পড়া নিষেধ

Ads Inside Post

পড়া নিষেধ




Golpo-ghar.blogspot.com
Goloo-ghar.blogspot.com 


বারান্দায় বসে একমনে দাঁত দিয়ে নখ কাটছি। আন্টি দেখে বললো,
~পিয়াস, কি সব ছোট বাচ্চাদের মত দাঁত দিয়ে নখ কাটছিস। দেখেই শরীর শিরশির করছে। যা নেইলকাটার দিয়ে নখ কাট গিয়ে।
আমি বসে থেকেই বললাম,
--আন্টি যাও তো নেইলকাটারটা নিয়ে আসো।
আন্টি যেতে যেতে বললো,
~ আমি পারবো না বাবা, আমার কাজ আছে তুই নিজে মিতালীর রুম থেকে খুঁজে বের করে নে...
মিতালী আমার খালাতো বোন। ১০-১৫ দিন হলো বিয়ে হয়েছে। কয়েকদিন আগেও ওর রুমে যদি আমি ভুল করে ঢুকে পড়তাম তাহলে ও রুমস্প্রের বোতল অর্ধেক খালি করে ফেলতো। আমার শরীর থেকে না কি পঁচা বাসি তরকারীর মত গন্ধ বের হয়।আমায় সাথে সাথে রুম থেকে বের করে দিত আর আজ ওর রুম পুরো খালি। আমি সারারুম খুঁজে কোথাও নেইলকাটার পেলাম না। এমন সময় বিছানার তোশকটা উপরে তুলতেই একটা ধুলোমাখা ডায়েরি খুঁজে পেলাম। অন্য জনের ডায়েরি পড়া ঠিক না কিন্তু ডায়েরির উপরের লেখাটা পড়ে নিজেকে আটকাতে পারলাম না....
আমি ডায়েরিটা খুলে পড়া শুরু করলাম,
৩-৭-২০১৩,
আমার খালাতো ভাইয়ের নাম আবুল বাশার পিয়াস। ওর নাম যেমন আবুল ওর চেহারার মাঝেও একটা আবুল মার্কা ভাব আছে। আমার থেকে ২ বছরের সিনিয়র। আমি বুঝার পর থেকে দেখছি আমার সাথে ও চুইংগামের মত আটকে থাকে। ওর মাঝে চুরির স্বাভাব আছে। আমার রুমে মাঝে মাঝে ঢুকেই যা পায় তাই চুরি করে নিয়ে যায়। একবার অবশ্য আমার ন্যাপকিন পর্যন্ত চুরি করে নিয়ে গিয়েছিলো। পরে ওটা আমার সকল বান্ধবীর সামনে আমার হাতে দিয়ে বলেছিলো, নে এটা তোর জিনিস। পাউরুটি প্যাকেট ভেবে চুরি করেছিলাম কিন্তু খুলে দেখি টিস্যুর মত কি সব জিনিস। সেদিন আমি এত লজ্জা পেয়েছিলাম আর এত রাগ হচ্ছিলো যে ওরে খুন করে ফেলি। আমি পৃথিবীর দুইজন মানুষকে খুব অপছন্দ করি। এক মীরজাফর দুই মগা আবুল বাশার পিয়াস....
২৩-১১-২০১৪,,
আব্বু আম্মু আমায় খুব বকেছে।আমি এসএসসি টেষ্ট পরীক্ষায় ১ টাতে ফেইল করেছি বলে। আমি নিজেও খুব জেদি মেয়ে তাই রাগে বাথরুমের হারপিক খেয়েফেলি। পিয়াস ভাই কোলে করে আমায় নিচে নামায়। গাড়ি না পাওয়ার আগ পর্যন্ত পিয়াস ভাই আমায় কোলে নিয়ে ছুটতে থাকে হাসপাতালের দিকে। আমার ভাবতে অবাক লাগছিলো পিয়াস ভাই এত শক্তি কোথায় পেলো আমাকে কোলে নিয়ে দৌড়ানোর মত।
যখন জ্ঞান ফিরলো তখন দেখি আব্বু আম্মু কান্না করছে। একটু পর পিয়াস ভাই হাসতে হাসতে আমায় বললো, তুই তো সকল সুইসাইড করা মেয়েদের অপমান করতে গিয়েছিলি। মৃত্যুর পর আল্লাহ তালা যখন তকে জাহান্নামের আগুনের উপর ঝুলিয়ে রাখতো তখন অন্য সব সুইসাইড করা মেয়েরা তকে জিজ্ঞেস করতো কিভাবে মরেছিলেন আর তুই বলতি বাথরুম পরিষ্কার করার হারপিক দিয়ে। তখন ওদের কি মান ইজ্জত থাকতো বল?
তারপর পিয়াস ভাই আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো, দূর পাগলি ১ টাতে ফেইল করেছিস বলে সুইসাইড করতে হবে। আমি তো ৩ টা তে ফেইল করেছিলাম...
আমার প্রেমে পড়া তখন থেকেই শুরু। বেশিভাগ মেয়েরা প্রেমে পড়ে সুদর্শন ছেলে কিংবা মেধাবী ছাত্র কিংবা অনেক টাকা পয়সার মালিক এইসব টাইপের ছেলে দেখে কিন্তু আমি প্রেমে পড়েছিলাম আমার মাথায় পিয়াস ভাইয়ের হাত বুলানো দেখে।
সেদিনের পর থেকেই আমি দামী দামী জিনিস মজাদার খাবার সব কিনে এনে আমার রুমে রাখতাম যেন পিয়াস ভাই সেই সবের লোভে আমার রুমে আসে। কিন্তু পিয়াস ভাই আমার রুমে আসলে আমি পিয়াস ভাইকে দেখে কেমন জানি হয়ে যেতাম। আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যেতো তাই পিয়াস ভাই আমার রুমে আসলেই বলতাম, তোর শরীর থেকে দুর্গন্ধ আসছে তাড়াতাড়ি রুম থেকে বের হয়ে যা। পিয়াস ভাই তখন মুখটা গোমড়া করে চলে যেতো আর আমার ওর মায়া মায়া চেহারাটা দেখে হৃৎপিন্ডে চিনচিন ব্যথা করতো।
১৬-৫-২০১৮
পিয়াস ভাই হঠাৎ করে আমার রুমে এসে বললো, আমার বান্ধবী সুপ্তিকে না কি ওর খুব ভালো লাগে। কথাটা শুনে রাগে আমার সারাটা শরীর কাঁপতে লাগলো। আমি নিজেকে কোন রকম কন্ট্রোল করে বললাম,
তুই ওর মাঝে কি এমন দেখেছিস যে তোর ওরে ভালো লাগে। পিয়াস ভাই বললো, আরে ঐ মেয়েটার ঠোঁট গুলো হালকা কালো আমার কালো ঠোঁট ওয়লা মেয়েদের খুব ভালো লাগে তাছাড়া মেয়েটা শ্যামলা তোর মত সাদা ফ্রামের মুগরীর মত না। তাই ওরে ভালো লাগে। আমি সেদিন সুপ্তির সাথে এত খারাপ ব্যবহার করি যেন আমাদের বাসার আশেপাশে না আসে। একজন বললো সিগারেট খেলে ঠোঁট কালো হয়। তারপর থেকে আমি ছাদে বসে লুকিয়ে সিগারেট খেতাম। সিগারেটের ধোঁয়াতে আমার খুব কষ্ট হতো মনে হতো ধম বের হয়ে যাবে। তারপরও ঠোঁট কালো করার জন্য খেতাম। মানুষ ফর্সা হওয়ার জন্য কত কি করে। ঘন্টার পর ঘন্টা পার্লারে বসে থাকে আর আমি ঘন্টার পর ঘন্টা রোদে বসে থাকতাম যেন গায়ের রঙ কালো হয়....
২৮-৫-২০১৯,
ছেলে পক্ষ আমায় দেখতে এসে পছন্দ করে ফেলে। ছেলে সরকারি বড় কর্মকর্তা। ভালো ছেলে দেখে বাবা মাও রাজি হয়ে গেলো। হুট করেই ঘরোয়া পরিবেশে আমার বিয়েটা হয়ে গেলো। আমি অসহায়ের মত বারবার পিয়াস ভাইয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। কিন্তু পিয়াস ভাইকে দেখে মনে হচ্ছিলো আমার বিয়েতে সে সবচেয়ে খুশি৷ সবার সাথে হেসে হেসে কথা বলছিলো৷ পিয়াস ভাইয়ের সেই হাসিমাখা মুখটা দেখে আমার ভিতরের যে রক্তক্ষরণ হচ্ছিলো সেটা আমি কাউকে বলতে পারছিলাম না। ক্ষণিকের জন্য মনে হচ্ছিলো সেদিন যদি মরে যেতাম তাহলে হয়তো বাকী জীবনটা জীবন্ত লাশ হয়ে বেচে থাকতে হতো না....
হঠাৎ আন্টি এসে বললো,
~ কি রে তুই এখনো এই রুমে কি করছিস? মিতালী এসেছে। তকে এই রুমে দেখলে আবার চিৎকার চেঁচামেচি করা শুরু করবে।
মিতালী আমার সামনে হাসি হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে। আমি মিতালীকে বললাম,
-- কেমন আছিস তুই?
মিতালী হাসতে হাসতে বললো,
- অনেক ভালো আছি কারণ তোর মত চোর সেখানে নেই।
আমি ডায়েরিটা মিতালীর দিকে বাড়িয়ে দিলাম,
ডায়েরিটা দেখে মিতালীর চোখ দিয়ে একফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো আর আমায় বললো,
- ডায়েরির উপরে লেখা ছিলো, পড়া নিষেধ তারপরও তুই পড়ে ফেললি



Post a Comment

0 Comments