সেদিন সকাল বেলা বউ আদর করে ডাকলো, হ্যাগো শুনছো?
বউ আদর করে ডাকলেই আমি ভয়ে কাঁপতে থাকি,এই আদরের ডাকের পিছনে নিশ্চয়ই কাহিনি আছে। যেদিন আদর করে ডাকে, সেদিনই বুঝি পকেটের মালপানি ভালোই খসবে!
বউ বললো,বানিজ্য মেলা চলছে আমাকে নিয়ে যাবে, জানু? কতদিন হলো বানিজ্য মেলায় যাইনি।
আমি বললাম, এ মেলা তো আর মাসে মাসে হয় না যে প্রতিমাসে একবার যাবে। বছরে একবার হয়, একবার তো ঠিকই যাও শুধু গত বছর যাওয়া হয়নি তোমার অসুস্থতার কারণে।
তুমি যে হার কিপ্টে, কিছু কিনতে গেলেই তো তোমার শরীরে ভুমিকম্প শুরু হয়ে যায়।আহা! মেলায় কত মেগা মেগা অফার দেয়!
মেগা অফার নয় বল মগা অফার! যে লোক বলদ বা মগা তারা এই সব অফার বিশ্বাস করে।
বউ বললো,গতবার একটা ওভেন কিনতে গেলাম। দোকানদার একটা ওভেন এর সাথে দশটা আইটেম ফ্রী দিতে চাইল,তুমি কিনলে না! সেদিনই ছিল শেষ সুযোগ!
আমি বললাম, দোকানদারেরা প্রতিদিনই মেলায় শেষ সুযোগ দেয়।তারা আমার শ্বশুর বাড়ির আত্মীয় নয় যে একটার সাথে দশটা আইটেম ফ্রী দিবে। দশটার দাম ঠিকই রেখে দিবে।এর আগের বছর কি হয়েছিল মনে নেই! আখেরী অফার দেখে একটা কাপড়ের দোকানে ঢুকলে,,,,এক পিস ৩৫০, তিন পিস ৯৯৯ টাকা। তুমি তিন পিস ৯৯৯ টাকা দিয়ে কিনলে, গুলিস্তান এসে দেখি সেই কাপড় এক পিস এক,শ টাকা করে বিক্রি করছে! দোকানদার হাঁকাচ্ছে এক পিস এক শ,,,এক পিস এক,শ! তুমি মন খারাপ করলে,,,,,
সবাই তো আর ঠকায় না,ভাল দোকানদার আছে না! সবাইকে এতো খারাপ চোখে দেখ কেন?
অবশ্যই আছে। হাজীর বিরিয়ানি খেতে গিয়ে কী হয়েছিল? স্পেশাল অফার দেখে খাবার দোকানে ঢুকলে সস্তায় হাজীর বিরিয়ানি খাবে বলে।তারপর?
তারা লিখেছিল অরিজিনাল হাজীর বিরিয়ানি, খাবার মুখে দিয়ে বুঝা গেল,অরিজিনাল নকল হাজী। হাজীর বিরিয়ানি এক প্লেট ১৫০, তারা রাখল ৩২০ টাকা।বোরহানি হাজীর দোকানে এক গ্লাস ৫০ টাকা, তারা রাখল ১২০ টাকা। এই হলো স্পেশাল অফার!
তাহলে তুমি আমাকে মেলায় নিবে না?
দোজখে নিয়ে যেত বল নিয়ে যাব,মেলায় নয়।
বউ রাগ করে চলে গেল। তিনদিন যাবৎ খানাপিনা বন্ধ, রাগ করে বাপের বাড়ি চলে যাওয়ার হুমকি দিল।তিন দিন পর রান্না ঘরে ঢুকলো, এক তরকারি তে লবন বেশী, মুখে দেওয়া যায় না।আরেক তরকারিতে লবন দেয়নি। ভয়ে কিছু বলতে পারি না,কিছু বললেই বলে, বানিজ্য মেলায় চল সব ঠিক হয়ে যাবে।
আমি বললাম, ঠিক আছে তুমি রাগ করে তোমার বাপের বাড়ি চলে যাও,আমি রাগ করে আমার শ্বশুর বাড়ি চলে যাই,তারপর দেখি কি হয়।
আজও সকালে রান্না হয়নি। কাহাতক সহ্য হয়! আমি ও রাগ করে বাসা থেকে কিছু না খেয়ে চলে এসেছি। আসার সময় একটা ডায়লগ দিয়ে চলে এসেছি, দুত্তরি ছাই! থাকব না আর এ সংসারে!
এ ডায়লগে কাজ হবে বলে মনে হলো না,আরও শক্ত ডায়লগ লাগবে।
সারা দিন কাজে ডুবে ছিলাম। বিকেলে গেলাম মতিঝিল আমেরিকান লাইফ ইন্সুইরেন্স অফিসে। প্রিমিয়াম জমা দিয়ে বাইরে দাড়িয়ে আছি, এক্ষুনি বাসায় ফিরবো কিনা ভাবছি।একটা মেয়ে আমার সামনে দাড়িয়ে আছে। বয়ফ্রেন্ড সম্ভবত তাকে এখানে দাড়িয়ে থাকতে বলেছে। টেলিফোনে রাগারাগি করছে, আর পাঁচ মিনিটের বেশী দেরি হলে সে চলে যাবে। একটু সামনের দিকে দারুচিনি নামে একটা রেস্টুরেন্ট আছে। ভাবলাম, সেখানে গিয়ে এক কাপ চা খেয়ে আগে মাথা ঠান্ডা করা যাক।
রেস্টুরেন্টের দিকে রওনা দিব এমন সময় বউয়ের ফোন,দুপুরে বাসায় খেতে যাইনি তাই হয়তো মন গলেছে।
ফোন ধরতেই বললো, এই তুমি কই?
আমি বললাম, রাস্তায়।
কোথায় যাচ্ছ?
দারুচিনি ।
হায় হায়! দারুচিনি যাচ্ছ কেন? তোমাকে দারুচিনি যেতে হবে না,এক্ষুনি বাসায় ফিরে আস,কুইক।
আমি বুজলাম, বউ দারুচিনি দ্বীপের কথা ভাবছে। কিছুদিন আগে একটা টিভি চ্যানেলে হুমায়ুন আহমেদের দারুচিনি ছবিটা দেখেছে, মাথার মধ্যে ওটা ঘুরছে।
সে বললো, এই, কথা বলছো না কেন?এক্ষুনি বাসায় চলে আস জানু, তোমাকে বানিজ্য মেলা যেতে হবে না,আর কখনো বানিজ্য মেলার নাম মুখে আনব না।
আমি বললাম, না, আজ আমি দারুচিনি যাবই যাব।কেউ আটকে রাখতে পারবে না।অনেক সহ্য করেছি আর নয়,,,
এইসব কি বলছ তুমি? পাগল হয়ে গেলে তুমি! দোহাই লক্ষীটি দারুচিনি যেও না, এক্ষুনি বাসায় ফিরে আস। বানিজ্য মেলা তো দুরের কথা,বাপের বাড়িও যেতে চাইব না।প্রমিজ।
ঠিক আছে, এই শেষ। আবার যদি ক্যাচাল করো,ঠিকই দারুচিনি চলে আসবো,কেউ বাধা দিয়ে রাখতে পারবে না।
নাহ,এক কাপ চা না খেলে চলবে না।আমি দারচিনি হোটেলের দিকে হাটছি,মেয়েটি ও পিছনে আসছে আর মোবাইলে কথা বলছে।সেও বোধহয় হোটেলে ঢুকবে।
ওকে জানু,তুমি কতো ভাল।এই তোমার পাশে কার যেন আওয়াজ পাওয়া যায়।
আমি বললাম, একটা মেয়ের।
এই মেয়ে কি করছে?
কথা বলছে।
সে তোমার সাথে কোথায় যাচ্ছে?
দারুচিনি।
সেই মেয়ে ও তোমার সাথে দারুচিনি যাবে! ওমা গো আমার কি হবে গো,,,,বলেই ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলো।
আমি শীষ বাজাতে বাজাতে চা খেতে চললাম।

0 Comments
Thanks for your valuable comment. We will be back soon.
Thank you 😊😊😊