পিন কোড

Ads Inside Post

পিন কোড


golpo-ghar.blogspot.com
golpo-ghar.blogspot.com


পর্ব ৫
৪র্থ পর্বের লিংকঃ পিন কোড



 শাওন আমাদের দেখে সাথে সাথে নদীতে ঝাঁপ দিলো। কচুরিপানার জন্য শাওন কে এই অন্ধকারে আর খোঁজে পাওয়া হয় নি। সামনে গিয়ে অনেক খুঁজাখুঁজি করার পর ও শাওন কে পেলাম না। তাহলে কি শাওন সাহিদের হত্যার সাথে জড়িত? সাহিদকে কেনোই বা মারবে? এইসব ভাবতে ভাবতে চলে আসলাম মামার সাথে। বাসায় আসার পর মামী বলল,,

- বাবা বিকালের ঘটনার জন্য সরি!

- কি করছেন মামী? আপনি তো আর আমাকে কখনোই দেখেন নি তাহলে চিনবেন কি করে। আর আজকাল কাউকে কি আর বিশ্বাস করা যায়। আপনাদের এলাকার সাহিদ ছেলেটা কে জবাই করে মেরে ফেলেছে। বুঝেন ওই তো,,,

- হ্যাঁ,,বাবা শুনেছি। আমি আবার রক্ত দেখতে পারি না। তাই ছেলেটাকে গিয়ে দেখা হয় নি।
আচ্ছা বাবা ফ্রেশ হয়ে আসো তোমার বন্ধু কে সাথে নিয়ে। খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি তোমাদের রুমে।

- ধন্যবাদ মামী। 

হাত মুখ পরিষ্কার করার জন্য আসলাম টিউবওয়েল। রাহি চেপে যাচ্ছে আর আমি পানি মুখে নিয়ে গড়গড়িয়ে যাচ্ছি। হঠাৎ খেয়াল করলাম লাল ললাট কি যানি দেয়ালে পিঠে চেপে আছে। আমি হাত মুখ না ধুয়ে দেয়ালে কি লেগে আছে জানার জন্য সামনে পা বাড়াচ্ছি ঠিক তখনই মামী আসলো। 

- কি হয়েছে বাবা?
- না,, তেমন কিছু না মামী? এইখানে রক্ত দেখা যাচ্ছে তাই আর কি।
- ওহ এইটা? আজকে যে মুরগী কাটছে হয়তো ওইটার রক্ত দেয়ালে লেগে আছে।
- ওহ। 

আমি আর রাহি হাত মুখ ধুয়ে চললাম রুমে খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে যাবো হঠাৎ রাহির দিক তাকালাম। রাহি কে দেখে মনে হচ্ছে খুব বড় ধরনের কিছু হয়েছে। রাহি কে জিজ্ঞেস করলাম,, 

- কি রে তুই লাশ দেখে আসার পর কিছুই বলছিস না?

- বন্ধু আমার খুব ভয় লাগতেছে। আমি মরদেহ দেখলে রাতে ঘুম হয় না আমার। আমার খুব ভয় লাগতেছে তুই দেখছিস কিভাবে ছেলেটাকে মেরেছে পশু ও এতোটা নৃশংসভাবে মারতে পারে না। 

- আরে এইসব ভাবিস না সব ঠিক হয়ে যাবে। তুই এইসব নিয়ে একদম টেনশন করিস না। আমি আছি না তোর সাথে আমি থাকতে ইনশাল্লাহ তোর কিছু হবে না। 

- বন্ধু যখন তুই থাকবি না তখন? 

- দেখ এমনি আজ দিন রাত পার হয়ে গেলো কিছুই জানতে পারলাম না। তুই প্লিজ আর এমন করিস না একটু ঘুমা সব ঠিক হয়ে যাবে।

আমি রেগেমেগে শুয়ে পড়লাম রাহি চুপ করে এক কোনায় শুয়ে পড়লো।

হঠাৎ অনুভব করতে পারলাম আমার পেটে ভারী কি যানি। হালকা ভাবে চোখ খুলে দেখতে পেলাম মৌ আমার পেটে বসে আছে আর হাত দিয়ে আমার গলা চেপে রেখেছে। ঘুম ঘুম চোখে বললাম,,

- স্বপ্নের মাঝে ও এইভাবে অত্যাচার করবা? স্বপ্নের মাঝে আদর করলে ও কি হতো?

- আমি তোমাকে সবসময় অত্যাচার করি ঠিক আছে এই নেও। 

মৌ এর ঠোঁটের স্পর্শ আমার কপালে একেঁ দিলো। তখন আমি ঘুমের শহরে ঘুরঘুর করছি। হঠাৎ নাকে মুখে একসাথে এক জগ পানি এসে পড়লো। তাৎক্ষণিক মধ্যে ঘুম থেকে জেগে উঠলাম। চোখ খুলে দেখি মৌ আমার পাশে বসা,,

- কি এখন বিশ্বাস হয়েছে?

- সত্যি তুমি আমার পেটে বসেছিলে?

- হুম। 

- ঠোঁটের স্পর্শ টা কি সত্য ছিলো।

- হুম ( লজ্জার স্বরে)। 

- মৌ আমি না ঘুমিয়েছিলাম তাই ঠিক মতো বুঝতে পারি নি। প্লিজ কপালে আরেকবার,,

কথাটা মুখ থেকে কেড়ে নিয়ে মৌ বলল,,
- এইটা তোমার শেষ আর পাবা না!

- কেনো?

- তুমি না বললা যে আমি তোমাকে শুধু অত্যাচার করি। 

- ভুলক্রমে মুখ দিয়ে সত্য কথা বের হয়ে গেছে। কিন্তু তোমার অত্যাচার কে যে অনেক ভালোবাসি সেইটা তুমি বুঝো না?

- নাহ বুঝি না আর বুঝতে চাই না। 

আমি আশেপাশে তাকিয়ে দেখি কেউ নেই তখন ওই সুযোগে মৌ কে কিস করে ফেলি কিন্তু কপাল খারাপ হলে যা হয় মৌ এর জায়গা আমার নিজের জুতোজোড়া কে কিস করে ফেলি। চোখ বন্ধ করে কিস করতে গিয়ে এমনটা হয়েছে। কারন মৌ নিজে জুতোজোড়া সামনে ধরে রেখেছিলো। মৌ অট্রহাসি হাসছে দেখতে বিশ্রি লাগছিলো। সোজাসাপটা বলে দিলাম,,

- তোমার হাসি মোটে ও ভালো হয় নি এইভাবে কেউ হাসে? শুধু একজন হাসে! 

- কে হাসে? 

- আমাদের গ্রামের বাড়িতে একটা তেতুঁল গাছ আছে ওখানে নাকি পেত্নী আছে। আমি দাদার কাছ থেকে শুনছি যে পেত্নী নাকি এইভাবে হাসে।

- কি বললা? আমাকে পেত্নী বলার সাহস কে দিছে? 

- আমি পেত্নী বললাম কোথায় দাদাজান বলছে আমি কি দেখছি যে পেত্নী তোমার মতো হয়। 

- আমাকে আবার পেত্নী বলা হয়েছে তাই না দাঁড়াও মজা দেখাচ্ছি। 

মৌ রেগেমেগে ছুটে আসলো আমার দিক।আমাকে নিয়ে খাটে শুয়ে পড়লো নিজের অজান্তে মৌ এর কপালে আমার ঠোঁটের স্পর্শ লেগে যায়। মৌ তা দেখে আনমনে তাকিয়ে রইলো আমার দিক। মৌ কিছুক্ষণ পর উপর থেকে সরে গিয়ে বলল,,

- আমাকে না বলে এইখানে আসলেন কেনো?

- যদি বলে আসতাম তাহলে কি হতো?  

- কিছুই হতো না আমি ও আপনার সাথে আসতাম। এইখানে অনেক ভালো ফুচকা বিক্রি করে আমাকে নিয়ে যাবেন?

- শুধু ফুচকা খাওয়ার জন্য ঢাকা থেকে সোজা গ্রামে? 

- আপনার সাথে এই প্রথম ফুচকা খাবো তাই তো আসা। 

- আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে নেই আগে তারপর? 

- আচ্ছা। 

রুম থেকে বের হয়ে টিউবওয়েল একটা লুঙ্গি নিয়ে গোসল করতে চললাম। মৌ আমার পিছে পিছে আসছে তা দেখে আমার একটু লজ্জা লাগছিল। পড়ে মৌ কে বললাম চলে যেতে সে আমার কথা শুনা তো দূরে থাক সে এসে টিউবওয়েল চেপে বালতি তে পানি দিয়ে গেলো। হাতে ব্রাশ গলায় গামছা নিচে প্যান্টের জায়গা লুঙ্গি। ঠিক তখনই রাহি পিছন দিক দিয়ে এসে ছবি উঠাচ্ছে তা দেখে বিরক্ত হয়ে বললাম,,

- তুই ছবি উঠাইলি কেন?

- আমি ছবি উঠাইলাম কোথায়? ভাবি বলছে ছবি উঠাইতে তাই ছবি উঠাইছি।

রাহির কথা শুনে মেজাজ টা গরম হয়ে গেছে। 
রাগী স্বরে বললাম,,,

- শালা বাবু তুমি কি আমার বউয়ের পক্ষ নিয়ে এখনই কথা বলছ। মৌ যা বলে শুনতেছ,,,সমস্যা নাই আমি এখনই তোমার টা কে কল দিবো। তখন টের পাইবা বাঘের লেজ নিয়ে টানাটানি করলে কি হয়।

- দেখ রাসেদ এইটা ঠিক না আমি কি করব বল ভাবি বলছে তাই আমি এমন টা করছি কিছু করার ছিলো না।

- ঠিক আছে এইদিক আয়। 

রাহি হাসিমুখে আমার সামনে আসলো আর সাথে সাথে বালতির মধ্যে চুবান দিলাম। ঠিক তখনই মামা বাহির থেকে দৌড়ে এসে বলল,,

- রাসেদ শাওনকে কে যানি মেরে বাড়িতে রেখে গেছে। 

মামার কথা শুনে থতমত খেয়ে যায়। বিস্মিত হয়ে মামা কে বললাম চলেন তো। মামা আমার দিক তাকিয়ে বলল এই অবস্থায় যাইবা? কোনো সমস্যা নাই আপনি চলেন। শরীরে টিশার্টের উপর গামছা পরনে লুঙ্গি নিয়ে চললাম শাওনের বাসায়। পিছন পিছন রাহি ছুটে আসছে। ৫ - ১০ মিনিট পর শাওনের বাসায় এসে পৌঁছালাম। শাওনের লাশ দেখে বুকটা কেঁপে উঠলো। শাওনের শরীর থেকে হাত গুলো আলাদা করে রাখা পা গুলো আলাদা করে রাখা। বুক ছিঁড়ে লিখা Finished..
তা দেখে রীতিমতো মাথা ঘুরিয়ে গেলো। এই লাস্ট একটা প্রমাণ ছিলো সেইটা ও শেষ হয়ে গেলে আর শাওনকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। একটু আড়াল করে দেখলাম শাওনের শরীরে একটা অংশে ৪৫৬৩২১ লিখা৷ তা দেখে আরো অবাক হয়ে গেলাম। তাহলে শাওন ও কি জানতো এই পিন কোডে কি আছে। এই পিন কোডের মধ্যে কি লুকিয়েছে আছে যারা এইটা জানে তাঁকে এইভাবে মেরে যাচ্ছে। তাহলে কে করছে এই খুন গুলো? হঠাৎ শাওনের ডান হাতের দিক নজর পরল। আঙ্গুলের কিছুটা উপরের অংশে একটা Butterfly ট্যাটু। তা দেখে সন্দেহ টা আরো বেড়ে গেলো তার মানে শাওন সব জানতো। এমন সময় রাহি কে জিজ্ঞেস করলাম।

- রাহি গতকাল রাত্রে তুই সাহিদের ডান হাতে কিছু দেখেছিলে?

- আমার সঠিক মনে পড়ছে না। তবে একটা কাজ করলে হয় না?
সাহিদের বাসায় গিয়ে জিজ্ঞেস করলে হয় না যে তার হাতে কোনো ট্যাটু ছিলো কি না?

- সেইটা করা যায় যদি বাড়ির মানুষ এই শোকাহত সময় এইসব ধরনের প্রশ্ন পছন্দ না করে।

- সেইটা দেখা যাবে চল আগে সাহিদের বাসায় যাওয়া যাক। 

মামা কে নিয়ে আমরা দু'জন চললাম সাহিদের বাসায়। সাহিদের বাসায় গিয়ে দেখি বাড়িতে তালা দেওয়া কেউ নেই। চুপচাপ করে বাড়ির থেকে চলে আসবো এমন সময় পিছন থেকে কে যানি মামার নাম ধরে বলল,,

- শহীদ ভাই এইখানে?
- ভাই আসছিলাম সাহিদের ব্যাপার কিছু জানার জন্য। বাড়িতে কেউ নেই তাই ফিরে যাচ্ছি। 
- ওহ আমি আসছিলাম তাঁদের কাছেই কিন্তু গিয়ে দেখি বাসায় কেউ নেই। গতকাল ছেলেটার শেষ গোসল করাতে গিয়ে জীবন এই প্রথম ভয় পেলাম। আজ নাকি আবার দক্ষিণ পাড়ার শাওন কে ও মেরে ফেলছে। কি হচ্ছে গ্রামে আল্লাহ যানে।

লোকটার কথা শুনে থমকে গেলাম। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম।

- একটু আগে আপনি বলেছেন যে সাহিদের শেষ গোসল আপনার নিজ হাতে করিয়েছিলেন? 

- হ্যাঁ

- তাহলে সম্ভবত আপনার মনে আছে সাহিদের ডান হাতে কোনো ট্যাটু ছিলো কি না?

- উমমম ম-ম ম-ম ম-ম মনে পড়ছে না তেমন তবে একটা কি যানি ছিলো দেখছে পাখির মতো।

- প্রজাপতি'র মতো?

- হ্যাঁ হ্যাঁ এমনটা ছিলো।

তাহলে সন্দেহ টা সত্যি সঠিক ছিলো। এই দুইটা খুন করেছে খুনি নিজে একা। আর যে খুন করেছে সেই এই পিন কোডের মালিক। তার মানে তাঁদের ৩ জনের হাতে Butterfly ছিলো। শিমুল,সাহিদ,শাওন আর একটা কে ওই চারজনের ছবির মধ্যে আর একটা কে ছিলো?
সে আদ্ব বেঁচে আছে নাকি ওই দিনের গুলিতে দুজনের মধ্যে সে ছিলো। এমন ও হতে পারে ওই চার নাম্বার ছেলেটার বাবা রবিন? সব কিছু ঝাপসা লাগছে ঠিক তখনই আচমকা একটা কথা বলল লোকটা।

- শহীদ ভাই আমার না একজন কে সন্দেহ হয়েছে। 

- কি বলছেন কাকে? 

আমি আগ্রহ সহকারে লোকটাকে আবার বললাম,, 

- একটু মনে করার চেষ্টা করুন কে ছিলো? 

- এর আগে কখনো এই এলাকায় দেখি নি। যখন উনি জোরপূর্বক আমার সাথে লাশ টা কে গোসলখানা গোসল করাচ্ছে তখন একটু কেমন যানি দেখা যাচ্ছিল উনাকে।

- আপনি কি তার বৈশিষ্ট্য টা ঠিকমতো তুলে ধরতে পারবেন?

- বুড়ো মানুষ এতো কিছু তো আর মনে নেই তবে হ্যাঁ উনার হাতে ও একটা ছোট প্রজাপতি ছিলো।

লোকটার কথা শুনে চমকে উঠলাম। বারবার গলা শুকিয়ে আসছে তাহলে কি রবিন এখানে এসেছিলো। ওহ-শিট কি একটা ভুল করলাম তখন আমাকে এইখানে থাকার দরকার ছিলো। আনমনে হাঁটতে লাগলাম যেটুকু তথ্য ছিলো সেটাও শেষ হয়ে গেলো এখন কি করব কিছুই বুজতেছি না। বাসায় গিয়ে গোসল করে রুমে গিয়ে মন মলিন করে বসে রইলাম। ঠিক তখনই মৌ হুংকার মেরে আমাকে ভয় দেখানোর বৃথা চেষ্টা। পাশে বসে থাকা রাহি চুপ করে ভেবে যাচ্ছে আর শীতল ভাবে বসে আছে ভয়ে। মৌ সামনে এসে অগুনিত কথা বলে যাচ্ছে যেইটা সহ্য হচ্ছে না। হঠাৎ রেগে গিয়ে বললাম,, 

- এই তুমি কি বাচ্চা দেখতে পাড়ছো না এইখানে দুটো মানুষ চুপচাপ। শুধু নিজের কথায় ভাবো আশেপাশে কি হচ্ছে কিছুটা ধারনা আছে। বরাবরের মতো বাচ্চাদের আচরন করে যাচ্ছো। কমন সেন্স বলতে মাথায় কিছু আছে? 

মৌ আমার কথা শুনে চোখের পানি গাল বেয়ে মাটিতে পড়ছে। মেয়েটা কোনো কথা না বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলো পূনরায় আবার এসে দরজা টা কে একটা জোরে আঘাত করল বিকট শব্দ হয়ে কানে ভেসে আসলো মেজাজ গরম করার আগে রাহি বলল,,

- তুই শুধু শুধু মেয়েটার উপর রেগে যাচ্ছিস। মেয়েটার কি দোষ তারে কোনোই বা এই কেইসে এর সাথে জড়াচ্ছিস। মেয়েটা শহর থেকে গ্রামে এসেছে তোর সাথে একটু সময় কাটাবে তা ভেবে আর তুই কি না।

- জ্ঞান দিতে আসিস না মাঝে মাঝে তো মনে হয় মৌ এর বাবা রবিন আবার রবিন ওই মৌ এর বাবা। তাঁদের পুরো পরিবার পাগল।

- এইভাবে না ভেবে মেয়েটাকে গিয়ে সান্তনা দে। বেচারির কি দোষ? তোরে হয়তো একটু বেশী ভালোবাসে তা-ই তোর সাথে সময় কাটাতে চায়, সবসময় তোর পাশে থাকতে চায়।

রাহির কথাটা শুনে মৌ এর কাছে চললাম।
মৌ এর রুমে গিয়ে দেখি শব্দ বিহীন ভাবে কেঁদে যাচ্ছে। অন্য দিক মুখ করে বললাম,

- সরি,, সরি বললাম তো। মাথা গরম হয়ে আছে তাই এমনটা করেছি।

কাঁদো কাঁদো স্বরে মৌ বলল,,
- মাথা গরম থাকলে একটু পানি ঢেলে নিলেই তো হতো।

- লাগবে না পানি তোমার চোখের পানিতে আমার মাথা ঠান্ডা হয়ে গেছে।

- আমাকে ধমক দিতে খুব ভালো লাগে?

- তুমি সবসময় এরকম বাচ্চাদের মতো আচরন করো কেনো?

- একশোবার করব হাজারবার করব ভালো লাগে নি? 

- নাহ লাগে না। 

কথাটা শেষ করতে না করতে মৌ আমার বুকে জড়িয়ে ধরলো। আমার আষ্টেপৃষ্টে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। আর বরাবরের মতো কেঁদে চললো। ছোট্ট একটা বাচ্চার মতো স্বভাব। রাহি জানালার পাশ থেকে দেখে হাততালি দিলো। আমি আবার ধমক দিয়ে বললাম যা এইখান থেকে যা। মৌ আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,,

- আমাকে আর কখনো ধমক দিবেন না বলে দিলাম তাহলে দেখবেন কি করি।

- কি করবা শুনি?

- কি করব দেখেন কি করি। 

এই বলে মৌ আমার পেটে দুটো ঘুষি দিলো। বাবা রে বাবা মেয়েটার শরীরে হেব্বি শক্তি আছে দেখছি। পরে মৌ কে বললাম একটু খাওয়া দাওয়া কম করে দিয়ো। যেভাবে মারো একদিন তোমার ঘুষি খেতে খেতে মরে যাবো। 
মৌ আবার এই কথা শুনে আর একটা ঘুষি দিয়ে দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলল যদি আর একবার এমন কথা বলো না তাহলে দেখবা। 
সবকিছু ঠান্ডা হওয়ার পর মৌ বলল দোকানে নিয়ে যেতে সে ফুচকা খাবে। কি আর করার দোকানে না গিয়ে গেলে আবার শুরু হবে কান্নাকাটি তাই বাধ্য হয়ে নিয়ে গেলাম। বারান্দায় থেকে রাহি কে সাথে করে চললাম। হাঁটত হাঁটতে ১০-১২ মিনিট পর দোকানের সামনে এসে বসলাম। মৌ দোকানের সামনে এসে,,, 

- মামা কেমন আছেন?
- আরে ভাগ্নী যে,, কেমন আছো ভাগ্নী? 
- মামা আজকে কিন্তু পেট ভরে খেয়ে যাবো।
মামা ঝাঁল করে বেশী মরিচ দিয়ে বেশী তেঁতুল পানি দিয়ে বানান। 
- যানি যানি তুমি কেমনে খাইতে চাও।

মৌ আছে ফুচকা নিয়ে, এইদিক দিয়ে রাহি মনমরা হয়ে আছে আর আমি ব্যর্থ হয়ে বসে আছি। যে প্রমাণগুলো ছিলো তা মূহুর্তের মধ্যে নিমিষে শেষ হয়ে গেলো। কি করব সামনে কি হবে কিছুই যানি না। কে এই রবিন কোনোই বা আমার পিছনে এভাবে লেগে আছে সে সোজা আমার সাথে দেখা করলে পারতো। আমি যার কাছে যায় তাঁকে সে মেরে ফেলে। সে আমাকে এইভাবে দূর্বল করার চেষ্টা করছে। মোবাইল বের করে চারজনের ছবিগুলো দেখছি।
হঠাৎ চোখের মধ্যে একটা ছবি উঠানোর মতো ফ্লাস পড়লো। চোখ ফিরে তাকাতে দেখতে পায় অল্প বয়সের একটা ছেলে ছবি উঠাচ্ছে আমাদের। রাহি রেগেমেগে গিয়ে ছেলেটাকে জোরেসোরে এক থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। ছেলেটাকে থাপ্পড় দেওয়াতে আমার খুব খারাপ লাগলো। সাথে সাথে গিয়ে ছেলেটাকে মাটি থেকে তুলে আমার সাথে বসিয়ে হাতে একটা টিস্যু পেপার দিয়ে বললাম,,

- ছোটো কেউ কে না জানিয়ে ছবি উঠানো ভালো না। এইটা একটা অপরাধ তুমি যানো?
-..............(ছেলেটা চুপ)
- তোমার ছবি উঠানোর শখ হলে এইটা ভালো,, তবে কাউকে না জানিয়ে আর ছবি উঠাবে না।

রাহি জায়গা থেকে উঠে এসে বলল তার সাহস কতো কথা বলছে না ঠিক তখন ফুচকাওয়ালা মামা চমকে দেওয়ার মতো একটা কথা বলল,,

- মামা ছেলেটা বোবা কথা কইতে পারে না।
- কি?
- জ্বি মামা,, ছেলেটা ছোটো থাকতে এমন হয়ছে। ছেলেটা এতিমখানা বড় হয়ছে পরে কে যানি টেহা দিয়া এইডা কিন্না দিছে।
- ওহ।
- মামা তার এইডা অভ্যাস নতুন কেউ আমগো এলাকায় আইলে সাড়ে তার ছবি যেইভাে হোক পলাইয়া পলইয়া উঠাইবো।
- সত্যি। 
- হ্যাঁ মামা নাইলে দেহেন তার ক্যামেরা সব ছবও আছে।

ছেলেটা আমার মোবাইলের স্ক্রিন তাকিয়ে কি যানি বলার চেষ্টা করতেছে। শুধু এইটুকু বুঝলাম যে ছেলেটার আমার মোবাইলে যে ছবি গুলো আছে তা দেখে কিছু বলার চেষ্টা করতেছে। তখন মামা কে ডাকলাম,, 

- মামা দেখেন তো ছেলেটা কি বলছে?
- মামা ছেলেটা আফনের মোবাইলের যে ছবিগুলো আছে তাঁদের সবাইকে চিনে।
- সবাইকে চিনে? আর কি বলছে?
- আর কইতাছে যে তার কাছেও এই ছেলেগুলোর ছবি আছে। 

মামার কথা শুনে বিস্মিত হয়ে জলদি করে ক্যামেরা টা হাতে নিয়ে ছবি গুলো দেখা শুরু করলাম। একের পর এক ছবি দেখছি হঠাৎ নজর পরল একটা ছবি গাড়ির ভিতরে কে যানি বসে আছে দেখতে খুব পরিচিত লাগছিল। আরে এই তো সে চার নাম্বার ছেলেটা কার সাথে যানি কথা বলছে। জুম করে দেখি খুব কাছের একজন মানুষের সাথে কথা বলছে যে আমার খুব পরিচিত একজন মানুষ। পরে মামা কে জিজ্ঞেস করলাম যে ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করেন ওই ছেলেটার সাথে যে একটা লোক বসে ছিলো তা কে ছিলো? মামা আকার ইঙ্গিতে ছেলেটাকে বলল তারপর বোবা ছেলেটা আকার ইঙ্গিতে বলল যে ছেলেটার সাথে যে কথা বলছে সেইটা তার বাবা। তা শুনে থমকে গেলাম। রীতিমতো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। বসা থেকে সোজা দাড়িয়ে আকাশের দিক তাকিয়ে মনে হচ্ছে পুরো পৃথিবীটা ঘুরছে আমার পাশে থাকা মানুষ টা যে খুনী হবে আমি কখনো কল্পনা ও করতে পারি নি তাহলে কি সে আমার থেকে প্রতিশোধ নিতে চেয়েছে?
তার মানে আমি ওইদিনে রাতে যে গুলি করেছিলাম ছেলেটা কে তাহলে আমার গুলিতে শিমুল মারা যাওয়াতে হয়তো প্রতিশোধ নিচ্ছে আর আমার আশেপাশে মানুষদের কে খুন করছে। তার মানে ৪ নাম্বার ছেলেটার নাম শিমুল। মৌ এর ভাইয়ের নাম ও শিমুল ছেলেটার নাম শিমুল এখানে ঝামেলা টা হয়ে গেছে। 
হঠাৎ মৌ এসে বলল,,,,

- কি হয়েছে?? 
- খুনী কে তা পেয়ে গেছি জলদি করো ঢাকা যেতে হবে আমাকে।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা দিলাম আর মনের ভিতর একটা আনন্দ কাজ করতে লাগলো। আজকে সে আমার হাত থেকে বাঁচতে পারবে না খুব নৃশংসভাবে মারবো।

চলবে,,,,,,,

বিঃদ্রঃ [ দ্বিতীয় খুনটা ঠিক যেভাবে হয়েছে ঠিক একইভাবে আমাদের গ্রামে এমন একটা খুন হয়েছে আর তার উপর ভিত্তি করে গল্পটা লিখা। আসল টুইস্ট তো আগামী পর্বে পাবেন। খুনীর উপর খুনী]

গঠনমূলক কমেন্ট করে উৎসাহ দিয়ে যান খুব ভালো লাগে,, ধন্যবাদ ভাই ও বোনেরা।




Post a Comment

0 Comments