পিন কোড

Ads Inside Post

পিন কোড


golpo-ghar.blogspot.com
golpo-ghar.blogspot.com



তৃতীয় পর্বের লিংক: পিন কোড

#পিন কোড
পর্বঃ- ৪

কঙ্কাল গুলো একত্রে করে দরজা বন্ধ করে দিলাম। রাহি কে জাগিয়ে বললাম জলদি চল এইখান থেকে কে যানি জেগে গেছে। মেইন দরজা বন্ধ করে তালা লাগিয়ে দোতালায় থেকে নেমে কেটে পড়লাম। মৌ এর বাবা শব্দ পেয়ে হয়তো জেগে দোতলায় এসেছে এর আগে পালিয়ে এসেছি আমরা। রাহি আমার দিক তাকিয়ে গালাগালি শুরু করছে আর বলতেছে,, 

- তুই আমারে কল দিবি না যদি কল দেস তাহলে খুব খারাপ হবে বললাম।

আমি একটা কৃত্রিম হাসি দিয়ে রাহি কে বললাম,, 

- শালা তুই যদি আমার কল না ধরিস তাহলে তো বিপদে তুই পড়বি!

- আমি বিপদে পড়বো কেনো?

- তোর গার্লফ্রেন্ড মানে তোর হবু স্ত্রী আমাকে মেসেজ করে তুই আমাকে কল না দিলে আমি তোর গার্লফ্রেন্ড কে কল দিবো পরে তোর জায়গা আমি হয়ে যাবো।

- রিতীমত তুই আমাকে ব্ল্যাকমেল করিস ঠিক আছে যখন ইচ্ছে কল দিস আমি চলে আসবো।

- এইতো ভালো ছেলের ভালো কথা চল আজকে আমার সাথে থাকবি। দু'জনে মিলে আজকে বিয়ার খাবো।

- সত্যি? 

- তোর জন্যই রাখছি চল। 

রাহি আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,,,

- শালা তোর যে কেড়ে বোন নাই তাইলে আমি সত্যিই তোর বোনকে বিয়ে করতাম। সমস্যা নাই তুই আর আমি এক বাড়িতে বিয়ে করব কেমন?

- মাল না খাইতে ধইরা ফেলছে তোরে? তোর বিয়ে ঠিক হয়ে আছে আর আমাকে বলিস এক বাড়িতে দু'জন বিয়ে করবি।

- আরে পাগলা এইটা ভালোবাসা। চল আজকে রুমে না ছাঁদে খাবো। 

- ঠিক আছে চল।

রুমে গিয়ে কলিং বেল চাপতে মা দরজা খুলে হাতে ঝাড়ু নিয়ে হাজির। রাহি কে সামনে দিয়ে আমি পিছনে চলে গেলাম অন্ধকারে মধ্যে ৪ থেকে ৫ টা ঝাড়ুর ঝাটা খেলো বন্ধু টা আমার পিছন থেকে দেখে মায়া বেড়ে গেলো। সামনে গিয়ে,,, 

- মা কি করছো তুমি এতো রাতে কি কাউকে ঝাড়ু দিয়া মারে সকালে ঘুম থেকে উঠার পর না হয় মেরো।

- তোর বন্ধু রাহি কোথায়?

মায়ের মুখে রাহি নাম শুনে রাহি হাসিমুখ নিয়ে সামনে গেলো। বেচারা এতোক্ষণ মার খেয়েছে আমার জন্যে। এখন মার খাবে নিজের জন্যে কিছু করার নাই। মা রেগে মেগে বলে উঠলো,,

- তুই আমার ছেলে কে এতো রাতে নিয়ে খারাপ করছিস। আমার ছেলে ঝাড়ু আঘাত পাইছে তুই বাকী যাবি কি করতে? এই নে তুই ও খা। 

বেচারা কিছু করার নাই সবমিলিয়ে ১০ থেকে ১২ টা পিঠে পড়েছে ঝাড়ুর আঘাত। মা চলে যাওয়ার পর নাক ফুলিয়ে রাহি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ও উল্টো রাগ দেখিয়ে,, 

- শালা তোরে কে বলছে ডাকার সাথে সাথে মায়ের কাছে যেতে মনে করছিস আদর করবে? পাইছিস আদর?

- কে যানতো তোর মা এমন করবে? 

- আচ্ছা থাক মন খারাপ করিস না বিয়ার খেলে সব ঠিক হয়ে যাবে।

- শুধু বিয়ারে দোহাই দিয়ে আজকে বেঁচে গেলি। বিয়ার জন্য না হয় ঝাড়ুর আঘাত সহ্য করলাম সমস্যা নাই। 

- চল রুমে। 

- রুমে কেনো? বলছি না ছাঁদে খাবো।

-আচ্ছা তাহলে তুই দাঁড়া আমি নিয়ে আসি।

বিয়ারগুলো হাতে নিয়ে দরজা বন্ধ করে ছাঁদে উঠলাম। পূবালী বাতাস কানের মাঝে ফিস ফিস করছে পুরো শহর টা স্তব্ধ হয়ে আছে। ঠিক তখনই বিয়ার মুখ টা খুলতে একটা শব্দ হয়। এই পরিবেশে বিয়ার খাওয়ার মজাই আলাদা। খাওয়া দাওয়া করে ছাঁদে শুয়ে পরি। 
রাত ঘনিয়ে সকাল হলো রৌদ্রের আলো যখন কপাল ছুয়ে গেলো তখন না চাইতে নিদ্রা থেকে জেগে রাহি কে উঠিয়ে বললাম রুমে আসতে। সকাল সকাল বাড়ির পাশে এক ভাবি কাপড় ছড়িয়ে দিচ্ছে রাহি হা করে তাকিয়ে আছে,,, 

- রাসেদ মেয়েদেরকে ভিজা চুলে কতো সুন্দর লাগে তাই না? এই পাখি তো এর আগে কখনো দেখি নি।

- এই পাখি দেখবা কি করে পাখি তো সকাল হলে আসে আজকে তো তুমি ছাঁদে ছিলা তাই দেখো ফেলছ। শালা যখন দেখবে যে তুই তাকিয়ে আছিস ওই ভাবির দিক তখন মায়ানমার বর্ডার মনে করে তার স্বামী এসে তোর গুলি করব।

- কেনো? 

- কারন উনার স্বামী BGB তে আছে।

- তুই খালি আমারে মরনের দিক ঠেলে দেস এইটা মোটেও ভালো না। 

- কথা না বাড়িয়ে নিচে চল মা নাস্তা নিয়ে সম্ভবত বসে আছে।

নিচে নেমে দেখি মৌ এর বাবা আমাদের বাড়িতে।
ভিতরে ঢুকে দেখি সাথে মৌ মায়ের পাশে বসে আছে। রাহি মৌ কে দেখে চিনতে একটু ভুল করে নি। রাহি ভয়ে ভয়ে বলল,, 

- বন্ধু তারা কিভাবে জানলো যে আমরা তাদের বাসায় চুরি করতে গেছি।

- চুপ থাক,, পরে সব বলবো। 

এমন একটা ভাব নিয়ে হাসি দিলাম কি হয়েছে কিছু যানি না। আংকেল কে গিয়ে বললাম,,

- আংকেল কখন আসলেন?
- বাবা এই তো ২০ মিনিট হবে। তোমার কাছে এসেছি একটা কথা ছিলো।
- জ্বি বলেন।
- গতকাল রাতে আমরা ঘুমিয়েছিলাম একটা শব্দ শুনতে রুম থেকে বের হয়ে দোতালায় যাই কিন্তু গিয়ে কাউকে দেখি নি তবে একটা রিং পেয়েছি। অনেক দামী রিং সেজন্য ভাবলাম তোমাকে জানায় ব্যাপার টা। 

রাহি তার হাতের দিক তাকিয়ে দেখে তার এনগেজমেন্ট রিং গতকাল ওখানেই পরে গেছে। আর আমি তার দিক নাক ফুলিয়ে তাকিয়ে আছি। আংকেলের কথায় সামনের দিক তাকাতেই মৌ সন্দেহের চোখে আমার দিক তাকিয়েছে। কথা ঘুরিয়ে বললাম,,

- আংকেল রিং টা আমার কাছে দেন আমি তদন্ত করে দেখি কি করতে পারি।

- ধন্যবাদ বাবা এই নেও।

হাতে রিং টা আসতে না আসতে বিড়ালের মতো খামচে মেরে রিং টা নিয়ে গেলো মৌ। অবাক হয়ে মৌ এর দিক তাকিয়ে আছি। মৌ রিং টা হাতে নিয়ে মুখটা কে ভেংচি কেটে বলল,,

- বাবা এতো দামি রিং তো আর চোরের কিনার ক্ষমতা থাকবে না হয়তো ওই বদমাশ চোরটা অন্য কারো কাছ থেকে চুরি করেছে। এইটা আমার কাছে থাকলে সম্ভবত সেফ থাকবে।

আমি রাহির দিক তাকিয়ে তার ভঙ্গিমা দেখতে ছিলাম। দাত কিড়মিড়িয়ে আমার দিক ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। তখন বাধ্য হয়ে মৌ কে বললাম,, 

- রিং টা দিয়ে দেও আমি এইটা দিয়ে ইনভেস্টিগেশন করব।
- আপনি এইটা ছাড়া করবেন। আমি যানি আপনি এইটা ছাড়া পারবেন।

আর কি করার বললাম ঠিক আছে তোমার কাছে রেখে দেও। চোর না হয় আর একটা চুরি করে ফেলবে। রাহি এই কথা শুনে আমার দিক না তাকিয়ে সোজা আমার রুমে চলে গেলো। মৌ তা দেখে বলল,,

- উনি কে?
- আমার বন্ধু। 
- দেখতে তো চোরের মতো লাগে।
- একদমই না সে খুবই বুদ্ধিমান। 

পরে আংকেল বলল,, 

- বাবা আমার কিছু কাজ আছে। আমি চললাম তুমি মৌ কে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে এসো।
- ঠিক আছে আংকেল। আংকেল এই প্রথম বাড়িতে এসেছেন কিছু না খেয়ে যাবেন এক কাপ চা খেয়ে যান।
- বাবা খেয়েছি তোমার আম্মু আসার সাথে সাথে চা দিয়েছে। 
- ওহ। 

আংকেল কে এগিয়ে দিয়ে আসলাম। মৌ উপর থেকে আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে মৌ কিছুটা বুঝতে পেরেছে এখনই জানতে হবে বুঝতে পেরেছে নাকি না। রুমে গিয়ে মৌ কে বললাম আসো আমার রুম টা দেখায়। মৌ আমার পিছে পিছে আসছে আমার রুমের ভিতর। রুমে ঢুকে দেখি রাহি কান্না করছে সাথে সাথে বললাম,, 

- কি রে কি হয়েছে? 
- তুই জানিস না কি হয়েছে আবার অভিনয় করছিস।

মৌ হঠাৎ বলে উঠলো উনার আবার কি হয়েছে? আমি কি জবাব দিবো খুঁজে নে পেয়ে বললাম তার গার্লফ্রেন্ড তাকে ছেড়ে অন্যজনের সাথে চলে গেছে। মৌ শুনে অট্রহাসি দিয়ে বলল উনার মতো মানুষের ও গার্লফ্রেন্ড আছে? হাসতেছে আর বলতেছে। দুজনের মাঝখানে পরে মেজাজ পুরো গরম হয়ে গেছে। ধমক দিয়ে দু'জন কে শান্ত করলাম। পরে রাহি কে বললাম তুই ওই রুমে যা মৌ এর সাথে আমার কিছু কথা আছে। রাহি চলে যাওয়ার পর,,

- মৌ তোমাকে কিছু প্রশ্ন করব প্লিজ মজা না করে উত্তর দিবা। 
- ঠিক আছে বলেন কি জানতে চান।
- আমি শিমুলের ব্যাপারে পুরো তথ্য জানতে চাই মানে সে কোথায় ছিলো কাদের সাথে উঠাবসা করত Everything.. 

মৌ মনমরা হয়ে নিচের দিক তাকিয়ে রইলো। 
পরে পূণরায় আবার বললাম প্লিজ, 

- সরি ওইদিন আপনার সাথে মজা করেছি শিমুল আমার আপন ভাই খুব ভালোবাসতাম। 
আপনি শিমুলের ব্যাপারে জানতে হলে আপনাকে আমার নানুর বাসায় যেতে হবে তাহলে সব জানতে পারবেন।

- তোমার নানুর বাসা কোথায়? 

- কুমিল্লা। তিতাস থানা শিকদার বাড়ি বললে বলে দিবে সবাই। 

- ওহ,, আর একটা প্রশ্ন ছিলো?

- হুম করেন।

- তোমার ভাইয়া কখন তোমাদের বাসায় আসতো মানে উদযাপন হলে নাকি মাস খানিক পর পর।

- ভাইয়া যখন বাসায় আসতো তখন কোনো উদযাপন কিংবা মাস বিবেচনা করে আসতো না। সবসময় ঠিক তখনই আসতো যখন আমরা বাড়িতে কেউ থাকতাম না। আমরা কোথাও বেড়াতে গেলে ভাইয়া বাড়িতে আসতো। ভাইয়া আমাদের কখনোই উনার রুমে ঢুকতে দেয় নি। আদ্ব আমরা ওই রুমে কি আছে কেনো ঢুকতে দেয় নি তা দেখার জন্য যায় নি। তবে গতকাল যখন ওই রুমের সামনে এই রিং পাই তখন মনে হলো হয়তো এইটা ভাইয়া আমার জন্য পাঠিয়েছে উপর থেকে।

মৌ এর শেষ কথা শুনে হাসি চলে আসে এতে করে মৌ রাগ করে আম্মুর কাছে চলে যায়। আমি রুমে শব্দবিহীন হাসা শুরু করলাম। এর কিছুক্ষণ পর রাহি রুমে আসলো।

- আমার রিং যেভাবে হোক লাগবে তা না হলে আমার বাবা আমাকে আর বিয়ে দিবে না। এই রিং টা কিছুদিন আগে আমার হবু স্ত্রী পড়িয়ে দিয়েছে তুই তো সবই জানিস যদি দেখে হাতে রিং নাই তাহলে আমি নিশ্চিত আমাকে মেরে ফেলবে। তুই তো জানিস আমার গার্লফ্রেন্ড কতো মোটা যদি আমাকে একটা ঘুষি দেয় তাহলে আমি মরে যামু। 

- শালা নিজের গার্লফ্রেন্ড কে বিয়ে করতেছিস এইটা তো অনেক থাক তারপর ও মৌ এর রিং টা পছন্দ হয়েছে। আমি তোরে নতুন একটা কিনে দিবো। 

- আচ্ছা এখন বল এই মেয়ে তোর কি হয় আর গতকাল এই মেয়েদের বাড়িতে লুকিয়ে লুকিয়ে গেলি কেন?

- এই মেয়ে আমার হবু স্ত্রী। গতকাল লুকিয়ে গিয়েছি কিছু তথ্যের জন্য আজকে তোর জন্য ধরা পড়ে যেতাম। 

- তোরে কি বলছি যে আমাকে নিয়ে যা তুই তো জোর করে নিয়ে গেলি। পরের বার থেকে আমাকে কোথাও নিবি না। 

- ওই মোটি কে যদি একটা মেসেজ পাঠাই তাহলে ১ মিনিট পর তোরে না করে দিবে যে সে তোরে বিয়ে করবে না। কারন টা তো ভালো করে তোর জানা আছে তোর সাথে সম্পর্ক থাকার পর ও আমাকে কিন্তু পছন্দ করে।

- তুই শালা আর কথা বলবি না। যা ঠিক আছে তুই যা বলবি তাই করবো।

- তাহলে আমরা কয়েকদিনের জন্য গ্রামে যাবো জলদি করে বাড়ির থেকে পোশাক নিয়ে আয়। নিচে বাইক আছে এই নে বাইকের চাবি জলদি নিয়ে আসবি। আর একটা কথা তোর বাড়ির পথে মৌ এর বাড়ি মৌ কে নামিয়ে যাস। 

- ঠিক আছে যদি কিছু বলে তাহলে দেখবি তোর হবু স্ত্রী রাস্তায় ফালাইয়া চলে আসবো।

মৌ কে ডেকে বললাম আমার একটা কাজ আছে এক জায়গা যেতে হবে। তোমাকে রাহি নামিয়ে দিয়ে আসবে তুমি রাহির সাথে যাও।
মৌ আমার দিক নাক ফুলিয়ে জবাব দিলো রাহি ভাইয়াকে তো চোরের মতো দেখা যায় আমি উনার সাথে যাবো না। রাহি এই কথা শুনে বলল আমি ও পারবো না নিয়ে যেতে। যে আমাকে চোর বলল তারে আমি সাহায্য করব? পরে রেগে গিয়ে বললাম যেতে বলছি যাও। রাহি ও চুপ করে বলল ভাবি আসেন। রাহি চাবি নিয়ে নিচে চলল। মৌ ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলল,, 

- আমাকে ধমক দিবেন না বলে দিলাম। 
- ধমক দিলে কি করবা শুনি?

আমার চুল গুলো ধরে একটান দিলো চিৎকার করতে বাধ্য হলাম। আম্মু রান্না ঘর থেকে দৌড়ে এসে বলল কি হয়েছে রে? কিছু না আম্মু ব্যাথা পাইছি। মৌ একটা মুচকি হাসি দিয়ে দরজা খুলে বের হয়ে গেলো। আম্মু র মুখে হাসি দেখে অবাক হয়ে গেলাম। কি না কি ভাবলো আল্লাহ জানে। মৌ কে এগিয়ে দিতে গেলাম। মৌ বাইকের পিছনে বসে বলল,,

- কি করতে পারি বুজলেন?
- হুম বুঝতে পারছি বাসায় গিয়ে নিজের গুলো ধরে টান দিয়ো। 
- না,, যখন আমার টান দিতে ইচ্ছে করবে তখন আপনার গুলো ধরে টানবো।

রাহি হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিক। আমরা কি নিয়ে আলোচনা করছি কিছুই বুঝতেছে না বেচারা। রাহি মৌ কে নামিয়ে দিতে গেলো। আর আমি রুমে এসে ক্যামেরা থেকে কার্ড টা বের করে সবগুলো পিক মোবাইলে নিয়ে আসি। কাপড়চোপড় গুছিয়ে ব্যাগে নিলাম। অন্য দিক দিয়ে রাহি মৌ কে নিয়ে বাড়ির সামনে থামিয়ে বলল,, 

- ভাবি নামেন!
- আরে ভাই আপনি তে কখনো এখানে আসেন নি তাহলে কিভাবে যানেন যে এইটা আমার বাড়ি?

রাহি চুপ করে আছে কি জবাব দিবে খুঁজে পাচ্ছে না জবাবে বলল,,

- ভাবি ওইদিন এই পথে যাচ্ছি তো রাসেদ বলল যে এইটা নাকি আপনাদের বাসা।
- ওহ। 
- আচ্ছা ভাবি আমি আসি। বিদায়।
- বিদায়।

আমি তৈরি হয়ে রাহি কে কল দিলাম কোথায়? রাহি বলল যে ৫ মিনিটের মধ্যে চলে আসবে।
মা কে বলে চললাম আর বাবা কে কল দিয়ে বলে দিলাম রেস্টুরেন্ট থাকতে আমি কিছুদিনের জন্য শহর থেকে দূরে যাচ্ছি। সব কিছু হাতে নিয়ে নিচে নেমে দেখি রাহি চলে এসেছে। পিছনে ব্যাগ রেখে বাইক নিয়ে গ্রামের উদ্দেশ্য রওনা দিলাম। যেভাবে হোক কে এই রবিন তাঁকে আমার খুঁজে বের করতে হবে। কসম যখন চোখের সামনে দেখবো তখনই মেরে ফেলবো। আনমনে বাইক চালাচ্ছি আশে পাশের পরিবেশ খুবই মনোমুগ্ধকর ছিলো ইচ্ছে করছিলো একটু থেমে যায়। কিন্তু মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে যেভাবে হোক আমাকে জানতে হবে পিন কোডে কি আছে আর এর মালিক কে? টানা ৫ ঘন্টা চালানোর পর তিতাস থানা এসে শিকদার বাড়িতে উঠলাম তখন ঠিক ৩ টা বাজে। বাড়িতে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম এইখানে কি শিমুল থাকতো? তখন কেউ জবাবে কিছু বলছে না সব মহিলা একজন ও পুরুষ নাই। হঠাৎ শিমুলের মামা আসলো সালাম দিয়ে বললাম,,

- মামা আমি মৌ এর হবু জামাই। আমি এখানে এসেছি শিমুলের ব্যাপারে জানতে।

- তুমি বাহিরে কেনো বাবা ভিতরে আসো।

মামী যখন শুনতে পারলো যে আমি মৌ এর হবু জামাই তখন লজ্জা পেয়ে রুমে ঢুকে গেলো। মামা আমার উদ্দেশ্য বলল,, 

- বাবা তুমি আসবা বলবা না?

- মামা আমি যে এখানে এসেছি মৌ ও যানে না। আমি এসেছি একটা তথ্য জানার জন্য। 

- কিসের তথ্য? 

- মামা আমি একজন আন্ডার কভার পুলিশ অফিসার এখানে শিমুলের কেসের ব্যাপারে এসেছি।

মামা আমার কথা শুনে চমকে উঠলো বিচলিত কন্ঠে বলল,,

- স্যার আপনি সত্যি মজা করছেন?

- মামা আমি সত্যি বলতেছি আমি মৌ এর হবু জামাই। আপনি না হয় এখন বা পরে কল দিয়ে জেনে নিয়েন।

মামা আমার সামনে মৌ কে কল দিলো। ওইপাশ থেকে কি বলছে কিছুই বুঝতাছি না মামা কল কেটে দিলো কি হয়েছে না হয়েছে কিছু বুঝলাম না। তার কয়েক সেকেন্ড পর আমার মোবাইলে কল আসে মৌ এর,,

- এই আপনি নাকি আমার নানুর বাসায়?
- হুম 
- কেনো গিয়েছেন? আমাকে না বলে? এইটা কিন্তু একদম বেশী হয়ে গেছে।

রাগী স্বরে কতগুলো বকা দিয়ে কেটে দিলো। তখন মামা হাসি মুখে বলল বাবা সরি আমি একটু ভীতু টাইপের তো তাই আর কি। আমি বললাম না মামা ঠিক আছে! মামা রাহির দিক তাকিয়ে বলল,,

- বাবা উনি কে? আর গাছের সাথে কি করছে?
- মামা ও হচ্ছে আমার বন্ধু। আর গাছের পাশে ছবি উঠাচ্ছে। 
- ওহ। 
- আচ্ছা যতদিন কাজ লাগবে এইখানে থাকবা আসো তোমাদের থাকার রুম দেখিয়ে দেয়। 
- মামা আমরা আগে কয়েকজন সাথে দেখা করতে চাই। 
- কার সাথে? 
- শিমুলের বন্ধুদের সাথে। 
- ওহ আচ্ছা চলো,, 

মামা হাঁটতে হাঁটতে বড় এক তেঁতুল গাছের নিচে নিয়ে গেলো আমাদের। গিয়ে দেখি যে চারজনের ছবি ছিলো তার মধ্যে এখানে ২ জন আছে তাহলে আর একজন কোথায়? মামা যখন আমাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে,, 

- এই সাহিদ,শাওন এ হচ্ছে মৌ এর হবু জামাই। তোদের সাথে কথা বলতে এসেছে শিমুলের ব্যাপারে জানার জন্য।

- মামা উনি কি করে?

আমি জবাবে একটু জোর গলায় বললাম,,

- আমি পুলিশ।
- পুলিশ?

পুলিশ নাম শুনে চমকে উঠলো তাদের চোখ গুলো কি যানি লুকানোর চেষ্টা করছে। তারা মুখের উপর বলে দিলো এইসব ব্যাপারে কিছুই যানে না বলে তারাহুরো করে চলে গেলো। আর কিছু না ভেবে চলে আসলাম খুব বিরক্তি বোধ করছি তাই সাথে সাথে এসে ঘুমিয়ে পরলাম। ঘুম থেকে উঠে দেখি ৭ টা বাজে। ফ্রেশ হয়ে রাহি আর আমি মামা কে নিয়ে সাহিদের বাসায় চললাম। সাহিদের বাড়ির কিনারা যেতে না যেতে দেখলাম অনেক মানুষ বাড়িতে। কাছে গিয়ে একজন কে জিজ্ঞেস করলাম,,
- কি হয়েছে?? 
- কে যানি বেচারা কে কুপিয়ে হত্যা করে তেঁতুল গাছের পাশে পুকুর পাড়ে ফেলে গেছে।

আমি আর রাহি এই কথা শুনে চমকে উঠলাম সামনে গিয়ে দেখি সাহিদ কে নৃশংসভাবে মেরে ফেলেছে। গরুর মতো জবাই করে ফেলেছে সাহিদ কে। আমি আর রাহি দু'জনে মূহুর্তের মধ্যে এই কোলাহল থেকে দূরে চলে আসলাম। রাহি হঠাৎ বলে উঠলো কেউ হয়তো আমাদের কে ফলো করছে। এই গ্রামে এসেছি কেউ তো জানে না শুধু মাত্র একজন জানে মৌ আর মৌ এর মামা। আর কেউ তো জানার কথা না। তাহলে কি সত্যি মৌ এর বাবা রবিন? নাকি আমাদের পিছন পিছন কেউ ফলো করছে?
|
|
তখন এক নজরে তাকিয়ে রইলাম জন কোলাহলে হঠাৎ নজর পরল কে যানি এই দিকে তাকিয়ে আছে অনেকক্ষণ ধরে। যখন সামনে যাচ্ছি ওই লোকটা পিছনে চলে যাচ্ছে দৌড়ে সামনে যেতে লোকটা জন কোলাহলে হারিয়ে গেলো। তাহলে কি সাহিদ কে সে মেরেছে যে এখানে ছিলো। তাহলে সে জানতো যে আমি এখানে আসবো এর আগে সাহিদ কে মেরে ফেলেছে। হঠাৎ মনে পড়লো শাওনের কথা তাঁরা দুজন ছিলো তাহলে শাওন কোথায়? মামার কাছে দৌড়ে গেলাম,, 

- মামা শাওনের বাসায় জলদি যেতে হবে। 
- তাহলে চলো,,,

১০ মিনিট পর শাওনের বাসায় গেলাম। শাওনের বাবা কে জিজ্ঞেস করার পর বলল শাওন ঘরে নাই। রাহি আশেপাশে ঘুরে দেখলো যে কেউ আছে কি না। হঠাৎ দেখলো শাওন বাড়ির দিক আসছে রাহি আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল শাওন বাড়ির দিকে আসছে। দূর থেকে যখন শাওন আমাদের কে দেখলো সাথে সাথে পানিতে লাফ দিয়ে কচুরিপানা মধ্যে লুকিয়ে গেলো। সামনে গিয়ে অনেক খুঁজাখুঁজি করার পর ও শাওন কে পেলাম না।
তাহলে কি শাওন সাহিদের হত্যার সাথে জড়িত? সাহিদকে কেনোই বা মারবে? 

চলবে,,,,

বিঃদ্রঃ গ্রাম থেকে রহ্যসের বেড়াজাল খুলবে কিছুটা। প্লিজ নেক্সট না বলে কেমন হচ্ছে রহস্য টা বলবেন। আগামী পর্বে কিছুটা সত্য ঘটনা তুলে ধরবো গল্পের মাঝে যা আমাদের গ্রামে হয়েছিল।




Post a Comment

0 Comments