অনিশ্চিত রোদ্দুর

Ads Inside Post

অনিশ্চিত রোদ্দুর


golpo-ghar.blogspot.com
golpo-ghar.blogspot.com


প্রশ্ন করা হলঃ সেরা ফিলিংস কোনটা ভাই? যাকে পছন্দ করেন তাকে বিয়ে করে ফেলাটা? নাকি যাকে পছন্দ করেন তার মুখ থেকে প্রথমবার শোনা, তোমাকে ভাল লাগে আমার?
উত্তর দিলামঃ কোনোটাই না। সেরা ফিলিংস হচ্ছে সেটা যখন দুইজনেই পছন্দ করি কিন্তু কেউ কাউকে বলি না। অপরিচিতর মত বা বন্ধুর মত সম্পর্ক কাটে, "তোমাকে ভালবাসি" বলে ফেললে সব তো বলা হয়ে যাবে- সেই আনন্দ পুষে রাখা, জমিয়ে রেখে রেখে বলা, "আপনি কি করছেন"?
" কিছু নাহ। ভাবছি কি করা যায়, আপনি?" সব কথার শেষে একটা করে প্রশ্ন রেখে দেয়া। যেন সে উত্তর দিতে হলেও কথা গড়ায়। দুজনেই জানি আমাদের আর অন্য কেউ নেই। তবু হাজারটা অজুহাতে বোঝানো, "এখনি হ্যাঁ বলে দিতে ইচ্ছে করছে না। ভাল লাগাটা থাকুক আরো কিছুদিন।"
আবার প্রশ্ন হলঃ তাহলে কি প্রেম বিয়ে করাটা ভুল নাকি ভাই? পস্তাচ্ছেন?
চাকুরিজীবী গলায় উত্তর দিলামঃ প্রতিরাতে প্রয়াত স্বাধীন সার্বভৌম বিছানার সীমান্তে ধাক্কা খেয়ে খেয়ে মশারি আর মশাদের কাটাতারে আটকে গিয়ে জেনেছি- এর চেয়ে বড় স্যাক্রিফাইস আর কি হতে পারে? তবু তাকে শান্তির ঘুমে হাত পা ছড়িয়ে থাকতে দেখে হঠাত হঠাত মনে হয় এখন, সব কথা বলা হয়নি। এখনো অনেক কথা জমে আছে।
প্রশ্নকর্তা মাথা চুলকে বললেনঃ বুঝলাম না ভাই।
হা হা করে হেসে উঠলামঃ অতীতের স্বাদ নিতে স্ত্রী মোবাইলে আজও মেসেজ পাঠাচ্ছে, "কি করছেন?" আপনি-তুমির এই পালাক্রমের স্বাদ তুমি বুঝবে না হে বৎস! এই কাল আর সেকাল যে পাশাপাশি অবস্থান তার। কনুই মেরে পাশ থেকেই বলে, "উত্তর দাও!" আমিও সস্নেহে লিখে দেই, "কিছু না। কি করা যায় ভাবছি, আপনি?"
আমাদের অনেক কথাই বলা হয়। কিন্তু সব কথা বলা হয় না। সম্পর্কের মাঝেও কিছু পাঞ্চ লাইন থাকে। জানা থাকে সব উত্তর। তবু বলতে ইচ্ছে হয় না, "আপনি কি আমাকে ভালবাসেন?" কাছে থেকেও দূরত্ব রেখে ঠিক ভাল বাসা বাসি নয়, ভাল লাগার মত করে থেকে যেতে ইচ্ছা হয় অনন্তকাল মানুষটার সাথে। সেই টান যে কি তীব্র, সেটা মশারির সীমান্ত পার করলেই বুঝতে পারবে। অথবা বেড সাইড টেবিলের লাইট নিভিয়ে-জ্বালিয়ে রাখা নিয়ে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সাক্ষরের মত কিছু যতক্ষন না তোমার জীবনে ঘটতে যাচ্ছে।
ঘোলাটে স্বরে প্রশ্ন করলঃ আপনি ঠিক আছেন তো ভাই?
অট্টহাসি দিতে দিতে গিয়েও হোচট খেলামঃ বসুন্ধরার ফুড ফ্লোরের সাউথ ইস্ট কর্ণারের চেয়ারগুলো মিস করি মাঝে মাঝে।
হতচকিত গলায় বললঃ সেকি! কেন!
হতাশ মুখে তাকালামঃ ঐ কর্ণার ধরে বিয়ের আগে প্রতিবার আমার স্ত্রী হেটে আসত। কখনো সালোয়ার কামিজ, কখনো শাড়িতে। কখনো বা এপ্রণ জিন্স। এখন আর আসে না।
হাসতে লাগলো সেঃ বিয়েই তো করে ফেলেছেন। তাহলে?
মাথা চুলকে বললামঃ কিন্তু ঐ মুহূর্তের তাকে তো বলা হয়ে যায়নি যে "চাইলেই আসতে পারো পথখানি অনিশ্চিত রোদ্দুর"? তাকে সেই সময়ে তো বলে ফেলেনি যে " তোমাকেই আমার লাগবে"। কেবল অনিশ্চয়তার মতো একটা ভাল লাগা ছিল। জানতাম হাজারটা টেবিল পেরিয়ে হলেও সে আমার দিকেই হেটে আসবে ক্লান্ত মুখে, এসে বলবে, "আপনি এতো এডিট করা ছবি দেন কেন ফেসবুকে?" পেছনের চেয়ারে বসে থাকা কোনো ভার্সিটির ছেলে হাসি চাপতে চাপতে উঠে কেটে পরবে সেখান থেকে। আমি আকাশ থেকে পড়ার মত অপ্রস্তুত হয়ে কথা হারিয়ে ফেলব কয়েক সেকেন্ডের জন্য। সে একটা অঘোষিত চুক্তি সাক্ষরের মত একটা টাই'য়ের প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বলবে, "আপনার জন্য এনেছিলাম"। বাকি জীবন গলায় দড়ি দিয়ে ঘোরাবার সেই না বলা চুক্তির বিপরীতে একটা সাদামাটা ব্রেসলেট কাপা হাতে এগিয়ে দিয়ে বাকি জীবনের জন্য হাতকড়া পরানোর দৃশ্যটা মিস করি। মনে হয় যেন রিওয়াইন্ডারে দিয়ে বার বার প্লে করে দেখি। একই মশারির ভেতর ঘুমন্ত মানুষটার মুখের দিকে তাকিয়ে খুজি সেদিনের বিকেলে বাসে করে পৌছে দেয়ার সময় তার হতাশ মুখে বলে ফেলাটা, " আপনি এত দূরে কেন থাকেন?" অথচ অস্পষ্ট করেও বলেনি, "আপনাকে আমার প্রয়োজন খুব।"
অথবা আমাকে যা বলেনি, সে সব লিখে দিয়েছিল দশটা পয়েন্ট করে নিজের বাবাকে। আমার দশ বৈশিষ্ট্য। পাত্র দেখতে এসে ঘর ভর্তি মানুষের সামনে সেই কাগজের ফটোকপি বের করে পড়ে শুনিয়েছিলেন আমার শ্বশুর। লজ্জ্বায় লাল বেগুনি হয়ে গিয়ে আমি ভাবছিলাম, এত কথা এই মেয়ে আমাকে তো কোনোদিন বলেনি?
হা হয়ে তাকিয়ে থেকে বললঃ ত-তাহলে? আপনি কি আবার বসুন্ধরার সেই ইস্ট কর্ণারে ফিরে যেতে চান?
উদাস গলায় বললামঃ যে কোনো একটা কর্ণার হলেই হল। তবে কসম কেটেছি, এইবার আর এডিট করা ছবি নিয়ে কথা শোনানোর সুযোগ দেবো না। টাই দেয়ারও অপশন রাখবো না।
শিস দিলঃ সেকি! রিওয়াইন্ডিং চাচ্ছেন নাকি?
মাথা নাড়লামঃ অনেকটাই। তবে এবারে দেখতে চাই, সে একটা সাদা জমিনের লাল পাড়ের শাড়ি পরে আসুক। আমি হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে চাই। আগের বারের ভুলগুলো করব না এবারে। এবারে ঠিক মহিলা সিটে তাকে বসিয়ে হ্যান্ডেল ধরে ঝুলবো না। এবার ঠিকই প্রথম দফাতে উবার নিয়ে নিব। প্রথমবার ব্রেসলেটটা পরিয়ে দেয়া হয়নি। বেচারি নিজে নিজে দশ মিনিট লাগিয়ে পরেছিল আমার সামনে। এবারে বেহায়াপনা ঠিক করে বসব। কিন্তু সব শেষেও যখন সে অনুযোগের গলায় বলবে, "আপনি এত দূরে থাকেন কেন?" এবারেও উত্তর দিব না। হেসে পাশ কাটিয়ে যাব। কিছু কথা জমা থাক। সব কথা হয়ে যেতে নেই। অনিশ্চিত রোদ্দুর হাটা বাকি। অনেক কথা বাকি।



Post a Comment

0 Comments