|
golpo-ghar.blogspot.com
|
মৌ রেস্টুরেন্ট বসে আছে ৩০ মিনিট যাবত। বাবা-মা জবরদস্তি করে পাঠালো একটা ছেলের সাথে দেখা করার জন্য। যে ছেলের সময় জ্ঞান নাই সে কিনা আবার বিয়ে করবে ভাবতে অবাক লাগে। রেস্টুরেন্ট থেকে উঠে বের হয়ে যাবে দরজার সামনে গিয়ে পরে গেলো। ব্যথা টা পেয়ে মৌ উচ্চস্বরে..
- অন্ধ নাকি, চোখ কি কপালে নিয়ে হাঁটেন?
- সরি ম্যাম, আমি একটু জলদির মধ্যে ছিলাম তাই..
- জলদির মধ্যে থাকলে কাউকে মেরে চলে যেতে হবে?
- আরে আপনি ভুল বুজছেন আমি কেন আপনাকে মারতে যাবো আকস্মিকভাবে একটা ঘটনা ঘটে গেছে এইখানে তো আমার কিছুই করার ছিলো না।
- কিছু করার ছিলো না অন্তত সরি বলতে পারতেন?
- আপনি তো আমাকে সরি বলার সুযোগ টা দিলেন না।
- লাগবে না আপনার সরি।
মৌ নিচ থেকে উঠে বাসায় ফোন দিয়ে রাগান্বিত স্বরে বলল..
- যে ছেলের সময় জ্ঞান নেই তোমরা আমাকে ওই ছেলের সাথে দেখা করতে বলেছ।
- মা রাগারাগি করিস না একটু অপেক্ষা কর চলে আসবে।
- কিছু যদি মনে না করেন আপনার নাম কি মৌ?
- মা তোমাকে একটু পর কল দিচ্ছি।
- ওকে।
- কি যানি বলছিলেন?
- বলেছি আপনার নাম কি মৌ?
- হ্যাঁ, কিন্তু আপনি জানেন কি করে?
- কারন আপনি যার সাথে দেখা করতে এসেছেন উনি টাই আমি।
- ওহ ভাই মুজে মারো,,ওহ আল্লাহ, এই ছেলের দেখি অনেক সমস্যা।
- কিছু বললেন?
- নাহ কিছু বলি নাই,আমি একটা মেয়ে হয়ে এখানে বসে আছি ১ ঘন্টার উপর আপনার এইমাত্র আসা তর উপর এসে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলেন।
- সবকিছুর জন্য সরি।
- রাখেন আপনার সরি আপনার কাছে। এই সরি অন্য কারো জন্য তুলে রাখেন আমার আপনাকে একদম পছন্দ হয়নি সুতরাং অন্য জায়গা চেষ্টা করুন।
- আমার কথাটা একটু শুনেন?
- জ্বি বলেন?
- যেহেতু পছন্দ হয় নাই আর দেখা হবে না কখনো,, এক কাপ কফি তো খেতে পারি।?
- ওকে।
- ধন্যবাদ রাজি হওয়াতে।
- ইট’স ওকে।
- আপনি কি সবসময় রেগে থাকেন?
- আপনার মতো হয়তো এমন মানুষ সবসময় পাওয়া যায় না তাই সবসময় রেগে ও থাকা হয় না.!
- বুঝতে পেরেছি আপনি খুব বিরক্ত হচ্ছেন আমার উপর।
- কে বলছে বিরক্তি হচ্ছি আমার কথাবার্তা সবসময় এমন ধরনের।
- আচ্ছা কিছু জানতে পাড়ি আপনার ব্যাপারে?
- আর কি জানার আছে আপনাকে তো আমি পছন্দ করি নাই তাহলে জেনে কি করবেন?
- জেনে রাখা ভালে ভবিষ্যতে কখনে কোনো মেয়েকে পছন্দ করলে বলতে পারবে এমন character একটা মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছিল আমার।
- ওকে। শেষ ইচ্ছে আপনার কি আর করার আর তো কখনো দেখা হবে না।
- জ্বি
- আমার একটা বয়ফ্রেন্ড আছে একটু মাফিয়া টাইপের সবসময় পোলাপান নিয়ে ঘুরাফেরা করে।
- ওহ খুব ভয়ানক তাহলে।
- জ্বি সেজন্য তো আপনাকে বললাম আপনাকে আমি পছন্দ করি না।
- বুঝতে পারছি আপনি তাহলে আমার জান বাঁচালেন।
- জ্বি।
- আচ্ছা আপনার বয়ফ্রেন্ড নাম কি?
- কালা মারুফ।
- কি অদ্ভুত নাম? একে তো মাফিয়া তার উপর কালা মারুফ নাম শুনলে মানুষ ভয় পাবে।
- হুম।
- আচ্ছা আমি তাহলে উঠি যদি কালো মারুফ ভাই দেখে তাহলে আমাকে মেরে ভর্তা বানিয়ে ফেলবে।
- খুব ভালে আপনি চলে যান এইখান থেকে।
আমি চলে আসার পর মৌ আমাকে বোকা ভেবে অনেক হাসলো। কিন্তু মৌ জানতো যে রেস্টুরেন্ট বসা সে রেস্টুরেন্ট মালিক আমি নিজে ওই জায়গা সি সি ক্যামেরা সব দেখা যায়। কিন্তু একটু অবাক হওয়ার মতো ঘটনা টা ঘটলো অথচ আমি বুঝতে পারলাম না আমার পিছনে কয়েকজন বসে ছিলো তারা ওপাশ থেকে একটু পর পর একটা পেপার উঠিয়ে উঠিয়ে মৌ কে যানি দেখাচ্ছে আর সেইটা দেখে আমাকে মৌ কালো মারুফের কথা বলছে। পিছনে তাহলে যারা বসেছিলো তারা সবাই মৌ এর বন্ধু বান্ধব। সি সি ক্যামেরা সবকিছু দেখার পর সাথে সাথে আম্মু কে কল দিয়ে বললাম,,
- মা আমার খুব পছন্দ হয়েছে মেয়েকে।
- আলহামদুলিল্লাহ। তাহলে বাবা আগামী মাসের কথা বলে দেই?
- নাহ মা ১০ দিনের মধ্যে আমি বিয়ে টা করতে চাই। আমার কিছু কাজ আছে ভারত যেতে হবে তাই ভাবলাম বিয়ের পর মৌ কে সাথে করে ঘুরে আসলাম একসাথে দুই কাজ হয়ে গেলো।
- তাহলে তো ভালো হয়েছে।
- তুমি তাদেরকে কে বলে দেউ ১০ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা করতে।
- ঠিক আছে।
মেয়েদের পরিবারে জানানোর দায়িত্ব মায়ের উপর। মায়ের সাথে কথা বলে বাবা কে কল দিলাম,,
- কোথায় আছেন আপনি?
- এইতো রাস্তার মোড়ে।
- বাবা মেয়ে আমার পছন্দ হয়েছে আপনি মেয়ের বাবা কে বলে দিয়েন।
- বলে দিবো কি তুই তো বলে দিলি মৌ এর বাবা আমার সাথেই আছে।
লজ্জা কল টা কেটে দিলাম। আজ ঘূর্ণিঝড় হবে মৌ দের বাসায়। মৌ ভাবছে এই বিয়ে হবে না কিন্তু আমি এই বিয়ে করবোই। মৌ এর মিষ্টি হাসি তার সাথে লুকিয়ে লুকিয়ে মিথ্যা কথা বলা এই সব কিছু কেমন যানি মন ছুয়ে গেলো। বিকাল ঘনিয়ে রাত হয়ে গেলো বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রুমে যাবো ঠিক তখনই পিছন থেকে মা আমাকে ডাকলো।
- রাসেদ তোরে নাকি মৌ বার বার কল দিচ্ছি রিসিভ করছিস না?
- মোবাইল তো আমার সাথে নেই।
- মোবাইল হাতে নিয়ে জলদি কল দে আমাকে মেয়েটা বারবার কল দিছে কল রিসিভ করার জন্য।
- আচ্ছা দিচ্ছি।
রুমে গিয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলাম ৩৫ টা কল। একটা এস এম এস দিয়ে রেখেছে যে আমি মৌ। কল না দিয়ে এস এম এস দিলাম। এতো মিস করেন আমাকে এতগুলো কল দিলেন। মেসেজ দেখে সাথে সাথে আমাকে কল দিলো।
- আপনি দেখি মহাবিপদ সংকেত না দিয়ে হুট করে একটা ডিসিশন নিয়ে নিলেন।
- এইখানে সংকেতের কি আছে শুভ কাজে দেরি করতে নেই মুরব্বিরা বলতো।
- তাহলে মুরব্বিদের নাতি নাতনি দের বিয়ে করে ফেলেন।
- সেইটা তো করছি।
- যেমন?
- অবশ্যই আপনার দাদা ছিলো তারপর আপনার বাবা তারপর আপনি সুতারং সবশেষে তো আপনি নাতনি হলেন।
- আমি এই বিয়েতে রাজী না।
- কেনো? কালো মারুফ কে ভুলতে পারছেন না?
- আমার কালো মারুফ সাদা মারুফ কিছুই নাই। আমি এখন বিয়ে করতে চাই না।
- কিন্তু আমি তো চাই।
- আপনি চাইলে হবে? আমি কবুল বলবো না।
- সেইটা না হয় কাজী উপর ছেড়ে দিলাম আপনার মুখ দিয়ে কিভাবে স্বীকার করায়।
- আপনি সত্যি একটা বিরক্তিকর। আপনাকে বার বার বলছি আমি বিয়ে করতে প্রস্তত না।
- দেখেন আমার আম্মু বাসায় একা থাকে বাবা ব্যবসায় করে আর আমি সারাদিন অন্য কাজে ব্যস্ত সব মিলিয়ে আম্মু কে কোম্পানি দেওয়ার জন্য আপনি পারফেক্ট।
- আপনার সাথে কথা বলাটাই আমার মূল্যবান সময় নষ্ট হলো।
রাগ নিয়ে মৌ কলটা কেটে দিলো। আমার মুখে দুষ্টমি একটা হাসি ফুটে উঠলো। বাহিরে তাকিয়ে দেখি খুব সুন্দর একটা চাঁদ উঠেছে সাথে এক কাপ চা রোমান্টিক একটা গান সব মিলিয়ে রাতটা ভালোই কেটেছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে চললাম রেস্টুরেন্ট হঠাৎ পথ আটকে বসলো একটা বোরকা পড়া মেয়ে।
- রিকশা উঠেন কথা আছে আপনার সাথে।
- আরে আপা কে আপনি? আমি ওইরকম ছেলে না।
- সরি ভাইয়া আমি ও ওইরকম মেয়ে না।
মুখের পর্দা টা সড়িয়ে দেখালো। মৌ বোরকা পড়ে এসেছে আমার সাথে কথা বলতে। আমি দেখে তো অবাক,,
- আপনি বোরকা পড়ে?
- আগে গাড়ি তে উঠেন পড়ে কথা বলা যাবে। তা না হলে কেউ দেখে ফেলবে।
- দেখলে কি হয়েছে আমি আমার হবু স্ত্রী সাথে কথা বলি।
- বেশী কথা না বলে জলদি উঠেন।
রিকশা উঠার পর আর আমার কোনো কিছুই মনে ছিলো না হঠাৎ নিজেকে আবিষ্কার করলাম চার দেয়ালের অন্ধকার এক পুরনো বাড়িতে। রিকশা উঠার পর কি হয়েছে এখানে কিভাবে এসেছি কিছুই যানি না। যখন উঠতে যাবো তখন দেখি আমার হাত পা বাধা। জোরে চিৎকার করলাম কিন্তু মনে হলো আমার কথার শব্দ আমি ছাড়া কেউ শুনতে পায় নাই।
পূণরায় চিৎকার দেওয়ার পূর্বে কে যানি গান ধরলো,,খুব পরিচিত কন্ঠ খুব পরিচিত একটা গান।
আমি তো মরে যাবো
চলে যাবো রেখে যাবো সবই।
খুব ভয় লাগতেছিল হঠাৎ দেখতে পেলাম মৌ কে। মৌ কে দেখে জিজ্ঞেস করলাম।
- তোমারে কিছু করে নাই তো?
- কে কি করবে আমাকে?
- মানে?
- মানে টা সহজ এইখানে আপনাকে বেধে রেখেছি আমরা ৪ জন মিলে।
- কি তুমি?
- কেন বিশ্বাস হচ্ছে না শুরু থেকে শেষ পযন্ত পুরো ভিডিও আছে আমাদের কাছে চাইলে দেখে নিতে পারেন।
মৌ এর কথা শুনে হাসি চলে আসলো। আমার হাসির আওয়াজ শুনে আরো ৩ জন বের হয়ে আসলো। তাঁরা ৪ জন মেয়ে তাঁদের দিক তাকিয়ে একটু বিস্মিত হলাম। জিজ্ঞেস করলাম,,,
- আমাকে এইখানে বেঁধে রাখার কারন?
- বিয়ে।
- বিয়ে করা কি অপরাধ?
- অপরাধ না তবে কেউ বিয়ে করতে না চাইলে তাকে জোর করা অপরাধ।
- সত্যি করে বলেন এইখানে আমাকে বেধে রেখেছেন কেনো?
- আপনি নিজেকে প্রশ্ন করেন কেনো বেধে রেখেছি।
- ওহ বুজতে পারছি। তো কিভাবে জানলেন?
- আপনাকে যেহেতু এখানে বেধে রাখতে পেরেছি তাহলে হয়তো ওইটা যানা তেমন আহামরি কিছু না।
তাঁরা এইখানে বেধে রাখার কারন আমি আন্ডারগ্রাউন্ড পুলিশ অফিসার। কিন্তু বেধে রাখার কারন টা ঠিক বুজলাম না। জিজ্ঞেস করলাম
- সবকিছু জানার পর বেঁধে রাখার কারন?
- সেইদিন একটা বখাটে ছেলে একটা মেয়েকে এসিড মারার চেষ্টা করেছে আপনি নাকি ছেলেটাকে গ্রেফতার করেছেন কিন্তু ২ দিন পর শুনা গেছে ছেলেটা জেলে নাই। আপনি ঘুষ নিয়ে ছেলেটাকে ছেড়ে দিয়েছেন?
- হুম তো সেজন্য বেধে রেখেছ?
- নাহ এই কেসের আগে আপনি আরো অনেক গুলো আসামী কে ছেড়ে দিয়েছেন ঘুষ খেয়ে।
- Give me a chance to explain!
- আমি ভেবে পাই না আমার বাবা আপনার মতো বিশ্রি একটা মানুষের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছে।
- আরে আমার কথাটা শুনো।
- কি বলবেন আপনি আর,, কি বা বলার আছে?
- একটু পর আমার ইউনিট চলে আসবে। কারন আমি যদি অজ্ঞান হয়ে যাই তার সাথে সাথে আমার ইউনিট জেনে যায়। আমার হাতের ঘড়ি যে দেখছেন সেইটা ঘড়ি না একটা ডিভাইস। অজ্ঞান হওয়ার সাথে সাথে চালু হয়ে যায়।
সবাই আমার কথা বিস্মিত হয়ে যায়। আমি চুপ করে শুধু এইটুকু বললাম যাদেরকে আমি ছেড়ে দিয়েছি তারা আর কেউ বেঁচে নাই। এই কথা শুনে তারা ৪ জন মেয়ে ভয় পেয়ে বিচলিত হয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে স্যার ভুল হয়ে গেছে।
চলবে,,,,,
আপনাদের সাড়া পেলে ইনশাল্লাহ পুরোটা লেখার চেষ্টা করবো।
0 Comments
Thanks for your valuable comment. We will be back soon.
Thank you 😊😊😊