কাঁঠাল ডে!

আমি বকার স্বরে জরিনা খালারে বললাম, ফেরত দাও এখন!

জরিনা খালা ফেরত দিলনা।

আক্কাস বললো, ভাবী আপনার ভাবী তো বাসায় নাই আর আমিও একটু বাইরে যাচ্ছি তাই যদি আজকে রাতের জন্য কাঁঠালটা রাখেন। কাল সকালে নিয়ে যাবো। প্রমিজ!

রুপন্তীর আম্মু বললো, আরে আক্কাস ভাই! এটা কোন কথা হল। দেন কাঁঠাল। আমি সামলে রাখবো।
জরিনা খালাও তাল মিলিয়ে বললো, আন্নের কাঁঠাল মানে আমাগো কাঁঠাল। একদম সামলায় রাখুম!

আক্কাস আমাকে কাকুতি মিনতি করে চলে গেল। আমিও আর না করতে পারলাম না।

রুপন্তীর আম্মুরে বললাম, এই কাঁঠালটা আলাদা করে খুব সাবধানে রাখবা।

এমন সময় বদরুদ্দীন আরেকটা কাঁঠাল নিয়ে ঘরে ঢুকলো,
ভাইজান এক পোলা দিয়া গেছে, আফার জন্য আপনার শ্বশুর পাঠাইছে।

জরিনা খালা লাফ দিয়ে বদরুদ্দীন থেকে কাঁঠালটাও নিয়ে নিল।
আমি বললাম, এটাও শক্ত খাওয়া যাবেনা আজ। কালকে খাওয়া হবে। এখন রাখো গিয়ে।

রাতে টেনশনে আমার ঘুম হয়নি। আক্কাসের কাঁঠালটা আলাদা করে উপরে তুলে রাখছি। এই আক্কাস শালা তার টেনশন আমারে দিয়ে চলে গেল। আমার ঘুমের বারোটা বাজালো!

সকালে ঘুম থেকে উঠে আগে কিচেনে গেলাম।
যা দেখলাম বিশ্বাস করেন রাসেল ভাই তা দেখার জন্য আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না।

জরিনা খালা খেতে খেতে কাঁঠালের অর্ধেকটা খেয়ে ফেলেছে। পাশে রুপন্তীর আম্মু কিচেনের উপরের জিনিসপত্র নামিয়ে পরিষ্কার করছে। ঠিক যেখানে আক্কাসের কাঁঠাল রেখেছিল।

রুপন্তীর আম্মু উপরের কাঁঠালটা কোথায়?

নিচে রাখলাম তো!

নিচে তাকিয়ে দেখি দুটো কাঁঠাল। ওদিকে আরেকটা জরিনা খালা খাচ্ছে।

কোনটা আক্কাসের এখানে?

আরে একটা হবে আরকি। মনে হয় জরিনা খালা খাচ্ছে ওইটা।

কি? ওইটা আক্কাসের কাঁঠাল ছিল! আমি এখন কি জবাব দিবো তাকে?

আরে বাকি দুইটা থেকে একটা দিয়ে দিলে তো হয়।

খেয়াল করলাম জরিনা খালা কাঁঠাল খাচ্ছে কিন্তু আশেপাশে কোন বিচি নাই।
আমি জরিনা খালারে বললাম, তুমি কাঁঠাল খাচ্ছো বিচি কই?

আরে ভাইজান আই ছুডু থাইকতে প্র্যাকটিস কইচ্ছি কাঁঠালের বিচিসহ খাওয়ার। দেহেন বিচি সহ গিলে খাইতাছি! কাঁঠালের বিচিতে অনেক ভিটামিন বুইচ্ছেনন্নি ভাইজান!

আমার তো মাথায় হাত!
একি করলা জরিনা খালা বিচিসহ খেয়ে ফেললা এখন কি হবে?

রুপন্তীর আম্মু বললো, আজব তো বিচি খাইছে এতে সমস্যা কি?

আমি বাকি অর্ধেক কাঁঠালটা নিয়ে লুকিয়ে রাখলাম।
এদিকে দুপুর হতে হতেই জরিনা খালার পেট খারাপ হওয়া শুরু করছে। লুস মুসনে জরিনা খালা পুরাপুরি গেছে।

সন্ধ্যার দিকে বিপদ কেটে গেলে আক্কাস বাসায় আসলো,
ভাই আমার কাঁঠাল টা?

আমি চুপচাপ ভাঙ্গা কাঁঠাল এনে দিলাম। এই নাও! সরি বেশিক্ষণ রক্ষা করতে পারিনি।

সে কাঁঠালটা দেখে মিনি স্ট্রোক করা রোগীর মতো বুকে হাত দিয়ে দিল।
ভাই বাকি অর্ধেক কোথায়? আর,
কাঁঠালের বিচিও খেয়ে ফেলছেন নাকি?

আক্কাস, তোমার কাঁঠালের বিচিসহ অর্ধেক জরিনা খালার পেটে। সে এখন লুস মুসনের রোগী হাসপাতালে ভর্তি।

আক্কাস বললো, ভাই চলেন তাড়াতাড়ি হাসপাতালে যায়। অন্য কেউ স্বর্ণের বিস্কুট পেয়ে গেলে বিরাট সমস্যা হয়ে যাবে।

আমি গায়ে একটা শার্ট লাগিয়ে হাসপাতালে ছুটলাম।
ডাক্তাররা বেশ চিন্তিত।

কি হয়েছে ডাক্তার? জরিনা খালার কি অবস্থা?

আফসোস হয়ে ডাক্তার বললো, খেতে খেতে জরিনা ছাব্বিশটা কাঁঠাল বিচিসহ খেয়ে ফেলছে। আমরা পাতিল নিয়ে অনেক্ষণ অপেক্ষা করেছি বিচির জন্য। কিন্তু বিচি আসলো না। বিচি পেটেই রয়ে গেছে। বেশিক্ষণ থাকলে ইনফেকশন করবে।

আক্কাস অস্থির গলায় বললো, ডাক্তার সাহেব পেট কেটে ফেলে দেন।

আরে, আক্কাস পেট কাটলে বাঁচবে কেমনে?

ডাক্তার বললো, একটা ছোট সার্জারি করে পেট থেকে বিচি বের করে আনা যায়।

ডাক্তার অপারেশন থিয়েটারে সার্জারি করছে। আমি আর আক্কাস রিকোয়েস্ট করে ভেতরে গিয়ে অপারেশন দেখছি যাতে স্বর্ণের বিস্কুট ডাক্তাররা নিতে না পারে।

পেট কাটা হল! গুনে গুনে ছাব্বিশটা কাঁঠালের বিচি বের করা হল।
বিচি পেয়ে আক্কাস খুশিতে লাফাতে লাগলো। ডাক্তাররা সবাই অবাক আক্কাসের লাফানি দেখে। বললো, এই মিয়া জীবনে কখনো বিচি খাওনি?

আরে ডাক্তার আপনি আপনার কাজ করেন। তাড়াতাড়ি সেলাই মারেন।

আক্কাস আর আমি বিচিগুলো ভালো করে ধুয়ে নিলাম। কিন্তু বিচির রং পরিবর্তন হল না। আক্কাস কামড়িয়ে চেক করলো!

আরে এগুলোতো আসল বিচি। আমার স্বর্ণের বিচি কই? সে মাথায় হাত দিয়ে পড়ে গেল।

আমি বললাম, আরে ভালো হয়ছে! চিন্তা করিও না। তোমার কাঁঠাল তাহলে ঘরেই সেইফ আছে। বাকি দুইটার মধ্যে একটা হবে।
আমরা দুইজন দ্রুত ঘরে গেলাম।

কাঁঠাল একটা নিয়ে কাটা শুরু করলাম। বিচিগুলো আলাদা করতে লাগলাম। আক্কাস একটা একটা কামড়িয়ে দেখছে।
আক্কাস হঠাৎ বলতে লাগলো,
ভাই এখানে তো একটাও স্বর্ণের না। কি করলেন আপনি?

আরে আমি কি করলাম? আমার মনে হয় অন্য কাঁঠালটাতে আছে।

কিচেনে গিয়ে দেখি কাঁঠাল একটায় । আরেকটা গায়েব।

রুপন্তীর আম্মু কাঁঠাল আরেকটা কই?

আমি জানিনা তো! সকালে এখানে ছিল। কেউ নিয়ে গেছে মনে হয়।

একথা শুনে আক্কাস আবার পড়ে যেতে লাগলো। আমি ধরে ফেললাম।

এমন সময় ঘরে পুলিশ ঢুকলো!
আক্কাস আরো ভয়ে চুপসে গেল। আমিও ভয়ে ভয়ে পুলিশকে বললাম,
আপনারা?

জ্বী, আপনার নামে এরেস্ট ওয়ারেন্ট আছে?

আমি কি করেছি আবার?

আপনি কিছু করেন নি, করেছে আপনার মেয়ে। যেহেতু আপনার মেয়ের এখনো আঠারো বছর হয়নি তাই আমরা আপনাকে গ্রেফতার করতে বাধ্য হচ্ছি। হাবিলদার এরেষ্ট হিম!

আরে! কি করেছে রুপন্তী?

আপনার মেয়ে একটা ছেলের মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। সে এখন আইসিইওতে। তার ফ্যামিলি কেইস করেছে।

মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে মানে!
এক মিনিট!
রুপন্তী! অ্যাই রুপন্তী! কোথায় তুমি বেরিয়ে এসো?
রুপন্তীর আম্মু তুমিও আসো এদিকে।

রুপন্তীর আম্মু হাতে খুন্তিসহ রান্নাঘর থেকে এগিয়ে আসলো। এদিকে রুপন্তীও রুমের দরজা খুলে আস্তে আস্তে বেরুতে লাগলো।

কি হয়েছে এতো চিল্লাচ্ছেন কেন?

কি হয়েছে? দেখো পুলিশ আসছে। তোমার মেয়ে কার জানি মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। এই বয়সে গোন্ডামি।

কি!
রুপন্তীর আম্মু রুপন্তীর দিকে ফিরলো।

রুপন্তী আমতা আমতা করে বললো, আমি কিছু করিনি আম্মু তুমি যা বলেছিলা তাই করছি।

আমি রুপন্তীর আম্মুর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বললাম, কি! তুমি রুপন্তীকে দিয়ে এসব করতে শিখিয়েছো?

আরে না! আমি কেন শিখাবো! অ্যাই মেয়ে তুমি সত্যি করে বলো কি করেছো?

আম্মু তুমি বললে না একবার, " জামাই হোক আর বয়ফ্রেন্ড হোক প্রথমদিন থেকেই তার মাথায় কাঁঠাল ভাঙবি "
তাই আমি এখানে কাঁঠাল যেটা ছিল সেটা বেলকনি থেকে ছেলেটার মাথায় ফেলে ভেঙ্গে দিয়েছি। এখন ছেলেটার মাথা ফাঁটলে আমার কি দোষ?

পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে!
আক্কাস বললো, ভাই আমার বিচি!

আরে শালা এখানে আমার বিচি নিয়ে টানাটানি চলছে আর তুমি আছো তোমার বিচি নিয়ে!

(রুপন্তীর পাপ্পা-রম্য গল্প)



Post a Comment

0 Comments