রোম্যান্স | Romance

Ads Inside Post

রোম্যান্স | Romance

golpo-ghar.blogspot.com
golpo-ghar.blogspot.com


   হোম কোয়ারেন্টাইনে ভেবেছিলাম রুপন্তীর আম্মুর সাথে ভালো সময় কাটাতে পারবো। সারাবছরই ব্যস্ততায় তেমন একটা সময় দিতে পারিনি। বেচারি খুব মিস করে আমাকে জানি!

সকাল থেকে ট্রাই করছি রুপন্তীর আম্মুকে হাতের কাছে পাওয়ার কিন্তু কোনরকমই পাচ্ছিনা। কোন না কোন কাজে ব্যস্ত থাকে।

রুমে রুপন্তীর আম্মু কাপড় ভাজ করছিল আমি পেছন থেকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম।

আরে কি করছেন? ছাড়েন ছাড়েন রুপন্তী চলে আসবে!

আরে আসুক, এই ভালোবাসা না থাকলে তো রুপন্তী আসতো ই না।

হয়ছে, এখন এতো ভালোবাসা জাগতেছে কেন? এর আগে তো খবর ছিলনা।

এক মিনিট দরজাটা বন্ধ করি তারপর বলছি। দরজাটা বন্ধ করে বেশ রোমান্টিক ভঙ্গিতে এগিয়ে গেলাম। রুপন্তীর আম্মুর হাতটা ধরে কাছে টেনে নিলাম। রুপন্তীর আম্মুও বেশ লাজুক চোখে তাকালো। অমন সময় খাটের নিচ থেকে জরিনা খালা লাঠি একটা নিয়ে বের হল।
কি যেনো খুঁজতেছে!

আমরা দুজন ভয় পেয়ে গেলাম!

কিরে জরিনা খালা তুমি এখানে?

ভাইজান ঘরে ইঁদুর এক্কান ঢুকছে তয় খুঁজে পাইতাছি না। আন্নে দেখচ্ছেন্নি!

এদিকে ইঁদুরের নাম শুনে রুপন্তীর আম্মু ভয়ে খাটের উপর উঠে পড়লো।

জরিনা খালা ঘরে ইঁদুর আসলো কেমনে?

আরে ভাইজান ইঁদুর আইয়ে ন, আই ইঁদুরেরে দৌড়ানি দিয়া ঘরে আনি আন্নের রুমে ঢুকাইয়া দিছি। হেতেরে আই বহুত দিন ধইরা খুঁজতাছি, এহন তারে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখি লাঠি দি হিডাইয়া মারি হেলামু!
সরেন আন্নে দেহি আলমারির তলে গেছে নি কোন!

জরিনা খালা ইঁদুর খুঁজতেছে।
এদিকে আমি আর রুপন্তীর আম্মুকে কাছে পাই নি! ইঁদুরের ভয়ে রুমেও সারাদিন ঢুকেনি।

বিকেলে দেখলাম রুপন্তীর আম্মু রান্না করছে কিচেনে। কেউ নাই দেখি আবারো রোমান্টিক ভাবে এগিয়ে গেলাম। রুপন্তীর আম্মুকে বিয়ের আগের দিনগুলো মনে করিয়ে একটু রোমান্টিক করে তুলছিলাম। সে ও খুব ভালো রেসপন্স দিচ্ছে। পকেট থেকে মোবাইল বের করে কিশোর কুমারের গান ছেড়ে দিলাম।
দুজনে বেশ হেলেদুলে নাচলাম।
আবার দৌড়ে কিচেনে ঢুকলো জরিনা খালা,

আফা কি পুড়াইয়া হেলাইছেন! পুরা বাড়ি পোড়া গন্ধ!

ফিরে দেখি তরকারি পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে।

এ থেকে একটা জিনিস আবিষ্কার হল যখন আপনি রোমান্টিক মুডে থাকবেন তখন নাকের সেন্স কাজ করেনা।

সন্ধ্যায় এরা সবাই মিলে সিরিয়াল দেখছিল,
আমি বিরক্ত হয়ে বেলকনিতে চলে এলাম। এসে রুপন্তীর আম্মুকে ফোন দিয়ে বললাম, একটু বেলকনিতে আসো না!

এখন পারবো না। এখন নায়িকার মুখের প্লাস্টার খোলা হবে।

প্লীজ একটু আসো না!

অনেক রিকোয়েস্টের পর আসলো,

কি হয়ছে?

ওই যে দেখো চাঁদ তারা সবাই অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। বিয়ের আগে কতো তো বলতে, একসাথে দুজনে আকাশের তারা দেখবো! আর এখন,
আচ্ছা শুনোনা! তোমাকে আজকে খুব সুন্দর লাগছে! একটু জড়িয়ে ধরি!

আরে না! কেউ চলে আসবে তো!

আরে কিচছু হবেনা! ওরা সিরিয়াল দেখছে। আসো!

রুপন্তীর আম্মু একটু কাছে আসতেই জরিনা খালা উঁকি মেরে বললো,
আফা নায়িকার হ্যালাস্টার খুলতাছে, তারাতরি আইয়েন!

রুপন্তীর আম্মু গেল তো গেল আর এলো না। ইঁদুরের ভয়ে রুমেও আসেনি।

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি রুপন্তীর আম্মু ঘরে নাই, জরিনা খালা ঘর ঝাড়ু দিতাছে। তারে জিজ্ঞেস করাতে সে বললো ছাদে গেছে কাপড় শুকাতে!

বাহ! এটাই সুন্দর সুযোগ রোম্যান্স করার!
দৌড়ে গেলাম ছাদে। রুপন্তীর আম্মু দেখি গুনগুন করে গান গেয়ে ছাদের এক কোণায় কাপড় শুকাচ্ছে। আমি পেছন থেকে গিয়ে একটু ভয় দেখানোর জন্য এগিয়ে গেলাম।
হঠাৎ শুকাতে দেয়া শাড়ির সাথে আমার পা আটকে গিয়ে হুচট খেয়ে আমি রুপন্তীর আম্মুর উপর গিয়ে পড়লাম!
রুপন্তীর আম্মুও আমার ধাক্কা খেয়ে সোজা দুইতলার নিচে গিয়ে রাস্তার ডাস্টবিনের উপর পড়লো।

আমি, মাথায় হাত দিয়ে কাঁদছি রুপন্তীর আম্মু বেঁচে আছে তো!
হঠাৎ পেছন থেকে রুপন্তীর আম্মু কাকে যেনো বলছে,
জানেন ভাবী রুপন্তীর পাপ্পা এ দুদিনে বেশ রোমান্টিক হয়ে গেছে। আক্কাস ভাই ও তো মনে হয় আপনার সাথে বেশ রোম্যান্স করে! তাই না?

ঘাড় ফিরিয়ে দেখি রুপন্তীর আম্মু ওপাশ ফিরে কাপড় শুকাচ্ছে।

হঠাৎ রুপন্তীর আম্মু ফিরে দেখলো আমি ভূতের মতো দাঁড়িয়ে আছি।
একি রুপন্তীর পাপ্পা আপনি? ভাবী কি চলে গেছে?

হু! চলে গেছে। চলো আমরাও চলে যাই! এখানে বেশি থাকা ঠিক হবেনা!


 (রম্য গল্প)



Post a Comment

0 Comments