পর্ব - ---৫
বাড়িতে এসে আব্বুকে বলতেই আব্বু অনেক খুশি হলেন, রাতের খাবার খেয়ে রুমে এসে ঘুমানোর চেষ্টা করছি, কিন্তু ঘুম আসছে না, বার বার দিয়ার সেই নিষ্পাপ হাসি চোখে ভেসে উঠছে ! জানি শেষ রাত বা মধ্যে রাত ছাড়া আমার ঘুম আসবে না ৷ গত পাচঁ বছর ধরে এরকমটাই হয়ে আসছে ৷ হঠাৎ মোবাইলের আওয়াজে ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসলাম, মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি সেই অচনা
নাম্বার থেকে আবার ফোন এসেছে ! গত পাচঁ বছর ধরে অনেকগুলা অচেনা নাম্বার থেকে আমার মোবাইলে ফোন আসে, ফোন রিসিভ করলে কেউ ওপাস কিছু বলে
না, শুধু আমি একটা ছোট্ট বাচ্চার হাউমাউ শুনতে পাই ৷
অনেকবার বিরক্ত হয়ে অনেকগুলা নাম্বার বল্ক মেরেছি, কিন্তু কোনো কাজ হয় না
একটা বল্ক মারলে অন্য আরেকটা নাম্বার দিয়ে ফোন দেয়, দিয়া যদি আমাকে কোনো দিন দিয়া যদি আমাকে কোনো দিন ফোন দেয়? এই আসাতে সিমটাও পাল্টাতে পারি না ৷
প্রথম প্রথম বিরক্ত লাগলেও এখন কেন যানি আমার অই পিচ্চিটার অস্পষ্ট ভাষা
শুনতে ভাল লাগে ৷ তাই এখন প্রত্যেকটা দিন ফোনটা রিসিভও করি ৷
.
আজও ফোন রিসিভ করে হ্যালো..বলার সাথেই সাথেই সেই পরিচিত আওয়াজ
শুনতে পাই,,
ওপাস থেকে আব্বু আম্মু বলে অস্পষ্ট ভাষায় কি যেন একটা বলছে, কিছু বুঝতে পারি না, শুধু এই আব্বু আম্মু ডাকটাই বুঝতে পারি ৷
.
.
আজকে আমি মালয়েশিয়ায় যাচ্ছি,, বাড়িতে সবার থেকে বিদায় নিয়ে, ইয়ারপোর্টে চলে আসলাম,, ইয়ারপোর্টে এসে অইদিন যেই লোকটা আমার ইন্টারভিউ নিয়েছিল, সেই লোকের সাথেই আরো অনেকগুলা লোকজন দেখতে পারলাম,,
পরে জানতে পারলাম ওরাও আমার মতই মালয়েশিয়াতে চাকরি করতে সিলেক্ট
হয়েছে ৷ ওদের মধ্যে একজনের সাথে আমার অনেক ভাব জমে গেল,,
ওর নাম জিসান,,
বিমানে আমার পাশের সিটেই বসেছিল,, ওর সাথে মিশে বুঝতে পারলাম ছেলেটা একটু বেশিই চনচল টাইপের, অনেক বেশি কথা বলে ৷
.
ফ্লাইট ল্যান্ড করল মালয়েশিয়ায়.. আমি মালয়েশিয়ার মাটিতে পা রাখতেই আমার বুকটা কেপে উঠল,, বুঝতে পারলাম না কেন হল এমনটা ৷
মালয়েশিয়া নামটা শুনার পর থেকেই আমার কেমন যেন অদ্ভুত একটা ফিলিংস
কাজ করছিল,,
.
আমরা যেই কম্পানিতে কাজ করতে আসছিসেই কম্পানিরই কয়েকজন লোক এসে
আমাদের একটা হোটেলে নিয়ে গেল,, আজকে রেস্ট নিয়ে কালকে থেকে অফিস !
আমি হোটেলে এসে আমার রুমে ডুকলাম,,
ফ্রেশ হয়ে বসে আছি, বসে বসে বোর হচ্ছি, তাই ভাবলাম শহরটা একটু ঘুরে দেখি৷
রুম থেকে বের হতেই জিসানের সামনে পরলাম, জিসান আমাকে দেখে হেসে বলল,,
-- কি ভাই কোথায় বের হচ্ছেন?
-- আসলে রুমে বসে বসে বোর হচ্ছিলাম, তাই একটু গুড়তে যাচ্ছি ৷
-- আমিও সেইম ভাই, চলেন আমিও যাব আপনার সাথে ৷
-- তাহলে তো ভালই হল, আমাকেও একা একা ঘুড়তে হবে না, চলেন...
হোটেলের বাইরে বের হয়ে জিসানকে বললাম,
-- কোথায় যাওয়া যায় বলেন তো?
আমি তো একানকার জায়গা তেমন চিনি না ৷
জিসান বলল,,
-- আমি চিনি ভাই ! চলেন ভাই আমরা একানকার সবছেয়ে বড় শপিংমলে যাই ৷
অনেক সুন্দর একটা শপিংমল,আমার একটা জিনিস কিনতে হবে !
জিনিসটাও কিনলাম আর ঘুরাঘুরিও করলাম ৷
-- আচ্ছি চুলুন !!
.
একটা টেক্সি নিয়ে শপিংমলের সামনে এসে নামলাম ৷ সত্যিই শপিংমলটা অনেক বড় এবং সুন্দর,, শপিংমলের ভিতরে ডুকতেই আমার শরিরে একটা কঠিন ঠান্ডা বাতাস লাগল,, আর আমার বুকের ভিতর ধুক ধুক করতে লাগল, আমি সেখানটায় দাড়িয়ে হার্টবিটের ধুকধুকানি ফিল করতে লাগলাম,,
আমার এরকম হচ্ছে কেন?
জিসান বলল,
-- কি ভাই এখানে দাড়িয়ে আছেন কেন?আর কি ভাবছেন?
-- আমি এই শপিংমলে ডুকার সাথে সাথেই, আমার শরিরে কি রকম জানি ঠান্ডা
বাতাস লাগল,
-- হা হা হা,, আরে ভাই এটা এসির বাতাস ৷
-- নাহ,, এটা এসির বাতাস হতে পারে না ৷ এসির বাতাস এত মোলায়েম আর কঠিন না ! আর এই বাতাসটা একেবারে আমার বুকের ভিতর লেগেছে !
-- আরে ভাই কি সব আবুল তাবুল বলছেন !
আমি জোরে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললাম,,
-- নাহ,,কিছুনা, চলেন ৷
তারপর জিসানকে নিয়ে লিপ্টে করে শপিংমলটার তিন তলাতে উঠলাম, জিসান ঘুরে ঘুরে টি শার্ট দেখছে, হয়তো টি শার্ট কিনার জন্যই আসছে, আমি আর ওকে জিজ্ঞেস করলাম না,জিসান একটা টি শার্ট হাতে নিয়ে চেইন্জ
রুমে গেল,, আমার একটা শার্ট অনেক ভাল লাগছে,সেই শার্টটাই নেড়েছেড়ে দেখছিলাম,, হঠাৎ আমার চোখ আটকে গেল একটা মেয়ের উপর, মেয়েটা আমার ঠিক উল্টো দিকে মুখ করে লিপ্টের সামনে দাড়িয়ে আছে, মেয়েটাকে আমার এত চেনা চেনা লাগছে কেন??
আমি মেয়েটার মুখ দেখতে না পারলেও,আমার কেন জানি মনে হচ্ছে মেয়েটা আমার অনেক দিনের চেনা কেউ, আমার হার্টবিট অনেক স্পিডে দৌরাচ্ছে,দৌড়ে আমি মেয়েটার কাছে যেতে লাগলাম,, আমি দৌড়ে মেয়েটার কাছে যাওয়ার
আগেই মেয়েটা লিপ্টে উঠে গেল,, আমি নিপ্টের সামনে এসে দেখলাম লিপ্ট
লেগে গেছে,, সেখানে দাড়িয়েই হাপাতে লাগলাম,, হঠাৎ চোখ পড়ল পাশের শিরির উপর,, আমি দৌড়ে শিরি দিয়ে নামতে লাগলাম,,নিচ তলায় আসতেই দেখলাম মেয়েটা শপিংমল থেকে বের হয়ে যাচ্ছে,, আমিও দৌড়ে শপিংমল থেকে বের হতেই
দেখলাম মেয়েটা একটা গাডিতে উঠে গেছে, গাড়িতে কালো গ্লাস থাকাতে তখনও
আমি মেয়েটাকে দেখতে পাই নাই !
গাড়িটা অনেক স্পিডে চলে গেল,, আমি সেখানেই দাড়িয়ে রইলাম,,
পিছন থেকে জিসান ডাকতে ডাকতে আসল,
-- নিয়ান ভাই এই নিয়ান ভাই !
আমার পাশে এসেই হাপাতে লাগল,, আবার বলল,,
-- কি ভাই শপিংমল থেকে এভাবে দৌড়ে বের হচ্ছিলেন কেন?
পিছন থেকে আমি এত ডাকলাম আপনি শুনলেনই না ৷
-- পরে বলব,,এখন হোটেলে চলুন ৷
-- সত্যি আপনি অনেক অদ্ভুত ভাই !
-- হুম,,চলুন !
.
পরেরদিন সকালে রেডি হয়ে অফিস যাওয়ার জন্য হোটেলের বাইরে আসলাম,,
পিছন থেকে জিসান এসে বলল,,
-- কি ভাই আমাকে ফেলেই চলে যাচ্ছেন ৷
-- আমি ভাবলাম আপনি হয়তো নিচে আছেন, তাই আমি নিচে আসলাম ৷
.
অফিসের বাস এসে আমাদের নিয়ে গেল ৷
অফিসে আসলাম,,
অফিসে ডুকা মাত্রই সেইদিন শপিংমঅফিসে ডুকা মাত্রই সেইদিন শপিংমলের
মত একটা ঠান্ডা বাতাস লাগল,, আমি অফিসের ভিতর ডুকেই কেন জানি
অস্তির অস্তির লাগছে ৷
একজন এসে বলল,,
-- সবাই এক এক করে মেডামের সাথে মিট করে আসুন !!
একজন একজন করে একটা রুমে যাচ্ছে আর 4-5 মিনিট পরপর বেরিয়ে আসছে,,
এইভাবে এক এক করে সবাই গেল,, আমি এখনও বসে আছি,
জিসান এসে বলল,,
-- ভাই জান জান ভিতরে জান,,আর গিয়ে পরি দেখে আসুন ৷
-- কি বলছেন কি? পরি কোত্তেকে আসল
৷
-- আরে ভাই এই পরি সেই পরি না, এটা মানুষ পরি ৷
-- মানে?
-- মানে আমাদের বসটা দেখতে একেবারে পরির মত ৷
-- আমাদের কি মেয়ে বস নাকি?
-- হুম ভাই তাড়াতাড়ি জান ৷
আমি উঠে আমাদের বস মানে মেয়েটার দরজার পাশে এসে বললাম,,
-- মে আই কামিং মেডাম?
-- এস কামিং ৷
মেয়েটার কন্ঠ শুনে আমি চমকে উঠলাম,,
চোখ তুলে তাকতেই আমি স্তব্দ হয়ে দাড়িয়ে রইলাম,,
এ আমি কি দেখছি?
আমি নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছি না,,
তখন আমার মুখ দিয়ে শুধু একটা শব্দ বেরিয়ে আসল,,
-- দিয়াআআআ !!!!!!!!
-------------------------------------
আমি আমার নিজের শরিরে একটা চিমটি কেটে চোখ বন্ধ করে আবার তাকালাম,,
হুম,,আমি ঠিকই দেখছি দিয়া আমার সামনে,,
আমার পিচ্চি বউ আমার সামনে,, কিন্তু এটা কোন দিয়া? এটা কি সেই
পিচ্চিটা? পিচ্চিটা তো এখন পিচ্চি নাই, অনেক বড় হয়ে গেছে,,
এদিকে দিয়া আমাকে দেখে চেয়ারে বসে থাকতে পারল না,
চেয়ার থেকে উঠে দাড়াল,, মুখটা হ্যা করে আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে
তাকিয়ে রইল,, আর গাল বেয়ে চোখের পানি গড়িয়ে পরছে,,
আমি যেই দিয়ার কাছে এগিয়ে গিয়ে কিছু বলতে যাব,
তখনই আমার পিছন থেকে একটা বাচ্চা বলে উঠল,,
-- আম্মুওওও,,
আমি পিছনে তাকিয়ে দেখলাম একটা লোকের কোলে 3-4 বছর বয়সি একটা
বাচ্চা !(লোকটা হয়তো ড্রাইভার)
কিন্তু বাচ্চাটা আম্মু বলল কাকে?
বাচ্চাটা সেই ড্রাইভারটার কোল থেকে নেমে ছোট্ট ছোট্ট পায়ে দৌড়ে গিয়ে
আম্মু আম্মু বলতে বলতে দিয়ার কোলে উঠল,,
আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল,, তারমানে সেদিনের আব্বুর কথাটাই সত্যি হল,, দিয়া অন্য কারো সাথে বিয়ে হয়ে সংসার করছে,,
আর তার প্রমান হল এই বাচ্চাটা,, আমার সেখানে দাড়িয়ে থাকতে কষ্ট
হচ্ছে,,বুকের ভিতর অনেক কষ্ট ফিল হচ্ছে,, মনে হচ্ছে কেউ বুকে হাতুরি দিয়ে পিটাচ্ছে,, আমি কিছুক্ষণ ওদের মা মেয়েকে দেখে কেবিন থেকে বেরিয়ে যেতে লাগলাম,,পিছন থেকে দিয়া ডাক দিল,,
-- এই যে শুনুন,,
আমি ঘুড়ে দিয়ার চোখের দিকে তাকালাম,, দিয়া একবার আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ নিচে নামিয়ে বলল,,
-- অফিসের বসকে কোনোদিন নাম ধরে ডাকতে নেই ! এই ভূলটা যেন আর না হয় ৷ আমি দিয়ার কন্ঠে রাগ, মান অভিমান ফিল করলাম,,
কিছুক্ষণ দিয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে বললাম,,
-- জ্বি..মেডাম !
বলেই আমি আবার বেরিয়ে যেতে লাগলাম,, পিছন থেকে দিয়ার মেয়েটা দৌড়ে এসে আমার হাত ধরল,,
আর তুতলিয়ে তুতলিয়ে বলল,,
-- আনকেল,,আমিইই ততোমাকে চিনিইই !
আমি মেয়েটাকে কোলে নিয়ে গালে একটা চুমু দিয়ে বললাম,,
-- কিভাবে চিন??
-- ততোমাকে আমিই আম্মুর ফোনেএএ দেখেছিইই,,!!
মেয়েটার কথা শুনে আমি দিয়ার দিকে তাকালাম,,
দিয়া মেয়েটাকে ধমক দিয়ে বলল,
-- হিয়া এদিকে আস বলছি ৷
মেয়েটা বলল,,
-- না আমিইই যাব না, আমিইই আনকেলের কাছেএএ থাকবব,,!! বলেই আমার গলা দুই হাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল,,
দিয়া রেগে সেখান থেকে উঠে এসে মেয়েটাকে আমার কোল থেকে টেনে নিয়ে
নিল,, মেয়েটা কান্না শুরু করে দিল,, তারপর অন্য দিকে মুখ করে বলল,,
-- আপনি এখন আসতে পারেন !
আর গিয়ে আপনার কাজ শুরু করে দেন,, আমি সেখান থেকে বেরিয়ে আসলাম,,
দিয়ার কথায় আসি,,
.
নিয়ান বেরিয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই দিয়া কেবিনের দরজাটা লক করে এসে কান্না
করতে লাগল,, দিয়ার চিৎকার দিয়ে কান্না করার ইচ্ছে করতেছে, কিন্তু অফিস বলে সেটা করতে পারছে না ৷ দিয়া হাত দিয়ে মুখ চেপে কান্না করতে
লাগল,, কান্না করছে আর বলছে,, আমি কি করে পারলাম আমার নিয়ানের
সাথে এরকম ভাবে কথা বলতে,, যাকে আমি আমার জীবনের চাইতেও বেশি
ভালবাসি থাকে আমি কি করে পারলাম এরকম অপমান করতে,, এইগুলা বলছে আর মুখ চেপে কান্না করছে দিয়া,
দিয়ার মেয়েটা তার মার কান্না দেখে বলল,,
-- আম্মু ততমি কেদ না, আমিই আর যাবব না অইই আনকেলটার কাছে !
দিয়া ওর মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগল,,
আর বলল,,
-- তুই ওর কাছে যাওয়াতে আমি কাদছি না ! তুই ওর কাছে যাওয়াতে আমি আরও খুশি হয়েছি ৷ বলেই দিয়া মেয়েটার কপালে একটা চুমু খেল,,
দিয়া এখন বুঝতে পারল, কালকে শপিংমলে কেন তার মনে হয়েছিল যে নিয়ান তার আশেপাশেই ছিল,, তারমানে সত্যিই নিয়ান শপিংমলে ছিল,,
দিয়া চোখের পানি মুছে জোরে একটা নিশ্বাস নিল,, এখন দিয়ার ভিতরটা একটু হালকা লাগছে,, কারণ আজ পাচঁ পাচঁটা বছর পর নিয়ানকে সে দেখল,,
.
.
আমি সামনে এগোচ্ছি আর ভাবছি এটাই আমার প্রাপ্য ছিল,, আমি মেয়েটাকে একসময় কত্ত কষ্ট দিয়েছি,, এখন মেয়েটার ছেয়ে দ্বিগুন কষ্ট আমি পাচ্ছি, হ্যা এটাই আমার প্রাপ্য ৷
.
আমাকে অনেক্ষণ পর কেবিন থেকে বেরিয়ে আসতে দেখে জিসান এগিয়ে আসল,,
এসে বলল,,
-- কি ভাই, এতক্ষণ ধরে আমাদের পরি বস আপনার কি পরিক্ষা নিচ্ছিল?(জিসান
আমাকে চোখ টিপে বলল)
-- .......(চুপ হয়ে আছি)
জিসান আবার বলল,,
-- সাবধান ভাই অন্য কোনো ধান্দায় পইরেন না, আমাদের পরি বসটা কিন্তু
মেরিড !
আর আমাদের মেডামের হাসবেন্ড হচ্ছে এই সারা কম্পানির মালিক !!
আমি বললাম,,
-- অহহ,,আচ্ছা !
-- আপনার মুখটা এমন লাগছে কেন ভাই? আপনার কি কিছু হয়েছে?
আমি একটা নকল হাসি দিয়ে বললাম,,
-- না ভাই কিছু হয় নাই ! আব্বু আম্মুর কথা একটু মনে পড়ছে ৷ তাই একটু মন
খারাপ,,!
-- আচ্ছা চলুন ভাই এখন কাজে লেগে পড়ি,,!
.
আমি আমার চেয়ার টেবিলে বসলাম,, আমার ডান সাইটে একটা মালয়েশিয়ান
ছেলে, আর বা সাইটে একটা মেয়ে,, দেখে মনে হচ্ছে বাংলাদেশিই,, এই অফিসের প্রায় লোকই বাংলাদেশি, মেয়েটা আমাকে তার পাশে বসতে দেখে
বলল,,
-- হায় আমি রাইসা রহমান,,
বলেই আমার দিকে তার একটা হাত বারিয়ে দিল,,
আমি হাত বারিয়ে হ্যান্ডশিপ করতে করতে বললাম,,
-- আপনি কি বাংলাদেশি?
-- জ্বি..!
একটা কথা বলব?
-- হ্যা বলুন !
-- আপনি দেখতে অনেক হ্যান্ডসাম আর কিউট !
আমি কিছু বললাম না, কষ্ট করে শুধু একটা হাসি দিলাম ৷
.
আমি কম্পিউটার অন করার সাথে সাথেই দিয়ার মেয়েটা এসে হাজির,,
আনকেল আনকেল বলে আমার কোলে উঠে এসে বসল,,
আমি বললাম,
-- তুমি আবার আমার কাছে আসছ কেন?
তোমার আম্মু বকবে তো?
-- না বকবে না আমিইই আম্মুকে বলে
এসেছিইই !
-- আচ্ছা তোমার নাম কি?
-- হিয়া...!
দিয়ার ওর মেয়ের নামটা নিজের নামের সাথে মিল রেখেই রাখছে,,
আমি দুইহাত দিয়ে ওর গাল টিপে বললাম,,
-- খুব সুন্দর নাম,,আর তুমিও অনেক কিউট,,
-- আনকেল আমিও ততোমাকে এএটা করিইই !! বলেই ওর ছোট্ট ছোট্ট হাত দিয়ে আমার গাল টিপে ধরে হাসতে লাগল,, হিয়ার হাসি দেখি আমি ওর দিখে তাকিয়ে
রইলাম,, হিয়া সেইম দিয়া মতই হাসে,, তারপর হিয়া আমার দাড়িতে হাত দিয়ে
বলল,,
-- আনকেল এগুলার নাম কি?
-- এগুলার নাম দাড়ি !
হিয়া নিজের গালে হাত নিয়ে মুখ গুমড়া করে বলল,
-- আমারর নাইই কেন?
হিয়ার কথা শুনে আমার হাসি চলে আসল, আমি ওর কথা শুনে হাসতে হাসতে
বললাম,,
-- তোমার কোনোদিনও উঠবে না মামনি, কারণ তুমি মেয়ে ৷
আমি আবার বললাম,,
-- আচ্ছা মামনি তোমার আব্বু এখন কই?
-- আব্বুওও কে?
-- সেকি তুমি তোমার আব্বুকে চিন না?
দিয়া এতক্ষণ দাড়িয়ে দাড়িয়ে ওদের কান্ড দেখছিল,, আর হাসছিল..
নিয়ানের প্রশ্নে হিয়াকে চুপ থাকতে দেখে,,
দিয়া ওদের দিকে এগিয়ে এসে বলল,,
-- হিয়া ওর আব্বুকে পাপা বলে ডাকে?
হঠাৎ কারো কথায় পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখলাম দিয়া,,
দিয়াকে দেখে আমি বসা থেকে উঠে দাড়ালাম !!
---------------------------------
দিয়া কথাটা বলেই আমার দিকে তাকিয়ে রইল,,
আমি ওর থেকে চোখ নামিয়ে বললাম,,
-- সরি মেডাম, আসলে আপনার মেয়ে আমার কাছে...
আমাকে বলতে না দিয়ে দিয়া বলল,,
-- ইটস ওকে !!
তারপর দিয়া হিয়াকে আমার পাশ থেকে তুলে নিয়ে যেতে যেতে বলল,,
-- চল হিয়া কিছু খাবে, বাড়ি থেকে না খেয়েই চলে এসেছে !!
আমার দিকে একবার তাকিয়ে চলে যেতে লাগল,,
পাশ থেকে রাইসা এতক্ষণ আমাদেপাশ থেকে রাইসা এতক্ষণ আমাদের
দেখছিল, আমাকে বলল,,
-- আমাদের মেডাম কি আপনার পরিচিত কেউ?
আমি মেয়েটার প্রশ্ন শুনে চুপ করে রইলাম !!
আমি মেয়েটাকে কি বলব কিছু বুঝে উঠতে পারতেছি না,,
-- জ্বি...!!
রাইসা আমাকে আর কিছু প্রশ্ন করার আগেই আমি বললাম,,
-- এসকিউজ মি,, আমি একটু আসছি ! বলেই আমি অফিসের ওয়াস রুমের দিকে
যেতে লাগলাম,,
.
অফিস শেষে আমি আর জিসান দাড়িয়ে আছি অফিসের বাইরে,, অফিস বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলাম,, জিসান আমাকে বলল,,
-- ভাই আপনি এখানে দাড়ান আমি গিয়ে দেখে আসছি বাসটা এখনও আসছে না
কেন?
এই বলে জিসান চলে গেল,
আমি একা একা আনমনে দাড়িয়ে আছি,,
পেছন থেকে দিয়া হিয়াকে কোলে নিয়ে বের হল,,
হিয়া আমাকে দেখে দিয়ার কোল থেকে নেমে দৌড়ে আমার কাছে আসল,,
আমার সামনে এসে একটা হাসি দিয়ে বলল,,
-- আনকেল মাথা নিচুওও করর !!
আমি মাথা নিচু করতেই হিয়া আমার গালে একটা চুমু খেল,,!
তারপর হিয়া দিয়ার কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে টানতে লাগল,
দিয়া বলল,,
-- কি হল হিয়া? আমাকে টানছ কেন?
-- আসস না আম্মু !
হিয়া দিয়াকে টানতে টানতে আমার সামনে নিয়ে এল,,
দিয়া আমার দিকে একবার তাকিয়ে চোখ নিচে নামিয়ে নিল !
হিয়া বলল,,
-- আম্মু আনকেলকে চুমু দাওও !!
আমারা দুজনই দুজনের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালাম,,
দিয়া লজ্জায় লাল হয়ে গেল,,
তারপর হিয়াকে ধমক দিয়ে বলল,,
-- হিয়া এসব কি হচ্ছে??
আমি দিয়াকে বললাম,,
-- পিল্জ মেডাম ওকে বকবেন না, আমি ওকে বুঝিয়ে বলছি,,
আমি হাটু গেড়ে বসে হিয়ার গালে হাত দিয়ে বললাম,,
-- হিয়া মামনি শুন,,তোমার আম্মু তোমার আব্বুকে মানে তোমার পাপাকে
ছাড়া অন্য কোনো ছেলেকে চুমু খেতে পারবে না !!
-- কিন্তুও আম্মু তো পাপাকে চুমু দেয়না,, আম্মু তো তোমার ফটোতে চু....
দিয়া হিয়ার মুখ চেপে ধরল,,
তারপর হিয়াকে কোলে নিয়ে বলল,,
-- চল হিয়া,,দেরি হয়ে যাচ্ছে !!
বলেই আমার দিকে একবার তাকিয়ে গাড়িতে উঠে গেল !
গাড়িতে উঠে হিয়া আমাকে হাত নাড়িয়ে টাটা দিতে লাগল,,
আমিও ওকে হাত নাড়িয়ে টাটা দিলাম,,
.
আমিও হোটেলে চলে আসলাম,, রুমে ডুকে শার্টটা খুলে একটা টাওয়াল নিয়ে
বাথরুমে ডুকলাম,, বাথরুমে ডুকেই শাওয়ারটা ছেড়ে শাওয়ারের নিচে দাড়িয়ে রইলাম ৷ বুকের ভিতরটা অনেক ভারী লাগছে, অনেক কষ্ট জমে আছে বুকের ভিতরে ৷ আমার দূষে আমি আমার পিচ্চি বউটাকে হারলাম ৷
সেদিন যদি আমি ওকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য ঘড় থেকে বেরিয়ে না যেতাম,, তাহলে আজ আমাকে ওকে এই অবস্থাতে দেখতে হত না,,
আমার চোখের পানি আর শাওয়ারের পানি এক হয়ে নিচে পড়ছে !!
আমার পিচ্চিটা এখন আর আমার নেই, এখন সে অন্য কারো বউ, অন্য একজনের মেয়ের মা,, যখন ওর মেয়েটা আমার কাছে জানিনা কেন জানি আমি সব কষ্ট ভূলে যাই,, এখন আমি নিজেকে একটা কথা ভেবেই শান্তনা দিচ্ছি যে, যাই হোক আমার পিচ্চিটা তো সুখে আছে, ও সুখে তাকলেই হল আমার আর কিছু চাই না,,
দিয়ার সুখেই আমার সুখ !!
অনেক্ষণ শাওয়ারের নিচে থাকার পর বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসলাম,,পরের দিন
অফিসে যাওয়ার জন্য জিসান রেডি হয়ে আমার রুমে এসে বলল,
-- কি ভাই আপনি এখনো রেডি হন নাই? অফিস বাস চলে আসছে তো?
আমি বললাম,
-- জিসান ভাই আপনি অফিস বাস দিয়ে চলে জান, আমি পরে একটা টেক্সি নিয়ে
চলে যাব,,!
-- আচ্ছা ঠিক আছে আমি যাই, আপনি দেরি করবেন না কিন্তু? নতুন নতুন
অফিস জয়েন করেছেন দেরি করলে সমস্যা হতে পারে কিন্তু ৷
-- অচ্ছা ৷
আমি ভাবতে লাগলাম আমার কি আর দিয়ার সামনে যাওয়া ঠিক হবে?
ও যখন সুখে আছে, তাহলে থাকনা সুখে ! আমি কেন ওর পথের কাটা হয়ে দাড়াব!! তাই ভাবলাম আমি আর দিয়ার সামনে যাব না ৷
.
এদিকে হিয়া অনেক্ষণ ধরে ওর মাকে বলে যাচ্চে, আম্মু আনকেল এখনো আসছে না কেন?(হিয়া প্রতিদিন দিয়ার সাথে অফিসে আসে)
দিয়া ওর মেয়েকে বলছে,
-- আসবে এক্কুনি চলে আসবে !!
দিয়াও চিন্তায় পড়ে গেল,
অফিস বাস তো সেই কখন চলেএ আসল,কিন্তু নিয়ান আসল না কেন অফিস বাসে? নিয়ান কি আর আসবে না অফিসে? নিয়ান তো আমাকে সহ্যই করতে পারে না !! তাহলে কি আমার জন্য সে আর অফিসে আসবেনা? আমার নিয়াকে কি আমি আর দেখতে পারব না? নিয়ানকে সে আর দেখতে পারবে না সে কথা মনে পড়তেই দিয়ার বুকের ভিতর ধুক করে উঠল,, চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে আসল,,
.
এতক্ষণ সে তার কেবিনের সামনেই দাড়িয়ে ছিল,, হঠাৎ খেয়াল হল নিয়ান অফিসে ডুকছে,, দিয়ার চোখেমুখে হাসি ফুটে উঠল,, হিয়া নিয়ানকে দেখতে পেয়ে দৌড়ে গিয়ে নিয়ানের পা দুইটা জরিয়ে ধরল,,
.
আমি হিয়াকে টেনে কোলে তুললাম,, গালে একটা চুমু দিলাম,, হ্যা আজ ওর জন্যই অফিসে আসতে হল,, আমি যে দিয়ার মেয়েটার মায়ায় পড়ে গেছি,,
হিয়া গাল ফুলিয়ে বলল,,
-- আনকেল আমিইই তোমারর সাথে কথা বলবব না,,তুমি এত দেরি করে আসলে
কেন?
-- সরি,,দেখি কিউটিটার মুখটা,,! হিয়া মুখটা অন্য দিকে গুড়িয়ে নিল,,
আমি এবার হিয়াকে কাতুকুতু দিতে লাগলাম,,
হিয়া খিলখিলিয়ে হাসতে লাগল,,
.
দিয়া ওদের দেখে একটা হাসি দিয়ে চোখ মুছে জোরে একটা নিশ্বাস ফেলে কেবিনে
চলে গেল,,!!
.
.
আমি সারাদিন হিয়াকে নিয়েই মেতে রইলাম,, মেয়েটা অনেক পাকা পাকা কথা বলছে,, আর আমি সেই কথা শুনে হাসতে হাসতে ফেটে পরছি,, দিয়া বার বার কেবিন থেকে বের হয়ে এসে কিছুক্ষণ ওদের দেখে, তারপর একটা হাসি দিয়ে আবার নিজের কেবিনে চলে যায়, এভাবেই সারাটাদিন কেটে গেল,,
জিসান এসে বলল,,
-- ভাই হোটেল যাবেন না? অফিস তো শেষ হয়ে গেল !!
আমার যাওয়ার কথা শুনেই হিয়া আমার গলা জরিয়ে ধরল,,
-- না আনকেল যাবেএএ না !!
আমি জিসানকে বললাম,,
-- জিসান ভাই আপনি অফিস বাস দিয়ে চলে জান !!
আমি সকালের মত টেক্সি দিয়ে চলে যাব !
জিসান চলে গেল,
কিছুক্ষণ পর দিয়া কেবিন থেকে বেরিয়ে আমাদের কাছে এসে হিয়াকে বলল,
-- হিয়া আস আমরা বাসায়া যাব !!
হিয়া এবার আমার কাধে মুখ লুকাল,,
তারপর বলল,,
-- নাহ,, আমিইই যাবব না !!
আমি বললাম,,
-- চলেন আমি আপনাদের গাড়িতে তুলে দিয়ে আসছি !!
অফিসের বাইরে এসে দিয়ার গাড়ির সামনে আসলাম,,
দিয়া আগে গিয়ে গাড়িতে বসল,,
আমি হিয়াকে বললাম,,
-- হিয়া আমার দিখে তাকও !
হিয়া আমার কাধ থেকে মুখ তুলে তাকাল,,
আমি বললাম,,
-- যাও এখন বাসায়, তুমি এরকম করলে কিন্তু আমি কালকে আর এখানে আসব
না !! হিয়া আমার কথা শুনে গাড়িতে উঠে গিয়ে বসল,,
আমি হিয়ার গালে একটা চুমু দিয়ে সেখান থেকে চলে যেতে লাগলাম,,
হঠাৎ পিছন থেকে দিয়া ডাক দিল,,
-- এই যে শুন !!
আমি পিছন ফিরে তাকাতেই দেখলাম,,
দিয়া গাড়ির থেকে মুখ বের করে আছে !!
আমি বললাম,,
-- জ্বি বলুন !!
-- অফিস বাস ত চলে গেছে তুমি কিভাবে যাবে??
দিয়ার মুখে তুমি ডাক শুনে ওর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলাম,,
দিয়া আবার বলল,
-- আমি তোমাকে কিছু প্রশ্ন করছি??
-- অহ,, জ্বি আমি টেক্সি দিয়ে চলে যাব !!
-- তুমি যদি কিছু মনে না কর, আমি তোমাকে পৌছে দিতে পারি !!
-- Thank you..লাগবে না আমি চলে যেতে পারব !!
দিয়া মুখটা কালো করে ফেলল,,
হিয়া বলল,
-- আনকেন চল না আমাদেরর সাথেএএ !
আমি হিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে আর না করতে পারলাম না !!
উঠে গেলাম ওদের গাড়িতে, আমি একপাশে আর দিয়া একপাশে আর
হিয়া মাঝাখানে,, হিয়া আমার কোলে উঠে এসে বসল,
কেউ কোনো কথা বলছি না,, কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর হুট করে দিয়া
বলল,,
-- তোমার বউকে কি এখানে মালয়েশিয়ায় সাথে করে নিয়ে এসেছ?
আমি দিয়ার কথা শুনে হাসতে লাগলাম,,
-- হা হা হা হা,,,বউ হা হা !
-- কি হল হাসছ কেন? আমি হাসির কিছু বলেছি?
-- আমার কপালে বউ নাই !!
-- মানে? তুমি কি সব অদ্ভুত কথা বলছ??????
......
.........(চলবে )...........
0 Comments
Thanks for your valuable comment. We will be back soon.
Thank you 😊😊😊