পর্ব - --৪
'পিল' শব্দটা শুনে পিচ্চিটা আমার থেকে কয়েক পা পিছিয়ে গেল,,
আমি বললাম,
-- সরি,, পিল্জ আমাকে মাফ করে দিস, রাতে যে কি হয়েছিল আমার? সত্যি বলছি তখন আমার কোনো হুস জ্ঞান ছিল না ৷
পিচ্চিটা কোনো কথা বলছে না, শুধু চোখ দিয়ে অনগল পানি ঝরে যাচ্ছে ৷
আমি বললাম,,
-- পিল্জ তুমি কেদ না, তুমি কাদলে আমি নিজেকে কোনোদিন কমা করতে পারব না৷পিল্জ পিলটা খেয়ে নিস,,
বলেই আমি রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম,
.
দিয়ার কথায় আসি,
.
দিয়া সেখানেই স্তব্দ হয়ে কিছুক্ষন দাড়িয়ে রইল, তারপর দৌরে বাথরুমে ডুকে গেল,, বাথরুমে ডুকেই শাওয়ার ছেড়ে শাওয়ারের নিচে বসে হাউমাউ করে চিৎকার করে কান্না করতে লাগল,, এখন দিয়া যত জোরেই কান্না করুক না
কেন, সেই কান্নার আওয়াজ বাইরে যাবেনা, তাই ইচ্ছা মত চিৎকার করে কান্না করতে লাগল,
দিয়া ভেবেছিল কাল রাতের ঘটনার পর নিয়ান তাকে আর দূরে সরিে রাখতে
পারবে না, এখন নিয়ান তাকে মেনে নিবে, কিন্তু একটু আগে যখন নিয়ান তার হাতে পিলটা ধরিয়ে দিল, তখন মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল ৷
এইটুকু একটা পিলকে দিয়ার কাছে মনে হয়েছিল যেন এটা পৃথিবীর সবছেয়ে ভারী
একটা জিনিস, সেই ভারী জিনিসটা নিয়ান দিয়ার হাতে ধরিয়ে দিল ৷
.
আমি রুম থেকে বের হয়ে এসে ড্রইং রুমের সফাতে বসলাম,,
মনে মনে ভাবতে লাগলাম,, আমি কি মেয়েটার সাথে একটু বেশিই অপরাধ করে ফেলছি?আমি যদি মেয়েটাকে স্ত্রী হিসেবে নাই মানতে পারি, তাহলে কেন আমি মেয়েটার সতিত্ত নষ্ট করলাম? নিজেকে নিজের কাছে অনেক অপরাধ
বোধ হচ্ছে, মনে হচ্ছে যেন আমি এই পৃথিবীর সবছেয়ে বড় অপরাধী ৷ মেয়েটার জন্য অনেক মায়া হচ্ছে ৷
.
.
পিচ্চিটার আর আমার ডিভোর্স পেপার আসতে আর মাত্র 4দিন বাকি ৷ পিচ্চিটা এখন আমার সাথে আগের মত কথা বলে না,, আগের মত পাগলামী করে না ৷
কিছু জিজ্ঞেস করলে শুধু সেটার উত্তর দেয়,,
উত্তর দেওয়ার ধরন এমন,, হুম,হ্যা,না,ঠিক আছে, এর বেশি পিচ্চিটা আমার সাথে একটা কথাও বলে না,, এখন কলেজে আমাকে ছাড়াই একা একাই চলে যায়,
আমি বলেছিলাম আমার সাথে যেতে, কিন্তু পিচ্চিটা বলে সে নাকি একা যেতে
পারবে ৷ আমি পিচ্চিটা সেই পাগলামী গুলা অনেক মিস করি ৷
পিচ্চিটার কিছু হলে একটুতেই কেদে ফেলা, আমাকে বার বার আব্বুর ভয় দেখানো, এইগুলা অনেক মিস করি,,
.
আজ বন্ধুদের সাথে কিছুক্ষন আড্ডা দেওয়ার পর চলে আসলাম পিচ্চিটার কলেজের সামনে ৷ কিছুক্ষন পর পিচ্চিটা বেরিয়ে আসল,,
আমি পিচ্চিটাকে বললাম,,
-- বাইকে উঠ ৷
পিচ্চিটা কিছু না বলে আমাকে পাশ কাটিয়ে একটা রিক্সাতে উঠে গেল,,
আমি পিচ্চিটার কান্ড দেখে বোকা বনে গেলাম,,
যে মেয়েটা আমার বাইকের পেছনে উঠতে সব সময় পাগল হয়ে থাকত,
সেই মেয়েই আজ আমার সামনে দিয়ে একটা রিক্সাতে উঠল,, আমার কেন জানি বুকের ভেতরটায় অনেক কষ্ট ফিল হচ্ছে ৷
আমার এরকম কষ্ট হচ্ছে কেন?
তাহলে কি আমি মেয়েটাকে ভালবেসে ফেলেছি??? সত্যিই কি আমি মেয়েটাকে ভালবেসে ফেলেছি??? নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করতে লাগলাম,
.
সেখানে আর দাড়িয়ে না থেকে বাড়িতে চলে আসলাম,, রুমে ডুকে দেখলাম মেয়েটা গোসল করে বাথরুম থেকে বের হচ্ছে আর টাওয়াল দিয়ে চুল মুছছে,,
আজ কেন জানি আমার কাছে মেয়েটাকে অন্য রকম লাগছে,, বারবার পিচ্চিটার দিকে চোখ যাচ্ছে,, পিচ্চিটার মুখটা আজ এত ফেকাসে লাগছে কেন??
অনেক্ষন ধরে দেখছি পিচ্চিটা মনমরা হয়ে কি যেন একটা ভাবছে ৷
পিচ্চিটা আয়নার সামনে দাড়িয়ে ছিল,
আমি বললাম,,
-- তোমার কি কিছু হয়েছে?
মেয়েটা আমার কথায় পিছনে ঘুরে আমার দিকে কিছুক্ষণ প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল,,
তারপর মুখটা মলিন করে শুধু একটা শব্দ বলল,,
-- না,,,,!
মেয়েটা রুম থেকে বেরিয়ে গেল,,
আমি বুঝলাম না মেয়েটা আমার দিকে এরকম ভাবে তাকাল কেন?
মেয়েটা কি চোখের ভাষা দিয়ে আমাকে কিছু বুঝাতে চাইছিল?
.
.
রাত 10:30মিনিট, আমি আগে খাবার শেষ করে রুমে এসে মেয়েটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম, মেয়েটা এতক্ষণ ধরে আসছে না কেন?আমি রুম থেকে বের হয়ে মেয়েটাকে ডাকতে লাগলাম,,
-- দিয়াআআ...এই দিয়াআআআ?
মেয়েটা বলল,,
-- আসছি,,
দৌরাতে দৌরাতে মেয়েটা রুমে আসল,,
আমার সামনে এসে দাড়াল,,
হাপাতে হাপাতে বলল,
-- কিছু বলবে?
-- এতক্ষণ ধরে রুমে আসছিলে না, তার জন্যই ডাকলাম ৷
মুখটা মলিন করে বলল,
-- আর কিছু বলবে না?
আমি জানি মেয়েটা আমার মুখ থেকে কি শুনতে চাইছে,,
আমি মেয়েটার আমার জন্য এরকম অস্তিরতা দেখে মনে মনে হাসতে
লাগলাম,,
তারপর মুখে একটা হাসি এনে বললাম,
-- নাহ,, আর কি বলব?
মেয়েটা হতাশ হয়ে বলল,,
-- অহ...!
মেয়েটা কিছুক্ষণ নিরব থেকে আবার বলল,,
-- আমি কাল সকালে চলে যাচ্ছি ৷
আমি অবাক হয়ে বললাম,,
-- চলে যাচ্ছ মানে কোথায় চলে যাচ্ছ?
-- আমাদের ডিভোর্স পেপার চলে এসেছে , সকালে একটা লোক এসে পেপারটা দিয়ে
গেছিল ৷মেয়েটা আলমারি থেকে ডিভার্স পেপার বের করে আমার সামনে আনল,,
তারপর পেপারটা আমাকে দেখিয়ে বলল,, এই পেপারটায় সাইন করার আগে আমাকে একবার বউ বলে ডাকবে? শুধু একবার, একটা বার আমাকে বউ বলে ডাক পিল্জ,,(কান্না করতে করতে)
আমি কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে, গেলাম, ঘরের বাইরে এসে বাইকটা নিয়ে বেরিয়ে পরলাম,,
বাইক চালাচ্ছি আর মনে মনে ভাবছি,, তোমাকে শুধু একবার না, সারাজীবন
বউ বলে ডাকব আমার # পিচ্চি_বউ ৷ বাইকের স্পীড বারিয়ে দিলাম,,
একটা ফুলের দোকানের সামনে এসে বাইক থামালাম,, তারপর অনেকগুলা গোলাপ ফুল কিনে, একটা শাড়ির দোখানে এসে লাল একটা শাড়ি কিনলাম,,
আজ পিচ্চিটাকে নিয়ে সব আবার নতুন করে শুরু করব, শাড়ি আর গোলাপ নিয়ে একরকম দৌরেই ঘরে ডুকলাম,, তাড়াহুড় করে শিরি দিয়ে উপরে উঠতে যাব
তখনই শিরিতে একটা হুছট খেলাম,, হুছট খেয়ে আমার পায়ের একটা নওখ উল্টে
রক্ত বের হচ্ছে,, সেদিকে আমার খেয়াল নাই,
রুমে ডুকে বললাম,
-- দিয়াআআ আমি চলে এসেছি ৷
কিন্তু দিয়াকে রুমে দেখতে পারছি না কেন?
মনেহয় বাথরুমে আছে, বাথরুমের দরজা ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে গেল,, নাহ,, বাথরুমেও নেই, বেলকুনিতে দেখতে যাব তখনই চোখ পরল বিছানাতে !
দেখলাম ডিভোর্স পেপার রাখা আছে, তার উপর একটা ছোট্ট কাগজ,,
আমি ডিভোর্স পেপার হাতে নিয়ে দেখলাম !ডিভোর্স পেপারে দিয়ার সাইন,
আমার বুকের ভিতর ধুক করে উঠল৷
-----------
কাগজটার ভাজ খুলে পড়তে লাগলাম...
.
প্রিয়
নিয়ান আহমেদ.
আজ থেকে তুমি মুক্ত, আজ থেকে তোমাকে আর কোনো পিচ্চির জ্বালা সহ্য করতে হবে না, চলে যাচ্ছি সব ছেড়ে, কোথায় যাচ্ছি আমি নিজেও জানি না ৷ তুমি হয়তো ভাবছিলে যে আমি আমাদের বাড়িতেই যাব, না আমি যে অই বাড়িতে যেতে পারবনা ৷ কি মুখ নিয়ে যাব অই বাড়িতে? আব্বুকে গিয়ে আমি কি বলব?
তোমাকে বলেছিলাম যে সকালে যাব, কিন্তু একটু আগে তোমাকে যখন বললাম,
আমাকে একবার বউ বলে ডাকতে, তুমি আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে বাইরে চলে
গেলে, তখনই বুঝে গেলাম আমাকে তোমাতখনই বুঝে গেলাম আমাকে তোমার আর সহ্য হচ্ছে না, তাই সকাল পর্যন্ত থেকে তোমার অসহ্যের কারণ হতে চাই না ৷ চলে গেলাম ৷ তোমার মুখে সেই পিচ্চি সয়তান্নি ডাকটা অনেক মিস করব ৷
ভাল থেক...আর সুন্দর একটা বড় মেয়েকে বিয়ে কর, তোমার তো আবার পিচ্চি মেয়েদের সহ্য হয় না ৷
ইতি,
তোমার # পিচ্চি_বউ ৷
চিঠিটা পড়ার পর আমার চোখ জাপসা হয়ে আসছিল, সারা পৃথিবীটা যেন আমার চোখের সামনে ঘুরছিল, সাথে সাথে সেখানেই বসে পড়লাম,, জোরে একটা চিৎকার দিলাম,দিয়াআআআআ,,তুমি এএটা কি করলে দিয়াআআ..আমি তোমাকে কোথাও যেতে দিব না, বলেই দৌরে রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম,, বাইক স্টার্ট দিয়ে কোন দিকে যাব কিছুই বুঝতে পারছি না ৷ অতঃপর কোনো দিশা না পেয়ে সামনের
দিকেই যেতে লাগলাম,,
.
দিয়ার কথায় আসি,
.
রাস্তা দিয়ে আনমনে হাটছে দিয়া,চোখ দিয়ে অঝর বৃষ্টি পড়ছে ৷ বাতাসে চুলগুলা উড়ছে, কোথায় যাচ্ছে সে নিজেও জানে না, শুধু এটা জানে যে নিয়ানের জীবন থেকে অনেক দূরে চলে যাবে, নিয়ানকে সে নিজের জীবনের চাইতেও বেশি ভালবাসে, সেই ছোটবেলা থেকে নিয়ান তার মনে জায়গা নিয়ে আছে, আজ সেই মনের মানুষটাকে ছেড়েই অনেক দূরে চলে যাচ্ছে সে, দিয়া মনে মনে ভাবছে সে কি দূরে চলে গেলে নিয়ানকে ভূলে থাকতে পারবে? আবার নিজেকে নিজেই উত্তর দিচ্ছে, নিজেকে ভূলতে পারে কিন্তু নিয়াকে কোনো দিনও ভূলে থাকতে পারবে না ৷
এসব ভাবতে ভাবতে কোন সময় যেমাঝরাস্তায় চলে এসেছে নিজেও জানে না
৷৷
পেছন থেকে হঠাৎ একটা কার এসে দিয়াকে অনেক জোরে ধাক্কা দিল, দিয়া চিটকে অনেক দূরে গিয়ে পড়ল, আস্থে আস্থে চোখ বন্ধ হয়ে আসছে দিয়ার,চোখে বন্ধ করার আগে চোখে জাপসা দেখতে পেল একটা লোক তাকে পাজকোলা করে কোলে তুলছে ৷
.
.
হন্ন হয়ে দিয়াকে এদিক সেদিক খুজে বেরাচ্ছি, কিন্তু কোথাও খুজে পাচ্ছি না,
কোথায় গেল মেয়েটা? তাহলে কি মেয়েটাকে আর খুজে পাব না?
'আর খুজে পাবনা' সেই কথা মনে পড়তেই বাইক থামিয়ে, বাইক থেকে নেমে সেখানেই রাস্তার পাশে বসে পড়লাম, তাহলে আমি কি আমার পিচ্চিটাকে হারিয়ে
ফেলেছি? না এটা হতে পারে না ৷ বলেই জোরে একটা চিৎকার দিলাম,
দিয়াআআআ...
চিৎকার করে কান্না করতে লাগলাম,
আর জোরে জোরে বলতে লাগলাম,
-- দিয়াআআ তুমি কোথায়া? পিল্জ আআমাকে ছেড়ে কোথাও যেও না দিয়াআআ,
দিয়াআআ আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি দিয়াআআ, এই পিচ্চি সয়তান্নিইইই তুই শুনতে পারছিসসস? আমি তকে অঅঅনেক ভালবাসি ৷ হাউমাউ করে কান্না করতে লাগলাম,এইইই দিয়াআআ তুমি আমার থেকে একবার বউ ডাক শুনতে ছেয়েছিলে না? এইযে আমি তোমাকে বউ ডাকছি,
বউউউ এই বউউউউ তুমি কোথায়য়য়,বউউ তুমি শুনতে পারছ?
আমি তোমাকে বউ ডাকছি,, ইয়া আল্লাহ তুমি আমার পিচ্চি বউকে আমার কাছে এনে দাওওও... আমি যে ওকে ছাড়া বাচব নাআআ আল্লাহ..
সব দূষ আমার.. বলেই পাশের ল্যাম পোস্টে নিজের মাথা বারি দিতে লাগলাম,,
বারি দিতে দিতে একসময় আমার মাথা দিয়ে রক্ত ঝরতে লাগল,,
তবুও আমি থামছি না, মাথায়া বারি দিয়েই চলছি, হঠাৎ আমার চোখে অন্ধকার হয়ে আসল, আমার মাথা ঘুড়তে লাগল, তারপর আমি মাটিতে লুটিয়ে পরলাম,
এরপরে কি হয়েছিল আমার আর কিছু মনে নাই,,
.
.
-- দিয়াআআআ...বলে চিৎকার দিয়ে উঠলাম ৷
একি আমি কোথায়?
সারা রুমে চোখ বুলাতেই বুঝতে পারি এটা একটা হস্পিটাল..
মাথায় ব্যাথা অনুভব করলাম,, মাথায় হাত দিয়ে দেখি ব্যান্ডেজ,আমার চিৎকার শুনে আম্মু দৌরে কেবিনে ডুকলেন,,
আম্মু আমার পাশে এসে বসে বললেন..
আম্মু-- এখন কেমন লাগছে নিয়ান?
আমি আম্মুর প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে
কান্না করতে করতে বললাম,,
-- আম্মু দিয়াআআ...
-- চুপ কর.. তকে আর কিছু বলতে হবে না, আমি চিঠিটা পড়েছি আর তদের ডিভোর্স পেপারটাও দেখেছি, তুই মেয়েটার সাথে এমন কেন করলি নিয়ান?
বলেই আম্মু কান্না করতে করতে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলেন ৷৷
আমি অসুস্থ না হলে হয়তো আম্মু আমার গালে কষে একটা চর মারতেন,
আমার অসুস্থার জন্য সেটা করলেন না ৷
.
আমার দিয়ার কথা মনে পড়তেই,, আমার বুকটা কেপে উঠল,,
হাতের স্যালাইন খুলে, হাসপাতেলর সিট থেকে নামলাম,,
দাড়াতেই পারছিনা অনেক কষ্ট হচ্ছে তুবুও উঠে দাড়ালাম,, যতই কষ্ট হোক আমাকে যে যেতে হবে, আমার পিচ্চিটাকে যে খুজে বের করতেই হবে ৷
কেবিন থেকে বেরিয়ে পরলাম,,
মাথাটা জিমজিম করছে,,
আমাকে দেখেই আম্মু চিৎকার দিয়ে উঠলেন,,
-- নিয়ানননন...তুই এই অবস্থাতে কোথায় যাচ্ছিস? বলেই পেছেন থেকে আম্মু আমার হাত চেপে ধরলেন,,
-- আম্মু আমাকে ছাড়, আমাকে যেতে হবে৷ দিয়াকে খুজে বের করতে হবে ৷
-- নিয়ান বাবা এরকম পাগলামী করিস না ৷ তর শরিরটা যে ভাল না, তাছাড়া দিয়াকে খুজতে তর আব্বু আর চাচা গেছেন !
-- না আম্মু আমাকেও যেতে হবে ৷ বলেই এক জটকায় আম্মুর থেকে আমার
হাত ছাড়িয়ে দৌড়ে যেতে লাগলাম,, কিছুটা যেতেই মাথাটা ঘুড়তে লাগল, আর যেতে পারলাম না সেখানেই মাথা ঘুরে পড়ে গেলাম ৷
.
.
এদিকে আজ তিন দিন পর দিয়ার জ্ঞান ফিরল !
দিয়া চোখ খুলতেই নিজেকে একটা হস্পিটালে আবিস্কার করে ৷
পাশে লক্ষ করে দেখে নিয়ানের বয়সি একটা ছেলে বসে আছে ৷
দিয়া বলল,,
-- আমি কোথায়? আর এখানে কিভাবে আসলাম?
দিয়াকে উঠতে দেখে ছেলেটা বলল?
-- আপনার এখন কেমন লাগছে?
-- ভাল ! কিন্তু আমি এখানে কেন?
আর এটা কোন জায়গা ৷
ছেলেটা বলল,,
-- আপনি এখন মালয়েশিয়ায়৷
-----------------------------------
দিয়া বলল,
-- মানে? আমি মালয়েশিয়া কিভাবে আসলাম? আমি তো একটা গাড়ির সাথে....
দিয়াকে আটকিয়ে ছেলেটা বলল,,
-- হ্যা, সেদিন আপনি আমার গাড়ির সাথেই ধাক্কা খেয়েছিলেন, ধাক্কাটা অনেক জোরেই লেগেছিল, আপনার অনেক ব্লিডিং হচ্ছিল,,
আমি আপনাকে সেখানকার একটা হস্পিটালে নিয়ে যাই, অনেক্ষণ আপনার
চিকিৎসা চলার পর, ডাক্তার বেরিয়ে এসে বলে, 72ঘন্টার ভিতরে আপনার জ্ঞান না ফিরলে আপনাকে আর বাচানো সম্ভব হবে না,, অতঃপর উন্নত চিকিৎসার জন্য সেদিনই আপনাকে আমি মালয়েশিয়া নিয়ে আসি ৷ আর আজ ঠিক 71ঘন্টা পর আপনার জ্ঞান ফিরল ৷
-- আপনি আমাকে কেন বাচালেন? আমি মরে গেলেই তো ভাল হত ৷
-- আমার সামনে একজন মানুষ মারা যাবে, সেটা আমি চেয়ে চেয়ে দেখব,?
তাও আবার আমার গাড়ির সাথে এক্সিডেন্ট হয়েছে ৷ আচ্ছা আপনি সেদিন মাঝ রাস্তা দিয়ে হাটছিলেন কেন? আর মরে গেলে ভাল হত এটা কেন বলছেন?
দিয়া নিয়ানের সাথে ঘটে যাওয়া সব ঘটনাই ছেলেটাকে বলল,,
সব বলার পর ছেলেটার দিকে তাকাতেই দেখল,
ছেলেটার চোখে পানি,
ছেলেটা বলল,,
-- একটা মেয়ে একটা ছেলেকে এতটা ভালবাসতে পারে?
দিয়া কিছু বলল না শুধু চোখ দিয়ে পানি ঝরছে ৷
ছেলেটা আবার বলল,
-- অই বজ্জাত ছেলেটা কি করে পারল, আপনার মত একটা মিষ্টি মেয়েকে কষ্ট
দিতে ৷
-- পিল্জ ওকে কিছু বলবেন না ও অনেক ভাল ছেলে ৷
-- আপনাকে এত কষ্ট দেওয়ার পরও আপনি বলছেন ছেলেটা ভাল?
-- আমি যে ওকে আমার জীবনের চাইতেও বেশি ভালবাসি, তাই ও যতই খারপ হোক, আর আমাকে যতই কষ্ট দেয় না কেন, আমার কাছে ও ভালই থাকবে ৷
-- সত্যিই আপনার তুলনা হয় না, যেই ছেলেটা আপনাকে এত অবহেলা,কষ্ট দিল,
আর আপনি তাকেই ভাল বলছেন ৷
আচ্ছা আপনার নামটাই জানা হল না??
-- আমি দিয়া ৷
-- আর আমি আরিয়ান চৌধরী ৷
.
আর আমি হলাম এই চৌধরী সাহেবে আর আমি হলাম এই চৌধরী সাহেবের মা ৷
দিয়া দেখতে পেল কথাটা বলতে বলতে একজন মহিলা কেবিনে ডুকছেন ৷
আরিয়ান মহিলাটাকে দেখিয়ে বলল,,
-- দিয়া উনি আমার আম্মু ৷
দিয়া মুখ দিয়ে সালাম দিল ৷
তারপর বলল,
-- উনি এখানে?
-- আমরা এখানে, এই মালয়েশিয়ায় ই থাকি৷
আরিয়ানের আম্মু বললেন,,
-- এখন কেমন লাগছে মা?
-- জ্বি ভাল আন্টি?
-- আমাকে আন্টি না, মা বলে ডেক ৷ জান কালকে যখন তোমাকে আমি প্রথম
দেখি তখনই আমার মায়ের কথা মনে পড়ে যায়, তোমাকে দেখতে হুবুহু আমার মায়ের মত ৷ কথাগুলা বলে শেষ করেই চোখের পানি মুছলেন ৷
দিয়া বুঝতে পারল ওরা দুজনই অনেক ভাল মনের মানুষ,
তারপর বলল,
-- আচ্ছা ঠিক আছে ডাকব ৷
-- আচ্ছা মা তুমি এখন একটু রেস্ট নাও,, আমরা বাইরে যাই ৷
বলেই ওরা চলে গেলেন,,
.
আরিয়ান চৌধরীর পরিচয়টা একটু ভাল করে দিয়ে দেই ৷ আরিয়ান চৌধরী অনেক বড় একজন বিজনেস ম্যান, বিজনেসটা ওর বাবারই, কিন্তু দুই বছর
আগে ওর বাবা মারা যাওয়াতে পোর বিজনেসটা ওকেই সামলাতে হচ্ছে,
বাংলাদেশ আর মালয়েশিয়া মিলে তিনটা কম্পানি আছে ওদের ৷
তাই আরিয়ান চৌধরী মালয়েশিয়াই পরিবার নিয়ে থাকে ৷ পরিবার বলতে ওর মা আর ছোট্ট একটা বোনকে নিয়ে তার পরিবার ৷
.
7দিন পর আজ দিয়াকে হস্পিটাল থেকে বাড়িতে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে, কিন্তু দিয়া ভাবতে লাগল তার তো কোনো বাড়ি নাই, সে এখন কোথায় যাবে,এসব ভাবছিল তখনই আরিয়ান চৌধরী ও তার মা ডুকল,
আরিয়ান বলল,
-- চলেন, আজ আপনাকে হস্পিটাল থেকে ছেড়ে দিয়েছে ৷
-- কিন্তু আমি কোথায় যাব?
আরিয়ান অবাক হয়ে বলল,,
-- কোথায় যাবে মানে? আমাদের বাড়িতে যাবে ৷
-- কিন্তু আমি আপনাদের বাড়িতে কোন পরিচয়ে যাব ৷ আমার তেআ কোনো
পরিচয় নাই ৷
আরিয়ার আম্মু বললেন,
-- আমাদের বাড়িতে যেতে তোমার কোনো পরিচয় লাগবে না মা ৷
আরিয়ান বলল,,
-- আম্মুওও..উনি যখন পরিচয় চাইছেন তাহলে উনাকে একটা পরিচয় দিলে সম্যসা কোথায়?
-- কি পরিচয় দিবি তুই ওকে?
-- আমার বউয়ের পরিচয় ৷
দিয়া অবাক হয়ে বলল..
-- মানে?
-- আরে আরে, আপনি এত ভয় পাবেন না, আমি আপনাকে সত্যিকারের বউ হতে
বলছি না ৷
শুধু আপনার পরিচয়টা হবে আপনি আমার বউ ৷
-- কিন্তু....
-- আর কোনো কিন্তু না, এবার বাড়িতে চলুন ৷
.
.
এদিকে আমি হাসপাতাল থেকে বাড়িতে এসে পাগলের মত হয়ে গেলাম,,
প্রত্যেক দিন দিয়াকে খুজতে বের হই, কিন্তু কোথাও খুজে পাই না ৷ সারা বাংলাদেশের অলিগলি সব খুজলাম কিন্তু কোথাও খুজে পেলাম না ৷এভাবে প্রত্যেক দিন মেয়েটাকে পাগলের মত খুজে বেরাই ৷
.
যে মেয়েটাকে আমি সহ্যই করতে পারতাম না, আজ সেই মেয়ের জন্যই প্রত্যেক রাত কান্না করে বালিশ ভিজাই.. এভাবেই দিয়ার অপেক্ষায় কেটে গেল অনেক নির্ঘুম রাত,,
.কেটে গেল পাচঁ পাচঁটা বছর,,
.
এরমধ্যে দিয়ার কথা প্রায় সবাই ভূলেই গেছে,, সবাই বলছে দিয়া নাকি আর ফিরে আসবে না, ও নাকি মারা গেছে !!
চাচা চাচিও অনেক কষ্ট করে হলেও সেটা মেনে নিয়েছেন ৷
কিন্তু আমি এখনও দিয়ার পথছেয়ে বসে আছি, আমি জানি দিয়া আমার বিশ্বাস,দিয়া একদিন না দিন ফিরে আসবেই,,
এরমধ্যে আব্বু আম্মু অনেক বার বলেছেন যে বিয়ে করে নতুন করে জীবন শুরু করতে ৷ কিন্তু আমি ওদের বার বার বলে দিচ্ছি যে দিয়ার অপেক্ষায় সারা জীবন পার করে দিতে পারব,
.
আজ আব্বু হঠাৎ রুমে এসে বললেন,,
-- তুই কি এভাবেই জীবনটা শেষ করে দিবি
৷
তর কি মনে হয় মেয়েটা এখনও বেছে আছে? আর বেছে থাকলেও কি তর জন্য বসে আছে নাকি? বেছে থাকলেও হয়তো কারু সাথে বিয়ে হয়ে সংসার করছে ৷
-- আব্বুওওও...পিল্জ !
-- তকে আমি দুইটা অপশন দিচ্ছি, বিয়ে কর নয়তো চাকরি বাকরি কিছু একটা
করে জীবনটা নতুন করে শুরু কর,,
কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম,,
-- ওকে আব্বু আমি চাকরি করব !
আব্বু একটা সস্তির নিঃশ্বাস ফেলে চলে গেলেন ৷
.
পরেরদিন আমি একটা চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যাই..
ইন্টারভিউ দেওয়ার পর, আমাকে কিছুক্ষণের জন্য Waiting এ রাখে !
আমাকে কিছুক্ষণ পর আবার আমাকে কিছুক্ষণ পর আবার ডাকে,,
আমাকে বলে,,
-- congratulations আপনার চাকরি হয়ে গেছে ৷ কিন্তু সেটা মালয়েশিয়ায় ৷ আপনার সব রেজাল্ট ভাল দেখে আমরা আমাদেরই আরেকটা কম্পানিতে টান্সপার করে দেই ৷ মালয়েশিয়ার কথা শুনে কেন জানি আমি
হ্যা বলে দেই !আমার কেন জানি মনে হচ্ছে মালয়েশিয়ায় কিছু একটা আছে !!!!
......
.........(চলবে )...........
0 Comments
Thanks for your valuable comment. We will be back soon.
Thank you 😊😊😊