ম্যাডাম

Ads Inside Post

ম্যাডাম

পর্ব---৪র্থ ম্যাডাম আমার দিকে অবাক চোখে তাকালেন।আমিই তো সেদিন তার সাথে কক্সবাজার আসার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিলাম। আজ আমার এমন পরিবর্তনের কারণটা তিনি ধরতে পারছেন না।তার চোখে জল চলে আসছে,আমি ঘুমানোর ব্যবস্থা করছি।ম্যাডাম ছলছল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,শেষ একটা রিকুয়েস্ট রাখবে? বিরক্ত মুখে বললাম,বলেন। আমি তোমাকে দশটা প্রশ্ন করেছিলাম। তুমি পেরেছ, তাই তোমার দুটা ইচ্ছে পূরণ হয়েছে... আমি বিরক্ত গলায় বললাম,চুমুটা তো দেয়া হয় নি। গালে তো দিয়েছো,আর কি! তাছাড়া তুমি জোর করলে আমি কি বারণ করতে পারতাম...? যে ভুতুড়ে বক্সটা দ্যাখালে,কেও তো আমার চিৎকার শুনবে না,নাকি? হুমম। ম্যাডাম একটু সময় নিয়ে বললেন,এবার তুমি আমাকে দশটা প্রশ্ন করো।আমি যদি একটাও ভুল উত্তর দিই,তাহলে কাল সকালেই তুমি চলে যাবে।আর যদি সবগুলোর উত্তর দিতে পারি,তাহলে তোমাকে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত আমার সাথে থাকতে হবে।আমি সেই মধ্যরাতে খুব প্রিয় একজন মৃত মানুষের সাথে কথা বলব। তুমি আমার এই দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জে রাজি? অবহেলা থেকেই ভালবাসা আসে।আমি ম্যাডামকে অবহেলা করা শুরু করার পর থেকেই তিনি আমার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছেন।আমার দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ নেয়ার কোনও ইচ্ছেই নেই।অসম বয়সের প্রেম ভাল না।ছাত্র ম্যাডামকে বিয়ে করেছে, আর সমাজ সেটাকে ভালভাবে দ্যাখবে -এমনটা কখনওই ঘটে না।কিন্তু স্যার ছাত্রীকে বিয়ে করে আনলে সমাজ বাহবা জানিয়ে বলে,তাহির স্যার তার ছাত্রীকে বিয়ে করেছেন,বড়ই ভাল কাজ করেছেন। অতি সজ্জন ব্যক্তি। শুনেছি ছাত্রীও নাকি মেধাবী।এটাই ভাল।মেধাবীরা পাশাপাশি থাকলেই দেশ এগুবে। আমি হতাশ গলায় বললাম,রাজি। ম্যাডামের দু'চোখ ঝিলিক দিয়ে উঠল।বৃষ্টি হওয়ার পর ভেজা পাতায় সূর্যের কিরণ পড়লে যেমন ঝিলিক দেয়,ঠিক তেমনি।ম্যাডাম এতক্ষণ কাঁদছিলেন।আমার জন্য কেও কখনও কাঁদে না।ম্যাডামও আমাকে ভেবে নিজের জন্যই কেঁদেছেন। ম্যাডাম বত্রিশটা দাঁত বের করে বললেন,প্রশ্ন শুরু কর। আমি নিরস গলায় বললাম,প্রথম প্রশ্ন ; পৃথিবীতে যত পিঁপড়া আছে, তাদের সবাইকে পাল্লায় নিয়ে মাপলে তাদের যে ওজন হবে, তার পরিমাণ কত? ম্যাডাম হাসিমুখে বললেন,তার পরিমাণ, পৃথিবীতে একটা পূর্ণ বয়স্ক মানুষের ওজনের সমান । আমি থতমত খেয়ে গেলাম।এত দ্রুত অ্যানসার তিনি দিতে পারবেন,তা জানা ছিল না।কঠিন প্রশ্ন করতে হবে।আমার আর এক সপ্তাহ এখানে থাকার কোনও মানেই হয় না।'কারেক্ট! দ্বিতীয় প্রশ্ন ;কোথায় একটা রেস্টুরেন্ট আছে, যেখানে খাবারের কোনও নির্দিষ্ট মূল্য তালিকা নেই?' ম্যাডাম একটু ধাঁধায় পড়ে গেলেন।ছাত্র ম্যাডামের ভাইভা নিচ্ছে। এমতাবস্থায় ম্যাডামের কি ব্যাকবেঞ্চারদের মতো মাথা চুলকানো সাজে...? কিন্তু ম্যাডাম মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললেন,কোরিয়ার সিউলে। কারেক্ট। তৃতীয় প্রশ্ন ;মানুষ এবং হাঁসের মধ্যে একটি ভালবাসাময় পার্থক্য বল? ম্যাডাম অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালেন।এই প্রথম আমি তাকে 'তুমি' বলেছি।ব্যাপারটাতে তিনি খুশিও হননি, কষ্টও পান নি।কারণ,তিনি খুব সম্ভব ধরে ফেলেছেন,আমি শুধুমাত্র দশটা প্রশ্নের জন্যই তাকে ছাত্রী বানিয়ে 'তুমি' বলছি।এই ডাকের সাথে ভালবাসার কোন যোগসূত্র নেই।ম্যাডাম শান্ত গলায় বললেন,হাঁস বা রাজহাঁসের শুধুমাত্র একটাই 'জীবন সাথী' থাকে সারা জীবনে। যদি সেই জীবন সাথী মারা যায়, তবে তারা ব্রোকেন হার্ট নিয়ে মারা যায়। আর অন্য কোনও হাঁসকে জীবন সাথী করেনা।কিন্তু স্ত্রী মারা যাওয়ার কিছুদিনের ভিতরেই একজন স্বামী আনন্দঘন পরিবেশে "পাত্রী চাই" বিজ্ঞাপন দেন। হয়েছে।চতুর্থ প্রশ্ন ;-পৃথিবীর প্রথম নভোচারী কে? ম্যাডাম হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ে যাবে এমন ভান করে বললেন,একটা কুত্তা। আমি সরুচোখে তার দিকে তাকিয়ে বিরক্ত গলায় বললাম, সুন্দরকরে বল।কুকুর তিনশব্দের,একে দু'শব্দের মধ্যে নিয়ে আসার কোনও মানে হয়? তিনি আবার তার ফকফকা বত্রিশটা দাঁত বের করে বললেন,কুত্তাও তিন শব্দের।ত+ত=ত্ত।হা হা হা!সময়ের পুনরাবৃত্তি। আমি আড়চোখে তার দিকে তাকিয়ে বললাম,হয়েছে।পঞ্চম প্রশ্ন ; মেয়েরা বছরে প্রায় ৩০ থেকে ৬৪ বার কান্না-কাটি করে আর সেখানে ছেলেরা কতবার কান্না-কাটি করে? ম্যাডাম ভ্রু কুঁচকে বললেন,এ আবার কেমন প্রশ্ন! আচ্ছা দাঁড়াও ভাবছি।...অনেক পরিসংখ্যান আছে এ নিয়ে।তবে সবচে' সঠিকটা হচ্ছে, বছরে ছেলেরা প্রায় ০৬ থেকে ১৭ বার কান্না করে।ফালতু সমীকরণ। ছেলেরাই বানিয়েছে এটা,নিজেদেরকে বড় প্রমাণ করতে। আমি সামান্য অপমানবোধ করে বললাম,উত্তর সঠিক।ষষ্ঠ প্রশ্ন; কোনও নারী যদি কখনও বলে যে তার হার্ট নেই, তাহলে বিশ্বাস করবে না।কেন? ম্যাডাম হাসতে হাসতে বললেন,কারণ মহিলাদের মৃত্যুর প্রধান কারণ হচ্ছে,হৃদরোগ। আমি মাথা নেড়ে বললাম,রাইট... ম্যাডাম হাসিমুখে বিরক্ত হয়ে বললেন,নারী সংক্রান্ত অদ্ভুত প্রশ্নগুলো কি না করলেই নয়? আমি বিরক্ত চোখে তার দিকে তাকালাম।গরম গলায় বললাম, প্রশ্নকর্তা যেখান থেকে খুশি প্রশ্ন করবে,এতে উত্তরদাতার অভিযোগ তোলার কোনও এখতিয়ার নেই। ম্যাডাম আমার দিকে তাকিয়ে তাজ্জব হয়ে গেলেন। আমাকে চিনতে তার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি রাগী রাগী গলায় বললাম,সপ্তম প্রশ্ন ; মোনালিসা’র কোন ভ্রু ছিল না। কেন? ম্যাডাম কিছুক্ষণ ভেবে আমতা আমতা করে বললেন,কারণ রেঁনেসার যুগে ভ্রু শেভ করে ফেলাটাই ছিল তখনকার ফ্যাশন। ...আচ্ছা আমার চেহারা কি মোনালিসার চে' খারাপ? আমি তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললাম, অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করে বিরক্ত করবে না।এতে প্রশ্নকর্তার Concentration নষ্ট হয়।মনে থাকবে...? ম্যাডাম চুপসে গিয়ে ক্ষীণকণ্ঠে বললেন, থাকবে। সপ্তম প্রশ্নের উত্তর কারেক্ট হয়েছে।এবার অষ্টম প্রশ্ন ;ফেসবুকে একটা আইডি কখনওই ব্লক করা সম্ভব না।সেটা কার আইডি? ম্যাডাম দ্রুত উত্তর দিলেন,মার্ক জাকারবার্গের আইডি।আচ্ছা আমাদের নিজের আইডিও তো আমরা কখনও ব্লক করতে পারি না। আমি গম্ভীরকণ্ঠে বললাম, নিজের আইডি চাইলে অফ করে দেয়া যায়।নবম প্রশ্ন ;আমরা প্রায়ই বলে থাকি যে গর্ভবতী মায়েদের দ্যাখতে বেশ উজ্জ্বল লাগছে, বা খুশীতে জ্বলজ্বল করছে। এর কারণ কি? ম্যাডাম হেসে উঠলেন।পরিচিত হাসি।এই হাসি দ্যাখলে মনে হয়,তার খুব পরিচিত একটা প্রশ্ন করা হয়েছে,যেন তিনি একবার প্রেগন্যান্ট হয়েছিলেন!ম্যাডাম ভাষণের মতো করে বললেন,এর কারণ হচ্ছে, এই সময়ে শরীরে রক্তের পরিমাণ প্রায় ৫০% বেড়ে যায়, এই বাড়তি রক্ত ত্বকে প্রবাহিত হওয়ার সময় ত্বককে টানটান করে এবং আভাময় করে। এছাড়াও হরমোন নিঃস্বরণের কারণে ত্বকের তেল গ্রন্থিগুলো বেশী কাজ করে এবং ত্বককে মসৃণ এবং উজ্জ্বল করে। তাই এই দুইয়ের সমন্বয়ে এই সময়ে মায়েদের মনে হয়, তারা উজ্বলতায় ঝলমল করছেন।এবং আমাদেরও তাই মনে হয়। এ কি বিপদ! ম্যাডাম দ্যাখি সবগুলো প্রশ্নের উত্তর পেরে গেলেন।খুব কড়া একটা প্রশ্ন করে শেষ করতে হবে। এখানে আরও এক সপ্তাহ থাকার কোনও ইচ্ছেই আমার নেই।সমাজ খুব খারাপ জিনিস।আমি অনেকক্ষণ ধরে ভাবলাম, ম্যডাম শুধু চুপ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন,কিছুই বলছেন না।তার বোধহয় আমার দিকে তাকিয়ে থাকেতেই বেশ লাগছে।এমনকরে আর কতক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারবেন,তা নির্ভর করছে শেষ প্রশ্নের উপর।আমি সময় নিয়ে বললাম,শেষ প্রশ্ন ;গাঁজাবাবা... ম্যাডাম শুধরে দিয়ে বললেন,ওর নাম তো তপু। আমি কড়া গলায় বললাম, তোমাকে নাম শুধরাতে বলেছি? না। তো শুধরিয়ে বিরক্ত করলে কেন? ম্যাডামের মন খারাপ হয়ে গেল।তিনি মাথানিচু করে বললেন,ভুল হয়ে গেছে। ক্ষমাপ্রার্থনা করছি। ক্ষমা করা হলো।শেষ প্রশ্ন ; গাঁজাবাবা আমার এক বার্থডে-তে আমাকে একটা কবিতা গিফট করেছিল।কবিতাটা কি? ম্যাডাম ভয়ংকর রকমের অবাক হয়ে গেলেন।'তোমার বন্ধু তোমাকে কি গিফট করেছিল,তা আমি কি করে জানব!আজব!আমাকে গিফট করেছিল নাকি...?' আমিও খুব ভয়ংকর রকমের বিরক্ত হয়ে বললাম,প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন করবে না।প্রশ্ন করা হয়েছে,উত্তর দাও। ম্যাডাম অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। তাকে খুব জটিল একটা প্রশ্ন করা হয়েছে।খুব সম্ভব, এই প্রশ্নের উত্তর তার জানা নেই। --------------------------- ম্যাডাম হতাশ চোখে জানালার দিকে তাকালেন।যেন জানালাতেই গাঁজাবাবার কবিতাটা ঝুলানো আছে।আমি ঘুমানোর আয়োজন করছি,এখনই ঘুমিয়ে পড়বো কি না, তা নিয়ে দায়িত্ব সংক্রান্ত সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি।একজন প্রশ্নকর্তা উত্তর শুনবে তারপর তার কার্যসিদ্ধি হবে,এর আগে না।ম্যাডাম এখনও উত্তর দেন নি। ম্যাডাম আমার হাত ধরে করুণ গলায় বললেন, তুমি কক্সবাজার থাকতে চাচ্ছো না -এই তো? তুমি উত্তর দাও। তুমি কঠিন প্রশ্ন করলে এক কথা ছিল, তমি করেছো অবান্তর প্রশ্ন।এই প্রশ্নের উত্তর খুব সম্ভব তুমি ছাড়া আর কেওই জানে না। আমি বালিশে মাথা রাখলাম। নিজের করা প্রশ্ন নিয়ে বহাস করার কোনও ইচ্ছেই আমার নেই।ম্যাডাম আমার দিকে চেয়ে আছেন।তাকে জটিল প্রশ্ন করা হয় নি,কড়া প্রশ্ন করা হয়েছে।জটিল প্রশ্নের উত্তরগুলো সবসময় সহজ হয়।কড়া প্রশ্নের উত্তরগুলোর এ্যাকশনও কড়া।কড়াকরে এককাপ চা খেলে যেমন অনেকের ঘুম দূর হয়ে যায়,তেমনি কড়াকরে এককাপ চা খাওয়ার পর তা কারও ক্ষেত্রে স্লিপিং ট্যাবলেটের মতো কাজ করে। আমি ঘুমিয়ে পড়ব কি না, ভাবছি। খুব ঘুম আসছে।উত্তরদাতার মুখ থেকে সকালে উত্তরটা শুনে নিলেই হলো।না হলো না,এতে দায়িত্বের চরম অবহেলা হয়।রাবারের ছেঁড়া স্যান্ডেল দিয়ে দুই গালে আটটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়ার চাইতেও কঠিন অপমান হয়। আমি ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে বিরক্ত মুখে বললাম, উত্তর? ম্যাডামের চোখে জল চলে আসছে। মনে হচ্ছে এখন তাকে জড়িয়ে ধরে 'আমি আছি তো' না বললে তিনি ঝরঝর করে বৃষ্টির মতো কেঁদে ফেলবেন।ম্যাডাম চোখে জল নিয়ে বললেন,আমি জানি না। আমি স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম।একগাল হেসে বললাম, উত্তরটা আপনি জানতেনই। ম্যাডাম ভেজা চোখে অবাক হয়ে বললেন,তাই? হুমম। কবিতাটা কি? এ কেমন কান্না তোমার আমায় যখন আদর করো... আমি শুয়ে পড়লাম।ম্যাডাম এখনও আমার দিকে তাকিয়ে আছেন,তার খুব সম্ভব নিজের জন্য খুব রাগ হচ্ছে, সাথে মায়াও হচ্ছে।এত সহজ প্রশ্ন ছিল,অথচ তার মাথাতেই আসল না!আসলে আমাদের জীবনটাও ঠিক এমনই।এতই সহজ যে আমরা তা দ্যাখতে পাই না।আমরা শুধু দ্যাখি জটিল জিনিসগুলো,আর ভাবতে থাকি,জীবন কি কঠিন!আলোকবিজ্ঞান বলছে,মানুষের চোখের ০.২৫ সেন্টিমিটারের ভিতরের কোনও বস্ত মানুষ দ্যাখতে পায় না।মানুষ দ্যাখে ০.২৫ সে. এর দূরের বস্তুকে।তবে কি আমাদের ০.২৫ সে. এর ভেতরের বস্তুগুলো সারাজীবন অদ্যাখাই থেকে যাবে...? খুব সম্ভব, না।কারণ মানুষের চোখ দুটা না।তাদের আরও চোখ আছে।সেগুলো কল্পনার চোখ।দ্যাখা আর তাকানো এক নয়।মাছির চোখে থাকে প্রায় ২৮ হাজার ক্ষুদ্রাকৃতির চোখ বা ওমাটিডিয়া। কিন্তু মাছির কোনও কল্পনার চোখ নেই।কল্পনার চোখ থাকলে সে ডাস্টবিনে ভিড় জমাতো না,রাজপ্রসাদ বানানোর চেষ্টা করতো। ঘুম থেকে উঠে দ্যাখি ম্যাডাম বসে আছেন।তার চোখ ফোলা।খুব সম্ভব তিনি সারারাত কেঁদেছেন,আর নাহয় তো,অনেক রাত পর্যন্ত কেঁদে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন।এ দু'অবস্থায়ই চোখ একইরকম ফোলা থাকে,পার্থক্য-টা ঠিক ধরা যায় না। আমি কাপড় গুছিয়ে ব্যাগে ভরছি।আমার উদ্দেশ্য হাসিল হয়েছে,ইচ্ছেও পূরণ হয়েছে।আর এখানে থাকার কোনও প্রয়োজন দ্যাখি না।পাশের রুমের বরগুনার ছেলেগুলো জোরে জোরে গান ছেড়েছে।ম্যাডাম তাতে মোটেও বিরক্ত হচ্ছেন না।তার সব বিরক্তি এখন শুধু আমারই উপর। ভালো নাস্তা হলো।আমারই হলো শুধু,ম্যাডাম কিছু খান নি।এটা ঠিক না।মানুষের উপর রাগ করা যায়,খাদ্য-বস্তুর সাথে আবার কিসের রাগ -এই কথা কেও বুঝতে চায় না।বুঝতে না চাওয়ার পেছনেও যৌক্তিক কারণ আছে।আমাদের যখন মন খারাপ থাকে,আমরা তখন খাওয়া দাওয়া কম করি।ডিপ্রেশনের বাংলা হলো 'মন খারাপ'।ডিপ্রেশন শরীরের কিছু হরমোন বিনষ্ট করে, যেসব হরমোন আমাদের প্রফুল্ল রাখতে সহায়তা করে।ঠিক এই কারণেই অনেক টেনশনে থাকলে খাওয়া দাওয়া কমে যাওয়া বড় কোনও ব্যাপার নয়। ম্যাডাম এখনও আমার সাথে একটি কথাও বলেন নি।আমাদের পাশের টেবিলে বরগুনার ভদ্র ছেলেগুলো খেতে বসেছে। আমাদের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হেসে বলল,গুড মর্নিং।রাতে ভাল ঘুম হয়েছে? আমি কিছু বলার আগেই ম্যাডাম বললেন,হয়েছে। ছেলেগুলেকে কষে একটা চড় লাগানোর বাসনা অতিকষ্টে দমন করলাম।নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করতে করতে বললাম, আজ শেষদিন,প্লিজ ঝামেলা করো না। ছেলেগুলো উৎসবমুখর পরিবেশে খাওয়া দাওয়া করছে।আর আমাদের টেবিলে বিরাজ করছে কবরের নির্জনতা, অথচ আমি কোলাহল প্রিয় ছেলে।আমি ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করতে করতে বললাম,ভাল থাকবেন। তিনি অন্যদিকে তাকিয়ে আছেন।আমার প্রশ্নটা তার অন্তরে কোনও ভাবান্তর সৃষ্টি করতে পেরেছে কি না, জানি না।তবে তার মুখ এখনও ভাবলেশহীন। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তিনি বললেন,জোর করে কি আর ভাল থাকা যায়...? আমি চলে যাচ্ছি ম্যাডামকে একা ফেলে।কিন্তু কি আশ্চর্য! আমি তো তাকে একা রেখে নিজেও একা হয়ে যাচ্ছি...! আমি ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে বললাম, আপনাকে... তুমি করে বললে কিছু মনে করব না। তোমাকে আমি নিয়মিত ফোন দিব। তার কোনও প্রয়োজন নেই। অবশ্যই আছে।এ পৃথিবীতে সবকিছুরই প্রয়োজন আছে।ছেঁড়া জুতাটাও মুচির কাছে গিয়ে সম্পূর্ণ হয়ে আসে।তাতে আমাদের যেমন নূতন জুতা কেনার টাকা বাঁচে,তেমনি মুচিও সে টাকা দিয়ে তার ছোট ছেলেকে একটা লাল শার্ট কিনে দেন। ফিলোসফি বন্ধ। আচ্ছা বন্ধ। তবে আমি তোমাকে ফোন দিব। আমি তোমার ফোন ধরব না। কেন, জানতে পারি? ম্যাডাম রেগে রেগে বললেন,এগুলোকে আমি বলি, আলগা পিরীত!তুমি থাকলে ভাল হতো।তুমি থাকলে না।আমাকে এই কক্সবাজারে একা এক সপ্তাহের জন্য ফেলে যাচ্ছো।পাশের রুমে তোমার মতো ছেলেপেলে আছে।আর আমি একা।সমস্যাটা ধরতে পারছো? পারছি।তবে মানুষের সবচে' বড় সমস্যা হচ্ছে,মানুষ সমস্যা ক্রিয়েট করে।তুমি রুম চ্যাঞ্জ করে ফেল।আর প্রবলেম হলে সিকিউরিটিকে ফোন দিবে।মামলা ডিসমিস!মানুষ ভয় পায়, কারণ সে ভীতু -এজন্য না।মানুষ ভয় পায় কারণ সে ভাবতে শুরু করে, সাহসী হওয়ার মতো পর্যাপ্ত সাহস তার ভেতরে নেই। কিন্তু সে জানে না,ভয় না পাওয়া সাহসিকতার পরিচয় না।কাজটা ভয়ংকর জেনেও তা শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়ার নামই, সাহসিকতা।আর হ্যাঁ,বক্সটা আমি রেখে গেলাম। ম্যাডাম চোখ কপালে তুলে বললেন,না,ওটা তুমি নিয়ে যাও। আমি হেসে বললাম, ভয় পাবে না।বক্সটা তোমাকে কিছু করবে না।বরং উপকারই করবে।দ্যাখে নিয়ো। আমি বক্স রেখে চলে আসছি।ম্যাডাম ভীতচোখে বক্সটার দিকে তাকিয়ে আছেন।এই বিদায়বেলায় ম্যাডাম আমাকে অনেকক্ষণ ধরে জড়িয়ে ধরে রাখবেন ভেবেছিলাম।কিন্তু তিনি বক্সটার দিকে বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছেন।ভয় পেলে ভালবাসা বেড়ে যাবার কথা।সেক্ষেত্রে তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলার কথা।কিন্তু এসবের কিছুই ঘটলো না।আমি খুব অবহেলিত হয়ে বিদায় নিলাম। ম্যাডাম পেছন থেকে ডেকে বললেন, ইমু...এই... আমি হাসিমুখে পেছনের দিকে তাকালাম। শেষ সময়ে হলেও একটু ভালবাসার খুব দরকার। তিনি বক্সের দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন,তুমি কি সত্যিই চলে যাচ্ছো...? ..... .........(চলবে )...........


Post a Comment

0 Comments