golpo-ghar.blogspot.com |
গত পর্বের লিংকঃ তুমি আছো হৃদয়ে
পর্ব-২
আমি ভেবেছিলাম আমাদের পাহাড় সমান অভিমান গুলো ভুলে গিয়ে আবার আমরা কথা বলবো,দেখা করবো। কিন্তু না,এমনটা হয়নি। সেদিনের পর থেকে নুসরাতের জন্য অনেকটা দিন আমি খুব অভিমান ভরা ভালোবাসা নিয়ে অপেক্ষা করেছিলাম। নুসরাত আমাকে ফোন দিবে,সবকিছু ভুলে আবার আমাকে আপন করে নিবে। কিন্তু সে আমাকে ফোন দেয়নি। আমিও নিজ থেকে তাকে ফোন দেইনি। আমারও ইগো জিনিসটা তাঁর থেকে কম ছিলো না। আমি জানি না তাকে ফোন দিয়ে তাঁর সাথে কথা বললে সবকিছু আবার আগের মতো হয়ে যেতো কিনা কিন্তু আমার ভিতরের ইগো আমাকে এটা করতে দেয়নি। আমার ভিতরের সত্ত্বাটা সবসময় শুধু একটা কথায় বলেছে যে মানুষটা তোকে চায় না,যে মানুষটা তুই অভিমান করলে তোর অভিমান ভাঙায় না,যে মানুষটা তোর ভালোবাসাভরা শাসন গুলোতেও বিরক্তি খুঁজে পায় সে মানুষটার সাথে তুই নিজেকে কখনো সুখী দেখতে পারবি না। তবুও যদি নুসরাত একটাবার আমাকে বলতো অনেক ভালোবাসি তোমাকে,চলো সব ভুলে যাই। তাহলে হয়তো আমি সবকিছু ভুলে তাকে পরম আদরে বুকে জড়িয়ে নিতাম কিন্তু সে আমার সাথে আর যোগাযোগ করেনি।
আমিও আস্তে আস্তে নুসরাতকে ভুলে যেতে লাগলাম। একসময় ভুলেও গেলাম যে আমার জীবনে নুসরাত নামে কোনো একটা মেয়ে ছিলো যে মেয়েটাকে আমি নিজের থেকেও অনেক বেশি চাইতাম। সেদিন আমার মনে হয়েছিলো এই পৃথিবীতে যদি সবচেয়ে বড় কোন মিথ্যা থাকে সেটা হলো,
"আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না"
আসলে এই পৃথিবীতে কেউ কাউকে ছাড়া মরে না,কষ্ট হলেও বাস্তবতার সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকে। আমিও আছি। যখন নুসরাতের হাত ধরে বলতাম,
"আমি তোমাকে নিজের থেকেও অনেক বেশি ভালোবাসি,তোমাকে না পেলে আমি বাঁচবো না। প্রতিটা মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যেমন অক্সিজেন জিনিসটা অতীব জরুরি, ঠিক তেমনি আমার বেঁচে থাকার জন্য তোমাকে খুব করে প্রয়োজন। তুমি ছাড়া আমার এ জীবন অধরা অসম্পূর্ণ। এখন এই কথাগুলো শুনলে বড্ড হাসি পায় আমার। হয়তো নুসরাতও আমাকে ভুলে গিয়ে নতুন কারো সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে। আমরা মানুষরা এমনই। পুরাতন ভুলে নতুনকে সাদরে গ্রহণ করে নেই।
দেখতে দেখতে নুসরাতের সাথে আমার সম্পর্কের দুইটা বছর অতিবাহিত হয়ে যায়। এই দুই বছরে আমাদের কোনে কথা হয়নি। তবে আমি তাকে দেখতাম। প্রথম প্রথম তাঁর সাথে কথা না বলে থাকতে অনেক কষ্ট হতো,তবুও থাকতাম। নিজের আত্মসম্মান বোধের কথা চিন্তা করে হলেও তাঁর সাথে কথা না বলে থাকতাম। আমি ভাবতাম আমার মতো নুসরাতেরও হয়তো আমার সাথে কথা না বলে থাকতে অনেক কষ্ট হচ্ছে,দীর্ঘ তিনটা বছর তাঁর সাথে রিলেশন ছিলো আমার। এই তিন বছরে আমি তাকে অনেক ভালোবাসা দিয়েছি। সে আমাকে এতো সহজেই চাইলে ভুলে যেতে পারবে না। সেদিন হয়তো রাগের মাথায় অনেক কিছু বলেছে সে কিন্তু আমাকে ভুল যেতে তাঁর অনেক কষ্ট পোহাতে হবে। কিন্তু যখন দেখতাম সে হাসিখুশি ভাবেই আগের মতো তাঁর বন্ধুদের সাথে চলাফেরা করছে,টুরে যাচ্ছে। আর সেগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিচ্ছে। তখন বুঝতাম আমার ধারণা ভুল ছিলো সেটার প্রমাণ আমি পাচ্ছি। সে আমাকে ভুলে তাঁর বন্ধু বান্ধবীদের সাথে খুব আনন্দ উল্লাসেই দিন কাটাচ্ছে। অথচ আমি নিজেকে কষ্টের অনলে দগ্ধ করছি প্রতিনিয়ত। আমার অন্য সবার বন্ধু বান্ধবীও ছিলো না যে তাদের সাথে নিজের দুঃখগুলো শেয়ার করবো। আমার একাকিত্ব হয়তো আমার কষ্টগুলোতে তীব্রতা দান করেছিলো। তবে আলহামদুলিল্লাহ্ আমি সব ভুলে নিজেকে নিজের মতো গুছিয়ে নিয়েছি। আমি আর নুসরাত নামক মেয়েটাকে ভালোবাসি না,তাঁর জন্য নিজেকে কষ্ট দেই না।
যেহেতু আমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স শেষ করেছিলাম তাই চাকরির বাজারে আমাকে অনেক বেগ পোহাতে হয়েছিল। সত্যি বলতে জাতীয় ভার্সিটির স্টুডেন্ট গুলো প্রথম থেকেই পাবলিক ভার্সিটির স্টুডেন্টদের থেকে মানুষিক ভাবে অনেকটা পিছিয়ে পড়ে। ওরা যেহেতু পরীক্ষা দিয়ে চান্স পেয়েছে, আর আমরা পাইনি তাই ওরা আমাদের থেকে অনেকটা এগিয়ে। এই জিনিসটা আমার মনের মধ্যে সবসময় নেগেটিভ ভাবে কাজ করেছে। যদিও আমি কোথাও পরীক্ষা দেইনি তবুও এটা মনে হয়েছে। খারাপ লাগলেও এই কথাগুলো সত্য। তবে আমি কখনো ভেঙে পড়িনি। অনার্স শেষ হওয়ার পর বিসিএস ক্যাডার হওয়ার আশায় দীর্ঘ দুইটা বছর আমি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি। দিন থেকে কখন রাত হয়েছে, রাত থেকে কখন দিন হয়েছে এসবে আমার কখনো মনোযোগ থাকতো না। আমার সমস্ত মনোযোগ থাকতো বইয়ের পাতায়। এতো পরিশ্রম করার পরেও যখন আমি বিসিএস ক্যাডার হতে পারিনি তখন আমার মনে হয়েছিলো বিসিএস আমার জন্য না। এই পৃথিবীতে কিছু বিরল প্রজাতির এক্সট্রা অর্ডিনারি মানুষ আছে বিসিএসটা তাদের জন্য। তবে বিসিএস ক্যাডার না হতে পারলেও আমি প্রথম শ্রেণীর একটা সরকারি চাকরি পেয়ে যাই। আমি এখনো বিশ্বাস করি আমি ক্যাডার হতে চেয়েছিলাম বলেই আজ প্রথম শ্রেণীর সরকারি চাকরি পেয়েছি। তাই মানুষের স্বপ্ন সবসময় বড় থাকা উচিত। স্বপ্ন বড় দেখলেই কেবল বড় হওয়া যায়। তাই সবসময় বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখা উচিত। সেই স্বপ্নটাকে সত্যি করার জন্য পরিশ্রম করা উচিত। বাকি টুকু ওপরওয়ালার হাতে ছেড়ে দিতে হবে।
আমাদের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো না থাকলেও আমি বাবা মায়ের অনেক আদরের সন্তান ছিলাম। আমার বাবা মা জানতো তাদের যা অবস্থা তারা একজনের বেশি সন্তানকে হয়তো ভালোভাবে মানুষ করতে পারবে না। তাই তারা আমি বাদে আর কোনো সন্তান নেয়নি। আমি যখনই যা চাইতাম আমার বাবা সেটা আমাকে দিতো। আমার মনে আছে আমি যখন অনেক ছোট ছিলাম তখন বাবার কাছে একটা সাইকেল চেয়েছিলাম। ছোট থাকলেও আমার এমন আবদারে মা সেদিন আমার ওপর অনেক রাগ করেছিলো,কিন্তু কিছুদিন পর বাবা আমার জন্য যখন একটা নতুন সাইকেল নিয়ে আসলো তখন মাই আমাকে সাইকেলে চড়িয়ে ঘুরাতো। আমার কাছে মনে হতো আমার বাবা মা পৃৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবা মা। অথচ এমন বাবা মায়ের ইচ্ছেটাও আমি পূরণ করতে পারিনি। এতোটাই ব্যার্থ ছিলাম আমি। তারা চেয়েছিলো আমি যেনো ভালো রেজাল্ট করে শহরে পড়তে যাই কিন্তু আমি তখন তাদের কথা শুনতাম না,পড়ালেখায় মনোযোগ দিতাম না,সবসময় খেলা নিয়ে থাকতাম যার কারণে এসএসসিতে খুব একটা ভালো রেজাল্ট করতে পারিনি,ইন্টারে কিছুটা ভালো করেছিলাম,তারপর গ্রামের একটা ভার্সিটিতেই ভর্তি হই। তবুও আমার জন্য আমার বাবা মায়ের ভালোবাসা একটুও কমেনি। আমি তাদের আশা পূরণ করতে না পারলেও তারা আমাকে কখনো কোনো কিছুর অভাব দিতো না।
যেদিন আমি চাকরি পেলাম সেদিন মাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কেঁদেছিলাম। সেদিন বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলাম তোমাকে আর কাজ করতে হবে না,এখন থেকে তোমরা দুজন আরাম করবে,পায়ের ওপর পা তুলে খাবে,তোমরা আমার জন্য জীবনে অনেক কষ্ট করেছো। এবার সেগুলোর প্রতিদান দিতে চাই আমি। তোমাদের এই সেবাটুকু করার সুযোগ আমাকে দিবে না? আমাকে জড়িয়ে ধরে সেদিন বাবা মাও অনেক কেঁদে ছিলো। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি ওইদিনের কান্নাটা আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ কান্না।
কিছুদিন পর বুঝতে পারলাম বাবা মায়ের কোনো কারণে আমার ওপর রাগ। তবে কারণটা খুঁজে পেলাম না। একসময় আমার ওপর রাগের কারণটা বুঝতে পারলাম। তারা আমাকে বিয়ে দিতে চায়। আমিও আর না করলাম না। বাবা মায়ের জন্য হলেও বিয়ের পিরিতে বসার জন্য আমি রাজী হয়ে গেলাম।
আমাদের গ্রামের একটা মেয়েকে মায়ের অনেক পছন্দ। অনেক আগে থেকেই মা মেয়েটাকে আমার জন্য পছন্দ করে রেখেছে। কিন্তু কখনো বলেনি। আজ সময় বুঝে মা তাঁর মনের কথাটা আমাকে বলার পর আমি মায়ের হাসিভরা মুখটা দেখার জন্য মেয়ে দেখতে যাবো বলে দেই। সেই মেয়েটাকে দেখার জন্য মা আমাকে নিয়ে মেয়ের বাসায় এসেছে। আমি মেয়েটাকে দেখে জাস্ট পাথর হয়ে বসে রইলাম। আমার নিজেকে নিরামিষ মনে হলো। এতো সুন্দর একটা মেয়ে আমার গ্রামে বাস করে অথচ আমি জানি না। তাঁর চেয়ে বেশি অবাক হলাম যখন মেয়েটার পাশেই আমার প্রাক্তন নুসরাতকে দেখতে পেলাম। আমরা যে মেয়েটাকে দেখতে এসেছি সেই মেয়েটার কাজিন হচ্ছে নুসরাত।
চলবে...............
3 Comments
hi
ReplyDeleteNext episode kobe ashbe
DeleteNext episode kobe ashbe
ReplyDeleteThanks for your valuable comment. We will be back soon.
Thank you 😊😊😊