একমুঠো নীল জোসনা

Ads Inside Post

একমুঠো নীল জোসনা



গত পর্বের লিংকঃ একমুঠো নীল জোসনা


পর্ব-৬

ইলমাজকে মায়ার দিকে এভাবে দৃড় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে হাত কাঁপছে মায়ার।।
সেটা লক্ষ করতেই সরে দাঁড়ালো ইলমাজ।।

খেতে বের হবো সো ১০ মিনিট এর মধ্যে রেডি হয়ে নাও।।(ইলমাজ)

জ, জ্বী স্যার।।(মায়া)

মায়া তাৎক্ষনাক ইলমাজ এর রুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমে গেলো।।

ইলমাজ কড়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মায়ার যাওয়ার দিকে।।

মায়া রুমে গিয়ে দুহাত দিয়ে মুখে হাত বুলাতেই হাত গিয়ে চোখে পড়লো তার।চেঁচাচ্ছে মায়া।।চেঁচাতে চেঁচাতে নাগিন ড্যান্স দিতে শুরু করলো মায়া।।
এভাবে বিদঘুটে আওয়াজ শুনে ইলমাজ আতংকিত হয়ে মায়ার রুমে গিয়ে আরও বেশি আতংকে পড়ে যায়।।মায়াকে এভাবে ব্যাঙ এর মতো লাফাতে দেখে দৌড়ে তার দিকে এগিয়ে গেলো ইলমাজ।।চোখ কচলাতে কচলাতে কান্না করা শুরু করেছে মায়া।।

আরেহ আরেহ আরেহ!!!এমন করছো কেন?হয়েছে টা কি?এভাবে লাফাচ্ছো কেন?অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করলো ইলমাজ।।।

স্যার আমার চোখ খুব বেশি জ্বলছে, আহহহহহহহ😭স্যার স্যার স্যার,,আমি মরে যাচ্ছি স্যাাাাররররররর!!!!!!!জোরে জোরে চল্লাচ্চগে আর কান্না করছে মায়া।।

কিন্তু কিভাবে??দেখি আমি।।চিন্তিত হয়ে বললো ইলমাজ।।

আ,,আমি জানি না স্যার😭অন্নেক জ্বলছে স্যার আহহহহহহহহহহহহ।।।(মায়া)

তুমি চোখ কচলাচ্ছো কেন এভাবে?তাহলে তো আরো বেশি জ্বলবে।।হাত সড়াও।।ধমক এর স্বরে বললো ইলমাজ।।

মায়া এখনো লাফাচ্ছে মায়া।।ইলমাজ টান দিয়ে মায়ার চোখ থেকে হাত সড়িয়ে ধমক দিলো।।

সোজা হয়ে দাঁড়াও ইউ ফুল!!!ধমক দিয়ে বললো ইলমাজ।।

ধমক শুনে চোখ থেকে হাত নামিয়ে দাঁড়িয়ে গিয়ে ফুপাচ্ছে মায়া।।

ইলমাজ মায়ার চোখে দুহাত দিয়ে হাল্কা খুলে চেক করতে লাগলো।। এক চোখ খুব লাল হয়েছে দেখে রাগান্বিত চোখে তাকালো মায়ার দিকে।।চোখে ফু দিচ্ছে আর রাগে ফুসছে ইলমাজ।ওয়াশ্রুম থেকে রুমাল ভিজিয়ে এনে আলতো ভাবে চোখ মুছে দিচ্ছে মায়ার আর পর পর ফু দিচ্ছে।।

এখন ঠিক লাগছে?(ইলমাজ)

চোখ খুলে ইলমাজ এর দিকে তাকিয়ে মাথা ঝাকালো মায়া।।জ্বলা পোড়া কমলেও চোখ এর লাগছে ভাব টা এখনো কমে নি মায়ার।।

বাম লাগিয়ে দেয়ার পর হাত না ধুয়েই চোখে হাত দিয়েছিলে তাই না?(ইলমাজ)

মায়া চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।।।😞

কথা কি শুনতে পাও না?ধমক দিলো ইলমাজ।।

আম,,আমার খেয়াল ছিলো না স্যার।।আমতা আমতা করে বললো মায়া।

রাগে মাথা ফাটছে ইলমাজের।।নাক ফুলিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে মায়ার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।।তা দেখে মায়া ভয়ে ঢোক গিলছে।।

আমি আগেও বলেছিলাম খামখেয়ালি মানুষ গুলা আমার একদম অপছন্দের,আর বার বার তাই রিপিট করো।। সমস্যা কি তোমার আমি এটাই বুঝি না।।ধমকের স্বরে বললো ইলমাজ।

মায়া গোমরা মুখে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।।

এক্ষুনি গিয়ে হাত ধুয়ে এসো।।উচ্চকণ্ঠে বললো ইলমাজ।

মায়া দৌড় দিয়ে ওয়াশ্রুমে চলে গেলো। ইলমান এখনো রাগে প্রায় হাঁপানোর উপক্রম।।
ইলমাজের এমন ব্যাবহারে যতটা না কষ্ট পেয়েছে তার দ্বিগুন আনন্দবোধ করছে মায়া।।কেন জানি এক অজানা অনুভুতি কাজ করছে মায়ার মনে।।মায়া হাত ধুতে ধুতে ইলমাজের তার প্রতি এতটা কনশাস হওয়ার কথা ভাবছে আর মুচকি হাসছে।হঠাৎ ইলমাজের ডাকে হুশ ফিরলো মায়ার।।এক দৌড়ে ওয়াস্রুমের বাইরে গিয়ে পৌছালো সে।।

তারা রাতের খাবারের উদ্দেশ্যে বের হলো।
রেস্টুরেন্টে বসে এদিক সেদিক খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে মায়া।।

what would u like to have?(ইলমাজ)

স্যার আগে একটু চা খেতে পারলে বেটার ফিল করতাম।😑(মায়া)

ইলমাজ বিরক্তিভাব নিয়ে মায়ার দিকে তাকালো।

এটা রাতের খাবারের সময়।।চা খেতে আসি নি এই মুহুর্তে।। (ইলমাজ)

ওহ,এক কাপ ও হবে না?(মায়া)

এটা চাইনিজ রেস্টুরেন্ট দেখছো না?দেখছি আমার মান সম্মান সব ডুবাবে।।(ইলমাজ)

মায়া নিচের দিকে তাকিয়ে জ্বিব্বাহ তে কামড় দিয়ে রেখেছে।।

কি খাবে?ওয়েইটার দাঁড়িয়ে আছে।।চোখ রাঙ্গিয়ে বললো ইলমাজ।

থাই স্যুপ,ফ্রাইড চিকেন,পাস্তা😎(মায়া)

ক 'টা বাজে?প্রায় ১১ টা এটা ডিনার টাইম এই সময়ে তুমি স্ন্যাকস্ অর্ডার করছো?বাহ বেশ!!!আগে ভাবতাম তোমার স্ক্রু সামান্য লুজ,,কিন্তুএখন দেখছি তোমার মাথায় স্ক্রু ই নেই ।।(ইলমাজ)

তাহলে আমাকে জিজ্ঞেস করছেন কেন?নিজে অর্ডার করলেই তো পারেন।মুখ ভেংচি দিয়ে বললো মায়া।

ইলমাজ নিজের ইচ্ছা মতো অর্ডার করে মায়া যা যা বলেছে তাও অর্ডার করলো।

ইলমাজের জন্য অনেক গুলো খাবার এসেছে আর মায়ার জন্য যা বলেছে কেবল তাই।।

ইলামাজের খাবার দেখে চোখ উল্টালো মায়া।।

মায়াকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইলামাজ ভ্রু নেড়ে কি হয়েছে তা ইশারায় জিজ্ঞেস করলো।

চাপা হাসি দিয়ে না সূচক মাথা ঝাকালো মায়া তাও নাপারতে।।
মায়ার অবস্থা দেখে ইলমাজ পারছে না অট্টহাসি দিতে।।

মায়া খাবার সামনে রেখে ইলমাজের খাবারের দিকে তাকিয়ে ন্যাকা কান্না করার মতো মুখ বানিয়ে রেখেছে।

মায়ার জন্য অনলি ১ বাটি ফর ১ পারসন স্যুপ,পাস্তা ও সেইম,আর চিকেন মাত্র ২ পিস তাও ছোট।। এগুলো খেয়ে কি কার পেট ভরবে?বিশেষ করে ৪-৫ ঘন্টা না খেয়ে থাকা তার উপর কাউকে মেরে কাকতাড়ুয়া বনানোর পর??(আমার তো ভরবে না ভাই)

এগুলো খাওয়ার পর ও মায়ার আরো খেতে ইচ্ছে করছে,,

এই লোক ২ প্লেট কাশ্মিরি পোলাও উইথ চিকেন রেজালা এন্ড প্রোউন চিজ সব একাই খাবে?কেমন লোক?? একটু বলছে ও না খেতে।।😭হনুমান হনুমানই থাকে মানুষ হয় না।।মনে মনে বলছে মায়া।।

আমাকে গালি দেয়া শেষ হলে বাকি প্লেটের গুলো আপনিও ভক্ষণ করিতে পারেন।।বাকা হেসে বাকী প্লেটের খাবারগুলো মায়ার দিকে ঠেলে দিয়ে বললো ইলমাজ।।

সত্যি এগুলো সব আমার জন্য? খুশি হয়ে জিজ্ঞেস করলো মায়া।।

জ্বী আপনি ব্যাতিত এখানে আর কেউ আছে?আমি তো দেখছি না!আর যদি থাকে তাহলে আপনি তাহাকে ডোনেট করিতে পারেন এই খাবার গুলো।। (ইলমাজ)

না,না,না,,আমি একাই এই মেহেরবানি সহ্য করে নিবো।।খাবার গুলো গপগপিয়ে খেতে শুরু করলো মায়া।।

ইলমাজ মুখে হাত দিয়ে তার হাসি লুকানোর প্রয়াস করছে।।

খাওয়া শেষে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে ইলমাজ এর দিকে তাকালো মায়া।।

থ্যাংক ইউ স্যার।।(মায়া)

এই ধন্যবাদান্তের কারন যদি আমারে একটু জ্ঞাত করিতেন তাহলে আপনার সহিত বেশ উপকৃত হইতাম জনাবা।(ইলমাজ)

আমার কেয়ার করার জন্য।। (মায়া)

খাবারগুলো শেয়ার করাকে যদি তুমি কেয়ার মনে করো তবে তা একান্তই তোমার ভুল ধারনা।।(ইলমাজ)

,,,,,,,,মায়া জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ইলমাজের দিকে।।

এতো সেন্টি হওয়ার দরকার নেই।।আমি খাওয়ার সময় যেভাবে তাকিয়ে ছিলো যদি নজর পড়ে তাহলে চার দিন আমাকে হসপিটালের চক্কর কাটাতে হতো ।। তাই শেয়ার করেছি।।(ইলমাজ)

মায়া ইলমাজের দিকে এমনভাবে তাকিয়ে আছে যেন এক্ষুনি কাঁচা গিলবে ইলমাজকে।।

মন তো চাচ্ছে আপনাকেও চিবিয়ে খেতে।।রাগে ফুসতে ফুসতে বীড় বীড় করে নিজেই নিজেকে বলছে মায়া।।
------------------------------
সকাল ৯ টায় মিটিং এ্যাটেন্ড করার জন্য রেডি হচ্ছে ইলমাজ,,আর মায়া এখনো নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে।।।রেডি হয়ে আরও ১৫ মিনিট রুমেই অপেক্ষা করলো ইলমাজ,মায়া এখনো আসছে না তাই কিছুটা খটকা লাগলো তার।।

মিটিং ১০:৩০ মিনিটে, আর এখন প্রায় সাড়ে ন'টা।যে হোটেলে মিটিং সেখানে পৌছাতেও আধা ঘন্টা লেগে যাবে,,এই মেয়ে এখন আসছে না কেন?ভ্রু কুচকে ফোন হাতে নিয়ে মায়ার নম্বরে কয়েকবার কল দেয়ার পরও মায়া কল পিক করলো না।।।

রাগে গা ঘিন ঘিন করছে ইলমাজের,ফোন পকেটে রেখে মায়ার রুমের দিকে এগুলো সে।।রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে দেখলো দরজা ভিতর থেকে লক।।

ইলমাজ ভদ্রতার সাথে দরজা বেশ কয়েকবার হাল্কা নক করলো এর পরও দরজা খুলছে না মায়া।।ইলমাজ আবারও ঠকঠক করে দরজায় কয়েকবার আঘাত করলো এরপর ও দরজা খোলার কোন আবাস পাওয়া যাচ্ছে না।।

এবার খুব জোরে জোরেই কাধ দিয়ে দরজা ধাক্কাতে শুরু করলো সে,এরপর ও দরজা খুলছে না মায়া।।ইলমাজ দুশ্চিন্তায় আতংকিত বোধ করছে।।ভাবছে হয়তো কোন বিপদ হয়েছে কিনা আবার।।ইলমাজ আবার কল করলো মায়ার নম্বরে ভিতর থেকে ফোন এর আওয়াজ পেয়ে আরো ঘাবড়ে গেলো সে।।এবার নিশ্চিত এই মেয়ের কোন সমস্যা হয়েছে।।ইলমাজ রিসিপশনের দিকে দৌড় দিলো।।সিড়ি দিয়ে খুব দ্রুত গতিতে নামার কারনে সবাই হা করে তাকিয়ে আছে ইলমাজের দিকে।।রিসিপশনিস্টের সামনে দাঁড়িয়ে হাঁপাচ্ছে সে।।

স্যার কোন সমস্যা? (রিসিপশনিস্ট)

রুম নাম্বার ১০৩ এ যিনি আছেন,ভিতর থেকে তার দরজা লক্ড বেশ অনেক্ষন যাবৎ দরজায় নক করার পরও খুলছে না,i think কোন প্রব্লেম হয়েছে,আর আপনাদের কাছে দরজা খোলার কোন বিকল্প পদ্ধতি আছে?It's emergency.. ইলমাজ হাঁপাচ্ছে।।

জ্বী স্যার অবশ্যই আছে,আপনি চিন্তা করবেন না।।আমরা এক্ষুনি ব্যাবস্থা করছি।।রিসিপশনিস্ট একটা চাবি ইলমাজের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো

---স্যার,এরকম বিপদাপদ এর জন্য আমরা এক্সট্রা চাবি রাখি,এটা দিয়ে হোপফুলি দরজা খোলা যাবে।।।

জ্বী থ্যাংক্স।।চাবি হাতে নিয়ে আর একমিনিট ও দাঁড়ালো না ইলমাজ।।সোজা সিড়ি বেয়ে মায়ার রুমের দরজা খুলে যা দেখলো তার জন্য মোটেও প্রস্তত ছিলো না সে।।

মায়া পরম শান্তিতে নিদ্রায় নিয়জিত,, নাক ডেকে ঘুমুচ্ছে।।আর তা দেখে ইলমাজের রাগ চরম পর্যায়ে।।মনে হচ্ছে ইলমাজ এখন জলজ্যান্ত বম্ব যা এক্ষুনি ব্লাস্ট হয়ে সব কিছু জ্বালিয়ে ছায় ছায় করে দিবে।।

ইলমাজের চেহারা দানবের রুপে রুপান্তরিত হয়েছে যা দেখে যেকোনো সাধারন ব্যাক্তির গা ভয়ে ছম ছম করবে।।

ইলমাজ মায়ার বেডের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো,,।।নাক ফুলিয়ে একহাতে ঘাড় ঘসছে সে।।এই নিরবতা যেনো কোন বিপদের সংকেত দিচ্ছে।।

মিস মায়া আজহারি, দাঁতে দাঁত চেপে ডাকলো ইলমাজ।।
হাতের বাহু ধরে হাল্কা ঝাকালো যদিও তার মাঝে সংকোচবোধ কাজ করছিলো।।
দু তিন বার ঝাকানোর পর ঘুমের ঘোরেই মায়া বলে উঠলো

''গরুচোর ,, আমাকে ঘুমুতে না দিলে কিন্তু গোয়াল ঘরে বেঁধে তোকে আমি গোবর দিয়ে স্নান করাবো''।।

ইলমাজ রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে মায়ার দিকে।।ওয়াশ্রুম থেকে এক মগ পানি এনে হাই স্পিডে মায়ার মুখে ঝাকিয়ে মারলো।

আল্লাহ সুনামি এসেছে,পালাউ সবাই।।হুড়মুরিয়ে উঠে সোজা দাঁড়িয়ে চিৎকার করতে লাগলো মায়া।।।

সাট আপ ইউ ফুল😠ইলমাজ রাগে ফুসতে ফুসতে বললো।।

এহহহহহহ,,,স্যরি স্যার আমি জানতাম না,ওভাবে পানি মারাতে ভেবছি সুনামি এসেছে।কিন্তু আমি এতক্ষণ বিছানায় কি করছিলাম আর ক টা বাজে স্যার?(মায়া)

ইলমাজ শুধু হিংস্রিত চাহনি তে তাকিয়ে আছে মায়ার দিকে,স্তব্দ হয়ে আছে সে।
মায়া ইলমাজকে দেখেই বুঝতে পারলো তার ভাব স্বভাব তেমন সুবিধের লাগছে না।
মায়া তারাতাড়ি ফোন হাতে নিয়ে দেখলো প্রায় ১০ টা বেজে গেছে।।মায়া চোখ ছানাবড়া করে জ্বিব্বাহয় কামড় বসালো।।

তোমাকে নিজের সাথে নিয়ে আসাটা আমার জীবন এর সবচাইতে বড় বোকামি ছিলো।।।

রাগে হন হন করতে করতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো ইলমাজ।।মায়াও রেডি না হয়ে উস্কোখুস্কো চুলে ইলমাজের পছু পিছু দৌড় দিলো।
ইলমাজ গাড়িতে গিয়ে বসলো ইলমাজের পাশের সিটে মায়াও তাড়িঘড়ি গিয়ে বসলো৷
ইলমাজ নাক ফুলিয়ে আড়চোখে মায়ার দিকে একবার তাকিয়ে আবার অন্য দিকে মুখ ঘুরালো।

ইলমাজের এই রুপ কেন জানি সুবিধের ঠেকছে না মায়ার কাছে।।মায়া ইলমাজের দিকে তাকিয়ে তার চেহারার ভাব বুঝার ব্যাপক চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছে কিছু বুঝুক আর না বুঝুক তবে এটা অবশ্যই বুঝতে পারলো যে এই নিরবতা কোন এক বিপদের সংকেত দিচ্ছে।

হোটেলে পৌছে বিজনেস মিটিংয়ের জন্য যে টেবিল বুক করা হয়েছিলো সেদিকটায় গিয়ে দাঁড়ালো ইলমাজ।।
ক্লাইন্টরা সবাই এসে হাজির।।এই প্রথম কোনকাজে ইলমাজ লেট করে ফেলেছে যার কারনে নিজকে খুব অপমানিত লাগছে তার।।
সবার সাথে হ্যান্ডশেক করে দেরিতে আসার জন্য ক্ষমা চাইলো।

মায়াও দৌড়ে তাদের টেবিল এর পাশে এসে দাঁড়ালো।।

I am sorry guys to make u waited for so long..(ইলামাজ)

It's okay man,,সবাই ইলমাজকে রিল্যাক্স থাকার জন্য অনুরোধ করলো।।

মায়ার দিকে একজন তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো

who is this Queen?

মায়া ফিরে তাকালো,

she is my home maid..নাক ফুলিয়ে চাপা হেসে জবাব দিলো ইলমাজ।

কথাটা শুনে সবাই অবাক হলো তাদের মধ্য থেকে একজন বলে উঠলো,,

We thought she is your partner,she Doesn't seems like a maid coz she looks adorable...

Coz It's Elmaaz Rehman,my choice is always classy so that she has been selected as my maid..বাকা হেসে বললো ইলমাজ।

মায়া চোখের জল খুব কষ্টে আটকে রেখেছে,যেন গোটা জাহান ঘুরছে।।

কথাটা শুনার জন্য একদম অপ্রস্তুত ছিলো মায়া,অসহায় চাহনিতে তাকিয়ে আছে ইলমাজ এর দিকে হয়তো এমন উত্তর আশা করেনি সে,চোখ ছল ছল করছে মায়ার।।মায়া কোন উত্তর না দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিলো।

মিটিং শেষে ইলমাজ গাড়িতে উঠে বসলো। মায়া গুটি গুটি পায়ে গাড়ি সামনে এসে থেমে গেলো।।

ইলমাজ এক ভ্রু কুচকে জিজ্ঞসু দৃষ্টিতে মায়ার দিকে তাকালো।।

স্যার আপনি যান,আসলে কারে আমার বমি আসে আর সকাল থেকে মাথাটাও ব্যাথা করছে যখন মাথা ব্যাথা করে তখন আমি গাড়ি চড়তে পারি না বমি আসে,তাই আমি রিক্সা করে আসছি আপনি যান।।(মায়া)

চুপচাপ গাড়িতে এসে বসো,২য় বার কথা রিপিট করি না আমি।কঠোর কন্ঠে জবাব দিলো ইলমাজ।

মায়া চুপচাপ বাধ্য মেয়ের মতো গাড়িতে উঠে বসলো।
হোটেলের সামনে গাড়ি থামতেই মায়া নেমে পড়লো সাথে ইলমাজও।রাস্তার ওপাশ থেকে একটা ছোট ছেলে বলতে ১০-১১ বছরের হবে,মায়ার দিকে দৌড়ে আসতেই ইলমাজ চমকে উঠলো।

মায়া ফিরে তাকালো,,
আরেহ আরেহ পড়ে যাবে তো আস্তে এসো।আতংকিত হয়ে বললো মায়া।

আফু,আফনের এই চশমা টা কাইল এহানেই ফালাই গেসিলেন ফার্মেসির দিকে ইশারা করে বললো ছেলেটি।

ওহ,আচ্ছা অসংখ্য ধন্যবাদ তোমাকে ভাইয়া,কাল রাত অনেক খুজেছি পাই নি,আমি ভুলেই গেছিলাম যে এটা ফেলে এসেছি।।মুচকি হেসে বললো ছেলেটির মাথায় হাত বুলিয়ে হোটেলের ভিতর ঢুকে গেলো মায়া।

ইলমাজ বেকুবের মতো তাকিয়ে আছে ছেলেটির দিকে।ছেলেটি চলে যাচ্ছিলো তখনই ইলমাজ পেছন থেকে তাকে ডাক দিলো।

তোমার নাম কি ভাইয়া?খুব নম্রভাবে জিজ্ঞেস করলো ইলমাজ।

আমার নাম ইদ্রাক।ছেলেটা বললো।

ওই আপুটাকে কিভাবে চিনো?(ইলমাজ)

আসলে ওই আফাজান কাল রাইতে আমাদের দুহানে আইসিলো মাথা ব্যাতার ঔষুদ এর জন্য, দুহান আধা বান্ধি দিসিলাম কিন্তু এই আফার ছটফটানি দেইক্ষা আব্বায় আবার দুকান খুইল্লা ঔষুদ দিসে,মাথার দরদে আফার মুখ ফুইল্লা লাল হইয়া গেসিলো,ওই সময় চশমা খুইল্লা দুহানের টেবিলে রাইক্ষা তারাহুরাই এইডা আমাদের এইখানে ফালাইয়া গেসিলো।আফায় ওই হুটেলে উঠতে দেইক্ষা বুজচি এনি এহানেই থাকেন,সকাল থেইক্কা অফেক্কা কইরা এহন উনার খুজ পাইয়া এইডা পৌছাইয়া দিলাম।।

ইলমাজের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো যেনো। ইলমাজ মুচকি হেসে ছেলেটাকে বিদায় দিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে চিন্তা করতে লাগলো যে সে সকালে তার সাথে কি করেছিলো।।

তার মানে এজন্যই এতো বেলা হওয়ার পরও মায়ার ঘুম ভাঙ্গছিলো না।।এটা আমি কি করলাম?একবার জিজ্ঞেস করা উচিত ছিলো আমার।উফফফফফ,how could i stoop so low??নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে।।।নিজেকে নিজে বললো ইলমাজ।

রুমে গিয়ে দেয়ালে দু চারটা ঘুসি মারলো ইলমাজ।আমি ও কে কিভাবে ফেস করবো? নিজেকে সামলে ফ্রেস হয়ে মায়ার রুমের দরজা নক করলো ইলমাজ কিন্তু দরজা আনলক ছিলো।দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করলো ইলমাজ।মায়া মুখ মুছতে মুছতে ওয়াস্রুম থেকে বের হয়ে খানিকটা অবাক হলো ইলমাজকে দেখে।।

মায়ার মুখ,চোখ ফুলে লাল হয়ে আছে,হয়তো এতক্ষন কেঁদেছিলো তা বুঝতে বাকি রইলো না ইলমাজের।

স্যার,কিছু লাগবে?কিছুর প্রয়োজন হলে আমাকে কল করে ডেকে নিতেন,আপনি এতো কষ্ট করে এখানে এসেছেন কেন?খুব স্বাভাবিক হয়ে বললো মায়া।

ইলমাজ অপরাধীর মতো তাকিয়ে আছে মায়ার দিকে।।
ইলমাজ কিছু বলতে যাবে তখনি মায়া আবারও বলে উঠলো স্যার মিটিং যেহেতু শেষ এবার তো আমরা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিতে পারি।(মায়া)

ইলমাজ অবাক হচ্ছে ঠিকই কিন্তু কেন জানি অদ্ভুত লাগছে মায়ার এমন আচমকা কথাবার্তায়।

রাতে ফার্মেসিতে কেন গিয়েছিলে?(ইলমাজ)

আম,,আ,আসলে স্যার ভাল্লাগছিলো না আর ঘুম ও আসছিলো না তাই ভাবলাম একটু হেটে আসি,নিচে নেমে রাস্তার ওপারে দেখছি ওই বাচ্চা ছেলেটা তার ফার্মেসির গেট লাগাতে পারছিলো না তো রাস্তা পার হয়ে হেল্প করতে করতে চশমা টা হয়তো ওখানেই পড়ে গিয়েছিলো,খেয়াল করিনি।আমতা আমতা করে জবাব দিলো মায়া।

অফিসে জয়েন করেছো বেশ কিছুদিন পাড় হলো একবারও তোমাকে চশমা পড়তে দেখি নি,কাল হঠাৎ চশমা পড়ার কারন কি?(ইলমাজ)

আ,আ,আসলে স্যার ঢং করার জন্য পড়েছিলাম আর কি একটু,এই ছাড়া আর অন্য কোন কারন নেই,বিপদে পড়া হাসি হাসলো মায়া।😅

খুবই লজিকাল আন্সার।।bravo!!(ইলমাজ)

মায়া গোমড়া মুখে দাঁড়িয়ে আছে।ইলমাজ ঠিকই বুঝতে পারছে মায়া এখন কি অবস্থায় আছে।।

স্যার বলছিলাম কি ডিল তো শেষ, আমরা কি বিকেলের দিকে রওয়ানা দিতে পারবো?(মায়া)

রাতে একটা বিজনেস গ্র্যান্ড পার্টি আছে মিডনাইট পর্যন্ত,সো ওটা এট্যান্ড করা ওতি অবশ্যক,নাহয় এক্ষুনি বেরিয়ে পড়তাম বাড়ির উদ্দেশ্যে। মায়ার দিকে অপলক তাকিয়ে এক্নাগারে বললো ইলমাজ।

have a great day sir..চাপা হাসলো মায়া।

রাত ৮ টার দিকে রেডি হতে হবে।(ইলমাজ)

আচ্ছা স্যার,রেডি হওয়ার সময় যদি কিছুর প্রয়োজন হয় আমাকে অবশ্যই ইনফর্ম করবেন।(মায়া)

তাহলে তুমি রেডি হবে কিভাবে?(ইলমাজ)

বিজনেস আপনার,গেস্ট আপনি,পার্টিটা ও আপনার জন্য তো আমি গিয়ে কি করবো?আর তাছাড়া আপনার এক্সক্লুসিভ জীবনযাপন এর রয়েল পার্টিগুলো এট্যান্ড করার মতো যোগ্যতা আমার নেই স্যার।আমাকে আর লজ্জা দিবেন না কারন আমি আপনার পরিবেশের সাথে খাপ খাই না।চাপা হেসে বললো মায়া।

মায়ার এমনও একটা রুপ আছে তা আজকে না দেখলে হয়তো ইলমাজ কখনোই বুঝতে পারতো না যে মেয়েটা কি পরিমানের সেল্ফরেস্পেক্টিভ।আর মায়া এসব কেন বলছে তাও কোন অংশে বুঝার বাকি রইলো না ইলমাজের।

ইলমাজ মায়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে,মায়া চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে ইলমাজের দিকে,ইলমাজ মায়ার দিকে এগুচ্ছে আর মায়া পিচুচ্ছে।।

.....
.........(চলবে )...........



Post a Comment

0 Comments