অনলাইনে গরুর হাট

Ads Inside Post

অনলাইনে গরুর হাট


golpo-ghar.blogspot.com
golpo-ghar.blogspot.com




আমি পান খেতে খেতে অনলাইনে গরু দেখছি। পান খাওয়া অবশ্য প্রথমে পরিকল্পনার মধ্যে ছিলো না। সাধারনত কোরবানির গরুর হাটে গেলে ভাই পান খায়। বুদ্ধিটা আমার ভাইয়ের। পান খেলে টেনশন কমে। ডাক্তারী বিদ্যা সেখানে ফেইল। ভাই গবেষণা করে বের করেছে আসলে কোন কিছু চাবালে টেনশন কমে। যেমন গরুর কোন টেনশন নাই। গরু সারাক্ষন কিছু চাবাচ্ছে। আমি রুপন্তীর আম্মুর সঙ্গে এই কথা শেয়ার করেছি।

তোমার টেনশন হলে তুমি কোন কিছু মুখে নিয়ে চাবাতে পারো। তাহলে টেনশন জিনিসটা তোমার জীবন থেকে উধাও হয়ে যাবে। তোমার জীবনে প্রেসার বলে কিছু থাকবে না এবং তোমার কখনো ডায়বেটিস হবে না। দেখো গরু থেকে আমরা কত কিছু শিখতে পারি।

রুপন্তীর আম্মুর দাত কিড়মিড় করে বলে আমারতো প্রায় তোমাকে চাবাতে ইচ্ছে করে। চিন্তা করে বের করোতো তোমাকে চাবালে আমার টেনশন কমবে কিনা?

আমি বুঝতে পারি না স্ত্রী জাতি এমন হয় কেন। সেদিন কোথায় জানি পড়েছি পতি পরম গুরু। রুপন্তীর আম্মুকে কথা বলামাত্রই বলেছে তুমি ঠিক শুনো নাই। আসল কথা হচ্ছে পতি পরম গরু।

তবে রুপন্তীর আম্মুই একমাত্র না যে আমাকে গরু প্রজাতির মনে করে। বাবাও আমাকে গরু প্রজাতির মনে করে। তিনি যখন ছেলেকে গরু কিনার দায়িত্ব দেন তখন বলেন এক গরু আরেক গরুকে কিনবে। আশা করি সমস্যা হবে না, ভাই এই দায়িত্ব থেকে অব্যহতি পেয়েছে। কেননা সে অনলাইনে গরু কেনার পক্ষে না। তার ইচ্ছে ছিলো দুই ভাই মিলে পিপিই পরে গরুর হাটে গিয়ে গরু কিনবে। কিন্তু তখন বেরসিক দারোয়ান খবর দিয়েছে আজকে গরুর হাটে দুইজন পিপিই পরে গরু কিনতে গিয়েছিলো। গরুর গুতা খেয়ে দুইজন এখন হাসপাতালে। পিপিই দেখলেই নাকি গরু ক্ষেপে যাচ্ছে। তাই এই প্ল্যান বাদ। গরু করোনা ফ্রেন্ডলি না।

এরমধ্যে আমার বস মধ্যে প্যাচ ঢুকিয়ে দিয়েছে। সকাল সকাল ফোন দিয়ে বলে

আইয়ান দুইটা আবাল দরকার।

 আমি থতমত খাই। কেননা অফিসে কয়েকজন আছে যাদেরকে বস সারাদিন আবাল বলে গালি দেয়।

আমি জিজ্ঞেস করি বস অফিসে গেলেইতো পাবেন। আজকে ছুটির দিনে রায়হান ভাই এবং শফিক ভাইকে কই পাবেন?

আরে আইয়ান অফিসের আবালগুলো দরকার নাই। ওদেরকেতো কোরবানি দেয়া যাবে না। আমার দুইটা আবাল গরু দরকার।

আমি এই প্রথম শুনি গরুর মধ্যে আবাল গরু আছে।ঘাটাঘাটির পর জানতে পারি যেসব গরুকে ছোট বেলায় খোজা করে দেয়া হয় তাদেরকে আবাল বলে।

বাসার গরুর কিনার দায়িত্ব পরেছে আমার উপর।সকালবেলা থেকে অনলাইনে গরু দেখে যাছি।

গরুর ব্যাপারীদের অনলাইনে অদ্ভুত অদ্ভুত নাম। এখন যার সঙ্গে কথা বলছি তার ফেসবুক নাম হচ্ছে দুষ্ট ছেলের মিষ্টি হাসি। প্রোফাইলে একটা পিচ্চি ছেলের ছবি দেয়া। এই ছেলেকে দেখে গরুর ব্যাপারী মনে হচ্ছে না। তার গরুর বর্ননাও অদ্ভুত

গরুর নাম বুলেট।

গায়ের রং কালো (কালো গরুর মাংস মজা হয়)

বয়সঃ ২ বচ্ছর ৬ মাস

আড়াই বছরে বুলেটের কোন রোগ বালাই হয় নাই। ছবির থেকে বুলেট সামনা সামনি অনেক আকর্ষণীয় না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবেন না।

আমি দুষ্ট ছেলের মিষ্টি হাসির সঙ্গে কথা বলি

আচ্ছা ভাই আপনার নাম এমন কেন? দুষ্ট ছেলের মিষ্টি হাসি। আপনার আসল নাম কি? রিয়েল নেইম।

ভাই গরু কিনবেন নাকি বইন বিয়া দিবেন? উনি আসছে আসল নাম জিজ্ঞেস করতে।

 আমি থতমত খাই। আর কথা বাড়াই না।

আরেকজন ব্যাপারীর নাম সাল্লু ভাই। এর প্রোফাইলে সালমান খানের ছবি। ফেসবুক না থাকলে আসলে বাংলাদেশে পাগলের সংখ্যা বুঝা যেতো না। সাল্লু ভাইয়ের গরুর নাম সুলতান। সেখানে লেখা সুলতানকে দেখলে আপনার সালমান খানের কথা মনে পড়বে। সবাই সুলতানকে দেখে ট্যারা চোখে চাইয়া থাকবে। যারা সালমান খানের ফ্যান এই গরু তাদের জন্য।

সাল্লু ভাইকে নক দেয়ার পর কোন সাড়া শব্দ নাই। সুলতানের ডিম্যান্ড বেশী মনে হচ্ছে।

আমি আরেকজন ব্যাপারী পেয়েছি। নাম দেখে মনে হচ্ছে মহিলা ব্যাপারী। প্রোফাইল নামঃ নষ্ট মেয়ে। প্রোফাইলে বলিউডের নায়িকা সানি লিওনির ছবি।

গরুর নামঃ জন আব্রাহাম।

গায়ের রং এক বালতি লালের সঙ্গে এক মগ সাদা মিশালে যে রং হবে সেই রং।

বয়সঃ তিন বচ্ছর।

উচ্চতা ৪০ ইঞ্চি।

দেশি ষাড়। একে ফ্যান, লাইট, মশার কয়েল দিয়ে যত্নে বড় করা হয়েছে। শীতকালে হিটার দেয়া হতো। আজেবাজে জিনিস খায় না। খুব রুচিশীল ষাড়।

আমি নষ্ট মেয়ের সঙ্গে কথা বলি

আপু কেমন আছেন?

নষ্ট মেয়েঃ জী ভাইয়া ভালো।

আপু যদি ভিডিও দিতেন।

কার ভিডিও আমার না গরুর।

আমি হাসির ইমো দিয়ে বলি দুইজনেরটাই দেন। দেখি কেমন লাগে।

নষ্ট মেয়ে ভিডিও দিয়েছে। একটা মোটা কালো লোকের সঙ্গে একটা কালো ষাড়ের ছবি। দুইটাই দেখতে একেই রকম।

আপু এটা কি দিলেন। এই ভোটকা কালো লোকটা কে? আপনার স্বামী?

কি কন উল্টা পাল্টা কথা। এটাই আমি। আগে ভালো নাম দিছিলাম। কেউ নক করে না। নষ্ট মেয়ে দেয়ার পর থেকে সব লুইচ্চা ব্যাটারা নক করা শুরু করছে। ঐ শালা এটাই আমি। কথা বার্তা সাবধানে ক। তুই কি গরু কিনবি নাকি বিয়া বইবি।

এরমধ্যে রুপন্তীর আম্মু এসে রুমে ঢুকে। তুমি কি করছো?

নষ্ট মেয়ের সঙ্গে কথা বলছি।

রুপন্তীর আম্মু আমার কান ধরে টানছে...আমি আগেই সন্দেহ করছিলাম। তুমি কোরবানির গরু দেখা বাদ দিয়া এইসব করো। এইবারের কোরবানিতে তোমাকে কোরবানি দেয়া হবে। আমাদের এইবার গরু লাগবে না।

আমি কোনভাবেই বুঝাতে পারছি রুপন্তীর আম্মুকে না এই নষ্ট মেয়ে কোন মেয়ে না একজন জলজ্যান্ত পুরুষ।

(রুপন্তীর পাপ্পা-রম্য গল্প)




Post a Comment

0 Comments