রুপন্তীর্স মেকাপ হাউজ

Ads Inside Post

রুপন্তীর্স মেকাপ হাউজ


golpo-ghar.blogspot.com
golpo-ghar.blogspot.com


রুপন্তীর আম্মু নাকি মেকাপ শপ খুলবে। তাই কদিন ধরে টাকার জন্য পাগল বানিয়ে ছাড়ছে। আমি এক টাকাও ছাড়ছি না এবার। প্রতিবারই লস খাওয়ায়।
আইডিয়া নাকি জরিনা খালার।
জরিনা খালারে যদি ইলেকট্রিক শক খাওয়াই সব আইডিয়া ওয়াশ করে দিতে পারতাম। তাহলে শান্তিতে থাকতে পারতাম।

সকালে টিভি নিউজ দেখছিলাম মনযোগ দিয়ে হঠাৎ রুপন্তী এসে বললো,
পাপ্পা আমি বিয়ে করবো!

আমি টিভির সাউন্ডটা কমিয়ে বললাম,
দুদিন হয়নায় তুমি এসএসসি শেষ করছো এরমধ্যে বিয়ে!
অ্যাই মেয়ে তোমার বয়স কতো জানো?

হ্যা জানি! সুইট সিক্সটিন! , রুপন্তী বেশ পরিষ্কারভাবে জবাব দিল!

এই রুপন্তীর আম্মু কই গেলা এদিকে আসো। দেখো তোমার মেয়ের কান্ড।
রুপন্তীর আম্মু হাতে একটা পাতিল নিয়ে দ্রুত আসলো। মনে হয় পাতিল ঘষামাজা করছে।

কি হয়েছে! সকাল সকাল চিল্লাচ্ছেন কেন?

দেখো! তোমার মেয়ে নাকি এই বয়সে বিয়ে করতে চায়।

একথা শোনার পর রুপন্তীর আম্মুর হাত থেকে পাতিল পড়ে গেল।
কি! তুই বিয়ে করবি?

এই বলে রুপন্তীর আম্মু কান্না শুরু করে দিলো আর বলতে লাগলো,
রুপন্তীর পাপ্পা আমাদের মেয়েতো বড় হয়ে গেল! আমাদের ছেড়ে চলে যাবে।

আরে রাখো! ওর বয়স ই বা কতো? অনেক দেরি আছে বিয়ের।
অ্যাই মেয়ে তোমার এসব চিন্তাধারা আসে কোত্থেকে?

কেন পাপ্পা! আমরা বান্ধবীরা সবাই বিয়ের জন্য পাগল। সবাই একদিন হলেও বউ সাজতে চায়। আমিও সাজবো।
তাই আমিও বিয়ে করবো।

দিবোনি একটা চটকানা! যাও পড়তে বসো।

সন্ধ্যার দিকে মাঝ বয়সী এক লোক এসে হাজির।
আসসালামু কলাইকুম ভাইসাব!
আমি রহমান সাহেব। পাশের এলাকার চেয়ারম্যান।

জ্বী ওয়ালাইকুম আসসলাম বসুন!
তা এখানে?

শুনেছি আপনার মেয়ে বিয়ে দিবেন। মেয়ে তো মাশাল্লাহ সুন্দর। এদিকে আমার ছেলেও কম সুন্দর না। ইদানীং বেশ টাকাকড়িও ইনকাম করছে। আমাদের জায়গা জমিরও অভাব নেই। আপনার মেয়ে আশা করি সুখে থাকবে।

দেখুন! আমার মেয়েতো এখনো ছোট। বিয়ের বয়স হয়নি।

আরে, এই সময়টাই তো ভয়ের। কখন কোন ছেলের পাল্লায় পড়ে যায়। তাই বিয়ে দিয়ে দেয়া ভালো বুঝলেন। তা মেয়ে মামনিকে ডাকেন দেখি।

চেয়ারম্যান বলে কিছু বলতে পারলাম না। রুপন্তীর আম্মুকে বলে রুপন্তীকে নিয়ে আসা হল। রহমান সাহেব মুখখানা দেখি দশহাজার টাকা দিয়ে গেল। আর বললো, ছেলে আর ছেলের মাকে নিয়ে আসবো শীগ্রই!

পরেরদিন, তারপাশের এলাকার মেম্বার। তার ছেলে নাকি পুলিশের জব। খুব সিকিউর লাইফ। তাই রুপন্তীকে বিয়ে করে নিয়ে যেতে চায়।
সে ও রুপন্তীর মুখ দেখে আট হাজার দিয়ে গেল।

এভাবে প্রতিদিন আত্মীয়স্বজন, এলাকার মেম্বার, চেয়ারম্যান, ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, ব্যাবসায়ীদের ছেলের পক্ষ থেকে রুপন্তীর জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসতে লাগলো। আর প্রতিবারই সবাই এসে রুপন্তীর মুখ দেখে রুপন্তীর হাতে পাঁচ দশহাজার দিয়ে যায়।
আমি কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছি না রুপন্তী বিয়ে করবে এটা সবাই জানলো কি করে।

রুপন্তীর আম্মুকে ডাকলাম। বললাম,
তুমি আবার কোন ঘটক দিয়ে ঘটকালি শুরু করোনি তো?

আরে না। আমি কেন করবো?

তাহলে রুপন্তীকে ডাকো! ওকে জিজ্ঞেস করি।

রুপন্তী এটা কি তোমার কারসাজি?

না পাপ্পা।

তাহলে কে?

এমন সময় আরেক ফ্যামিলি নিয়ে জরিনা খালা ঘরে ঢুকলো। আইয়েন আইয়েন,, বইয়েন!
এইডা আমার ভাইজান। হেতের মাইয়া বিয়া দিবো। রুপন্তীর আম্মু রুপন্তীকে রুমে নিয়ে গেল।
ফ্যামিলিটা দেখতে গোন্ডা গোন্ডা টাইপের। বাপরে মনে হচ্ছে কসাই, আর মা দেখতে বাংলা ছায়াছবির টিনা খানের মতো। ছেলেও গাঞ্জাখোরের মতো চিকন।

এরা কারা জরিনা খালা?

আরে ভাইজান! ওনারে চিনেন ন? ওনি আশপাশের আটদশখান এলাকার ডন। পোলা তো এই পর্যন্ত আটচল্লিশটা মার্ডার কেইসের আসামী। পোলার এমন কোন দিন যায় ন যার ছুরিত রক্ত লাগেনো! বুইচ্ছেন্নি ভাইজান। আরো রুপন্তী হেতেগো ঘরুত যাইলে কেউ রুপন্তীরে ভয়ে তাকাইবো না। কি কন আন্নে?

কথাগুলো শুনে আমি বুকে হাত দিয়ে দিলাম। মনে হচ্ছে হার্ট বেরিয়ে আসছে।
জরিনা খালা তোমার কি মাথা খারাপ?
একটা সন্ত্রাসীর ঘরে আমি আমার মাইয়া তুইলা দিমু! নো নেভার! বেরিয়ে যাও এদের কে নিয়ে।

লোকটা বড় বড় চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, কামডা ঠিক করলা না মিয়া।
পোলাটা ও আমারে বললো, দেইক্কা লমু!
মা ও পান চিবুতে চিবুতে আঙ্গুল দেখিয়ে চলে গেল।

আমি জরিনা খালারে ধরলাম।
তোমার মাথা ঠিকাছে জরিনা খালা? এমন প্রস্তাব কেউ আনে?

ভাইজান আই কিসসি! আন্নের মাইয়া ই তো কইছে হেতি বিয়া কইরবো তই ঘটকালি কইরছি।

তাই বলে এমন মাস্তান নিয়ে আসবা?

শর্টকাট যেটা হাইছি লই আইছি।

পরেরদিন সকালে মর্নিং ওয়াক করতে গিয়ে কারা যেনো আমাকে মুখোশ বেঁধে মাইক্রোতে উঠিয়ে নেয়। একটা গুদামে নিয়ে আমারে প্রচুর পিটুনি দেয়। এরপর একজন লম্বা চওড়া লোক এসে মুখে পানি ছিটিয়ে বললো, শোন তোর মাইয়ারে আমাগো ভাইজান পছন্দ করছে। তাই তোর মাইয়ারে চুপচাপ আমাগো ভাইজানরে বিয়া দিয়া দিবি। আর না হয় বিশলাখ নগদ দিবি তা নাহলে তোর আর তোর ফ্যামিলিরি কাইট্টা চিল কাউয়ারে খাওয়াই দিমু।

এরপর আবার আমারে মাঝপথে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল।

খুব টেনশনে আছি। জরিনা খালা তো আমারে ফাসিয়ে দিল। বিশলাখ টাকা ই দিতে হবে। রুপন্তীর লাইফ নষ্ট করা যাবেনা।
সাত পাঁচ না ভেবে পরেরদিন দিয়ে দিলাম বিশলাখ।
এখন শান্তি কোন ডিস্ট্রাব নাই।

এক মাস অনায়াসে কেটে গেল।
হঠাৎ রুপন্তীর আম্মু বললো, রুপন্তীর পাপ্পা আপনার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে চলেন।
আমার চোখ বেঁধে রুপন্তীর আম্মু একটা দোকানের সামনে নিয়ে আসলো। থাই গ্লাসে ঘেরা বেশ মর্ডান একটা দোকান। উপরে দোকানের সাইনবোর্ডে লেখা, " রুপন্তীর্স মেকাপ হাউজ "!

দরজার সামনে একজন দারোয়ান লোকটারে চেনা চেনা লাগছে। ভেতরে জরিনা খালা ম্যানেজারের চেয়ারে বসা। এক মহিলা ঝাড়ু দিতে দিতে পায়ের কাছে চলে।
ও ভাই দেখি সরেন,

মহিলাটারেও চেনা চেনা লাগছে। এক মাঝ বয়সী লোক কিছু বক্স নিয়ে রুপন্তীর আম্মুরে জিজ্ঞেস করছে, আফা এগুলো কই রাখমু!

এই লোকটারেও চিনি মনে হচ্ছে। কোথায় জানি দেখেছি, ইয়েস! এই লোকটা তো পাশের এলাকার ডন! ঝাড়ু দেয়া মহিলাটা তো ওই সেদিনকার টিনা খান। আর দারোয়ান ব্যাটা তো ওই মাস্তান পোলাডা।

রুপন্তীর আম্মুরে জিজ্ঞেস করাতে বললো, আমি কিছু করিনি। রুপন্তীও মুখ দেখিয়ে শুধু টাকা ইনকামের জন্য বিয়ে করার প্ল্যান বানিয়েছি। সব কিন্তু জরিনা খালার প্ল্যান।

জরিনা খালারে জিগালে সে বলে, আই এহন ম্যানেজার আর লগে সাবধানে কথা কইবেন! 


(রুপন্তীর পাপ্পা-রম্য গল্প)



Post a Comment

1 Comments

Thanks for your valuable comment. We will be back soon.
Thank you 😊😊😊