|
golpo-ghar.blogspot.com
|
সবাই অনলাইনে!
আমি খালি অফলাইনে বসে আছি। রুপন্তীর আম্মু অনলাইনে শাড়ি সেল করছে। রুপন্তী অনলাইনে ক্লাস করছে। আর জরিনা খালা অনলাইন ভিডিও বানাচ্ছে। আর আমি অফলাইনে টিভি দেখছি। আহা কি শান্তি। এখন কেউ ডিস্ট্রাব করে না।
হঠাৎ জরিনা খালা মোবাইল নিয়ে ভিডিও করতে করতে এদিকে চলে আসলো। ভিডিওতে বলতে লাগলো,
জরিনার্স কাজের বুয়া কন্টেন্টে আন্নেগো স্বাগতম! আই জরিনা। আই আজিয়া আন্নেগো শিখামু কেন্নে ঘর হরিষ্কার করন লাগে।
আন্নেরা প্রথমে হাতে ঝাড়ু লইবেন। ঝাড়ুরে পঁয়তাল্লিশ ডিগ্রী এন্গেলে ধইরবেন। তারপর ঘরুর কোণাত্তুন শুরু কইরবেন।
তারপর জরিনা খালা আমার দিকে মোবাইল ঘুরাইয়া বলতে লাগলো,
আর মনে রাইখবেন ঝাড়ু দেওনের সময় সোফায় এরকম অদ্ভুত প্রাণী দেখিবেন। যে ঘরে বসি বসি খায়, টিভি দেহে, আর আমাগো মতো অসহায় বুয়াদের গালাগালি করে। এগুলারে সাহেবও কই বুইচ্ছেন্নি ।
এরকম দেখলে সাথে সাথে জরিনার্স কাজের বুয়া কন্টেন্টে ছবিসহ পাটাইয়া দিবেন। আরা ভাইরাল করি দিমু!
ও হ্যালো! জরিনা খালা!
মোবাইল থেকে বের হও! যাও এককাপ চা নিয়ে আসো!
আই হাইত্তান্ন!
এই বলে জরিনা খালা চলে গেল।
এই মহিলাটারে বেরও করতে পারিনা রুপন্তীর আম্মুর জ্বালা!
জরিনা খালা চলে যাওয়ার পর একটুপর রুপন্তীর আম্মু আসছে।
রুপন্তীর পাপ্পা শুনেননা! মোবাইলটা একটু সোজা করে ধরে রাখেন।
আমি মোবাইল ধরে রাখলাম। রুপন্তীর আম্মু শুরু হয়ে গেছে।
হ্যালো বন্ধুরা! আমি রুপন্তীর আম্মু। স্বাগতম আপনাদের রুপন্তীর আম্মুস মেকাপ সেশনে!
আজকে আমি আপনাদের দেখাবো, এই কোয়ারেন্টাইনে কিভাবে আপনারা নিজেদেরকে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারেন।
আজকে একটু ডিপ মেকাপ নিয়ে আলোচনা করবো। আজকে ক্যামেরাম্যান হিসেবে আছেন আপনাদের রুপন্তীর পাপ্পা।
প্রথমে একটা ভালো ফেশওয়াশ দিয়ে মুখটা বেশ ভালোভাবে ধুয়ে নিবেন, তারপর,,,,,
শুরু হয়ে গেছে প্যাক প্যাক!
রুপন্তীর আম্মুর পালা শেষ হলে এবার আসলো রুপন্তী।
পাপ্পা! ম্যাডাম প্যারেন্টস মিটিং ডেকেছে অনলাইনে। আম্মুকে বলেছি আম্মু ব্যস্ত। তাই তুমি আসো।
ম্যাডামের কথা শুনে মনে লাড্ডু ফুটলো, তাড়াতাড়ি সেজেগুজে নিলাম।
তারপর অনলাইন ফেইস করতেই দেখলাম কি সুন্দর একটা ম্যাডাম। আহা। আকাশী কালার শাড়ি পড়ে আছে।
দেখুন! রুপন্তী অংকে খুব দুর্বল! সে অংকে ফেইল করেছে এবার।
আমি রুপন্তীকে বললাম, কি রুপন্তী! ম্যাডাম কি বলছে তোমাকে না কতবার অংক শিখিয়েছি। তবুও অংক ফেইল করো।
রুপন্তী একটু ইতস্তত হয়ে বললো, পাপ্পা আমার অংক পরীক্ষা তো সেদিন তুমিই দিয়েছিলা।
ম্যাডাম শুনে বললো, কি! বাবা মেয়ে মিলে চিটিং করেন?
আরে না ম্যাডাম! রুপন্তী অংকে ভালো। বড় হয়ে ওকে আপনার মতো বানাবো সুন্দর, ব্রিলিয়্যান্ট, স্ট্যাইলিশ!
আচ্ছা ম্যাডাম প্যারেন্টসদের অংক ক্লাশ নেন? আমিও অংকে খুব কাঁচা!
একথা শুনে ম্যাডামও লজ্জা পেলেন। এবং মুচকি হাসলেন।
আচ্ছা আমার প্রাইভেট নাম্বারটা নিয়েন! অংক শেখাবো আমি।
আমি তাড়াতাড়ি নাম্বারটা টুকে নিলাম।
হঠাৎ ম্যাডাম বললো, পেছনে মহিলাটা কে?
আমি ফিরে দেখি রুপন্তীর আম্মু খুন্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
চলেন আপনাকে অংক শেখায়!
আপনাকে কতবার বলেছি আকাশী কালারের ড্রেস পরা মহিলা থেকে দূরে থাকবেন। এরা অনেক ডেঞ্জারাস।
আরে ম্যাডাম তো আমাকে অংক শেখাবে বলছে।
এমন সময় হঠাৎ আক্কাসের বউ ইলিশ মাছ নিয়ে ঘরে ঢুকলো। তার পরনেও আকাশী কালারের শাড়ি।
ভাবী এই নেন, ইলিশ মাছ! রুপন্তীর পাপ্পার জন্য।
আমি হাত বাড়িয়ে নিতে যাবো তখন রুপন্তীর আম্মু বাঁধা দিয়ে বললো,
জ্বী না ভাবী নিয়ে যান আপনার ভাইয়ের এলার্জি ইলিশ মাছে। আর হ্যা এখন থেকে ভাই ডাকবেন ভাই, রুপন্তীর পাপ্পা ডাকার অধিকার একমাত্র আমার!
এই বলে রুপন্তীর আম্মু দরজা আটকে দিল। পরে রাগ করে রুমে চলে গেল। ওখানেও দরজা আটকে দিল। রাতে ঘুমানোর সময় যখন রুমে গেলাম তখন দেখি। বেডশিট আকাশী কালার, জানালার পর্দা আকাশী কালার, ডোর ম্যাট আকাশী কালার, লাইটও জ্বলতেছে আকাশী কালারের! রুপন্তীর আম্মু বেডের উপর বসে আছে। তার শাড়িও আকাশী কালারের। লিপস্টিক আকাশী কালার, চুড়ি, কপালের টিপ, আই লাইনার, কানের দুল, জুতা সব আকাশী কালারের!
রুপন্তীর আম্মু উঠে এসে আমার কলার ধরিয়ে বললো, আজকে আকাশী কালারে ডুবিয়ে মারবো আপনাকে!
(রুপন্তীর পাপ্পা-রম্য গল্প)
2 Comments
রূপন্তীর পাপ্পা দারুণ লাগলো।
ReplyDeleteThank you so much ❤️
DeleteThanks for your valuable comment. We will be back soon.
Thank you 😊😊😊