ফটিক যখন ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্র

Ads Inside Post

ফটিক যখন ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্র



golpo-gha.blogspot.com
golpo-ghar.blogspot.com   
…ফটিককে মামা জিজ্ঞাসা করিল, 'কি রে ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়বি?' ফটিক লাফ দিয়ে উঠিয়া বলিল,'পড়ব।' ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়িবার নিমিত্তে ফটিক নাক-মুখ কষিয়া পড়িতে লাগিল এবং ইঞ্জিনিয়ারিং এ চান্স পাইয়া গেল। নাচিতে নাচিতে ফটিক ইঞ্জিনিয়ারিং পড়িতে চলিল।
.
ছোটভাই মাখন হিংসায় জ্বলিয়া পুড়িয়া বলিল,'ইঞ্জিনিয়ারিং আর এমন কি? ভারী তো একটা বিষয়। আমি এর থেকেও ভালো কিছুতে পড়িব।' মাখনের মাতা ছেলের এহেন ইচ্ছা শুনিয়া তাহার গল্লপ্রদেশে কষিয়া চুম্বন দিয়া বলিল,'মাখন,আমারখাসা ছেলে।' মাখনের মাতার মনে শঙ্কা ছিল কোনদিন ফটিক মাখনকে জলেই ফেলিয়া দেয় কি মাথাই ফাটায়।
.
জগতে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া ছাত্রদের মত বালাই আর নাই। ভার্সিটি নামক প্রতিষ্ঠানে পড়িলেও স্যারদের অতিরিক্ত নিয়ম-কানুনের কারনে তাহারা না বোর্ডিং স্কুলের ছাত্র, না ভার্সিটির। বোর্ড ভাইভার টেবিলে তাহাদের মুখে আধো আধো উত্তর ন্যাকামি, বেশি পারাও জ্যাঠামি। ফটিক মনে মনে বুঝিতে পারে ইঞ্জিনিয়ারিং ঠিক যেন সে খাপ খাইতেছে না। তাহার মুক্ত হৃদয় ইঞ্জিনিয়ারিং এর সিটি,ল্যাব,কুইজ
,সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার খাচায় বদ্ধ হইয়া ছটফট করিতে লাগিল। বোর্ড ভাইভাতে প্রশ্নের উত্তর না পারিয়া মাথা নীচু করিয়া থাকিত। ইহার মধ্যে ফটিক ব্যাকলগ খাইয়া বসিল। একে তো পড়া করিতে পারে না তাহার উপর ব্যাকলগ খাইয়া সে একদম নাচার হইয়া পড়িল। ভয়ে ভয়ে স্যারের কাছে গিয়া বলিল,'ব্যাকলগ খেয়েছি।' স্যার অধরের দুই প্রান্তে বিরক্তি রেখা অঙ্কিত করিয়া বলিল,'বেশ করেছ। তোমার জন্য মাসের মধ্যে পাঁচবার শর্ট সেমিস্টার নিতে পারি নে।'
.
ফটিক ক্যালেন্ডারের পাতা দেখিয়া বাড়ি যাইবার দিন গুনিতে লাগিল। ছুটির দিন আগাইয়া আসিতে লাগিল। ফটিকের রুদ্ধ প্রানে ছুটির হাওয়া লাগিতে লাগিল। আনন্দের অতিসায্যেই হোক কিংবা টিকিট না পাওয়ার চিন্তায় হোক ফটিক ছুটির কয়েকদিন আগের তারিখে বাসের টিকিট কাটিয়া ফেলিল। পরের দিন ক্লাসে গিয়া শুনিতে পারিল সে যে দিবসে বাসের টিকিট কাটিয়াছে সে দিনই স্যার শর্ট সেমিস্টারের তারিখ দিয়াছে। শুধু তাই নয় ভাইভার তারিখও দিয়েছেন। ফটিকের এতদিনের আশা এক নিমেশেই গুড়িয়ে গেল।
তাহার মাথার Circuit ছিঁড়ে যেতে লাগিল। ... বুকের ভিতর Tension, Stress, বৃদ্ধি পেতে থাকিল। সারা শরীরে Structure Failure দেখা দিল। সে Collapse করিয়া পড়িয়া গেল। বন্ধুরা ধরাধরি করিয়া তাহাকে ভার্সিটির মেডিকেল সেন্টারে লইয়া গেল। মেডিকেল সেন্টারের চিরায়ত ঔষধ নাপা খাইয়া ফটিক অবচেতন হইয়া পড়িয়া রইলো।
.
পরেরদিন দিনের বেলায় কিছুক্ষনের জন্য সচেতন হইয়া ফটিক কাহার প্রত্যাশায় ফ্যালফ্যাল করিয়া চারিদিকে চাহিল। মেডিকেল সেন্টারে এক বন্ধু নিজের ব্যাকলগ এর পড়া করিতে ব্যস্ত রইয়াছে। ফটিককে সে দেখিতে পারে নাই। তাহার পরদিন কাটিয়া গেল। ফটিক ভাল ছাত্রদের মত করিয়া বলিতে লাগিল, “Engineering is the creative application scientific & mathematical principles to design or develop structures, machines etc……….for socio-economic development, safety of life & human well being..........
......” ক্লাস টেস্ট ছিল বলিয়া ফটিক Engineering এর সংজ্ঞা মুখস্থ করিয়াছিল। এখন জ্বরের ঘোরে পড়িয়া ফটিক তাহাই প্রলাপ বকিতেছে কিন্তু যাঁহারা এই সংজ্ঞা পড়ায় তাহারা নিজেরা ছাত্রদের mental well being সম্পর্কে গুরুত্ব দেয় কিনা মেডিকেল সেন্টারের বেডে শুইয়া ফটিক তাহার কূল-কিনারা করিতে পারিতেছে না।
.
এমন সময় ফটিকের মাতা ঝড়ের বেগে ঘরমধ্যে প্রবেশ করিলেন। ফটিকের মস্তক পাশে বসিয়া ডাকিলেন, 'ফটিক,বাপধন আমার।' ফটিক কাহাকে লক্ষ্য না করিয়া মৃদুস্বরে কহিল,'মা! এখন আমার ছুটি হইয়াছে ।আমি বাড়ি যাইতেছি...


Post a Comment

0 Comments