আমি ম্যাসেঞ্জারে চ্যাট করছি এক মেয়ের সঙ্গে। মেয়েটা আমাকে বলছে
ভাইয়া আমি খুব ডিপ্রেশনে আছি। চারপাশে এতো নেগেটিভ নিউজ। শুধু ভয় লাগে। মনে হয় এই বুঝে মরে যাবো। সারাক্ষন একাকী অনুভব করি। নিঃসঙ্গতা আমাকে কুড়ে কুড়ে খায়।
আমি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। আপনি অবশেষে ঠিক জায়গায় এই ব্যাপারে আলোচনা করছেন। আমি জানি ডিপ্রেশন কাটানোর উপায় কি।
কি ভাইয়া?
প্রেম করা। আপনি প্রেম করবেন। যে একটু রসিক। রসবোধ প্রবল। যে আপনাকে বুঝবে। আপনার সমস্যা কে বুঝবে। বলতে পারেন আমার মতো কারো সঙ্গে।
কি বলছেন ভাইয়া? প্রেম করলে ডিপ্রেশন থাকে না।
না একদম থাকে না। এটার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে।
প্রথমত প্রেম একটা বিশাল টেনশনের বিষয়। আপনি সারাক্ষন ম্যাসেঞ্জারে ব্যস্ত থাকবেন। এই বুঝি সে আপনাকে ম্যাসেজ পাঠালো। এই পৃথিবীর তাবৎ জিনিস আপনি ভুলে যাবেন। আপনার মনে আছে রোম যখন পুড়ছিলো তখন নিরো বাশি বাজাচ্ছিলো। প্রেম হবে এমন। সারা পৃথিবীর মরে সাফ কিন্তু আপনার চোখ থাকবে আপনার ম্যাসেঞ্জারে তার ম্যাসেজের অপেক্ষায়। একসময় দেখবেন আপনি এবং আপনার প্রেমিক দুইজন এই পৃথিবীতে একা। আর কেউ নেই। দুইজন দুইজনকে ধরে গান গাইছেন
কহো না পেয়ার হে।
দ্বিতীয়ত; প্রেমে সব প্রেমিক কবি হয়ে যায়। আপনাকে নানান ধরনের উপমা দেয়া শুরু করবে। আপনাকে বলবে তোমার মতো সুন্দরী আমি জীবনে দেখি নাই। তুমি এতো সুন্দর করে কথা বলো মনে হয় যেন বসন্তে কোকিল ডাকছে। তোমার ঐ পটল চ্যারা চোখ আহা বলতে ইচ্ছে হয় এখন চৈত্র মাস তোমার চোখে দেখেছিলুম আমার সর্বনাশ। তোমার হাসিতে যেন মুক্ত ঝরে। তোমার ফিগারের কাছে সানি লিওনি কিছু না। আপনি দেখতে যেমনি হন তখন আপনার নিজেকে ঐশ্বরিয়া মনে হবে। সানি লিওনি মনে হবে। আপনি গুনগুন করে গান গাইতে শুরু করবেন। পৃথিবীর তাবৎ জিনিস আপনার ভালো লাগবে। সে আপনার জন্য গান গাইবে
তোমার জন্য মরতে পারি ও সুন্দরী তুমি গলার মালা;
তখন এই পৃথিবীতে কি হচ্ছে তা নিয়ে আপনার কোন মাথা ব্যাথা থাকবে না। শরীরে ভালোবাসার হরমোন টগবগ করবে। জানেনতো ভালোবাসার হরমোন সব ব্যাথা ভুলিয়ে দেয়। আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। আহা আপনি রোগ ব্যাধিকে জয় করবেন।
তৃতীয়ত; প্রেম করলে আপনি ব্যস্ত থাকবেন। তার সঙ্গে কথা বলতে বলতে কোন দিক দিয়ে যে সময় পার হয়ে যাবে টেরই পাবেন না। দেখবেন সকালের সূর্য উঠা নিয়ে কথা শুরু হয়েছে আর কথা শেষ হওয়ার পর দেখবেন সেই সূর্য ডুবে আকাশে উঠেছে পঞ্চমীর চাঁদ।
চতুর্থ। আপনি কখনো একাকী ফিল করবেন না। কেননা আপনি যখনি তাকে বলবেন এই ভয় লাগছে। নিঃসঙ্গ লাগছে। সেতো সেই সুযোগের অপেক্ষায় থাকবে। বলবে এই জান তোমাকে জড়িয়ে ধরলাম। আহা বাস্তবে না হলেও অনলাইনে জড়িয়ে ধরবে। চুমু টুমু দিয়ে একাকার। দেখা যাবে মোবাইলের সব ময়লা, জীবাণু চেটে পুটে খেয়ে নিয়েছে।আমি হাসির ইমো দেই।
নাউজুবিল্লাহ। ভাই আমিতো বিবাহিতা। প্রেম করবো কিভাবে?
আরে কি বলছেন। বিয়ে প্রেমের ক্ষেত্রে কোন বাঁধা না।
আমি কি আমার জামাইয়ের সঙ্গে প্রেম করবো?
জামাইয়ের সঙ্গে বিয়ের পর কি আর প্রেম হয়? জামাইয়ের সঙ্গে যেটা হয় সেটাকে প্রেম না ঝগড়া বলে। সেটা শরীরের জন্য খুব খারাপ। এই দেশে এতো ডায়বেটিসের রোগী দেখেন। তার কারন কি জানেন। তারা সবাই নিজের স্বামী, স্ত্রীর সঙ্গে প্রেম করতে গিয়েছিলো। দেখুন তাদের পরিনতি। এখন তারা ডায়বেটিস এবং প্রেসারের রোগী।
তা ঠিক বলেছেন। কিন্তু জামাই রেখে প্রেম করবো কিভাবে?
জামাইকে একটা ফার্নিচার মনে করবেন। আপনার ঘরে আলমারি আছে, ফ্রিজ আছে, টেলিভিশন আছে তেমন একটা জামাই আছে। আলমারি, ফ্রিজে আপনি আপনার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখতে পারেন জামাই সেই কাজেরও না। তাই ধরে নিবেন জামাই একটা ফালতু ফার্নিচার। যাকে দিয়ে কোন কাজ হয় না। তার একমাত্র কাজ হচ্ছে আপনার সুখকে নষ্ট করা। আপনাকে কষ্ট দেয়া। কিন্তু আমরা যেমন পুরাতন হলেই ফার্নিচার ফেলে দেই না বচ্ছরের পর বচ্ছর সেই ফার্নিচার আমাদের সঙ্গে থাকে, আমাদের পরিবারের অংশ হয়ে যায়। তেমন হচ্ছে জামাই।
তার মানে তুমি একটা ফালতু ফার্নিচার?
মানে কি? কি বলছেন? আমি ফার্নিচার হতে যাবো কেন। তাহলে আপনি প্রেম করবেন কার সাথে?
আমি তোমার বউ রুপন্তীর আম্মু। লুইচ্চা ব্যাটা। তোমার সঙ্গে চ্যাট করার জন্য ফেইক একাউন্ট খুলছি। যাক তোমার কাছ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ পাওয়া গেলো। তুমি বাসার সবচাইতে ফালতু ফার্নিচার। দেখি কার সঙ্গে প্রেম করা যায়। লিস্টে অনেকেই আছে। আমার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াই। আমার যেন কখনো ডায়বেটিস, হাই প্রেসার না হয়। আহা তুমি মানুষটা অনেক লক্ষ্মী। খুব ভালো বুদ্ধি দাও।
আই এম জোকিং রুপন্তীর আম্মু। কি বলছো। এইভাবে কেউ রসিকতা করে। (হা হা হাসির ইমো দেই।)
আমি বাসার সবচাইতে ফালতু ফার্নিচারের সঙ্গে কথা বলে সময় নষ্ট করতে চাই না।
(রুপন্তীর পাপ্পা-রম্য গল্প)
0 Comments
Thanks for your valuable comment. We will be back soon.
Thank you 😊😊😊