ম্যাডাম

Ads Inside Post

ম্যাডাম

শেষপর্ব আমি ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে মিষ্টিকরে হাসার চেষ্টা করলাম।সম্পূর্ণ পারলাম না,নিজের ভেতরে সামান্য অপরাধবোধ কাজ করছে।নিজের ভেতরে অপরাধবোধ কাজ করলে মিষ্টিকরে হাসা যায় না। আমি ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে বললাম, জি সত্যি সত্যিই চলে যাচ্ছি। খোদা হাফিজ! ৩. ম্যাডাম বিছানায় শুয়ে আছেন,ঘুম আসছে না।ভয় নিয়ে ঘুমানো যায় না।আজ প্রথম রাত। ম্যাডাম একা ঘুমাবেন।তার মনে হচ্ছে, ভুল হয়ে গেছে,বড়সড় ভুল হয়ে গেছে।আমার সাথে ঢাকায় চলে গেলেই হতো।আবার মনে হচ্ছে, না,মোটেও ভুল হয় নি।ভুল হয়েছে আমারই।আমি তো থেকে গেলেই পারতাম।পাশের রুমে বরগুনার ছেলেগুলো জোরো জোরে আপত্তিকর গান ছাড়ছে।এই প্রথম ম্যাডামের কাছে এই গানগুলো বেশ ভাল লাগছে।মনে হচ্ছে,ভয় কমছে।গান সঙ্গীর মতো কাজ করে। গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়লেই ভালো হবে।যদি গান বন্ধ হয়ে যায় তো মহাবিপদ। দরজায় কড়া নড়ছে।ম্যাডাম ভয়ে দলা হয়ে গেলেন,এ অসময়ে তার রুমে কে আসবে! ম্যাডাম টেবিলের উপর রাখা বক্সের দিকে তাকালেন।আশ্চর্য! বক্সটা উদাও হয়ে গেল! একটু আগেও তো ছিল।ম্যাডাম ভয়ে কাঁপছেন।তার মনে হচ্ছে, তিনি এক্ষুণি মাথা ঘুরে পড়ে যাবেন, দরজাটা আর খোলা হবে না।দুদিন পর তার লাশ দরজা ভেঙে উদ্ধার করা হবে।দরজায় অনবরত কড়া নড়ছে,ম্যাডামও অনবরত কাঁপছেন।দরজার ওপাশে কে হতে পারে তা জানতে খুব ইচ্ছে করছে।কিন্তু মুখ হতে কোনও আওয়াজ বের হচ্ছে না।ভয় পেলে আমাদের কণ্ঠনালি ভারী হয়ে যায়,যার কারণে খুব সহজে আওয়াজ বের হয় না।ম্যাডাম বিছানা থেকে নামলেন।টেবিলটা খালি পড়ে আছে।অথচ আমি চলে যাওয়ার পর তিনি নিজ হাতে বক্সটা চাদর দিয়ে মুড়ে রেখেছিলেন। এই অভিশপ্ত বক্সটা যেন তার চোখের সামনে না পড়ে সেজন্য। চাদরটা ঠিকঠাকই আছে,কিন্তু বক্সটা হাওয়া হয়ে গেছে! এ কি করে সম্ভব? দরজায় কড়া নড়ছে।ম্যাডাম হাঁটি হাঁটি পা পা করে দরজার দিকে এগুচ্ছেন। আস্তে আস্তে ছিটকানিটা খোলার সময় তার মনে হলো,যদি দরজার ওপাশে বক্সটাকে খুঁজে পান...? ম্যাম। দরজার ওপাশে একটা ছেলের গলা শোনা গেল।ম্যাডাম আস্তে আস্তে দরজা খুললেন।হোটেলবয় বিস্তৃত হাসি হেসে বললেন,ম্যাম, আপনার ডিনার। ম্যাডাম ভুলেই গিয়েছিলেন,তিনি হোটেলবয়কে বলে রেখেছিলেন যেন তিনবেলা খাবার দিয়ে যায়। প্রচন্ড ক্ষিধে পেয়েছে। তিনি খেতে বসে অবাক হয়ে দ্যাখলেন,বক্সটা আগের মতই টেবিলে চাদর মোড়া অবস্থায় আছে।তারমানে,যখন কেও আসবে, তখন তা অটোমেটিকলি উদাও হয়ে যাবে...? সকালে নাস্তা খাওয়ার জন্য ম্যাডাম নিচে নামলেন। যদিও তার দরকার ছিল না।হোটেলবয় এসেই দিয়ে যেতে পারত। কিন্তু ম্যাডামের সব ভয় বক্সটাকে নিয়ে।যেন যতক্ষণ বাহিরে থাকা যায় ততক্ষণ মুক্তি! নাস্তা করতে গিয়েই বরগুনার ভদ্র ছেলেগুলোর সাথে দ্যাখা।তারাও নাস্তা করতে এসেছে।তারা এসে ম্যাডামের পাশে বসল।এদের মধ্যে একটা ছেলে খুব আস্তে আস্তে চেয়ার টেনে বসল।যেন জোরে জোরে চেয়ার টানলে চেয়ারটা ব্যথা পাবে! ম্যাডাম সরুচোখে তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন। পরে জানতে পারলেন,ছেলেটা গান্ধীবাদ করে।ম্যাডাম হতভম্ব হয়ে বললেন,কি করে? বরগুনার একটা ছেলে হাসতে হাসতে বলল, গান্ধীবাদ।অহিংসাই পরম ধর্ম।বুঝলেন ম্যাডাম,তার সবকিছুতেই বাড়াবাড়ি। কথা বলবে খুব আস্তে আস্তে।অজড় বস্তুগুলোর (যেসব জিনিসের প্রাণ নেই) সাথেও মানুষের ন্যায় আচরণ করবে।বিছানায় লাফিয়ে উঠে শুবে না।বরং আস্তে আস্তে এসে বিছানার এককোণায় পিঠ লাগিয়ে খুব আস্তে করে গড়াগড়ি দিয়ে শুবে।তবে এখন পরিস্থিতি ভিন্ন।এখন বিছানায় আমরা তিনজন শুই,আর গান্ধীবাদী নিচে শোয়।কারও সাথে খুব মিষ্টি ভাষায় তর্ক করবে।তাকে কড়া ভাষায় গালাগালি, যেমন- ম্যাডাম দ্রুত বললেন,উদাহরণ দেয়া লাগবে না। ছেলেটা আকর্ণ হেসে বলল,আচ্ছা। তার মাকে নিয়ে গালাগালি করলেও সে হেসে খুব মিষ্টি করে বলবে,অশালীন কথা না বললে মনটা বড় তৃপ্ত হতো। তখন ওই লোকটা বলত,রাখ তোর অশালীন কথা।অশালীন কথার মারে ****।আমার টাকা কখন ফেরত দিবি, এটা আগে বল।গান্ধীবাদী তখন লজ্জায় আটখানা হয়ে বলত,অতিসত্বর অর্থ ফেরতের ব্যবস্থা হবে।আপনি একটু মিষ্টি করে কথা বললে দিলটা খুব পুলকিত হতো।আমি তো আপনার অর্থ ফেরত দিবই।গান্ধীবাদীরা কখনও কারও অর্থ আত্মসাৎ করে না।এতে ধর্মের অবমাননা করা হয়।ওই লোকটা তখন চোখমুখ পাকিয়ে বলত,গান্ধীবাদী আমার সামনে দ্যাখাবি না।সব তোর ভন্ডামী।তোর গান্ধীবাদীরে গোয়া মারি। ম্যাডাম সরুচোখে গান্ধীবাদী ছেলেটার দিকে তাকালেন।সে ভাবলেশহীন ভাবে রুটি দিয়ে ভাজি খাচ্ছে।খুব আস্তে আস্তে চাবাচ্ছে।যেন জোরে জোরে চাবালে রুটিটা ব্যথা পাবে। বরগুনার একটা ছেলে, নাম আবীর ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে বলল,ও সবসময় সবার হাতে মার খায়। ম্যাডাম অবাক হয়ে বললেন,এত অহিংস, তবুও মার খায়?আশ্চর্য! আবীর হাসতে হাসতে বলল, অহিংস ধর্মের কারণে মার খায় না,মার খায় মানুষের থেকে টাকা নিয়ে তা গরীব দুঃখীদের মাঝে বণ্টন করে।কিন্তু পরে আর ধার শোধ করতে পারে না।মানুষ দেয় ছেঁচা।আবার ছেঁচা খাওয়ার সময়ও তুহিন(গান্ধীবাদী ভদ্র ছেলেটার নাম) কিছু বলে না।এটা নাকি গান্ধীবাদী ধর্মে নেই! বড়ই অহিংস। খুব মিষ্টি ভাষায় ঝগড়া করে।গালাগালি কখনওই করে নি,কারও গায়ে হাত তোলা তো দূরের ব্যাপার। ম্যাডামের মনে হচ্ছে,তুহিন ভাল ছেলে, বিনয়ী। কিন্তু এতবেশী বিনয়ী, যতবেশী বিনয়ী হলে তাকে আর বিনয়ী বলা খাটে না। খাবারের বিলটা গান্ধীবাদীই দিল।ম্যাডাম অনেক জোরাজুরি করেছিলেন। কিন্তু গান্ধীবাদী ডায়াবেটিস হয়ে যাবে এমন মিষ্টি হাসি হেসে বলল,মেহমান অন্দরমহলের (ঘরের) লক্ষ্মী। মেহমানকে খেদমত করলে স্বয়ং নারায়ণ পুলকিত হয়ে বর দিবেন।আপনি কি আমাকে বরদান হতে বঞ্চিত করতে চান হে অন্দরমহলের লক্ষ্মী...? ম্যাডাম অতিকষ্টে হাসি চাপা দিয়ে বললেন,না।আচ্ছা তুমিই দাও। রাতে ম্যাডামের মনে হল, আজ একটা ভাল ঘুম হবে।বিছানায় শোয়ামাত্রই ঘুম হবে।কিন্তু হলো না।ভয় তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।বক্সটা আস্তে আস্তে বড় হতে শুরু করেছে। ম্যাডামের মুখ ভয়ে নীল হয়ে গেছে। ফোন আসছে।ম্যাডাম কাঁপা কাঁপা হাতে ফোন রিসিভ করেই বললেন,ইমু, তুমি খুব খারাপ একটা ছেলে! আমি হাসিমুখে বললাম, আপনি তো বলেছিলেন, আমার ফোন রিসিভ করবেন না। কথা রাখি নি।কোনও সমস্যা হয়েছে তাতে? জি না। শোন, বক্সটা যে আবার বড় হচ্ছে। আমি হো হো করে হেসে উঠলাম। ম্যাডাম প্রচুর বিরক্ত হয়ে বললেন,প্লিজ হেসো না, বক্সটা সত্যিই আবার বড় হচ্ছে। আমার হাসির মাত্রা আরও বেড়ে গেল।আমি হো হো করে হাসতে হাসতে বললাম, ম্যাডাম, আমি আসার সময় বক্সটা সঙ্গে করে ঢাকাতেই নিয়ে এসেছি।আপনি তখন ব্যাপারটা খেয়াল করেন নি।বক্সটা তো এখন আমার হাতে।আর আমি এখন মিরপুরে গাঁজাবার সাথে সিগারেট টানছি। -------------------------- ম্যাডামের মনে হল,তিনি চিৎকার করে কেঁদে ফেলবেন।পাশের রুম থেকে বরগুনার ছেলেগুলো তার চিৎকারের আওয়াজে ছুটে আসবে।গান্ধীবাদী এসে খুব বিনীতভাবে বলবে,হে অন্দরমহলের লক্ষ্মী,কি সমস্যা হয়েছে আপনার? ম্যাডাম ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বললেন,বক্স কি তোমার কাছে? আমি প্রশস্ত হেসে বললাম,জি। তুমি ঢাকাতে না? জি,মিরপুরে।গাঁজাবাবার সাথে বিড়ি টানি।ব্র্যান্ডের নাম,হলিউড।সস্তা বিড়ি।মূল্য, তিন টাকা।তিন টাকায় সবসময় দুই ব্র্যান্ডের বিড়ি পাবেন।ডার্বি আর হলিউড।হলিউডটাই খাওয়ার চেষ্টা করবেন।ডার্বি ভাল না,কেমন যেন পানসা পানসা।তরকারিতে লবণ না হলে যেমন পানসা হয়,তেমন পানসা।গাঁজাবাবার সাথে বসলে বিড়ি নিয়ে বসতে হয়, নইলে বাবার প্রতি অশ্রদ্ধা করা হয়।বাবার কথায় আর পিনিক পাওয়া যায় না।ম্যাডাম হয়তো ভাবছেন,আমি সস্তা বিড়ি টানি কেন,তাই তো? ম্যাডাম চাপা গলায় বললেন,আমি সিগারেট নিয়ে কিছুই ভাবছি না। আমি হো হো করে হাসতে হাসতে বললাম,তাই ভাল।শোনেন,তিন শ্রেণির মানুষ দামি বিড়ি খায়।১.যারা নতুন বিড়ি খাওয়া স্টার্ট করে।এদের হাতেখড়ি হয় সাধারণত "ব্ল্যাক" দিয়ে।এটাকে আমরা বলি মেয়েদের সিগারেট। ভেতরে মাল মসলা কিছুই নাই,তার উপর খাওয়ার পর ঠোঁট হয়ে যায় মিষ্টি। মনে হয় যেন ললিপপ চুষে এসেছি।২. এই শ্রেণির মানুষরা উচ্চবিত্ত শ্রেণির মানুষ।বাবার অনেক টাকা বা নিজের অনেক টাকা আছে, তা প্রমাণ করতে টঙ দোকানে দামি বিড়ি খায়।ভাব দ্যাখানোর জন্য খায় ম্যাডাম, অন্যকিছু না।তাদের ভাবকে আমি গোয়া মারি...সরি ম্যাডাম সরি,সাধারণত মা-বোনদের সামনে অশালীন শব্দ উচ্চারণ করি না।কিন্তু মাঝেমাঝে মেজাজ কন্ট্রোলে থাকে না।৩.এই শ্রেণির মানুষের অভ্যাসই হয়ে গেছে দামি বিড়ি খেতে খেতে।বা,সস্তা বিড়ির গন্ধ সহ্য না, অন্যের সমস্যা হবে ভেবে স্মেইল ভাল দ্যাখে দামী বিড়ি চুজ করা,ব্যক্তিগত কারণ ইত্যাদি ইত্যাদি সমস্যা থাকেই। ম্যাডাম প্রচন্ড বিরক্তি প্রকাশ করে বললেন, আমি কি তোমার কাছে ধূমপায়ীর শ্রেণীবিভাগ জানার জন্য ফোন দিয়েছি? না তো।কেন দিয়েছেন? বক্সের ব্যাপারে। আমি হাসতে হাসতে বললাম,আসছে আসছে।এত অধৈর্য হবেন না।আল্লাহ ধৈর্যশীল বান্দাদের সাথে আছেন।আপনি বক্সটা কোথায় রেখেছিলেন? টেবিলের উপরে। এখন সেটা সেখানে নেই,এই তো? হুমম। থাকবে কি করে! সেটা তো আমার হাতে।আসলে বক্স বলতে কিছুই কক্সবাজারে নেই।আমার হাতেই বক্সটা আছে। আপনি হ্যালুসিনেশনে ভুগছেন। আপনি আমাকে বক্সটা রেখে আসতে দ্যাখেছিলেন,নিয়ে আসতে দ্যাখেন নি।যার ফলে আপনার অবচেতন মন ভেবেছিল,বক্সটা হোটেল রুমেই আছে।আপনি কি বক্সটা কিছু দিয়ে মুড়িয়ে দিয়েছিলেন? ম্যাডাম অবাক হয়ে বললেন, তা তুমি কিভাবে জানলে? আমি রহস্যের হাসি হেসে বললাম,বক্সটা যার হাতে থাকবে সে অদ্ভুত কিছু শক্তি পাবে।তবে আপনার কাহিনী বোঝার জন্য শক্তির প্রয়োজন নেই।আপনি ভীতু মানুষ, বক্স দ্যাখলে ভয় লাগে,তাই বক্সটা চাদর বা এই টাইপের কিছু দিয়ে মুড়ে দেবাটাই স্বাভাবিক। কি দিয়ে মুড়েছিলেন? চাদর দিয়ে। অইটা কি এখন টেবিলের উপরেই পড়ে আছে? হুমম। অই যে বললাম হ্যালুসিনেশন,চাদরের অস্তিত্ব আছে,কিন্তু বক্সের অস্তিত্ব নেই। আমি যে একটু আগে দ্যাখলাম,তা বড়-ছোট হচ্ছে। আমি হেসে বললাম, বাস্তবে কিছুই বড়-ছোট হচ্ছে না।সব আপনার কল্পনায়েই হচ্ছে।এই পৃথিবীতে সবচে' বিরক্তিকর শব্দটার নাম 'বাস্তবতা'।আসলে বাস্তবতা বলতে কিছুই নেই।বাস্তবতা সেটা না, যেটা হচ্ছে।বাস্তবতা সেটাই, যেটা তুমি তৈরি করছো তোমারই সাথে ;নিজেরই মতো করে।সবই মস্তিষ্কের খেল।যেমনটা দ্যাখছেন,তেমনটাই হচ্ছে।বাস্তবতা বলতে কিছু নেই,কথাটাতে চমকে গেলেন না? ম্যাডাম ধীর গলায় বললেন,সামান্য। একটা ব্যাপার লক্ষ্য করুন।একটা বাচ্চা সাগর দ্যাখলে ভয় পাবে না, মুগ্ধ হবে।আবার গাড়ি দ্যাখলেও মুগ্ধ হবে।সবাই যাকে বেশ্যা বলে গালি দেয়, তার রূপ দ্যাখেও মুগ্ধ হবে।কিন্তু একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষ সাগরে নামার আগে অনেক বার জোয়ার ভাটা নিয়ে ভাববে,হিংস্র প্রাণী নিয়ে ভাববে।চলন্ত গাড়ি দ্যাখলে সরে পড়বে।বেশ্যার থেকে সকালে দূরে থাকবে চক্ষুলজ্জার ভয়ে।রাতে আবার ঠিকই জৈবিক চাহিদা মেটানোর জন্য তার কাছে যাবে।তাহলে কে ভুল, কে সত্য? মজার ব্যাপার হচ্ছে,আমরা সবাই ভুল,আবার একইসাথে সবাই সত্য।এই পৃথিবীতে কিছুই ঘটে না,সব ঘটে আমাদের মস্তিষ্কে।আমাদের মস্তিষ্ক নিস্তেজ হয়ে পড়লে সূর্য চিনতেও আমাদের বেগ পোহাতে হবে।ম্যাডাম,অনেক রাত হয়েছে,আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন।কোনও সমস্যা হলে আমায় ফোন দিবেন।আমি সারারাত গাঁজাবাবার সাথে আছি।আজ হল 'বিড়ি রজনী'।মাসে একবার আমাদের বিড়ি রজনী হয়।চা সিগারেটের সাথে সামান্য লাল পানির ক্ষুদ্র আয়োজন থাকে।আজ এসবের কিছুই থাকছে না শুধু বিড়ি ছাড়া।তার কারণ, সংকট। অর্থ সংকটে ভুগছি।গাঁজাবাবা খুবই উদার শ্রেণির মানুষ।তিনি পকেটে সামান্য অর্থ থাকলেও তা বিড়ির পিছেন ব্যয় করতে কার্পণ্যবোধ করেন না... ম্যাডাম ফোন কেটে দিল।তিনি তার জবাব পেয়ে গেছেন,তাই অযথা আমার সাথে কথা বলে সময় নষ্ট করার কোনও মানে হয় না।আবার মধ্যরাতে ভয় পেয়ে জেগে উঠে কাওকে জড়িয়ে ধরতে না পারলে আমাকে তার মস্তিষ্ক স্মরণ করবে।আমাকে ফোন দিবেন।আমি সে ফোন উপেক্ষা করতে পারব না।আমার সেই শক্তি থাকলেও, ক্ষমতা নেই।অনেকে শক্তি আর ক্ষমতাকে এক করে গুলিয়ে ফেলেন।এটা ঠিক না।শক্তি হচ্ছে শারীরিক, অর্থ,জনবল দিয়ে কাওকে মোকাবিলা করার ব্যবস্থা। আর ক্ষমতা হচ্ছে,আমার সবধরণের শক্তিই আছে,কিন্তু কিসের কি এক মায়ায় তা প্রয়োগ করতে বিলম্ব হচ্ছে। মধ্যরাতে আবার ম্যাডামের ফোন।তিমি কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ইমু, বক্সটা তো আবার বড় হচ্ছে।তুমি এক্ষুণি কক্সবাজার চলে আসো। আমি শান্ত গলায় বললাম, ম্যাডাম, আপনি ঘুমান।কোথাও কিছুই হচ্ছে না।আপনি দুঃস্বপ্ন দ্যাখছেন।সকাল হলে সব ঠিক হয়ে যাবে। ৪. আমি এখন কক্সবাজারে।আজ রাতে ম্যাডাম তার মৃত মানুষের সাথে যোগাযোগ করবেন। আমাকে দ্যাখে তিনি দারুণ খুশি।এই খুশিতে জড়িয়ে ধরে দশটা চুমু খাওয়া যায়।ম্যাডাম তা করছেন না।তিনি অন্তরে ভালবাসা পুষে কল্পনায় আমাকে বিশটা চুমু খেয়ে নিয়েছেন।এই এক 'কল্পনা শক্তি'র মাধ্যমে মানুষ পুরো পৃথিবী নিজেদের করে নিয়েছে।তা না হলে তারা পাখনা নাচিয়ে মাছেদের সাথে পানিতে বসবাস করতো।অনেকে "আবেগ বনাম বাস্তবতা" শিরোনামে অনেক কড়া কথা বলে থাকেন। এটা ঠিক না।বাস্তবতা থেকে কখনও আবেগ আসে না।আবেগ থেকেই বাস্তবতা আসে।যে সময়ে মানুষ দ্রুতগামী গাড়ি আবিষ্কারের কথাও খুব সাবধানে ভাবত,সেসময়ে দু'ভাইয়ের পাগলামির আবেগ ছিল বলেই উড়োজাহাজ আবিষ্কৃত হয়েছে।আবেগ ছিল বলেই মোবাইল আবিষ্কৃত হয়েছে,চাঁদে মানুষ পা রেখেছে,কম্পিউটার হয়েছে,বুলেট ট্রেন হয়েছে,মঙ্গলে মানুষ পাঠানোর ব্যবস্থা হচ্ছে।এসবের পেছন প্রথম যে বিষয়টা কাজ করেছে তা হল,আবেগ।এরপর এসেছে যুক্তি বা ফর্মুলা, তারপর পরিশ্রম। সবকিছুই স্টেপ বাই স্টেপ। ম্যাডাম আমার দিকে পূর্ণদৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,আজ রাতে তো সমুদ্র তীরে মৃত ব্যক্তির সাথে কথা বলতে পারব।তাই না? আমি বিজয়ের হাসি হেসে বললাম,জি। আমি এমনভাবে হাসলাম, যেন ম্যাডামকে তার মৃত মানুষের সাথে সাক্ষাৎ করিয়ে দিতে পেরে আমি ওয়াটারলু জিতে গেছি,যে যুদ্ধ স্বয়ং নেপোলিয়নও জিততে পারেন নি। ম্যাডাম সরুচোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,তুমি কার সাথে কথা বলেছো? আমি বললাম, এখানে বলে রাখা ভাল,আপনি চাইলে আজ ক্যান্সেলও করে দিতে পারেন। তীরে দাঁড়িয়ে শুধু "হে ভুতুড়ে বক্স! আজ আমি কোনও প্রিয়জনের সাথে দ্যাখা করিব না।আমার একজন খুব প্রিয়জন জীবিত আছে।আমি চাই, সে গত হইলে তাহার সহিত দ্যাখা করিব" বললেই হবে।খুব সম্ভব একথা শোনার পর আপনি আপনার প্রিয়জনের সাথে দ্যাখা করার সিডিউল বাদ দিয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করবেন। কি, করবেন না? ম্যাডাম দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,জীবনেও না।আমি আজই দ্যাখা করব।বুঝছো? আমি মারাত্মক অপমানবোধ করে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলাম, কিছুই বললাম না। ম্যাডাম কিছুক্ষণ চুপ করে বললেন, তুমি কার সাথে কথা বলেছিলে? আমার মৃত মায়ের সাথে। ম্যাডাম আমার দিকে অবাক হয়ে তাকালেন।তার চোখে সাথে সাথে মায়া চলে এল।খুব সম্ভব, এতিম বাচ্চাদের দিকে এভাবেই তাকানোর নিয়ম। ম্যাডাম নিচু গলায় বললেন,কিভাবে মারা গেছেন? জীবন তাকে ছেড়ে চলে গেছে, তাই ইন্তেকাল করেছেন। তখন তোমার বয়স কত ছিল? সাত। মায়ের সাথে কি কি কথা হয়েছিল তোমার? বিশেষ কিছু না।ভাল আছে কি না, মরে গেলে ভূত হয়ে যায়,এটা সত্য কি না,আমি ভাল আছি -তাও বলে দিয়েছি। বিকালে ভাল নাস্তা হলো।দুপুরবেলায় আমি ভাত খেতে পারি নি।তার কারণ আমি তখন বাসে ছিলাম,বাস থেকে নেমেও অর্থের অভাবে খেতে পারি না।বিড়ি রজনীর পেছনে বেশ অনেক টাকা গেছে।সামনের রজনীর জন্য একটু একটু জমাচ্ছি। নান দিয়ে গরুর মাংস খেলাম।ভালই লেগেছে। আমার পাশে একটা বিস্ময়কর ছেলে বসেছে।সবকাজ মাত্রাতিরিক্ত ধীরে ধীরে করে।খাওয়ার সময় আমার কনুইয়ের সাথে হালকা আঘাত পেল। পাশাপাশি বসলে পেতেই পারে।কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে সে এই অপরাধের জন্য আমার পায়ে ধরে ক্ষমা চাইল।সমবয়সী একটা ছেলে জনসমক্ষে পায়ে ধরে ক্ষমা চাইলে কেমনটা লাগে...? পরে জানতে পারলাম, সে গান্ধীবাদী।অহিংস! চরম অহিংস। আমার মনে হলো, সে অসুস্থ! চরম অসুস্থ। মহাত্মা গান্ধী বলেছেন,অহিংসা পরম ধর্ম।আর নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু বলেছেন, অহিংসা দুর্বলের ধর্ম।মহাত্মা গান্ধী বলেছেন,বিশ্বাস হচ্ছে কাঁচের মতন।একবার ভেঙে গেলে আর কখনও জোড়া লাগবে না।আর নেতাজী বলেছেন,বিশ্বাস কাঁচের মতন এত ঠুনকো নয় যে একবার ভেঙে গেলে আর কখনও জোড়া লাগবে না।ভালবাসা থাকলে ভাঙা বিশ্বাসও জোড়া লাগতে বাধ্য। আমি ম্যাডামের পাশে বসে আছি।কাল সকালে আমরা চলে যাব। একেবারের জন্যই যাব।আজ তিনি মৃত কারও সাথে আলাপ করবেন।বক্সটাকে এখন আর তার ভয় করছে না।ওটাকে কোলে নিয়েই তিনি বসে আছেন। আমি তার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসলাম।তিনি বিরক্তবোধ করে মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে নিয়ে গেলেন।খুব সম্ভব হাসিটা মিষ্টি হয় নি।ইডিয়টের মতন হয়ে গেছে।আমি ইডিয়টের মতই হেসে বললাম, ম্যাডাম,আপনি আজ কার সাথে কথা বলবেন...? ----------------------- ম্যাডাম আমার দিকে তাকিয়ে মায়াভরা একটা হাসি দিলেন।আমি এ হাসি দ্যাখতে চাই নি।প্রশ্নের উত্তর জানতে চেয়েছি।ম্যাডাম কোনও উত্তর না দিয়ে পানি খেতে চলে গেলেন। সমুদ্র তীরে দাঁড়িয়ে আছি।আমি ম্যাডামের থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছি। ম্যাডাম মুগ্ধতা নিয়ে সাগর দ্যাখছেন।যতটা মুগ্ধতা নিয়ে ছোট্ট মেয়েরা শোঁ শোঁ করে একটা বিমান উড়ে গেলে সবকাজ ফেলে বিমান দ্যাখতে চলে আসে।ভুতুড়ে বক্সকে বলা হয়েছে ম্যাডাম কার সাথে দ্যাখা করতে চান,সে চলে গেছে। একটু সময় লাগবে।এরপরই ম্যাডামের প্রিয়জন এসে পড়বে।সশরীরে আসবে না।অশরীরে আসবে,তার সাথে শুধু কথাই বলা যাবে,দ্যাখা করা যাবে না। ম্যাডামের প্রিয়জন এসে পড়েছে।ম্যাডাম মিষ্টি করে ডাকলেন, তুলি,এই তুলি। ওপাশ থেকে কেও হয়তো কিছু বলেছে।আমি শুনতে পাই নি।না পাওয়ারই কথা।ওপাশের ডাক শুধু ম্যাডামই শুনতে পাবেন। ম্যাডাম হাসিমুখে বলছেন,ভালো আছিস? তোকে খুব মনে পড়ে জানিস? কি,তোরও আমাকে মনে পড়ে...! বাহ, ভাল তো। আপুকে ভুলতে পারিস নি, না? ম্যাডাম তার ছোটবোনের সাথে কথা বলছেন।তার নাম তুলি। বাবা-মায়ের ডিভোর্সের তিনমাসের মাথায় সে ছাদ থেকে পড়ে মারা যায়। সবাই বলে জিনের আছর।আমার মনে হয়, আত্মহত্যা। স্রেফ আত্মহত্যা। আজহার নামে আমার এক বড়ভাই আছেন।তিনি তুলিকে প্রাইভেট পড়াতেন। তুলি সবসময় মলিন ড্রেসে পড়তে আসতো।চুলটাও ঠিকঠাক মতো আঁচড়াতো না।কোনও পড়া পারত না,পারতে চেষ্টাও করতো না।সবসময় মাথানিচু করে মুখটা ভার করে বসে থাকত।পরে ভাইয়া জানতে পারেন,বাসায় নাকি বাবা-মা সসবসময় ঝগড়া করে,আর তুলি সেসব দ্যাখে দ্যাখে মুখ লুকিয়ে কাঁদে।আজহার ভাই একসময় জানতে পারলেন,তার বাবা মায়ের ডিভোর্স হয়ে গেছে।তুলির বড়বোনের নাম ছিল প্রিয়া।এই ম্যাডামই প্রিয়া।প্রিয়া তখন আজহার ভাইয়ের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিল। ভাইয়া প্রথমে কিশোরীর আবেগ বলে পাত্তা দেন নি।পরে নিজেই প্রিয়ার প্রেমে পড়ে যান।আদরকরে তিনি প্রিয়াকে ডাকতেন 'বাবুইপাখি'। বড়ভাইয়ের কাছ থেকেই আমি এসব জানতে পেরেছি।ম্যাডাম তখন ক্লাস নাইনের ছাত্রী। ম্যাডামের সেসময়ের একটা ছবিও আমার কাছে আছে।আজহার ভাইয়ের ম্যাডামকে খুব ভাল লাগত,তাই ছবি সংগ্রহ করে রেখে দিয়েছিলেন।এতবছর পরও ঢাকা ভার্সিটিতে ম্যাডামকে দ্যাখে চিনতে পারাটা আমার কাছে ছিল পরম সৌভাগ্য এবং একইসাথে অবাক করার মত তাজ্জব ব্যাপার।পৃথিবী রহস্যময় বলেই হয়তো আমাদের সাথে ঘটে যাওয়া অনেক ব্যাপার এবং আমাদের ভেতরে জমে থাকা অদ্ভুত শক্তির কথা আমরা জানি না।তবে ম্যাডামকে চিনতে পারা আমার জন্য সহজ হয়েছিল,কারণ আমি ম্যাডামকে পাগলের মতো খুঁজেছি, আজহার ভাইয়ের জন্য।আজহার ভাই এখনও বিয়ে করেন নি,কথাটা তাকে বলতেই হবে।তখন কি ম্যাডাম রাজি হবেন...? ম্যাডামের চোখে জল চলে আসছে।তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলছেন, তুলি,আমি তোর দুটা ছবি এঁকেছি।সেগুলা কি তোকে দেয়া যাবে?... কি, তুই নিবি না? রাগ করেছিস আপুর উপর? আচ্ছা তুলি,একটু সত্য করে বলবি,তোকে ছাদ থেকে কে ফেলে দিয়েছিল...? প্রতিরাতে তোকে ভেবে আমার ঘুম যাওয়া,ঘুম থেকে উঠা, তুই কি তা জানিস...? ম্যাডামকে একটা মিথ্যে কথা বলা হয়েছে।আমি অবশ্য সবার সাথেই টুকটাক মিথ্যে কথা বলি।আমি আমার মৃত মায়ের সাথে কথা বলি নি।গতবছরও আমি এখানে এসেছিলাম, এসে বলেছিলাম,"হে ভুতুড়ে বক্স! আজ আমি কোনও প্রিয়জনের সাথে দ্যাখা করিব না।আমার একজন খুব প্রিয়জন জীবিত আছে।আমি চাই, সে গত হইলে তাহার সহিত দ্যাখা করিব"।ভুতুড়ে বক্স আমার সেকথা রেখেছিল। আমি ভেবে রেখেছি, গাঁজাবাবার মৃত্যুর পর আমি তার সাথে দ্যাখা করব।তখন কি কথা বলব,তার একটা খসড়াও তৈরি করে রেখেছি। আমি হাসিমুখে বলব,গাঁজাবাবা, কেমন আছিস? ভাল,দারুণ, ফ্যান্টাসটিক! তুই ভাল আছিস তো? বেঁচে আছি। হা হা হা! তোর তো আবার 'বেঁচে আছি' বলা স্টাইল। কিন্তু আমার জায়গায় অন্য কেও থাকলে ভাবতো তুই বেঁচে আছি বলে তাকে ইনসাল্ট করতে চাচ্ছিস।কারণ সে তো মরে ভূত।হা হা হা! মরে গেলে কি ভূত হয়? জটিল কোয়েশ্চেন।ভাবতে হবে।আমি কি ভূত হয়েছি কি না, জানি না।জানিস, যারা ভূত হয়, তারা কখনও জানে না যে, তারা ভূত হয়ে গেছে, হা হা হা।মিমি কেমন আছে রে...? আমি হতাশ গলায় বলব, ভালই আছে। দুটা মেয়ে হয়েছে। মিমি হচ্ছে গাঁজাবাবার প্রাক্তনের নাম।যে মেয়েটা তাকে ধোঁকা দিয়ে চলে গিয়েছিল।এরপর থেকেই তপুর গাঁজাবাবা অধ্যায়ের শুরু। সব ছেলেরই নেশাগ্রস্থ হওয়ার পেছনে একটা কারণ থাকে।সব মেয়েরই বেশ্যা হওয়ার পেছনে একটা ইমোশনাল স্টোরি লুকিয়ে থাকে,কেও সেটা শুনতে চায় না।সবাই শুধু বাহিরটা দ্যাখেই তাদেরকে সমাজের 'বিপথগামী তরুণ-তরুণী' বলে আখ্যা দিয়ে দেয়।যে বেশ্যাকে গালি দেয়, সেও মনেমনে তাকে কামনা করে। রাস্তায় মেকআপ দিয়ে চলা সুন্দরী দ্যাখলেই কিছু ছেলে বলে উঠে,দশকেজি আটা ময়দা মেখে এসেছে,সে ছেলেগুলাও মনেমনে ভাবে,ইশশ!কোনওভাবে যদি লাইনটা মারতে পারতাম...! হিপোক্রেসি আর কতদিন চলবে...?অবশ্য এটা তো একটা নাট্যমঞ্চ, চলছে..চলবে... গাঁজাবাবা হতাশমুখে বলবে, আহারে!একটা ভুল করে ফেললাম, বুঝলি।আমার হাতে একটা বার্বিডল আছে।মিমির তো দুটা মেয়ে হয়েছে,কি যে করি... সমস্যা নেই,অই একটাই দে। গাঁজাবাবা আমাকে একটা পুতুল দিবে,আসলে কিছুই দিবে না।সবটাই মেকি! তাকে আমি দ্যাখতে পারছি না,সেও আমাকে দ্যাখতে পারছে না। গাঁজাবাবা। কি? তোর ওখানে কি বিড়ি পাওয়া যায়? যায় রে য়ায়।তবে পিনিক কম। তোকে খুব দ্যাখতে ইচ্ছে করছে। গাঁজাবাবা হো হো করে হেসে উঠবে,যেন এর চে' আর মজার কথা অই পৃথিবীতে নেই।হাসতে হাসতেই বলবে,আমি তো তোকে রোজ বিড়ির ফিল্টারে দ্যাখি।গাঁজা টানলেই আমাকে দ্যাখতে পাবি বুঝলি? বুঝলাম। আচ্ছা, আমার ছোটভাই তমাল কেমন আছে? বেশ ভাল আছে। ঠিকমতো খায় তো? ঠিকমত খায়।তুই ভাবিস না। আচ্ছা। ওর কোনও ছবি সঙ্গে এনেছিস? না। গাঁজাবাবা হো হো করে হাসতে হাসতে বলবে,বেশ করেছিস।আচ্ছা, ওর কি আমার কথা মনে পড়ে? পড়ে,তোর জন্য কাঁদে। তা তো কাঁদবেই।তমাল কি আর মিমির মতো ডাইনী রে...! মা কেমন আছে রে? ভাল আছে। এই তো একটা মিথ্যে কথা বললি।মা কখনওই ভাল থাকতে পারে না।তার বড় ছেলে গত হয়েছে,আর তিনি ভাল আছেন,এটা কি আচানক কথা না? গাঁজাবাবা,সবকিছুরই একটা অলিখিত মেয়াদ থাকে।সে মেয়াদ ফুরিয়ে গেলে সবই আবার আগের মত হয়ে যায়।তখন একজন মায়েরও বিশেষ বিশেষ দিন ছাড়া অতি প্রিয় বড়ছেলেকে আর মনে পড়বে না।বার্ধক্যের চাপে পড়ে তিনি তখন তার প্রেসারের ঔষধের ডোজ ছাড়া নিয়মিত আর কিছুই মনে রাখবেন না। ও আচ্ছা। তুই কি মাইন্ড করলি? না।হা হা হা!! বিড়ি রজনী হয় নিয়মিত...? আমি চোখের জল মুছতে মুছতে বলব,নিয়মিত হয় রে। আসলে তপুর মৃত্যুর পর থেকে বিড়ি রজনীরও মৃত্যু হয়েছে।এখন আর তেমন একটা ছেলেপিলে এই রজনীতে আসে না।তাই বন্ধ। লালপানির ব্যবস্থা থাকে রে? থাকে তপু, থাকে। গাঁজাবাবা সরু গলায় বলবে,তপু বললি কেন? এমনি। আচ্ছা। আমাকে মিস করছিস? বিড়ি টানার সময় মিস করি। হা হা হা! আচ্ছা... সময় আর বেশী নেই।বাইশ সেকেন্ড আছে।তুই কি আমাকে আর কিছু বলবি? তপু শোন... হ্যাঁ বল। না থাক! গাঁজাবাবা বিরক্ত গলায় বলবে, থাকবে কেন? কথা শেষ করবি।অসম্পূর্ণ কথা আমার সহ্যের বাহিরে। আমি... কি রে চুপ হয়ে আছিস কেন? আবার অসম্পূর্ণ কথা! ও আচ্ছা বুঝেছি।শোন ইমু,আমি তোকে অনেক ভালবাসি।একা একা বিড়ি টানতে ভাল্লাগেনা । তুইও চলে আয়। আসব। আচ্ছা আর সময় বেশী নেই।ভাল থাকিস।আর তুই কি বলতে চেয়েছিলি, তুই আমাকে ভালবাসিস -এই তো...? আমি মাথানিচু করে দাঁড়িয়ে থাকব।ক্ষীণকণ্ঠে "হ্যাঁ" বলার আগেই সময় শেষ হয়ে যাবে। ম্যাডামের কথা বলা শেষ হয়েছে।ম্যাডাম কাঁদতে কাঁদতে বসে পড়েছেন। তিনি হাত বাড়িয়ে তুলিকে ধরতে চেয়েছিলেন,পারেন নি।আমি দাঁড়িয়ে আছি। আকাশপটে অর্ধ চাঁদ।অর্ধ সব জিনিসই আমার ভাল লাগে।পূর্ণতা বিরক্ত লাগে।এজন্যই জ্যোৎস্না রাত আমার সহ্যের বাহিরে।এই রাতে আমি দরজা জানালা বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে বিরহের গান শুনি। আমি গুনগুন করে এই মধ্যরাতে গাচ্ছি,গাঁজাবাবার গিফট দেয়া সে গানটি,এ কেমন কান্না তোমার, আমায় যখন আদর করো...' একবছর পরের কথা... আমি ম্যাডামের পাশে বসে আছি।একটুপর আজহার ভাই আসবেন।আমি অনেকক্ষণ ধরে একটা গল্প বলে যাচ্ছি ম্যাডামকে,যেখানে প্রাইভেট টিউটরের প্রেমে হাবুডুবু খায় এক কিশোরী। প্রাইভেট টিউটরটি তার ছোটবোনকে পড়াত।কিশোরীকে টিউটরটা 'বাবুইপাখি' বলে ডাকত।মেয়েটাকে নাকি বাবুইপাখি বলে ডাকার অধিকার একমাত্র ওই লোকটারই ছিল।লোকটা মানে টিউটরটা, বুঝলেন তো ম্যাডাম? বুঝলাম ইডিয়ট। আমি হাসিমুখে বললাম,টিউটরটার নাম ছিল,আজহার। ম্যাডামের কোক খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল।তিনি বিস্ফোরিত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,কি নাম ছিল? আজহার। আর মেয়েটার? আমি ম্যাডামের চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম, প্রিয়া। ম্যাডামের মনে হল তিনি মাথা ঘুরে পড়ে যাবেন।তার নাম প্রিয়া,আর অই আজহারকে তিনি তখন পাগলের মতো ভালবাসতেন।বাবা-মায়ের ডিভোর্সের পর আর তাদের যোগাযোগ হয় নি।কিন্তু তিনি মনেমনে পুষে রেখেছিলেন এই ভালবাসা,বয়ঃসন্ধিকালের ভালবাসা।আচ্ছা, ম্যাডামের এই অবিবাহিত থাকার পেছনের কারণটা কি...? আজহার ভাই ধীরপদে এসে ম্যাডামের সামনে দাঁড়ালেন।আমার সাথে ভাইয়ের আগেই কথা হয়েছিল, আমি এবং ভাই এমন ভান করব, যেন আমরা কেও কাওকে চিনি না।আজহার ভাই এসে ম্যাডামের সামনের চেয়ারে বসলেন।ম্যাডাম তার দিকে তাকালেন এবং তাকিয়েই রইলেন।আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি তিনি আজহার ভাইকে চিনে ফেলেছেন। মুখে তার খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি।খুব আদরকরে তিনি ম্যাডামের হাত ধরে বললেন,বাবুইপাখি, আমাকে চিনেছো...? তোমার ছোটবোন তুলিকে আমি পড়াতাম। ম্যাডাম কিছুক্ষণ মন্ত্রমুগ্ধের মতো আজহার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকলেন।অতীত ভালবাসা,কিশোরীর প্রথম প্রেম।এই প্রেম ভোলা যায় না। ম্যাডামের হাতের উপর আজহার ভাইয়ের হাত।ভালবাসার হাত। আমি অবাক হয়ে ম্যাডামের দিকে ঝুঁকে এসে তার চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম, ম্যাডাম,আপনি কি তাকে চেনেন? ম্যাডাম হাত ছাড়িয়ে নিয়ে চোখমুখ গরম করে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বললেন,না। বলেই হাসিমুখে আজহার ভাইয়ের হাতের উপর হাত রেখে তাকিয়েই রইলেন।কখন নিজের চোখ দিয়ে নিরবে আনন্দ অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিলো বুঝতেই পারিনি।আপাতত ম্যাডাম আর আজহার ভাইয়ের গন্তব্য হলো এই বেস্ত শহরটা পারি দিয়ে নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে অন্য একটা ভালোবাসার শহর গড়ার । যেখানে ভালোবাসার শুধু বেড়ে ওঠার জায়গা আছে কমে যাওয়ার না । ............ সমাপ্ত ......


Post a Comment

0 Comments