ম্যাডাম

Ads Inside Post

ম্যাডাম

পর্ব---৩য় ম্যাডাম কড়া চোখে আমার দিকে তাকালেন। তার চোখেমুখে রাজ্যের রাগ।আমি ইডিয়টের মতো ঘুমাচ্ছি।ম্যাডাম আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।একটা কষে চড় দেবার বাসনা জেগেছে। চড়টা কোথায় দিবেন তা নিয়ে অবস্থান সংক্রান্ত সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। আমি চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছি।ঘুম অনেক আগেই কেটে গেছে।চোখ বন্ধ মানে ঘুম না।ঘুমের সাথে চোখের তেমন কোনও সম্পর্ক নেই।ঘুম হচ্ছের মস্তিষ্কের বিশ্রাম,চোখ একটা উপলক্ষ মাত্র। প্রচন্ড জোরে একটা চড়ের আওয়াজ এল।আমি ভয় পেয়ে উঠে বসলাম। গালে হাত দিয়ে বুঝলাম, চড়টা আমার গালেই পড়েছে।ম্যাডাম রাগে রীতিমতো কাঁপছেন।একটা চড় মেরে মিথ্যে বলার প্রতিশোধ নেয়া স্বয়ংসম্পূর্ণ হয় নি,আরেকটার প্রয়োজন ছিল। সকালে হালকা নাস্তা হল।গতকাল ভাল খাওয়া হয়েছিল।আজ হচ্ছে হালকা খাওয়া।এটাই মধ্যবিত্ত পরিবারের নিয়ম।ম্যাডাম মধ্যবিত্ত, আমিও মধ্যবিত্ত।দু মধ্যবিত্ত এক হলে হয় 'নিম্ন মধ্যবিত্ত'।আমার খেতে কোনও সমস্যা হয় নি।আমার কোনও পছন্দের খাবার নেই।খাসির মাংস ছাড়া সবই খাই।ভালো খাওয়া হলে শোকর আলহামদুলিল্লাহ বলে একটা বিড়ি ধরাই। ম্যাডাম আমার পাশে বসে আছেন।সামনে সৈকত,সেখানে বাবা-মা হাত ধরাধরি করে হাঁটছে।মাঝখানে তাদের পিচ্চি মেয়ে।খুবই সুন্দর দৃশ্য। মাঝামাঝি ব্যাপারগুলো সবমসময় সুন্দর হয়।আজও আমাদের দ্বিতীয় দিন,মানে- মাঝের দিন।ম্যাডাম একটু ভয় ভয় গলায় বললেন,গতকাল তুমি এত তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গিয়েছিলে কেন? হা হা হা! আপনার কি খুব ইচ্ছে করছিল।সমস্যা নেই, আজ রাতে হবে ইনশাল্লাহ। একটা দোয়া আছে।দোয়াটা ভুলে গেছি।ওই দোয়া পড়ে পবিত্র কাজ শুরু করতে হয়।হি হি! ম্যাডাম বিরক্ত হয়ে বললেন, গতরাতে একটা বাজে জিনিস দ্যাখেছি। আচ্ছা আচ্ছা। কি দ্যাখেছি জানো? অনুমান করতে পারি। ম্যাডাম খুশি হয়ে বললেন,বলো তো কি? আমি একটু লজ্জিত গলায় বললাম, আমাকে দ্যাখেছেন নিশ্চয়। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দ্যাখেছেন।ঘুমালে আমার কোনও হুঁশ থাকে না,আপনি এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে আমার গোপণকে আবিষ্কার করেছেন।হো হো হো! এত ব্যস্ত হবার কি ছিল? আল্লা ধৈর্যশীল বান্দাদের সঙ্গে আছেন।আপনার তো দ্যাখছি কোনও ধৈর্যই নেই!আল্লা আপনার সঙ্গে নেই।তাহলে আর শুভরাত্রির আগে দোয়া পড়েও কি লাভ।পার্টনার যখন আপনি। আচ্ছা ভাল কথা,আমি যতটুকু জানি আমারটা খারাপ না।এভাবে কাওকে শারীরিক ব্যাপারে লজ্জা দেয়া ভাল না।ব্যক্তিলজ্জা বলে একটা ব্যাপার আছে... ম্যাডাম চোখমুখ পাকিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।চোখ দিয়ে যদি মানুষ খুন করা যেত,তবে এতক্ষণে আমি হাসপাতালের মর্গে থাকতাম। প্রচন্ড জোরে আরেকটা চড়ের আওয়াজ এল।সকালের অপ্রাপ্তিটা মিটে গেল।ম্যাডাম স্বাভাবিক হওয়ার জন্য কিছুক্ষণ সময় নিয়ে বললেন,গতরাতে তোমার ব্যাগে একটা বক্স দ্যাখেছি।সেটা আপনা আপনি বড় হচ্ছে,আবার ছোট হচ্ছে।আমি খুব ভয় পেয়েছি... আমি হাসিমুখে বললাম, সাধারণ ব্যাপার। কণ্ঠে আশ্চর্যভাব এনে তিনি বললেন, এটাকে তুমি সাধারণ বলছো? আপনি চাইলে অসাধারণও বলতে পারেন।ওটা আমি পানাম সিটিতে পেয়েছি।১৮ নং বিল্ডিং -এর দোতলায়।নিচের তলায় একটা না দুটা পোস্টারে লেখা ছিল "ঝুঁকিপূর্ণ ভবন।উপরে উঠা নিষেধ "। আমি নিষেধ অমান্য করে দোতলায় উঠে ছিলাম।ভয়ংকর বাড়ি।জঙ্গল বাড়ি যাকে বলে।ঢুকে ভয় পেয়ে বের হতে গিয়েই হোঁচট খেয়ে পড়ে যাই।এরপর আর কিছু মনে নেই।জ্ঞান ফেরার পর দ্যাখি,আমার বুকের উপর এই বক্স। ভুতুড়ে বক্স। প্রতি শুক্রবার মধ্যরাতে এই বক্স বড় ছোট হয়।অল্প সময়ের জন্যই হয়।যে এই বড় ছোট হওয়া প্রথমে দ্যাখবে তাকে একটা নিয়ম মানতে হয়। ম্যাডাম ঢোক গিলে বললেন,কি নিয়ম? তাকে পরের শুক্রবার সাগর পাড়ে আসতেই হবে।সে না চাইলেও এই বক্স তাকে সাগর পাড়ে নিয়ে আসবেই।সময়টা থাকবে মধ্যরাত।আপনি তখন আপনার মৃত আত্মীয়ের সাথে কথা বলতে পারবেন।সময়- তেরো মিনিট বাইশ সেকেন্ড। আমার সাথেও হয়েছিল।আমি কথা বলেছিলাম। একজন মানুষের সাথে এটা একবারই হয়।তারমানে আপনি মাত্র একজীবনে একবারই মৃত কোনও ব্যক্তির সাক্ষাৎ পাবেন। ম্যাডাম অবিশ্বাসের চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।মৃত ব্যক্তির সাক্ষাৎ কি কখনও সম্ভব কি না, তাই ভাবছেন। সামনে একটা মেয়ে মাইক হাতে মানুষের সাথে কথা বলছে।পেছনে একটা চৌদ্দ বছরের ছেলে ভিডিও করছে।এত কম বয়সে কাজ শিখে গেছে...! বাহ! মেয়েটার নাম জানা গেল।আইনা।মানুষকে অদ্ভুত সব প্রশ্ন করছে।যেমন: মেয়েদেরকে বলছে,কত বছরের মধ্যে ছেলেদের বিয়ে করা উচিত? বাসর রাতে ছেলেরা কি করে? যদি দ্যাখো তোমার স্বামী পরকীয়া করে, তখন কি করবে? ছেলেদেরকেও ঘুরে-ফিরে একই প্রশ্ন করছে।কোনও মানে হয় এসব প্রশ্নের? লোক জড়ো হচ্ছো।তারা খুব সম্ভব এটাই চাচ্ছেন। এখন জনে জনে যে প্রশ্নটা করা হচ্ছে সেটা হচ্ছে,সুযোগ পেলে প্রিয় মানুষটার সাথে কোথায় যেতেন?কেও বলছেন,সুইটজারল্যান্ড,কেও গ্রিস, কেও মালদ্বীপ, কেও আমেরিকা, কেও পুরো ইউরোপ চষে বেড়াতে চান।একজন প্রেমিক প্রেমিকাকে এই প্রশ্ন করামাত্রই প্রেমিকটা বলল,আমরা কক্সবাজারেই আসতে চেয়েছিলাম।কথাটা শুনে প্রেমিকা হাসতে হাসতে প্রেমিকের বুকের উপর এসে পড়ল।যেন প্রমাণ করে দিল,কথা সত্য।আমরা দারুণ আনন্দে আছি। আমি চুপচাপ এসব দ্যাখছি,আর বিরক্ত হচ্ছি।ঘুরে ফিরে আইনা আমার কাছ এল।টেনে টেনে হাসিমুখে প্রশ্ন করল,সুযোগ পেলে প্রিয় মানুষটাকে নিয়ে কোথায় যেতে চান? বিরক্তি সপ্ত আসমানে উঠল যত্তসব আজাইরা প্রশ্ন!দাঁতে দাঁত চেপে চাপা গলায় বললাম, দুটা জায়গায়। কোন দুটা জায়গায় ভাইয়া? আমি চাপা গলায় বললাম, ১.বিছানায় ২.চিপা-চাপায়। রাতে আমার খাওয়া হয় নি।ম্যাডাম রেস্টুরেন্ট থেকে কাচ্চি খেয়ে এসেছেন। আমার জন্য তিনি নাকি আর টাকা খরচ করবেন না।তাহলে কেমনে হবে? আরও একটাদিন আছে।তাহলে কি আরও একদিন আমি না খেয়ে থাকব?ম্যাডাম বিছানায় বসে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছেন।আমি চোখেমুখে অসহায়ত্বের ছাপ এনে বললাম, ক্ষিধা লাগছে। ম্যাডাম নিষ্ঠুর হাসি হেসে বললেন, তা আমি কি করব? তোমার টাকায় তুমি খাও।গতকাল খাইয়েছি।আজ সকালেও খাইয়েছি।আর পারব না।এখন ঘুমিয়ে পড়ো। ম্যাডাম শুয়ে পড়লেন।একজন ক্ষুধার্ত মানুষের সাথে এমন আচরণ না করলেও চলত।আমি আস্তে আস্তে ম্যাডামের কোমরে হাত রাখলাম।ম্যাডাম অবাকচোখে আমার দিকে তাকালেন,কি করছো তুমি? আমি বিশ্রী হাসি হেসে বললাম,আমার ক্ষিধা ছিল।আপনি খেতে দিলেন না,এখন অন্যভাবে ক্ষিধা দূর করব। ম্যাডাম রাগার চেষ্টা করতে করতে বললেন, সরো বলছি, ভাল হচ্ছে না।আমি চিৎকার দিলে তুমি পালাতে পারবে না। আমার হাসিরমাত্রা আরও বেড়ে গেল।আমি হো হো করে হাসতে হাসতে বললাম,ম্যাডাম প্রথমদিন চুপচাপ থাকায় সাহস পেয়ে গেছেন।যদিও মিথ্যে সাহস।আর আপনার চিৎকার কেওই শুনবে না।আপনি গতকাল আমার বক্সটা প্রথম দ্যাখেছিলেন না? ম্যাডাম কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন,তো? ওই বক্সটা আপনি দ্যাখেছেন,তাই আগামী শুক্রবার পর্যন্ত আপনার সাথে অনেক কিছুই হবে।আপনার চিৎকার কেওই শুনবে না।আজ সকালে আইনা মেয়েটাকে মনে আছে? সে প্রায় সবার কাছেই এসেছিল।আমার পাশে আপনি ছিলেন,কিন্তু আপনার কাছে আসে নি,কেন বলেন তো, হা হা হা? আমি ম্যাডাম ম্যাডামের ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছি।তার ঠোঁটটা কাঁপছে।মেয়েদের ঠোঁট দুই কারণে কাঁপে।প্রবল উত্তেজনায় অার ভয়ে।ম্যাডামের ঠোঁট কোন কারণে কাঁপছে তা বলতে পারছি না।ম্যাডামের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে।আমি তার মুখের উপর।তিনি একবার পাশে তাকালেন।তার চোখ জোড়া বড় বড় হয়ে গেল।তাকিয়ে দ্যাখলাম,বক্সটা আবার বড় হতে শুরু করেছে।তাজ্জব লাগল।শুক্রবার ছাড়া তো বক্স বড় হবার কথা না।ম্যাডাম আমাকে খুব শক্তভাবে জড়িয়ে ধরলেন। ------------------------ ম্যাডাম খুব শক্তকরে আমাকে জড়িয়ে ধরে আছেন।এই হাত ছাড়ানোর শক্তি আমার থাকলেও, ক্ষমতা নেই।ম্যাডামের গাল চোখের জলে ভিজে যাচ্ছে। তার গাল আমার গালের সাথে মিশে যাচ্ছে। তিনি ব্যাকুল হয়ে আমার কাছে ভালবাসা চাচ্ছেন। চারপাশে অলৌকিক কিছু ঘটলে একজন মানুষ আরেকজন মানুষের কাছে ভালবাসাই চায়।মানুষটা 'অমানুষ' হলেও।কারণ,অমানুষকে জন্ম তো একজন মানুষই দিয়েছেন।আমি আলতো করে তার গালে একটা চুমু খেলাম।ম্যাডাম শিহরে উঠলেন।এই শিহরণ দুটা কারণে হতে পারে।অলৌকিকতার ভয়ে বা গোপণ ভালবাসায়।আমি ভালবাসার কাঙাল, যৌনতার না।খুব সম্ভব ম্যাডামও তাই। যে সেক্সে ভালবাসা নেই সেটা সেক্স না,সেটা রেইপ (Rape)। এই পৃথিবীতে দু'ধরণের প্রেমিক আছে।একধরণের প্রেমিক প্রেম করার জন্য সেক্স করে,এরা সত্য প্রেমিক। আর রাইফেলের নলে গোলাপ নিয়ে আসা মিছেমিছি প্রেমিকরা সেক্স করার জন্য প্রেম করে। সকাল সকাল ঘুম ভাঙল।সকালের সমুদ্র দ্যাখার এক অন্যরকম মজা আছে।এই মজা জীবনে একবার হলেও দ্যাখা উচিত। আমি এই মজা থেকে মায়ার বাঁধনের কারণে বা অকারণে বঞ্চিত।ম্যাডাম এখনও ঘুমিয়ে আছেন।বেচারি সারারাত ভয়ে ভয়ে ঘুমিয়েছে।একটা মানুষের সবচে' আনন্দের ঘুম খুব সম্ভব কান্না করার পর আর ভয়ের পর হয়ে থাকে। সকালে ভালো নাস্তা হলো।ম্যাডাম আমাকে জোর করে খাসীর পায়া দিয়ে নান খাইয়েছেন।গতরাতের জড়িয়ে ধরা নিয়ে কোনও প্রশ্ন তুললেন না।খুব সম্ভব ব্যাপারটা তার ভাল লেগেছে। ম্যাডাম অবিবাহিতা।ভালবাসার সাথে তার যোগাযোগ কম।সেই ভালবাসার কতটুকু আমি গতরাতের চুমুতে দিতে পেরেছি -জানি না।তবে একটা ব্যাপার ধরতে পেরেছি।আমার মায়া হয়েছিল বলেই আমি তার গালে চুমু খেয়েছি।আমাদের ভাল লাগে বলেই আমরা বাচ্চাকে কোলে নিই,আমাদের ভাল লাগে বলেই আমরা প্রেম করি।সবকিছুতে মিশে আছে এক 'মায়াময় স্বার্থপরতা'।আমি তোমাকে ভালবাসি; আমারই জন্য। আচ্ছা সৃষ্টিকর্তাও কি আমাদের সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র তাঁরই ইবাদতের জন্য...? প্রকৃতিতে সন্ধ্যা নামছে।সব সন্ধ্যা মন বিষণ্ণ করে না।এই সন্ধ্যা আমার মনটা ভাল করে দিচ্ছে। ম্যাডাম আমার হাতে হাত রেখে সমুদ্র তীরে হাঁটছেন। ম্যাডাম হাসিমুখে বললেন,কাল তো চলে যাব। হুমম। তোমার কেমন লাগল? ভালই। এত সংক্ষিপ্ত অ্যানসার দিবে না।সংক্ষিপ্ত অ্যানসার মানুষ ব্যস্ত থাকলে দেয়।নাহয়, কারও সাথে কথা বলতে ভাল না লাগলে দেয়।তোমার কি আমার সাথে কথা বলতে ভাল্লাচ্ছেনা? লাগছে। ম্যাডাম চুপ হয়ে গেল।আমি আবার সংক্ষিপ্ত অ্যানসার দিলাম।আজ সকাল থেকেই কোনও কারণে চুপ হয়ে আছি।আয়নার ওপাশের মানুষটাকে চিনতে পারছি না,আবার পারছিও।মনে হচ্ছে,এই অবস্থা বেশীক্ষণ থাকবে না।একটু পরেই আমি ফটফট করে কথা বলতে শুরু করব।আর ম্যাডাম হাত ছাড়িয়ে বিরক্ত মুখে বলবেন, চুপ থাকলে ভাল লাগে। আমি হো হো করে হেসে বলব,এটা জাহাঙ্গীরনগর ভার্সিটি না ম্যাডাম,এটা কক্সবাজার। পাশের রুম থেকে গান আসছে।আপত্তিকর গান,তোকে রডে বসিয়ে বেল বাজাবো...। তালে তালে বরগুনার ছেলেগুলাও বলছে,জোরে বাজাইও মামু,যেন আমরা কক্সবাজার থেকেই শুনতে পাই।আবার সেই আগের গান,তুমি দিও নাকো বাসর ঘরের বাত্তি নিভাইয়া,আমি বদ্ধ ঘরের অন্ধকারে যাব মরিয়া... ' একটা ছেলে বলে উঠল,লাইট সব নিভাইয়া দে,আজ লোডশেডিং হোক।অন্ধকারে যে মেয়ে মরে,তার বাঁচারওবা কি দরকার? গর্তও তো অন্ধকার... অন্য ছেলেগুলো হো হো করে হেসে উঠল।একের পর এক অদ্ভুত গান ভেসে আসছে,আস্তে আস্তে চুমু দিও,কামড় দিও না... আবার সংগীত বিশ্লেষক একজন বরগুনার ভদ্রলোক বলে উঠলেন,চুমুর সময় কামড় দিতেই পারে,এটা নিয়েও গান বানাতে হবে? আর আস্তে আস্তে দিবে এটা কেমনতর কথা হলো? উত্তেজনার সাথে হার্টবিটের গভীর সম্পর্ক আছে।হার্টবিট বাড়লে উত্তেজনাও বাড়বে।উত্তেজনা বাড়লে একটু জোরে জোরে চুমু খাবে,তখন আলতো করে একটা কামড় দিলে কি মহাভারত সমস্যা?তোকে কামড় দিলে তুইও একটা কামড় বসিয়ে দেয়।মামলা ডিসমিস! এটা নিয়েও গান বানাতে হবে...?আরেকটা ছাড়। আরেকটা ছাড়া হল,তুমি মিসকল দিও,আমি কলব্যাক করব,তুমি এসএমএস পাঠালে আমি রিপ্লাই পাঠাব,ও ও ও...আরেকজন সংগীত বিশ্লেষক গম্ভীর গলায় বললেন,মিসকল দিলে কলব্যাক করবে,তারমানে ফোন করলে রিসিভ করবে না -এই তো?এটা সরাসরি বলে দিলেই হলো!আজব!প্রেমিকার ফোনে টাকা না থাকলে বিকাশ থেকে রিচার্জ করে দিলেই হয়।কলব্যাকই কেন করতে হবে? 'ম্যাজিক মা-মণি আমি ম্যাজিক মা-মণি...'একজন চরম ক্ষেপে উঠে বলল,এটা আবার কেমনতর গান? মা-মণি মানে মা,তাঁর সাথে ম্যাজিকের কি রিলেশন ঠিক বুঝলাম না।মা হচ্ছে মা,আমার জন্ম দুঃখিনী না,তাঁর নামের আগে 'ম্যাজিক' শব্দটা যোগ করে কি মাতৃত্বকে হেয় করা হচ্ছে না? দশমাস দশদিন যাঁর পেটে ছিলাম,তাঁর পেটটাকে কি নিছক ম্যাজিক বলে গুরুত্বহীন করার একটা অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে? প্রশাসন কোথায়, তারা আজ চুপ কেন? কেন কেও কিছু বলছে না...?তাহলে কয়দিন পর যদি আকাশ থেকে একটা সন্তান জন্ম গ্রহণ করে এসে চোখে কালো চশমা লাগিয়ে বলে,আমি ম্যাজিক বাবু।তখন কি জবাব দেব আমরা, কি জবাব দেবে প্রশাসন? কিইবা জবাব দেবে তখন এই ম্যাজিক মা-মণি? অবক্ষয়! গান বন্ধ হয়ে গেল।বুঝলাম, তারা পাঁচজনই হাসি-খুশি ছেলে না।কিছু সিরিয়াস মাইন্ডের ছেলেও আছে। ম্যাডাম আমার পাশে বসে আছেন।এতক্ষণ চরম বিরক্ত ছিলেন,গান বন্ধ হওয়ার পর তার মনে হল, জীবন তার কাছে আবার ফিরে এসেছে।ম্যাডাম হাসিমুখে বললেন,আজরাতে কোনও সিগারেট ধরাবে না। কেন? রাতে এই উৎকট গন্ধটা রুমের পরিবেশ নষ্ট করে। আচ্ছা। আচ্ছা না,বলো,মাদার প্রমিস ধরাবো না। মাদার প্রমিস বলতে পারবো না,ঝামেলা আছে। আচ্ছা তাহলে বলবে,তিন সত্যি ধরাবো না। তিন সত্যি ধরাবো না। একগাল হেসে ম্যাডাম বললেন,এসে পাশে বস। আমি এসে তার পাশে বসলাম।কাল আমরা কক্সবাজার ছেড়ে চলে যাব,ম্যাডাম ইচ্ছে করলে আজ রাত বারোটা এক মিনিটেও চলে যেতে পারেন।সুন্দরীদের এই একটা সমস্যা। তারা শেষ মুহূর্তে আবেগ নিয়ে আনে।মিথ্যা আবেগ! আমি ঘুমানোর প্রস্তুতি নিতে নিতে বললাম, কাল সকাল সকাল চলে যাব,এখন ঘুমান। ম্যাডাম বললেন, আজ সারারাত গল্প করি? না। খুব কষ্ট হয়েছিল এই একশব্দের অক্ষরটা উচ্চারণ করতে।মনে হয়েছিল,সারাটা জীবন যদি এই মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকা যেত,তবে পাশের রুমের বরগুনার ভদ্র ছেলেগুলোকে সহ্য করে হলেও ম্যাডামের সাথে সারারাত গল্প করতাম। ম্যাডাম হাসিমুখে বললেন,তুমি কি আমার উপর রাগ করেছো? না তো। কালকে কিন্তু আমি যাচ্ছি না। আমি অবাক হয়ে বললাম, কেন? ম্যাডাম একগাল হেসে বললেন, আগামী শুক্রবার পর্যন্ত এখানেই থাকব।দ্যাখি তোমার বক্সের কেরামতি কতটুকু সত্য...!এখানে বসে মৃত ব্যক্তির সাথে কি কথা বলব তা ঠিক করে রাখব। ঢাকায় গেলে তো আবার কাজের চাপে গোছানোই হবে না, কি কথা বলব।...তুমি কি আমার সাথে থাকবে...? আমি হতাশ গলায় বললাম, না। ..... .........(চলবে )...........


Post a Comment

0 Comments